Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তখন গর্বে বুক ভরে যায় : লক্ষ্মী

আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের এক জীবনত্ম কিংবদনিত্ম নায়করাজ রাজ্জাক। একজন অভিনেতা থেকে লক্ষ কোটি মানুষের প্রিয় অভিনেতা এবং জীবনত্ম কিংবদনিত্ম হয়ে উঠার পেছনে কিছু বিশেষ ব্যক্তির অবদান অবশ্যই রয়েছে। তবে এর মধ্যে একজন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি আর কেউ নন নায়করাজের প্রিয়তমা স্ত্রী লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর পুরো নাম খায়রুন্নেসা। পারিবারিকভাবে লক্ষ্মীর সঙ্গে নায়করাজের বিয়ে হয় ১৯৬২ সালের ২ মার্চ। লক্ষ্মী ব্যক্তিগতভাবে একজন আধুনিক সংস্কৃতমনস্ক মানুষ। ছোটবেলায় গান, নাচ ও অভিনয়ের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। তাই বিয়ের আগে যখন জেনেছিলেন তাঁর হবু স্বামী একজন অভিনয় পাগল মানুষ তখন তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন। আমাদের চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাক গত পাঁচ দশকের বেশি সময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিজেকে ধরে রেখেছেন। তাই তাকে নিয়ে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার, প্রতিবেদন, ফিচার, মুখোমুখিসহ নানান ধরনের লেখা প্রকাশ হয়েছে এখনও হচ্ছে। বাসত্মব সত্য যে নায়করাজের স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন বা সাক্ষাৎকার এখন পর্যনত্ম সেভাবে প্রচার হয়নি বা তিনি কখনো মিডিয়ার মুখোমুখি হতে চাননি। সারাটা জীবন নিজেকে আড়াল করেই রেখেছেন। বহুদিন পর এই প্রথম মুখ খুলছেন আনন্দ আলোর কাছে। গুলশানের লক্ষ্মীকুঞ্জে বসে অকপটে বলেছেন নায়করাজ স্বামী সম্পর্কে।

আনন্দ আলো: বাংলা চলচ্চিত্রের এক কিংবদনিত্ম অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের স্ত্রী আপনি। একথা যখন ভাবেন তখন কেমন মনে হয়?

লক্ষ্মী: তখন গর্বে বুক ভরে যায়। ভালো লাগে। ভাবি এক জীবনে তো আমি এমনটাই চেয়েছিলাম। পরম করুণাময় আমার সেই আশাই পূর্ণ করেছেন।

আনন্দ আলো: কলকাতা থেকে ঢাকায় এলেন স্বামীর হাত ধরে। তখন আপনার কোলে বড় ছেলে বাপ্পা। চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে নায়করাজকে। সেই সময়ের কথা কিছু বলবেন?

লক্ষ্মী: বহু বছরের আগের কথা। কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছি ভাগ্য বদলের জন্য। আমি জানতাম নায়করাজকে অনেক স্ট্র্যাগল করতে হবে। তিনি প্রতিটি মুহূর্তে চেষ্টা করেছেন কিভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবেন। এক সময় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। একদিন মুখ ফুটে বলেন, চল আমরা কলকাতায় ফিরে যাই। আমি বললাম না হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যে করেই হোক এখানে তোমাকে প্রতিষ্ঠা পেতেই হবে। সংসার নিয়ে তুমি চিনত্মা করোনা। এই দিক আমি একাই সামলিয়ে নিতে পারব।

আনন্দ আলো: ওই সময় এত সাহস শক্তি কোথায় পেয়েছিলেন?

লক্ষ্মী: আমার নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। ওর ছিল চেষ্টা। ও সততার সঙ্গে চেষ্টা করেছে। পরম করুণাময় ওকে সেই পুরস্কার দিয়েছেন।

আনন্দ আলো: নায়করাজ সব সময় বলেন, আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে স্ত্রী হিসেবে আপনার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি? এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী?

লক্ষ্মী: এটা ওর বিনয়। আমি সব সময় নিজের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি। স্ত্রী হিসেবে ওকে সাপোর্ট দেয়া দরকার। দুঃখ কষ্টে ওর অংশীদার হওয়ার দরকার আমি সব সময় সেই কাজটিই করেছি এবং করে যাচ্ছি। আমি আগেও বলেছি, সংসার নিয়ে ওকে চিনত্মা করার সুযোগ দেইনি। ওকে সব সময় বলতাম তুমি তোমার লক্ষে এগিয়ে যাও।

আনন্দ আলো: নায়করাজ মানুষ হিসেবে কেমন?

লক্ষ্মী: অসাধারণ। আমি সবসময় ওকে বলতাম ঘরের বাইরে তুমি সবার, কারণ তুমি নায়ক। অনেক মানুষের প্রিয় তুমি। একজন প্রিয় নায়ক হিসেবে কারো মনে কষ্ট দিওনা। কিন্তু যখনই তুমি কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসবে তখন তুমি একানত্মই আমার। এখানে অন্য কারো কোনো হসত্মক্ষেপ বা অধিকার থাকবেনা। আমার এই কথাটি তিনি সারাজীবন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।

আনন্দ আলো: একজন স্বামী হিসেবে তিনি কেমন?

লক্ষ্মী: তিনি খুবই কেয়ারিং, শেয়ারিং এবং সজ্জন। পরিবার অনত্মপ্রাণ এক মানুষ। পরিবারছাড়া কিছুই বোঝেন না। যখন সারা দিন-রাত একটানা সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যসত্ম থাকতেন তখনও সবার প্রতি সমান কেয়ার করতেন।

আনন্দ আলো: তার অভিনীত সব সিনেমা কী দেখেছেন? কোন ছবিটি বেশি ভালো লেগেছে?

লক্ষ্মী: তার অভিনীত অনেক ছবি দেখেছি। নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না কোনটি বেশি ভালো লেগেছে। তবে রোমান্টিক ও গল্প প্রধান সিনেমাতে তার অভিনয় সবচেয়ে ভালো লাগত।

আনন্দ আলো: নায়িকাদের সঙ্গে তার রোমান্টিক অভিনয়। তার অসংখ্য নারী ভক্ত দেখে কখনো হিংসা হয়নি?

লক্ষ্মী: অমিতো জানি এটা তার পেশা। পেশার খাতিরে তিনি নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন এর মধ্যে কোনো বাসত্মবতা নেই। তাই হিংসা করার কারণ ছিল না। তবে অস্বীকার করবো না। প্রথম দিকে একটু আধটু খারাপতো লেগেছেই।

আনন্দ আলো: আপনি কখনো শুটিং স্পটে গিয়েছিলেন। সেখানে কোনো নায়িকার সঙ্গে নিশ্চয় দেখা হয়েছে?

লক্ষ্মী: আমি কখনোই কোনো শুটিং স্পটে যাইনি। অনেক নায়িকার সঙ্গে দেখা হয়েছে তবে পার্টিতে এবং আমাদের বাসার অনুষ্ঠানে।

আনন্দ আলো: ২৩ জানুয়ারি নায়করাজের ৭৫তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে কী বলবেন?

লক্ষ্মী: সবার প্রিয় নায়করাজ রাজ্জাক। তার জন্মদিন উপলক্ষে আমার ভালোবাসা, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা থাকলো। তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তিনি যেনো আরো অনেক বছর আমাদের মাঝে হাসিখুশিভাবে বেঁচে থাকেন এই প্রত্যাশা করি। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।