Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চারদিকে এতো ঘটনা, তাই বিয়ের জন্য ভয় হয়-পপি

বাংলা ছবির সফল নায়িকাদের একজন সাদিকা পারভীন পপি। বর্ণিল ক্যারিয়ারে অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পপির সম সাময়িক অনেক নায়িকা চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও এখনও তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন সিনেমাতেই ১০ সেপ্টেম্বর ছিল তার জন্মদিন। সেদিনই উপহার পেলেন নতুন ছবি ‘কাটপিছ’। এই ছবি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ সবের জবাব দিয়েছেন পপি। তার সঙ্গে কথা হয় সম্প্রতি এক দুপুরে চ্যানেল আই-এর কার্যালয়ে। তারই চম্বুক অংশ লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে আপনার ‘কাটপিছ’ ছবির পোস্টার। পোস্টারে আপনাকে একটু অন্যরকম ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য…
পপি: আমার নতুন ছবির পোস্টার মুক্তির পর নানা জনে নানান ধরনের মন্তব্য করেছেন। মোটামুটি সবার মন্তব্য আমি শুনেছি এবং দেখেছিও। ছবির নাম ‘কাটপিছ’ শুনে নেগেটিভ কিছু না ভাবার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। কারণ আমি আমার ভক্তদের হতাশ করতে চাই না। গল্পটি আমার ভালো লেগেছে। আমি এখন গল্পে মনোযোগ দিচ্ছি। এই ছবির জন্য নিজেকে তৈরি করছি।
আনন্দ আলো: ‘কাটপিছ’ ছবির গল্প শুনেছেন। গল্প শুনে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
পপি: ছবির পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস আমাকে যে ভাবে গল্পটা শুনিয়েছেন, গল্প শুনে আমি মুগ্ধ। ছবির গল্পটা এক নায়িকার জীবনী নিয়ে। দর্শকদের কথা দিচ্ছি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতোই ছবি হবে এটি।
আনন্দ আলো: ছবিতে আপনার চরিত্রটি কী ধরনের?
পপি: ছবিতে আমার চরিত্রটি ভিন্ন ধরনের। চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। প্রত্যেক অভিনয় শিল্পীই তার পুরনো ইমেজটা ভাঙতে চায়। আমি মনে করি কাটপিছও আমাকে নতুন ডাইমেনশন দেবে। আমার ধারণা দর্শক কিন্তু আমাকে সেই একই রকম রোমান্টিক চরিত্রে আর দেখতে চায় না। এই ছবিতে আমার বিপরীতে একাধিক নায়ক থাকবে। কারা থাকছেন তা এখনই জানাতে চাই না।
আনন্দ আলো: কাটপিছ তাহলে কবে থেকে শুরু হচ্ছে?
পপি: সম্ভবত আগামী বছরের জানুয়ারীতে এ ছবির শুটিং শুরু হবে।
আনন্দ আলো: বর্তমানে কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
পপি: বর্তমানে আরিফুর রহমান আরিফের ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ও সাদেক সিদ্দিকীর ‘সাহসী যোদ্ধা’ নামের দুটি ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি।
আনন্দ আলো: ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবিতে আপনি পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করছেন। কেমন লাগছে?
পপি: পাবর্তী আমার স্বপ্নের চরিত্র। এই চরিত্রে কাজ করতে পেরে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রটির গল্প বলার ধরণ আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি পার্বতী চরিত্রের অভিনয়ের জন্য নিজেকে একটু বেশিই তৈরি করেছি।
আনন্দ আলো: সেটা কেমন?
পপি: এর আগের ছবি গুলোতে শরৎচন্দ্রের পার্বতীকে দর্শক এমনভাবে দেখেনি। এ ছবিতে দেবদাসের সঙ্গে পার্বতীর দেখা হওয়ার পরেও বিচ্ছেদ দেখা যাবে।
আনন্দ আলো: কেন এই বিচ্ছেদ?
পপি: এ প্রশ্নটাই হচ্ছে ছবির মূল আকর্ষণ। আর ছবির প্রতিটি চরিত্রকেই বেশ যতœসহকারে তুলে ধরছেন পরিচালক। ফেরদৌসের সঙ্গে কয়েক বছর পর কাজ করছি। আশা করছি সব মিলিয়ে বেশ ভালো একটি চলচ্চিত্র হবে।
আনন্দ আলো: সাদেক সিদ্দিকীর ‘সাহসী যোদ্ধা’ ছবির কী খবর?
পপি: এ ছবিতে আমি একজন কাস্টম অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার চরিত্রটি এ ছবিতে বেশ চ্যালেঞ্জিং। ছবিতে আমাকে ভিন্ন রূপে দর্শক দেখতে পাবেন। আর আমিন খানের বিপরীতে অনেকদিন পর কাজ করলাম। তাই বেশ ভালো লাগছে। আমাদের জুটির প্রায় ছবিই দর্শক গ্রহণ করেছেন। আশাকরি আমাদের এ ছবিটি দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
আনন্দ আলো: এছাড়া আর নতুন কোনো ছবির কাজ করছেন কী?
