Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দেশের ব্যাংকিং খাত অনেক বেশি স্পর্শকাতর

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ

চেয়ারম্যান, আমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ একজন উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব। দেশের শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য, উন্নয়ন উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আমান গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দেশে-বিদেশে ব্যবসার মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের শিল্প, ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ে নিজের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম

আনন্দ আলো: আপনি ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে দীর্ঘ বছর যুক্ত আছেন। দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানো বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকে কীভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি সেবা মূলক খাত। তাই সেবা ভালো না থাকলে ব্যাংকের কাছে মানুষ যাবে না। কেন যাবে না? কারণ সব ব্যাংকই কিন্তু ইন্টারেস্টে টাকা লগ্নি করে। তাই বিশেষ সেবা না থাকলে সেই ব্যাংকে মানুষ যাবে না। তাই ব্যাংকের মূল পুঁজিই কিন্তু সেবা বা সার্ভিস। যুগের পরিবর্তনে আধুনিক যেসব প্রযুক্তি এসেছে তাতে করে সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আর বিশেষ করে আমরা গ্রামগঞ্জে যেভাবে শাখা খুলছি তাতে কিন্তু অনেক কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে- দুইটি শাখা গ্রামে খুললে শহরে একটি শাখা খোলা যাবে। শহরে একটা শাখা খুললে গ্রামের দশটা শাখার সমান ব্যবসা করা সম্ভব হয়। কিন্তু তারপরে আমাদেরকে গ্রামে শাখা খুলতে হচ্ছে। গ্রাম ভিত্তিক শাখা খুলে কৃষিভিত্তিক যেসব ঋণ দেয়া হয় তার রেট অব ইন্টারেস্ট অনেক কম। আগে যে ব্যাংকের রেট অব ইন্টারেস্ট ছিল তার থেকে নেমে এখন কিন্তু ইন্টারেস্ট রেট সিঙ্গেল ডিজিটে চলে এসেছে। এখন কেউ টাকা চাইলেই ৮/৯ পারসেন্টে টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে আমরা টাকা বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছি।

আনন্দ আলো: আপনাদের মার্কেন্টাইল ব্যাংক কেমন চলছে?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: মার্কেন্টাইল ব্যাংক আল্লাহর রহমতে খুব ভালো চলছে। ভালো ডিভিডেন্ট দিয়েছি, প্রফিটও ভালো হচ্ছে। সবক্ষেত্রেই আমরা ভালো করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে পুরোপুরি ব্যাংকের উপরে প্রয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে মালিক পক্ষ বা শেয়ার হোল্ডাররা ইচ্ছে করলেই কোন কিছু করতে পারেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বর্তমানে একটা দায়বদ্ধতা চলে এসেছে। কোনো কিছু হলে তাদের উপরে দায়িত্ব চলে আসে। তাই বর্তমানে ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনৈতিক কাজে যুক্ত হবার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না।

আনন্দ আলো: ব্যাংক নিয়ে আমরা বর্তমানে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। কারণ চ্যালেঞ্জগুলো এই রকম যে, টাকা আগে পকেটে থাকতো কিন্তু টাকা এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। আমার দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে- এই অবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: আমরা ব্যাংকিং ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা বলেছেন, কারণ টাকা এখন আর কাগজের নোট নাই তা প্লাস্টিক টাকা হয়ে গেছে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এখন আমরা টাকা নিয়ে নিতে পারি। আমাদের এটিএম বুথ আছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংও এসেছে। তার মাধ্যমেও ঘরে ঘরে টাকা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

আনন্দ আলো: মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও কি মোবাইল ব্যাংকিং আছে?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: জি, মাই ক্যাশ আমাদের আছে। এই সেবাও আমরা দিয়ে থাকি। নতুন টেকনোলজি যখন একটা দেশে আসে তখন সেবায় কিছু কিছু ভুল ত্রæটি থাকে। আস্তে আস্তে তা সংশোধন হয়ে ভালো জায়গায় চলে আসে। যেহেতু সবকিছুর মনিটর করে সেন্ট্রাল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের রুলস এন্ড রেগুলেশন দিয়েই সবকিছু পরিচালিত হয়। তারা সবকিছুই ফলোআপ করে। আমাদের দেশে দক্ষ লোক আছে। যারা তথ্যপ্রযুক্তিতে বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে আসছে। চাকরিও করেছে বিদেশে। এই রকম মানুষ যারা টেকনোলজিতে দক্ষ মানুষরা কাজ করছে।

আনন্দ আলো: আমাদের ব্যাংকিং খাত তো অনেক বড়?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: এই খাত অনেক বড় এবং স্পর্শকাতর একটা সেক্টর। কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং বড় ধরনের ক্ষতিও হয়। তাই নিরাপত্তা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। এছাড়া মাথায় রাখতে হয় যে কোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা রোধের জন্য সুরক্ষা নেয়া আগেভাগে। সেই সুরক্ষা নিয়ে আমাদের এই কাজে এগিয়ে আসতে হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে ৫-১০ বছর আগে যে অবস্থা ছিল সেখান থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। এখন নিরাপত্তা অনেক বেড়েছে।

আনন্দ আলো: অনলাইন ব্যাংকিং উন্নতি কতটা হয়েছে?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: বাংলাদেশে আপনি যে কোনো ব্রাঞ্চ এ একটা একাউন্ট করেন না কেন, সারাদেশ থেকেই সেই একাউন্ট পরিচালনা করা যায়। চেক দিলে উঠানো যাবে এবং এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যায়। যখনই কোনো প্রযুক্তি নির্ভর সেবা আসে, তখনই সেটাকে লক্ষ্য করে আমরাও প্রযুক্তির পথে হাঁটি। আমি মনে করি বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংকের অবস্থা ভালো। আমরা আর পিছিয়ে নেই। এরপরেও নতুন নতুন টেকনোলজি ভিত্তিক সেবা আমরা প্রতিনিয়ত নিয়ে আসছি।

আনন্দ আলো: আপনার গ্রুপ ব্যবসা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন?

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: আমাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো। কারণ আমাদের প্রজন্ম পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। আমার বাবা যেটা করতো তার থেকে আমি আরও আধুনিক যুগে এসেছি। আর আমাদের সন্তানেরা তারা ডিজিটাল। কারণ বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। নতুন নতুন টেকনোলজি তারা জানে। ঘরে বসেই তারা সারা দুনিয়ায় ব্যবসা করে। আমি একবার একটা পার্টস খোঁজার জন্যে স্পেন পর্যন্ত খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। আর এখনকার ছেলেরা বেডরুমে বসেই খুঁজে পায়। ছেলেরা মডার্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে উন্নত হয়েছে। আমি আমার বাবার থেকে উন্নত হয়েছি। এই যে যুগের পরিবর্তনে যে ব্যবসা হচ্ছে তাতে বলবো অল্পতেই ব্যবসা অনেক এগিয়ে গেছে।