Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

টাউনশীপ অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে তোলা খুবই জরুরি!

তাবাসসুম মোস্তফা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জিএম হোল্ডিংস লিমিটেড ও পরিচালক, দেশবন্ধু গ্রæপ

তাবাসসুম মোস্তফার পিতা বাংলাদেশের স্বনামধন্য উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব দেশবন্ধু গ্রæপ এর চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। ছোটবেলায় ঢাকার বারিধারায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু তাবাসসুম মোস্তফার। তারপরে ক্লাস নাইনে উঠে তিনি চলে যান দুবাইতে একটি ইংলিশ বোর্ডিং স্কুল রেপটেন এ। তারপরে পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড শেয়ারে ব্রেজনস কলেজে। এরপরে চলে যান নিউইয়র্কে সারকিজ ইউনিভার্সিটিতে। আর সবশেষে সাইকোলজিতে পড়াশোনা করেছেন  অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এ। তরুণ এই উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেযা খান।

আনন্দ আলো: সময়ের পরিবর্তনে কন্সট্রাকশনে গ্রীন ম্যাটেরিয়ালস এসেছে। পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকস আছে। কন্সট্রাকশন গ্রীনাইজ করে কীভাবে আরও ইকো ফ্রেন্ডলি করা যায় মডার্ন টেকনোলজি ইউজ করে?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমরা যদি সাইন্টিফিক্যালি চিন্তা করি তাহলে অনেক কিছু এসেছে। যেমন, আপনি বললেন অটো ব্রিকস। তেমনি আছে বায়ো কংক্রিট। এটির ডিফরেন্স হলো এর ভেতরে কিছু ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দেয়া হয়। আমাদের গভর্মেন্ট-এর বড় বড় কংক্রিট স্ট্যাকচার-এ ৫/৩ বছর পর দেখা যায় ফাটল দেখা দেয়।  এই সব ফাটল পরে আবার ভরাট করতে টাকা, সময়, ম্যাটেরিয়ালস সবই লাগে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বায়ো কংক্রিট ব্যবহার করলে ওই ব্যাকটেরিয়া অটোমেটিক্যালি ওই জায়গাগুলো ফিল আপ করে ফেলে। শুধু পানি দিলেই হয়। এই রকম কিছু জিনিস আমাদের ফ্লেক্সি সিমেন্ট আছে। ল্যান্ড স্কেপিং-এর ভেতরে অনেক কিছু ট্যাকটিস আছে। বিল্ডিং স্ট্যাকচা এর ভেতরে যে ম্যাটেরিয়ালসগুলো আমরা ইউজ করবো উডের জায়গায় আমরা ইন্টেরিয়র উড ইউজ করি। এর ফলে কখনো ওয়েদার প্রবলেম ক্রিয়েট করে না। তার জন্যে বোর্ডটাও চেঞ্জ করা লাগে না। কিছু বিষয় খুবই সিম্পল। আমরা যদি আমাদের সরকারের সচেতনতা করতে পারি? আমাদের রাস্তা সামারের সময় প্রচুর হিট গিভ আপ করে। খুবই গরম হয়ে যায়। সিম্পল কিছু জিনিস যেমন, আমাদের রাস্তা যদি বø্যাকের পরিবর্তে হোয়াইট করে দেয়া যায় আর মার্কেটগুলো ইয়োলোর পরিবর্তে রেড করে দেয়া হয় তাহলে হিট কিন্তু অ্যাবজর্ব হবে। এইভাবে আমরা গ্রীন কন্সট্রাকশন গড়ে তুলতে পারি প্রযুক্তির সহায়তায়। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে প্রযুক্তি এবং বিশ্বও এগিয়ে চলেছে। ইনশাল্লাহ আমরাও ভবিষ্যতে সবুজ অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারবো।

আনন্দ আলো: যেহেতু সফেস্টিকেটেড টেকনোলজি ইউজ করা হবে সেক্ষেত্রে কি কস্টিং বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?

তাবাসসুম মোস্তফা: যে কোনো কিছু যখন নতুন থাকে তখন ওইটার রিসার্চ-এর জন্যে কস্টিংটা অবভিয়াসলি বেড়ে যায়। কিন্তু আমার মনে হয় একটু সময় দিলেই যতই মেইনস্ট্রিম হবে, আর গভর্মেন্ট সাবসিডি দিলে তাহলে আমাদের সবার জন্যে এগিয়ে চলা ডেফিনেটলি ইজিয়ার হবে। আর আমি যেটা বললাম সাদা এবং ইয়োলো রঙের ব্যাপারটা এটি খুবই কস্ট ইফেক্টিভ এবং সিম্পল জিনিস। এইগুলো করলে পরিবেশের জন্যে খুবই ভালো হবে।