পপি: যুদ্ধ শিশু, টান এই দুটি ছবির শুটিং শিগ্গিরই শুরু হবে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করার কথা চলছে।
আনন্দ আলো: মুক্তির অপেক্ষায় আছে আপনার কি কি ছবি?
পপি: জীবন যন্ত্রণা, দুই ভাইয়ের যুদ্ধ, বিয়ে হলো বাসর হলো না, শর্টকাটে বড় লোক ও মন খোঁজে বন্ধন এই ছবি গুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে।
আনন্দ আলো: নতুন ছবি ‘টার্ন’ নিয়ে কিছু বলুন।
পপি: টার্ন চলচ্চিত্রের গল্প যেমন অসাধারণ তেমনি প্রতিবন্ধী যে মেয়ের চরিত্রে আমি অভিনয় করতে যাচ্ছি তা অনেক চ্যালেঞ্জিংও। এই ধরনের চরিত্রে কাজ করার স্বপ্ন ছিল আমার। আমি সত্যিই নাভার্স যথাযথভাবে কাজটি করতে পারব কিনা, এই ভেবে।
আনন্দ আলো: কোনো চরিত্র অভিনয় করার আগে সেই চরিত্র নিয়ে আপনার কেমন প্রস্তুতি থাকে?
পপি: অবশ্যই থাকে। আমি যা করি তা হলো যে চরিত্রেই অভিনয় করি না কেন তার আগে চরিত্রটি সম্পর্কে ধারণা নেই। চরিত্রের জন্য প্রয়োজনে অনেক সময় সেই চরিত্রের মধ্যেই নিজেকে আগে খুঁজে বের করি। চরিত্রে সত্যিকারের মানুষের সাথে মিশে কথা বলার চেষ্টা করি। মোট কথা দর্শক যাতে কোনো মেকি মানুষের চরিত্রের মধ্যে আমাকে দেখতে না পায়। অন্ত চক্ষু দিয়ে সেই সময়টাকেও ধারণ করার চেষ্টা থাকে।
আনন্দ আলো: নায়ক রিয়াজের বিপরীতে নতুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে আপনাকে দেখা যাবে?
পপি: রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে এর আগে ‘আশিয়ান সিটি’এর বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছিলাম। সেটা অনেকদিন আগের কথা। অনেক দিন পর আবারো স্কয়ারের ‘চাকা বল সাবান’ এর বিজ্ঞাপনে আমাদের দুজনকে এক সঙ্গে মডেল হিসেবে দেখা যাবে। আশাকরি নতুন কাজটি দর্শক পছন্দ করবেন। বিজ্ঞাপনটি নির্দেশনা দিয়েছেন রেদওয়ান রনি।
আনন্দ আলো: একটা সময় প্রতি ঈদে পপি অভিনীত ছবি মুক্তি পেত। এখন তা দেখা যাচ্ছে না…
পপি: এখনতো ছবির কাজ কম হচ্ছে। আমার যখন প্রতি ঈদে ছবি মুক্ত পেতো তখন এক বছরে ২০০’র বেশি ছবির কাজ হতো। এখনতো বছরে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। অনেক ছবির মহরত হচ্ছে কিন্তু কাজ শেষ হচ্ছে না।
আনন্দ আলো: কেন এই সময়ে এসে অনেক ছবির শুধুই মহরত দেখা যাচ্ছে?
পপি: আগে অনেক পেশাদার প্রযোজক আমরা পেয়েছি। তাদের এই শিল্পের প্রতি ভালোবাসা ছিল। টান ছিল। এখন যে সেই ধরনর প্রযোজক আসছেনা তা বলবোনা। তবে সংখ্যাটা খুবই কম। ভালো ছবির প্রযোজক বাড়লে দুর্দশা কাটবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ভালোবাসাটা সকলেরই থাকতে হবে।
আনন্দ আলো: ছোট পর্দার খবর কী?
পপি: ছোট পর্দা বা বড় পর্দা বলে আমি কিছুই কখনো বুঝিনি। এখনো বোঝার চেষ্টা করি না। আমি বুঝি অভিনয়। আমি একজন অভিনেত্রী আমার যেখানে অভিনয় করার সুযোগ থাকবে আমি সেখানেই অভিনয় করবো। আমার মনে হয় সবারই এটাই করা উচিত।
আনন্দ আলো: আগের নায়িকা পপি আর আজকের নায়িকা পপির মধ্যে কোনো পরিবর্তন কি লক্ষ্য করা যাচ্ছে? এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?
পপি: মানুষ ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারে। চেষ্টার উর্ধ্বে কিন্তু কোনো কিছুই নয়। তাই হয়তো নিজের ইমেজকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আর আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি নায়িকারই তার ফিটনেস ধরে রাখাটা জরুরি।
আনন্দ আলো: দুই দশক ধরে আপনার সৌন্দর্য ধরে রাখার রহস্য কী?
