Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দুই বন্ধুর প্রজেক্ট মুক্তাঞ্চল

মোহাম্মদ তারেক

বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন বন্ধুত্ব মানে আস্থা আর নির্ভরতা। কেউ বলেন বিপদে আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই হলো প্রকৃত বন্ধু। আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সবকিছু। যার কোনো ভালো বন্ধু নেই তারচেয়ে অভাগাও কেউ নেই। তাহলে বন্ধুত্বের সঙ্গে যুক্ত হলো এই ভালো শব্দটি। এই ভালো মানে কী? এই ভালো মানেই আস্থা আর নির্ভরতা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখী। হ্যাঁ, একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক। তেমনি দুজন ভালো বন্ধু সানি ও আরাফাত মহসীন। মিউজিককে ভালোবেসে সঙ্গীতাঙ্গনে একসঙ্গে কাজ করে চলেছেন তারা দুজন। এ সময়ের প্রতিভাবান শিল্পীদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে অডিও, জিঙ্গেল, প্লেব্যাক, মিউজিক ভিডিও এবং স্টেজ প্রোগ্রামে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সানি। সঙ্গীতের প্রতিটি বিভাগেই সমান তালে এগিয়ে চলেছেন প্রতিভাবান এই শিল্পী। ধীরে ধীরে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসার্টে “এই হৃদয়”, “আনন্দ ভৈরবী”, “ভালোবাসা নিস” এই গানগুলো গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের নজরে আসেন সানি। এরপর নিজের লেখা, সুর করা বেশ কিছু গান গেয়েছেন তিনি। তবে তার স্বপ্ন ছিল সলো অ্যালবাম প্রকাশ করার। সম্প্রতি পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রকাশ পেয়েছে সানির প্রথম সলো অ্যালবাম ‘সানির মুক্তাঞ্চল’। অ্যালবামে থাকছে নয়টি গান। একটি ইনস্টুমেন্টাল।

গানগুলো হলো- ‘এই হৃদয়’, ‘তুমি কি জানতে’, ‘পাখির গান’, ‘আনন্দ ভৈরবী’, ‘একদিন এক রাত’, ‘এই হৃদয়-২’, ‘লোকাল প্রেমের গান’, ‘শহরের গান’ এবং ইংরেজি গান আই ডিগ এ হলি। পাঁচটি গান কবিতা থেকে করা হয়েছে। গানের কথা লিখেছেন জীবনানন্দ দাস, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, আহমদ ছফা, ওয়াহিদ ইবনে রেজা ও আয়েশা মাহমুদ। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি অ্যালবামের চারটি গানের কথা ও সুর রচনা করেছেন সানি নিজেই। সঙ্গীতায়োজন করেছেন বন্ধু আরাফাত মহসীন।

‘সানির মুক্তাঞ্চল’ অ্যালবামটি নিবেদন করেছে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল। পাওয়ার্ড বাই রেডিও এবিসি। ডিজিটাল অ্যালবামটি প্রকাশ পাওয়ার পরে সিডি আকারে বাজারে আসবে। প্রথম একক অ্যালবাম প্রসঙ্গে সানি বলেন, জীবনের প্রথম সলো অ্যালবাম এক কথায় অসাধারণ অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

গতানুগতিক ধারার বাইরে অ্যালবামের গানগুলো করেছি। প্রতিটি গানের মধ্যে ভিন্নতা আছে। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে শ্রোতাদের চমক দেয়ার লক্ষ্যেই ডিজিটাল অ্যালবামটি প্রকাশ করছি। আশা করি ভিন্ন ধরনের গানগুলো শ্রোতাদের ভালো লাগবে। এরই মধ্যে ‘সানির মুক্তাঞ্চল’ অ্যালবামের এই হৃদয়, আনন্দ ভৈরবী গানগুলো শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লোকাল প্রেমের গান, এই হৃদয় গান দুটি মিউজিক ভিডিও করা হয়েছে। এরই মধ্যে এয়ারটেল বাজ আর ইউটিউব-এর স্টুডিও এইট চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে মিউজিক ভিডিও দুটি। ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন কম্পোজার আরাফাত মহসীন। এছাড়াও অ্যালবামের গানগুলো রেডিও এবিসিতে শুনতে পাওয়া যাবে।

