Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

পোশাক খাতে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে

-এম. কামাল উদ্দিন

সিইও, ডেনিম রোমোটেক্স গ্রæপ

মারুফ রিমন: ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থনীতি বিষয়ে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কথা বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা রেমোটেক্স গ্রæপ-এর সিইও এম. কামাল উদ্দিন। তৈরি পোশাক খাত, টেক্সটাইল, নিটিং, এক্সপোর্ট, ইম্পোর্ট, ফেব্রিক, কম্পøায়েন্স এবং শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

আমাদের রপ্তানি খাতের বড় ভিত্তি হলো গার্মেন্টস। কোনো এক সময় যদি আমাদের গার্মেন্টস নিয়ে কোনো ধরনের বিপদে পড়ে যাই তাহলে দেশ বিপন্ন হবে। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এম. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘১৯৯৪ সালে আমি এই পেশায় কাজ শুরু করি। তখন বাংলাদেশে ডেনিম টেক্সটাইল ছিল না। একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল বেক্সিমকো। আমি এখন বটম বানাই। আর জিন্স-এর ফেব্রিক তৈরি করি। ডেনিম বটম বলে এটাকে। বাংলাদেশে এর চাহিদা ছিল প্রায় পাঁচ লাখ এর মতো। যা আমরা পুনঃরপ্তানি করি। এক  সময় এর এক শতাংশও বাংলাদেশ তৈরি করতে পারতো না। এতে করে আমরা বিভিন্ন দেশের বাজার হারাতাম। ফেব্রিক ডিজাইন ওয়াশ টাইফ-এর অভাবে বাজারে আমাদের চাহিদা ছিল না । মনে হতো বাংলাদেশ আর পারবে না। রেমন্ড-এর সঙ্গে আমি প্রথম চুক্তিবদ্ধ হই ১৯৯৭ সালে তাদের শুরুর সময় থেকে।  রেমন্ড ক্যালিত্রি ইতালিয়ান যৌথ কোম্পানি। ইন্ডিয়ায় একজন ভদ্রলোক ছিলেন তার নাম পিকে রায়। তিনি আমাকে সম্পৃক্ত করেন। পেশার শুরুর দিকে আমি চাকরি করতাম। পিকে রায় একদিন বললেন, তুমি এটি কর। এরপর থেকে রেমন্ড-এর কাপড় বাংলাদেশে নিয়ে আসা শুরু হয়। তখন রেমন্ড বিশেষ ফেব্রিক বানাতো। সেটার ¯ø্যাব আর বিভিন্ন ক্যারেকটার ছিল। বাংলাদেশের অনেকে বলতো, তোমার ফেব্রিক তো ডিফ্যাক্টিভ। আমি বলতাম, এটি দিয়ে আপনারা কাপড় বানান এবং ক্রেতাদের দেখান। সেই থেকে আমার শুরু। ওই ডিফ্যাক্টিভ ফেব্রিক-এর  আজকে কিন্তু মূল আর কোনো কিছুই নাই। এটিই এখন ফ্যাশন। তখন তো কোনো টেক্সটাইল ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশে ৩০টির বেশি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি আছে।’

এতে বর্তমানে আমাদের চাহিদার কতটুকু পূরণ হয়- জানতে চাইলে এম. কামাল উদ্দিন বলেন, দেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ আমাদের চাহিদার অনুপাতে উৎপাদন করতে পারি। ৪০-৫০ শতাংশ এখনো আমদানি করতে হয়। এটি বিশাল সেক্টর। জাতীয় আন্তর্জাতিক অনেক ষড়যন্ত্র তৈরি পোশাক খাতে চলছে । আমার প্রধান ব্যবসা হলো টেক্সটাইল ডেনিম। কিন্তু পরবর্তীতে আমি তৈরি পোশাক এ যাই। ১৮ সারির ছোট একটি কারখানা আছে আমার। এখান থেকে আমরা আড়াই কোটি রপ্তানি করি। তিন হাজারের মতো মানুষ এখানে কাজ করে। আমাদের দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধিকে আশপাশের অনেক দেশ ভালো চোখে দেখছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমেরিকার জিএসপি’র দিকে তাঁকিয়ে না থেকে নতুন নতুন বাজার খোঁজ। প্রধানমন্ত্রী আসলেই একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। আমাদের লক্ষ্য আছে ৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা আছে। আরও কিছু পারিপাশির্^ক সমস্যা যেমন শ্রমিক অসন্তোষ হয় মাঝে মাঝে। অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে এসেছে, চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্যে কিন্তু সেভাবে মূল্য পাচ্ছি না।’ কম্পøায়েন্সসহ অন্যসব চ্যালেঞ্জ বিষয়ে এম. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কম্পøায়েন্স ছাড়া দাম আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’ প্রাইসের কোনো জায়গায় চ্যালেঞ্জ? প্রোডাক্টের দামে নাকি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে? এই ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ছে আর পণ্যের দাম কমছে।’ এখনো তো পৃথিবীতে আমরাই সবচেয়ে কম দামে শ্রমিক পাই- এই প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে এম. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। বিজিএমইএ’র  অনেক নেতা বলছেন যে, একটা লোক গ্রাম থেকে আসছে সে কিছুই জানে না। তাকে চাকরি দিয়ে আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ৫০০০/৩০০০ টাকা বেতন দিচ্ছি। এই খাত এমন একটি খাত যেখানে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। তারা আমার মেশিন নষ্ট করে। নিডল ফেব্রিক নষ্ট করে। এই সব ক্ষতি সহ্য করেও তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করাই।  কম্পøায়েন্স নিয়ে আমাদের এত বিনিয়োগ। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ৬০০-৭০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে শুধু কম্পøায়েন্স-এর কারণে। আমাদের লক্ষ্য ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি করবো স্বাধীনতার ৫০ বছরে। এটা কিন্তু সবার জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ? বিশে^র আর কোথাও এই কম্পøায়েন্স ইস্যু নেই। শুধু বাংলাদেশে আছে। কিন্তু তবু এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছি।’ এই কম্পøায়েন্সের জন্যে আমাদের শিল্পের কি কোনো উন্নতি হয়নি-এমন প্রশ্নের উত্তরে এম. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশে^ কম্পøায়েন্স আমরাই বর্তমানে এক নম্বরে। বিদেশি ক্রেতারা দামের ব্যাপারে যে কথা বলেছিলেন কম্পøায়েন্স শর্তে তা তারা রক্ষা করেনি। আমাদের কম্পøায়েন্স উন্নত হয়েছে কিন্তু সেই সূত্রে মূল্য বাড়ায়নি ক্রেতারা। আমি বলবো, এই খাতে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে আবার একই সঙ্গে নেইও। আমাদের বর্তমান সরকার- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা তৈরি করে দিচ্ছেন। চেষ্টা করছেন আরও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্যে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাও করছেন তিনি। তৈরি পোশাক খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি আমরা কিন্তু তারপরে এগিয়ে যাচ্ছি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিগত বছরগুলোর মতো থাকলে আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে সততা ও আস্থার সঙ্গে কাজ করলে সামনে কোনো সমস্যা হবে না।