Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তিনবন্ধুর চিন্তন আর্কিটেক্টস

বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন বন্ধুত্ব মানে আস্থা আর নির্ভরতা। কেউ বলেন বিপদে আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই হলো প্রকৃত বন্ধু। আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সবকিছু। যার কোনো ভালো বন্ধু নেই তার চেয়ে অভাগাও কেউ নেই। তাহলে বন্ধুত্বের সঙ্গে যুক্ত হলো ‘ভালো’ শব্দটি। এই ভালো মানে কী? এই ভালো মানে আস্থা আর নির্ভরতা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে, যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখী। হ্যাঁ, জীবন গড়ার ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধুর ভ‚মিকা অনেক। এই বাস্তবতায় ওরা তিনজন স্থপতি মো: ইসহাক মিয়া, স্থপতি নীমান করিম ও স্থপতি বুশরা হোসেন অনেক ভালো বন্ধু। আধুনিক স্থাপত্যশৈলির সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তারা। তিনজনই আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগ থেকে পাস করেছেন। তিন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন ‘চিন্তন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। যা এখন এ দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান। চিন্তন আর্কিটেক্টসকে একটা আস্থার জায়গায় আনার পেছনে রয়েছে এই তিন বন্ধুর নিরলস সংগ্রাম ও পরিশ্রম। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করে অনেকের নজর কেড়েছে। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তিন বন্ধুকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
সাত ভাই বোনের মধ্যে ষষ্ঠ আর্কিটেক্ট মো: ইসহাক মিয়া। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার চকবাজারে। ইসহাকের বাবার নাম মরহুম মো: ইসমাইল মিয়া। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা সাহেরা খাতুন গৃহিণী। স্কুলে পড়াকালীন ইসহাকের ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা, ফটোগ্রাফি করা, সাইক্লিং তার পছন্দের বিষয়। সময় পেলে সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান তিনি। স্থপতি মো: ইসহাক মিয়া ২০০৩ সালে আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর তিনি যোগ দেন স্বনামধন্য আর্কিটেকচার ফার্ম তানিয়া করিম এসোসিয়েটস-এ। সেখানে তিনি দুই বছর কাজ করেন। এরপর এক বছর শিক্ষকতা করেন এক্সইন ইন্টেরিয়র ফার্মে। স্ত্রীর নাম জাকিয়া আহমেদ অরিন। এই দম্পতির রয়েছে চার বছর বয়সের এক কন্যা সন্তান।
স্থপতি নীমান করিমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। নীমানের বাবা এনায়েত করিম ‘ইন্টারস্পীড’ অ্যাড ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মা ফাহমিদা করিম। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে নীমান করিম সেঝ। ২০০৩ সালে তিনি আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই নীমান করিম শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন একই বিশ্ববিদালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি যুক্ত হন তানিয়া করিম এসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিন বছর চাকরি করার পর ২০০৭ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান কানাডায়। নীমান করিম কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো থেকে আরবান ডিজাইন এর ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পাস করার পর তিনি আরবান ডিজাইনার হিসেবে যোগ দেন কানাডার বোগডান নিউম্যান কারেন্সী কোম্পানীতে। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে এসে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন।
স্থপতি বুশরা হোসেনের বাবার নাম আকবার হোসেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা শামীম হোসেন একজন শিক্ষিকা। দুই ভাই বোনের মধ্যে বুশরা সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই বুশরার ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। নিজের ইচ্ছা থেকেই আর্কিটেক্ট হওয়া তার।
১৯৯৩ সালে বুশরা হোসেন উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান আমোরিকায়। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে ডিজাইন অব এনভাইরনমেন্ট এর ওপর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি যোগ দেন স্থপতি উত্তম কুমার সাহার ফার্মে। সেখানে তিন বছর কাজ করেন। পরবর্তীতে বুশরা ভর্তি হন আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগে। ২০০২ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সালে ইসহাক ও নীমান করিম দুই বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘চিন্তন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। পরবর্তীতে স্থপতি বুশরা হোসেন ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন।

স্থপতি মো: ইসহাক মিয়া এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে আছেন নীমান করিম। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, ক্লিনিক, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং বাংলো সহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ সৈয়দপুর ও রংপুরে বটতলা, মদনপুরে পারটেক্স জিপসাম ফ্যাক্টরী বিল্ডিং, পারটেক্স ফানিশার্স ফ্যাক্টরী বিল্ডিং, আশুলিয়ায় বিডি সু ফ্যাক্টরী বিল্ডিং, মহাখালি ডিওএইচএসএ ক্রাইটেরিয়া মান্নাফ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, নারায়নগঞ্জে পারটেক্স ক্যাবল ফ্যাক্টরীর ইন্টোিরয়র, গুলশান-২ এ ক্রাইটেরিয়া নূরুন নবী অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, বার্গার কিং এর ইন্টেরিয়র, ইন্দিরা রোডে হেমস হিউস, ত্রিপল এ ইআর হেড অফিস, পাঠাও এবং উবার হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, গুলশান ১ এ বি প্রপার্টি হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, মোহাম্মদপুরে পিউনি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, গাজীপুরে ওয়েলনেস ক্লিনিক সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা।
চিন্তন আর্কিটেক্টস এর পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মো: ইসহাক মিয়া বলেন, স্থাপত্যে শৈল্পিক চর্চা করার একটি বিশাল জায়গা বিদ্যমান। তার সাথে যদি কারিগরি জ্ঞান সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলেই যথাযথ ফল সবার কাছেই প্রকাশ পায়। আমাদের কাজের ধরণ সেটা স্থাপত্যের বাহ্যিক কাঠামোতেই হোক কিংবা অভ্যন্তরীন সাজ সজ্জায় হোক যাতে একটা মেলবন্ধন থাকে সেটা পরিস্কার করা। আমরা সব সময় চেষ্টা করি আমাদের স্থাপত্যচর্চা যাতে বিভিন্নভাবে তার সমহিমায় ভালোবাসায় সিক্ত থাকে সবার কাছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন তারা।
স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি ইসহাক বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতে আমাদের কাজ সর্ব সাধারনের জন্য উপকারি, গ্রহণযোগ্য এবং সর্বপরি কাজের মাধ্যমে সম্মাননা অর্জন করুক।