airtel-1ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছেন সানি। স্কুলজীবন থেকে গিটার বাজানো ও গান লেখা শুরু তার। সানির গিটারে হাতে খড়ি তার মামার কাছে। তারপর থেকে গিটারে টুং টাং করে সুর তুলতেন আর একটা দুটা করে গান গান গাওয়ার চেষ্টা করতেন। একসময় তার মনের ভেতরে বাসনা জাগলো সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার। নিজেই লিখতেন, সুর করতেন, আবার কণ্ঠও দিতেন। গাইতে গাইতে এখন সঙ্গীতের আকাশে সুর নিয়ে খেলা করেন তিনি। ইতোমধ্যে সানি তার গায়কী দিয়ে আধুনিক সঙ্গীত শ্রোতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন।

সানির গান গাওয়ার অনুপ্রেরণার পেছনে রয়েছে তার মা। মা ছিলেন সঙ্গীত প্রিয় মানুষ। মা গুণ গুণ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, হারানো দিনের গানগুলো গাইতেন। আর সেইগুলো শুনতেন সানি। অ্যালবামের বাইরে নাটকেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের একটি নাটকে ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ গানটি গেয়েছিলেন। এছাড়া টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনে প্রচার চলতি আশুতোষ সুজন পরিচালিত ‘থ্রি সিষ্টার’ ধারাবাহিক নাটকের থিমসংটিও তার গাওয়া। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলেও পিছিয়ে নেই সানি।

২০১৫ সালে সানি প্রথম বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেন। জিঙ্গেলটি ছিল আরাফাত মহসীনের সঙ্গীতায়োজনে ‘মোজো’। এই জিঙ্গেলটি শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছেন সানি। তার গাওয়া জিঙ্গেলগুলো হলো- ‘আরএফএল’, ‘বাংলালিংক’, ‘এয়ারটেল’, ‘এপেক্স’, ‘ইস্পাহানি চা’, ‘ইস্পাহানি পানি’, ‘এখানেই ডট কম’ ইত্যাদি। সবগুলো জিঙ্গেলের মিউজিক করেছেন আরাফাত মহসীন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেয়ার কথা চলছে। এই সঙ্গীত শিল্পী জিঙ্গেলের কাজটা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। ইতোমধ্যে সানি প্লেব্যাকের কাজটাও সেরে ফেলেছেন। এদিকে সানির ‘কে আর বাজাতে পারে’ গানটির মিউজিক ভিডিওর কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে ভিডিওটি। বর্তমানে তিনি নতুন একটি অ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। অ্যালবামটি প্রসঙ্গে সানি বলেন, আমার দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ চলছে। একটু সময় নিয়ে কাজটা করছি। এরই মধ্যে দু একটা গানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

অডিও, প্লেব্যাক, জিঙ্গেল ও স্টেজ কোন মাধ্যমে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? প্রশ্নের জবাবে সানি বলেন, অডিও মাধ্যমে সুবিধা হলো এখানে নিজের ইচ্ছে মতো গান করা যায়, আবার চলচ্চিত্রের গান অনেক দিন বেঁচে থাকে, জিঙ্গেলে অল্প সময়ের মধ্যে গান গাওয়াটা খুবই মজার স্টেজে গান গাওয়ার মাঝে রয়েছে অন্য রকম এক আনন্দ। স্টেজ থেকে সরাসরি দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখার মজাই আলাদা।

