Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দুই বন্ধুর ভালোবাসায় গড়া এক্স ইন আর্কিটেক্টস

মোহাম্মদ তারেক: বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন বন্ধুত্ব মানে আস্হা আর নির্ভরতা।  কেউ বলেন বিপদে-আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই হলো প্রকৃত বন্ধু।  আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সব কিছু।  যার কোনো ভালো বন্ধু নেই তার চেয়ে অভাগা নেই।  তাহলে বন্ধুত্বের সাথে যুক্ত হলো ভালো শব্দটি।  এই ভালো মানে কী? এই ভালো মানেই আস্হা আর নির্ভরতা।  প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  সে জন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে- যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখী।  হ্যাঁ, একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক।  তেমনি দুজন ভালো বন্ধু স্হপতি মো: মাহবুব হাসান ও আহমদ শাহরিয়ার কবীর।  ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা, সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে স্হাপত্য শিল্পে কাজ করে চলেছেন তারা দু’জন।  দু’জনই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্হাপত্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন।  বর্তমানে দুই বন্ধুই গ্রামীণ ফোনের স্পেশালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  চাকরির পাশাপাশি নিজেদের গড়া ‘এক্স ইন আর্কিটেস্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের দেখাশোনা করছেন।  ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র তৈরি করে অনেকের নজর কেড়েছে।  দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট আর্কিটেক্ট মো: মাহবুব হাসান।  তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়।  কিন্তু তার বেড়ে ওঠা রাজশাহী ও খুলনায়।  মাহবুবের বাবা মো: মুসলিম আলী রূপালি ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন।  মা নূরজাহান বেগম গৃহিণী।  ছোটবেলা থেকে মাহবুবের ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়ার।  হয়েছেনও।  রাজশাহীর সরকারি ল্যাবরেটরী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৫ সালে।  ১৯৯৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্হাপত্য বিভাগে।  মো: মাহবুব হাসান ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রিলাভ করেন ২০০৪ সালে।  পাস করে বের হওয়ার কিছুদিন পর যোগ দেন ইস্টার্ণ হাউজিং এ।  সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দুই বছর চাকরি করেন।  স্হাপত্য বিভাগে পড়াশোনার সময় স্হপতি আহমদ শাহরিয়ার কবীরের সঙ্গে পরিচয় হয়।  দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব।  স্হপতি আহমদ শাহরিয়ার কবীরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিশোরগঞ্জে।  তার বাবা শাহাব উদ্দিন আহমদ বিএডিসির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।  মা বিলকিস দিলারা আহমদ গৃহিনী। পরিবারের একমাত্র সন্তান কবীর।

কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৫ সালে।  ১৯৯৭ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্হাপত্য বিভাগে।  ২০০৪ সালে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি ভিস্তা ইন্টেরিয়র লিমিটেড নামের একটি ফার্মে এক বছর চাকরি করেন।  এরপর ২০০৬ সালে বন্ধু মাহবুবের সঙ্গে তিনিও অফিসার পদে যোগ দেন গ্রামীণফোনে।  সেখানে তিনি স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

1g Office-at-Chittagong_01২০১০ সালে স্হপতি মো: মাহবুব হাসান ও স্হপতি আহমদ শাহরিয়ার কবীর দুই বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘এক্স ইন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম।  ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা অফিস কমপ্লেক্স, কমার্শিয়াল টাওয়ার, শোরুমসহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছে।  তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেণ্ড গুলশান-২ এর ওয়ালমার্ট হেড অফিসের ডিজাইন, চট্টগ্রামের ওয়ালমার্টের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র, ধানমন্ডির আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, গুলশান-১ এর প্রথম কেএফসি’র ইন্টেরিয়র, উদয় টাওয়ারের ‘লি এন্ড ফাং বাংলাদেশ’ এর ইন্টেরিয়র, উত্তরার মি: সাজ্জাদ আলম রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, বদরুল আলম রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, সাহেদ মনসুর রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, ফারহানা আক্তার জাহান রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, কুমিল্লার আফছার উদ্দিন রেসিডেন্স-কমার্শিয়াল বিল্ডিং ডিজাইন, নিকুঞ্জের আর্টসেল ব্যান্ডের গিটারিস্ট সেজানের ডুপলেক্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, বনানী ডিওএইচএসের মি: তুহিনের রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, খিলগাঁওর ডলি আপার রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, বসুন্ধরার আফজাল হোসেনের রেসিডেন্সের ইন্টেরিয়র, মিরপুর-১৪ নম্বরের রোকসানা জাহানের রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, খুলনার বিভিন্ন জায়গায় এমসিএফ বিল্ডার্সের ৮টি প্রজেক্টের ডিজাইন, সারা বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের ডিজাইন, রেনোভেশন এন্ড ইন্টেরিয়রসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।  এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