আনন্দ আলো: আমরা দেখছি ঢাকা শহরে যে সব অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টস  বা ভবন তৈরি হচ্ছে- তার আশপাশে পর্যাপ্ত ষ্পেস থাকছে না এবং কোনো ধরনের গাছ গাছালি রোপণের মতো জায়গাও থাকছে না। এই ধরনের প্রজেক্ট তৈরির উদ্যোক্তাদের মন মানসিকতা ব্যাকডেটেড। এদের শিক্ষা, ভিশনকে কীভাবে ডেভলপড করা যায়?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমার মনে হয়- আমাদের রিয়েল এস্টেট সেক্টরের কিছু মানুষ আছেন যারা এই দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছেন তাদেরকে টিভি টক শো, ম্যাগাজিন, রেডিও শো-এর মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে। আমাদের আর্কিটেক্টরা যদি এইভাবে ডিজাইন করে যে, একই জায়গার মধ্যে আমাদের হয়তো ফ্লোরে জায়গা নাই কিন্তু আমরা যদি সেই জায়গাটাই ছাদে ইউজ করি, ব্যালকনিতে করি বা ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং করি- গ্রিন এজ মাস এজ পসিবল তাহলে খুবই সহজ একটা জিনিস। জাস্ট মানুষকে শুধু জানাতে হবে তাহলেই হবে।

আনন্দ আলো: আমরা দেখছি বেশিরভাগ উচ্চবিত্তরাই অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। কিন্তু লো কস্ট হাউজিংয়ের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্তদের কীভাবে অ্যাপার্টমেন্ট কালচারে নিয়ে আসা যায়? অ্যাপার্টমেন্ট কস্ট আরও চিপার করার মেথড কি হতে পারে?

তাবাসসুম মোস্তফা: লো কস্টের ব্যাপারটি হলো- অনেক ম্যাটেরিয়ালস আছে যেটাতে আমরা হয়তো বাংলাদেশে এখন মানুষ গ্রামে একটা জায়গা আছে সেখানে ১০ লাখ টাকার মধ্যে একটি বাড়ি বানিয়ে ফেলছে। আর আমরা কিন্তু সেই বাড়ি ১০ লাখ টাকার কমে আরও বেশি ইকো ফ্রেন্ডলি করে বানিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু প্রবলেম হলো- বাংলাদেশ তো এই ম্যাটেরিয়ালগুলো প্রডিউস করছে না? দেশের বাইরে থেকে আনতে ইম্পোর্ট ডিউটি আর ট্যাক্স দিতে দিতে কস্ট এফেক্টিভনেসটা থাকছে না । তাই সরকার যদি এখানে ছাড় দেয় এবং বাংলাদেশে যদি আমরা যদি ইকো ফ্রেন্ডলি ম্যাটেরিয়ালস আরও ভালোভাবে প্রডিউস করতে শুরু করি তাহলে লো কস্টে হাউজিং করা সম্ভব হবে।

আনন্দ আলো: আমরা দেখছি বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে সেকেন্ড জেনারেশন-এর উদ্যোক্তা এখন লীড করছেন। প্রথম জেনারেশনে বাবাদের চেয়ে সেকেন্ড জেনারেশন অনেক বেশি মাল্টি ডাইমেনশন নিয়ে এসেছে ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প এবং উদ্যোগে। দেশের জন্যে সেকেন্ড জেনারেশনের উদ্যোক্তাদের কোনো কোনো বিষয়ে ফোকাস দেয়া উচিত?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমার মনে হয় যে, সবারই সোসাইট্যাল একটা প্রেশার থাকে যে, আমার বাবা মা যেভাবে চালিয়েছেন আমাদেরকে ওইভাবেই চালিয়ে যেতে হবে, তাদের শ্যাডোতে। আই থিঙ্ক ট্যাটস ভেরি ইম্পট্যান্ট। আমাদের বাবা মা যেভাবে তৈরি করার তা অলরেডি করে ফেলেছেন। আমরা বড় হয়ে গেছি। উই নো হু উই আর? আমাদের আইডেন্টিতে আমরা সিকিউর। নিজের মতো এগিয়ে চলা খুবই ইম্পট্যান্ট এন্ড আই থিঙ্ক যে, নিজের আইডিয়াজ এবং নিজের যদিও মনে হয় যে সোসাইটির জন্যে  শকিং হতে পারে বা একসেপ্টিং হতে পারে না যে, এই সব চিন্তা না করে সমাজ এবং দেশের জন্যে কাজ করে যাওয়া উচিত।

আনন্দ আলো: রিয়েল এস্ট্রেট সেক্টরে বর্তমানে স্ট্রাগল এবং অবসট্যাকল কি আছে যা রিমুভ করার জন্যে কাজ করা উচিত?