ভবিষ্যতে জিঙ্গেলের পাশাপাশি ভালো কিছু গান করার ইচ্ছে আছে তার। তিনি মনে করেন ভালো কিছু গান করতে পারলে সারাজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা সম্ভব।

আরাফাত মহসীন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় কম্পোজারদের মধ্যে একজন। ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল, অডিও অ্যালবাম এবং চলচ্চিত্রের গানে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেছেন। মিউজিক হচ্ছে তার কাছে সাধনা। গানের মাঝেই তার বেড়ে ওঠা। আরাফাত মহসীনের বয়স যখন সাত বছর তখন থেকেই তার তবলা বাজানো শেখা শুরু। তাদের বাসায় গানের আসর বসতো। বাবা-মা দুজনেই হারমোনিয়া নিয়ে গান করতেন। গানের সঙ্গে তবলা বাজাতেন আরাফাত। আর স্বপ্ন দেখতেন মিউজিক নিয়ে। ওলেভেলে পড়ার সময় জীবনের প্রথম বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল-এর কাজ করেন। ২০১১ সালে এয়ারটেল থেকে প্রকাশ হয় আরাফাত মহসীনের প্রথম অ্যালবাম আরাফাত মহসীন ফিচারিং ‘পলবাশা’। এরপর বাজারে আসে তার দ্বিতীয় অ্যালবাম স্টুডিও ফিফটি এইট এন্ড সিঙ্গারস। ২০১০ সালে আরাফাত প্রথম বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে মিউজিক করেন। জিঙ্গেলটি ছিল বাংলালিংকের রেমিটেনস। এরপর এয়ারটেলের ময়না বিজ্ঞাপনটি ছিল তার জীবনের টানিং পয়েন্ট। এই জিঙ্গেলটি দর্শক শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এখনো পর্যন্ত এয়ারটেলের ‘আকাশ থেকে নেমে এলো ছোট্ট একটি ময়না’ সবার মুখে মুখে শোনা যায়। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক জিঙ্গেল তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য জিঙ্গেলের মধ্যে রয়েছে- ‘রবি’র ফুরিয়ে যায়’, ‘সামার গিলে খায় মোজো’, ‘টেংগো আমার চুমুক’, ‘রবির ইউন্ডার’, ‘ইস্পাহানী চা’, ‘ইস্পাহানী পানি’, ‘বাংলালিংক’, ‘আরএফএল’, ‘এপেক্স’, ‘এখানেই ডট কম’ ইত্যাদি।

বর্তমানে বেশ কিছু জিঙ্গেলের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। সম্প্রতি আরাফাত মহসীনের সঙ্গীতায়োজনে এয়ারটেল থেকে প্রকাশ হয়েছে সানির মুক্তাঞ্চল অ্যালবামটি। মুক্তাঞ্চল অ্যালবামটি প্রসঙ্গে আরাফাত বলেন, সানির গান আমার খুবই প্রিয়। ও খুব ভালো গান গায়। ওর ভেতরে দারুণ প্রতিভা রয়েছে। একটা সময় মনে হলো ওর গানগুলো নিয়ে একটা অ্যালবাম বের করা যায়। এরপর ২০১৫ সালে আমরা দুজন মিলে কাজটা শুরু করি। সানির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি একজন ভালো বন্ধু পেয়েছি, যার সঙ্গে কি না আমার ভাবনাগুলো শেয়ার করার যায়। অডিও অ্যালবাম, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলের বাইরে তিনি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। যেমন রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘আইসক্রীম’ সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকসহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। তার সঙ্গীত পরিচালনায় ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ গেয়েছেন ‘কারে দিবা মন’, অর্ণব গেয়েছেন ‘বোকাচাঁদ’ ও তাহসান কণ্ঠ দিয়েছেন ‘ভুল ভালোবেসে’। আগামীর স্বপ্ন কী? জানাতে চাইলে আরাফাত বলেন, ভবিষ্যতে আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ভালো কম্পোজার হতে চাই।