Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তাহাদের যাবজ্জীবন গল্প

সৈয়দ ইকবাল

এক লাখ টাকার একটি বান্ডিল। সব এক হাজার টাকার নোট। টাকার বান্ডিলটি জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান হাতে নিয়ে অভিনেতা নিশোর সামনে ঘুরাচ্ছেন। তা দেখে নিশো খুব ‘ভেবাচেকা’ খাচ্ছে। টাকাার প্রতি লোভ হচ্ছে তার। দুই অভিনেতার মধ্যে যখন এমন অবস্থা, তখনই কেউ একজনের ‘কাট’ শব্দে টাকা বিষয়ক ঘোরটি কেটে গেল।

পাঠক, দৃশ্যটি একটি ধারাবাহিক নাটকের। নাম যাবজ্জীবন। পরিচালক সাজ্জাদ সুমন আবারো দৃশ্যটি নেয়ার প্রসৱুতি নিলেন। ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো… অ্যাকশন বলেই পরিচালক শুরু করলেন শুটিং। আবারো টাকার বান্ডিল নিয়ে নিশোর সামনে হাজির হলেন এটিএম শামসুজ্জামান। এবার দৃশ্যটি ওকে হলো।

পরবর্তী দৃশ্য নেয়ার জন্য পাশের রুম প্রসৱুত হচ্ছে। এরই মাঝে কথা হয় নাটকটির পরিচালক সাজ্জাদ সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন বর্তমানের নাটক নিয়ে কিছু কথা। তার মতে ‘টেলিভিশন নাটকের প্রতি দর্শক দিন দিন কেমন জানি বিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। অনেক আয়োজন করে আমরা নির্মাতারাও নাটক নির্মাণ করতে পারি না স্বল্প বাজেটের জন্য। তারপরও স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি এই অঙ্গণকে নিয়ে। দর্শকদের আসলে রুচির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিছুদিন আগে টেলিভিশন নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’-এর নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের উচিৎ এখন কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়া। শুধু নির্মাতারই নয়, টেলিভিশনের সকল শিল্পী-কলাকুশলীদের এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। না হয় টিভি মিডিয়া হারিয়ে যাবে’। অনেকটা আফসোসের সুরেই কথা গুলো বললেন সাজ্জাদ সুমন।

পরবর্তী দৃশ্যের জন্য সেট তৈরি হলো। এবার অভিনয় করবেন অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী ও নাদিয়া নদী। রোজী সিদ্দিকী বাড়ির কাজের মহিলা এবং নাদিয়া নদী বাড়ির ছোট মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। দু’জনের হাস্যরসাত্মক একটি সিক্যুয়েন্সের দৃশ্য ধারন করা হল। এরই মধ্যে কথা হয় নাটকটির লেখক শফিকুর রহমান শানৱনুর সঙ্গে। নাটকের নাম যাবজ্জীবন কেনো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা তো জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যনৱ একটি অদৃশ্য জেলেই বন্দি থাকি, তাই না? চাইলেই কী কোথাও হারিয়ে যাওয়া যায়? বোধকরি না। এই যে জগৎ সংসার এখান থেকে যে চাইলেই পালানো যায় না এবং এখানকার সুখ-দু:খ, হাসি-কান্না সব নিয়েই আমাদের জীবন। আমি এই বিষয়টাকে একটি পরিবারের গল্প দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। যা ‘যাবজ্জীবন’ ধারাবাহিকটির মাধ্যমে ফুটে উঠবে।’ শানৱনুর কথা শেষ হতে না হতেই পরবর্তী দৃশ্য নেয়ার জন্য প্রসৱুত শুটিং ইউনিট।

এবার অভিনেতা ফারুক আহমেদ ও নাদিয়া নদীর অভিনয় দৃশ্য। ফারুক আহমেদ বাড়ির দরজায় কলিং বেল চাপে। বাড়ির দরজা খোলে নাদিয়া নদী। দু’জনের আলাপচারিতার প্রথম পার্ট টুকু নেয়া হয় একটা মাস্টার শটে। শ্যুটিং চলতেই থাকে।

