Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দেশটাকে লাল সবুজের পতাকার মতোই দেখতে চাই

তুষার, আজাদ, কেয়া, মন্দিরা ও জেবা আনিকা। এরা পাঁচজনই বিভিন্ন প্রতিভা অন্বেষামূলক প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসেছে। এ প্রজন্মের প্রতিভাবান পাঁচ শিল্পীই প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছে শোবিজে। বিজয়ের এক দুপুরে আনন্দ আলোর স্টুডিওতে এক আড্ডায় তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আড্ডায় মহান মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা এবং দেশ নিয়ে কথা হয়। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

আনন্দ আলো: স্বাধীনতা এই শব্দটি আপনাদের কার কাছে কেমন? অর্থাৎ স্বাধীনতা মানে কী?

আবুল কালাম আজাদ: মুক্তিযুদ্ধ চোখে দেখিনি। তবে বই পুস্তক, গল্প, উপন্যাস এবং নাটক-সিনেমায় দেখে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টাকে আমি খুব অনুভব করলাম মুক্তিযুদ্ধের একটি নাটকে অভিনয় করে। বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ‘বাড়ি’ সিক্যুয়েলের ‘এইবাড়ি আমাদের’ নাটকে অভিনয় করবার সৌভাগ্য হয় আমার। অরুণ চৌধুরী নাটকটি নির্মাণ করেন। আমি এই নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে একটি বাড়ির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা খুঁজে পেয়েছি। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনায় সেরা সম্পদ।

তুষার: স্বাধীনতা একটি শব্দ। একটি লালিত স্বপ্ন। একটি প্রেরণা। একটি চেতনা। একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের নাম। স্বাধীনতা মানে রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে নীল আকাশের কোলে ঠাই নেয়া। স্বাধীনতা মানে লাখ জীবন আর সমভ্রমের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা অর্জন করা।

কেয়া চৌধুরী: স্বাধীনতা এই শব্দটি আমার কাছে এক বিশাল ব্যাপার। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি। এই ত্যাগ-তিতিক্ষা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আজ পর্যন্ত ঘটেনি। তাই আজ আমাদের দেশ স্বাধীন। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে যে দেশে আমরা বাস করছি সেখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে শান্তিময় জীবনযাপন করতে পারা।

মন্দিরা চক্রবর্তী: মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখা মাত্র যে অনুভূতি শিশুটির চোখে মুখে প্রতিফলিত হয়, ওই আনন্দঘণ মুহূর্তটি হলো আমার এবং বাংলাভাষার স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আমি চোখে দেখিনি তবে ইতিহাসের মাধ্যমে জানতে পারি মুক্তিযুদ্ধের কথা। স্বাধীনতা আমার চেতনা, আমার অহংকার।

জেবা আনিকা: বাংলাদেশ সৃষ্টির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ একটি জাতি পায় একটি স্বাধীন দেশ, একটি পতাকা, একটি ভু-খণ্ড। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর তিন লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। আমাদের অহংকার মুক্তিযুদ্ধ, মহান স্বাধীনতা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য। এসব শুধু আমাদের অহংকার না অলঙ্কার বটে। এসব চেতনাকে ঘিরেই আমাদের জীবনযাত্রা। আমাদের নিত্যদিনের অনুপ্রেরণা। আশ্বাস ও বিশ্বাস সব কিছুতেই জড়িয়ে আছে এসব।

আনন্দ আলো: দেশ আপনাদের কাছে কী চায়?

কেয়া চৌধুরী: বাঙালি জাতি হিসেবে আমার দেশ আমার কাছে এক গৌরবময় উজ্জ্বল নক্ষত্র। সবুজের মাঝখানে লাল বৃত্ত যেভাবে জ্বলজ্বল করে, আমার দেশও ঠিক তেমনি আমার কাছে। তাই তো কবি গুরুর ভাষায় বার বার বলতে ইচ্ছে করে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।

আবুল কালাম আজাদ: সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমার সোনার বাংলা। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-সমুদ্র, ভূ-প্রকৃতির সর্বোচ্চ উপস্থিতি দেখতে পাই আমাদের এই মাতৃভূমিতে। আমরা যদি পৃথিবীর ভূ-প্রাকৃতিক মানচিত্র পর্যালোচনা করি তাহলে এমন দেশ খুব কমই পাওয়া যাবে। যে দেশে একসাথে পাহাড়, সমুদ্র, নদী, সবুজ বনানী ঘেরা বিস্তির্ণ সমতল ভূ-ভাগ সমৃদ্ধ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের আমাদের ছোট্ট এই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই পৃথিবীর স্বর্গভূমি।

তুষার: বাংলাদেশ আমার প্রিয় জন্মভূমি। এই জন্মভূমিতে মাথা উঁচু করে আমরা যে বেঁচে আছি, কাজ করছি, তার জন্য লাখো শহীদের অবদান আছে। আমরা অনেকেই তাদের কথা ভুলতে বসেছি। অথচ তাদের কথা সবার আগে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা উচিত। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি দেশের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে। যেমন কখনো যদি দেশের বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে যাই তখন ঘুরেফিরে আমার দেশের কথা বলার চেষ্টা করি।