tabassum-Mostafa-1তাবাসসুম মোস্তফা: বাংলাদেশের সব ডেভলপিং কোম্পানিরগুলো স্ট্রাগল হলো সত্যি কথা যে, আমাদের সবারই একটা পয়েন্টে রিয়েল এস্টেট মার্কেটের অবস্থা এতটাই ভালো ছিল যে, সবাই রিয়েল এস্টেট সেক্টরে এসেছে ব্যবসার জন্যে। আর যখন অনেকে  রিয়েল এস্টেট এসেছেন তখন প্রাইস বেড়ে গেছে। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয় সারাবিশ্বেই একই অবস্থা। আর এক নাম্বার সমস্যা হলো- কিছু ব্যবসায়ী তাদের ক্লায়েন্টদেরকে অনেক কিছু প্রমিজ করে পুরো টাকা নিয়ে সময়মত ফ্ল্যাট বা প্লট দিতে পারেননি। এদের জন্যে আমরা যারা কমিটমেন্ট নিয়ে ব্যবসা করছি তাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। কারণ ক্লায়েন্টরা আমাদের বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু ইনশাল্লাহ সময় চেঞ্জ হচ্ছে। রিয়েল এস্টেট সেক্টর আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।  ট্রাস্টওয়ার্দী হচ্ছে সেক্টর। সবাইকে সাথে নিয়ে এই সেক্টরের উন্নয়নে আমরাও কাজ করতে চাই।

আনন্দ আলো: রিয়েল এস্টেট-এর হিউজ লিংকেজ ম্যাটেরিয়ালস ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। এই লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিকে নার্সারিং করতে পারে মেইন স্ট্রিম কোম্পানিগুলো। এই দুই সেক্টরের এডজাস্টমেন্ট কি প্রপারলি হচ্ছে?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমাদের জন্যে আমরা অনেক সময় দেখেছি যে, আমরা যখন ডেভলপার হিসেবে একটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথে বসি সমস্যা হয়ে যায় যে, একেকটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি হয়তো ডিফরেন্ট ম্যাটেরিয়াল ইউজ করতে চাইবে এবং বলবে যে, এই ম্যাটেরিয়াল নিলে আমরা কম নেব বা ওই ম্যাটেরিয়াল নিলে অভারঅল হবে। তাই দেখা যায় যে, সবারই নিজেদের লিংক, রিসোর্সেস  এবং ডিসকাউন্ট করতে গিয়ে স্ট্যান্ডার্ড নেমে যায়। তাই আমি আগে বলেছি- আমাদের যদি সোর্স অব ইনফরমেশন থাকতো। একটা আর্কিটেচারাল ম্যাগাজিন, একটা রিয়েল এস্টেট ম্যাগাজিন বা রেডিও শো তখন কিন্তু এক জায়গায় জমা হয়ে ইনফরমেশনগুলো সবাই পেতো। আমাদের দেশে ইনফরমেশন গ্যাপ প্রচুর। আমাদের কোনো ডিরেক্টরি নাই, সোর্স অব ইনফরমেশন নাই বিজনেস স্ট্যাটেসটিকস-এর জন্যে। আমরা আস্তে আস্তে নিজেরা যদি আরও ট্রান্সপারেন্ট হই। নিজেরা যদি বিজনেসম্যান  হিসেবে মানুষকে জানাই যে, আমরা এই দামে কিনে এই দামে বিক্রি করছি আর আমাদের নেট প্রফিট আসলেই এটি। দেন আই থিঙ্ক এতে করে তাহলে সবার ভালো হবে।

আনন্দ আলো: নতুন বছর ২০১৮ তে মিডিয়া ব্র্রান্ডিংয়ে আপনাদের স্ট্র্যাটেজি কি?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমাদের কোম্পানি কেবল এক বছর হলো। উই আর স্টিল এ বেবি। আমরা অবভিয়াসলি চাইবো আমাদের আলাদা একটি স্ট্যান্ডিং হোক। আমরা বলতে চাই আমরা দেশবন্ধু গ্রæপ-এর সিস্টার কনসার্ন। আমরা দেশের বন্ধু। আমাদের সাথে ব্যবসা, লেনদেন, ক্রয় বিক্রয় সবই সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই বিশ্বাসই আমরা অর্জন করতে চাই।

আনন্দ আলো: নতুন বছরে আপনাদের ক্লায়েন্ট বা কনজ্যুমারদের সম্পর্কে আপনার ম্যাসেজ কি থাকবে?

তাবাসসুম মোস্তফা: আমার ম্যাসেস ডেফিনেটলি থাকবে যে, আই থিঙ্ক যে রিয়েল এস্টেট বিজনেস শুধু ঢাকার জন্যে চিন্তা করলে হবে না। প্রতিবছরই ঢাকাই মানুষ বাড়ছে। তাই ছোট ছোট টাউনশীপ অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে তুলতে হবে।

আনন্দ আলো: স্যাটেলাইট শহর?

তাবাসসুম মোস্তফা: অবভিয়াসলি। সরকার নির্ধারণ করে দেবে যে, এইটুকু জায়গার ভেতরে প্রজেক্ট হবে। কারণ সব জায়গায় যদি অ্যাপার্টমেন্ট হয় তাহলে কৃষকের জমি থাকবে না। শুধু ঢাকার ভেতরে চিন্তা না করে ঢাকার বাইরে যেতে হবে। তাই আমাদের একটা প্রজেক্ট হচ্ছে বগুড়াতে। আমরা সারা বাংলাদেশে কাজ করতে চাই।