মেকআপ রুমে তখন বসেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান ও চিত্রলেখা গুহ। কথা হয় দু’জনের সঙ্গে। এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘অনেক দিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। নাটকের গল্পে আমার চরিত্রটি বেশ মজার। অভিনয় করে মজা পাচ্ছি। কিন্তু এতো কষ্ট করে এই বয়সে অভিনয় করে লাভ কী? দর্শক তো আমাদের নাটক দেখতে চায় না।’ এর কারণটা কী বলে আপনি মনে করেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকেই নাটকের গল্প ও মেকিংকে দায়ী করছে। কিন্তু আমার অভজারভেশনে সেটা মনে হয় না। কারন আগের চেয়ে অনেক ভালো ভালো গল্পে কাজ হচ্ছে এবং নতুন নতুন অনেক মেধাবী নির্মাতা ও গল্প লেখক মিডিয়ায় এসেছেন। এতোদিন ধরে কাজ করছি- এইটুকু বোঝার  মতো অবস্থাতো হয়েছে। আমাদের নাটক যদি না-ই দেখে তাহলে ইউটিউবে একেকটি নাটকের এতো লক্ষ লক্ষ ভিউয়ারস কেনো? আসলে দর্শককে নাটক দেখার সুযোগটা করে দিতে হবে। দর্শকদের সময়ের অনেক দাম আছে। মানুষের ব্যসৱতা বেড়েছে। তাই অনেকেই অল্প সময়ের জন্য টিভি সেটের সামনে বসেন। তখন দেখার কিছু না পেলে তারা বিদেশী চ্যানেলে চলে যাচ্ছে। আরেকটা বিষয় হলো নাটকের বাজেট আসলেই বাড়াতে হবে। এতো অল্প টাকা দিয়ে আধুনিক নাটক নির্মাণ করা বেশ কষ্টের।’ চিত্রলেখা গুহ গুণী এই অভিনেতার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। তিনি বললেন, ‘আসলেই তাই। আমাকে অনেক সময় অনেক জায়গায় মানুষ জিজ্ঞাসা করে থাকেন- ‘আপনি কী নাটকে আর অভিনয় করেন না?’ তাদের কথা শুনে অবাকই হই। অথচ আমি নিয়মিত অভিনয় করি।’

Rosy-Shelimআবারও কথা হলো নির্মাতার সঙ্গে। তিনি নাটকটির গল্প বললেন এভাবে- ‘নাটকের গল্পে দেখা যাবে ছোটনদের ছোট্ট একটি ফ্যামিলি। তার বাবা চাকরিজীবি। তিনি যে সেক্টরে কাজ করেন সেখানে দু’হাতে ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আছে। তিনি সেই সুযোগের সদব্যবহার করেন যথারীতি। কিন্তু অসম্ভব কৃপণ। হিসাব ছাড়া একটা টাকা এদিক ওদিক খরচ করেন না। এই নিয়ে পরিবারের লোকেরা তার ওপর মহাবিরক্ত। ছোটনের মা অল্পশিক্ষিত সহজ সরল স্বভাবের মহিলা। কিন্তু বর্তমানে টাকা হওয়ায় মডার্ন হওয়ার চেষ্টায় আছেন। তাই কথায় কথায় ভুল ইংরেজি চর্চা করেন। ছোটনের একটা ছোট বোন আছে। অনার্সে পড়ছে। তার স্বভাব হচ্ছে ঘন ঘন প্রেমে পড়ে। ছোটন সদ্য পড়াশুনা শেষ করে বেকার। সেও তার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে নিত্য নতুন বিজনেস প্ল্যান করে। কিন্তু মূলধনের অভাবে পিছিয়ে আসে। বাবার কাছে বহুবার টাকা চেয়েছে। কিন্তু বাবা ছোটনকে এক পয়সাও দিতে নারাজ। কারণ বাবার ধারণা, এই টাকা একবার ঘরের বাইরে গেলে আর ফেরত আসবে না। ছোটন তার বন্ধুকে নিয়ে মাছের খামার করবে বলে জায়গা দেখতে যায়। এক দালালের খপ্পরে পড়ে সব টাকা হারায়। এরকম নানান ঘটনায় এগুতে থাকবে ধারাবাহিকটির গল্প।

জান্নাতুল টুম্পা প্রযোজিত নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান (ছোটনের বাবা), চিত্রলেখা গুহ (ছোটনের মা), আফরান নিশো (ছোটন), সানজিদা প্রীতি (পিউ), ইরফান সাজ্জাদ (রাশেদ), নাদিয়া নদী (টুনি), আরফান আহমেদ (চোর), ফারুক আহমেদ (চোরের বড় ভাই), রোজি সিদ্দিকী (কাজের মেয়ে পরী), কে এস ফিরোজ (পিউয়ের বাবা) ও শম্পা রেজা (পিউয়ের মা)।