মন্দিরা চক্রবর্তী: দেশ আমার কাছে আমার মায়ের মতো। এই দেশে জন্ম নিয়ে আমি ধন্য হলাম। বাংলাদেশ আমার অহংকার।

জেবা আনিকা: ভৌগলিক দিক থেকে দেশ বলতে বুঝানো হয় একটি ভূ-খণ্ডকে। কিন্তু এ দেশ আমাদের এত কিছু দিয়েছে যে কখনোই এটিকে একটি ভূ-খণ্ড বলব না। আমার দেশ আমার ঘর, আমার পরিবার। মমতাময় পরিবারের এই দেশটাও আমার কাছে অনেক আপন।

আনন্দ আলো: দেশ নিয়ে আপনাদের ভাবনা কেমন?

তুষার: আমি মনে করি আমাদের দেশ বিভিন্ন মাধ্যমে এখন অনেক ভালো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। একটি দেশের উন্নতির প্রধান শর্তই হলো ভালো কাজ, সুস্থ চিন্তা আর দেশ প্রেম। দেশটা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাক। সুন্দর নির্মল হোক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

আবুল কালাম আজাদ: আমি চাই পুরো দেশের মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার প্রজন্ম এবং বর্তমান প্রজন্ম সবাই যেন স্বাধীনতার সেই চেতনা বুকে লালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেন। তবেই আমাদের দেশ হবে সত্যিকার অর্থেই সুখী সমৃদ্ধশীল একটি দেশ। যে দেশ আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে যাবে একদিন।

কেয়া চৌধুরী: দেশ নিয়ে আমার ভাবনা হচ্ছে আমি চাই আমাদের লাল সবুজ পতাকা শোভিত দেশটিতে মাঠ ভরা শস্য, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছে ভরপুর থাকুক। আমরা যাতে উচ্চস্বরে বলতে পারি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ।

মন্দিরা চক্রবর্তী: দেশ নিয়ে আমার ভাবনা হচ্ছে সত্যই আমরা যদি পুরোপুরি ডিজিটাল ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি তবে মানব সভ্যতা আবার সুন্দরভাবে ফিরে আসবে। থাকবে না কোনো জঙ্গিবাদ, থাকবে না কোনো দেশদ্রোহী।

জেবা আনিকা: দেশ নিয়ে আমার ভাবনা সব সময়ই পজেটিভ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশ একদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থাকবে না। দুর্নীতি বন্ধ হবে। শিক্ষার হার বাড়বে। রাস্তার যানজট থাকবে না এমন একটা দেশ আশা করতে পারি।

আনন্দ আলো: দেশ নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা কী?

08_2তুষার: বাংলাদেশ আমার প্রিয় জন্মভূমি। জন্মভূমিকে নিয়ে মানুষের কত স্বপ্ন থাকে। আমারও অনেক স্বপ্ন আছে। আমি চাই বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। যে দেশে থাকবে না হিংসা, বিদ্বেষ, যানজটে কালো ধোঁয়া আর মশার উপদ্রব। এসব নাগরিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সকলেরই একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। আমরা তরুণ প্রজন্ম চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকুক। তবেই দেশটা সুন্দর হবে।

আবুল কালাম আজাদ: বাংলাদেশ আমার স্বপ্নের দেশ। এ দেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত। তবে কিছু সমস্যা আমাদের উন্নতির পথে বাঁধা। আমার ভাবনার মধ্যে আছে এদেশে কোনো লোক বেকার থাকবে না। কেউ বসে থাকবে না। সবার কর্মসংস্থান হবে। একটা উন্নত নিরাপদ দেশ হবে বাংলাদেশ। ঢাকা শহরে কিছু সমস্যা আমাকে ব্যথিত করে। যানজট, বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণ, এসব সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। আমি যেহেতু মিডিয়াতে কাজ করি সেহেতু আমি চাই মিডিয়ায় সুস্থ বিনোদন মানুষকে বিনোদিত করবে।

কেয়া চৌধুরী: দেশ নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বড় নয়। খুবই ছোট। একটা মেয়ে যেন রাত ১০টায় একা একা রাস্তায় চলতে পারে তেমন একটা দেশ দেখতে চাই। বাহিরে গিয়ে বিপদে পড়ে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে কোনো কাজ করাতে হবে না এরকম একটা দেশ চাই। লাল সবুজের পতাকার মতো আমাদের দেশটাকেও লাল সবুজের মতো দেখতে চাই।

মন্দিরা চক্রবর্তী: দেশ আমার মা। আমার মাকে নিয়ে আমার প্রত্যাশা বা অহংকারের কোনো শেষ নাই। এই দেশ একদিন সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বের প্রথম শ্রেণির দেশ হিসেবে উন্নত হবে।

জেবা আনিকা: একটা নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি সব সময়। ঢাকা শহরের এতো সমস্যা, যানজট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং আমাকে খুবই ব্যথিত করে।