নবদম্পতির বাসা কী ধরনের হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে স্হপতি মো: মাহবুব হাসান বলেন, নবদম্পতির বাসাটি হবে খুব ছিমছাম ও পরিপাটি।  শোবার রুমটি হতে পারে একটু রোমান্টিক।  একটি দেয়ালে রং এর ভিন্নতা ও হাল্কা আলোর উৎসের উপস্হিতি ঘরে ভিন্ন আবহ এনে দিতে পারে।  দেয়ালে ঝোলানো নিজেদের স্মরণীয় মুহূর্তের কিছু সুবিন্যস্ত ছবি সেই আবহ বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ।

বসার ঘর ও খাবার স্হানটি হতে পারে অল্প কিছু ফার্নিচার দিয়ে সাজানো।  এখানেও দেয়ালে রং এর ভিন্নতা ও মানানসই হাল্কা আলোর উৎসের ব্যবহার পরিবেশে ভিন্নতা আনবে।  অল্পকিছু সতেজ গাছের উপস্হিতিও থাকতে পারে।

রান্না ঘরটি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম তৈজসপত্র ও ফার্নিচার দিয়ে সাজালেই ভালো দেখাবে।  বারান্দায় জায়গা থাকলে বিকেলে বসার একটা ব্যবস্হা বা টবে গাছ লাগিয়ে ছোট একটা বাগানও তৈরি করে নেয়া যায়।

কাজের বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকে স্হপতি আহমদ শাহরিয়ার কবীর বলেন, প্রতিটা মানুষ যেমন স্বতন্ত্র, তার পছন্দ ও জীবন যাপন পদ্ধতিও তেমন স্বতন্ত্র।  এই ব্যাপারটাই ঘরবাড়ি ডিজাইনের ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণা।  আমাদের কাছে যখন একজন ক্লায়েন্ট তার ভবন বা বিল্ডিং এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য আসেন।  তখন তার প্রথম চাওয়াই থাকে তার স্বপ্নের ভবন, বাসগৃহ বা অফিসটা যেন হয় দৃষ্টিনন্দন ও ভিন্ন আঙ্গিকের হয়।  তারপরেই থাকে তার ব্যবহারিক দিকগুলো।  এরপরে আসে জমি বা গৃহের আয়তন ও উপযোগিতা এবং ক্লায়েন্টের আনুমানিক বাজেট।  এ সব কিছুর সাথে আমাদের সমসাময়িক ডিজাইন কনসেপ্ট, মেটেরিয়াল টেক্সচার, রং ও আলোর বিন্যাস মিলে তৈরি হয় ভিন্ন আমেজের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন।  বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন তারা দুজন।  স্হাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মাহবুব হাসান ও শাহরিয়ার বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে সমসাময়িক স্হাপত্যের বিকাশে অবদান রাখতে, ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে একটা ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে আনতে।  নান্দনিক ডিজাইন নিয়ে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি যেতে চাই।  অনেকের মধ্যেই একটা ধারণা আছে যে আর্কিটেক্ট শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করেন অথবা আর্কিটেক্ট নিয়োগ করলে খরচ বেড়ে যাবে।  আমরা তাদেরকে এই ধারণা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।  ইচ্ছা আছে নিজেদের গড়ে তোলা স্টুডিওকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আর্কিটেক্টরা এখান থেকেই তাদের স্হাপত্য পেশায় পথ চলার অনুপ্রেরণা নিতে পারে।