পপি: রহস্য কিছুই না। শুধু নিয়মের মধ্যে থাকলেই সম্ভব। আমি যদি নিজেরই যতœ নিতে না পারি তাহলে দর্শকদেরকে কীভাবে একটি ভালো চলচ্চিত্র উপহার দেব বলেন। একটি ভালো চলচ্চিত্র বানাতে গেলেও কিন্তু অনেক যতেœর প্রয়োজন।
আনন্দ আলো: কেমন এই নায়িকা জীবন…
Popyপপি: আমি ক্যামেরার সামনে যখন মেকআপ দিয়ে দাঁড়াই তখন আমার অনেক রকম লাইফ। আর মেকআপ তুলে ফেলার পরে বাসায় যখন থাকি তখন সাধারণ একটা মেয়ে যেভাবে থাকে আমি সেইভাবে জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। অসাধারণ কিছুই নাই। আমরা শিল্পীরা হয়তো ইমোশনাল কিন্তু আট দশটা মেয়েরা যেভাবে লাইফ লিভ করে আমার কাটেও সেরকম।
আনন্দ আলো: আপনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। নির্বাচিত হওয়ার পর চলচ্চিত্রের জন্য কী কাজ করেছেন?
পপি: নির্বাচনের আগে যেসব কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম, তার মধ্যে অনেক গুলোই আমরা করেছি। আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হতে এখনো কয়েক মাস বাকি আছে। আশাকরছি এ সময়ের মধ্যে বাকি প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
আনন্দ আলো: প্রথম কার প্রেমে পড়েছিলেন?
পপি: প্রথম আমি নায়ক সালমান শাহর প্রেমে পড়েছিলাম। মূলত কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিটি দেখে তার প্রেমে পড়ে যাই।
আনন্দ আলো: আপনার স্বপ্নের নায়ক…
পপি: ছোট বেলায় যাকে পর্দায় দেখে অসাধারণ অনুভ‚তি হতো তার সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয় করেছি। এটা কম কথা নয়। আমার স্বপ্নের নায়কদের মধ্যে নায়ক রাজ রাজ্জাক আংকেল একজন। তাকে কতভাবে যে ছবিতে দেখিছি… কখনো রোমান্টিক নায়ক হিসেবে, কখনো রংবাজ হিসেবে, কখনো ডাকাত রূপে, কখনো স্কুলের দপ্তরি রূপে, কখনো বা দারোয়ান রুপে। একজন মানুষ এতোগুলো রূপে ছবিতে অভিনয় করেছেন অথচ কোনো চরিত্রেই তাকে বেমানান লাগেনি। প্রতিটি চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল, মানানসই। এই বিষয়টি আমার কাছে অবাক লাগে। আমরা যেনো তাকে ভুলে না যাই।
আনন্দ আলো: বন্ধুত্ব আপনার কাছে কী? বন্ধুত্ব টিকে থাকে কিসে?
পপি: বিশ্বাস, আস্থা এবং কমিটমেন্টের নামই বন্ধুত্ব। যার কাছে ন্যায়-অন্যায় এবং সকল আবদার করা যায় সেই আসল বন্ধু। আর আসল বন্ধু অবশ্যই একজন আরেকজনকে বুঝবে। বন্ধুত্ব টিকে থাকার মূল মন্ত্র হলো বিশ্বাস। আস্থার জায়গা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বন্ধুত্বও শেষ হয়ে যাবে।
আনন্দ আলো: পরিবার আপনার কাছে কী? পরিবার টিকে থাকার মূলমন্ত্র কী?
পপি: আপন মানুষদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকার নামই তো পরিবার। একটি পরিবারে একদিকে যেমন কষ্ট থাকে অন্যদিকে তেমনি সুখও থাকে। পরিবারের প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করলেই আসলে একটি পরিবার সুন্দরভাবে সমাজে মূল্যবোধ নিয়ে টিকে থাকবে।
আনন্দ আলো: আপনার সম সাময়িক অনেকেই সংসার জীবন শুরু করেছেন। আপনি বিয়ে করছেন কবে?
পপি: বিয়ে জীবনের বড় একটি সিদ্ধান্ত। আশে পাশে এত এত বিবাহ বিচ্ছেদের খবর পাচ্ছি। আর কিছু কাছের মানুষের বিবাহিত জীবনের অশান্তি দেখে দেখে এখন নিজেই বিয়ে করতে ভয় পাই। জীবন সঙ্গী হিসেবে একজন সঠিক মানুষের অপেক্ষা করছি। জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন সৎ মানুষ খুব জরুরি।
আনন্দ আলো: চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
পপি: চলচ্চিত্রে ভালো কিছু কাজ করতে চাই। বছরের সব সময়ই এমনটা চাওয়া।
আনন্দ আলো: দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
পপি: আমার ভক্তদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা। আপনারা আমাকে এভাবেই ভালোবেসে যাবেন সারাজীবন। হলে গিয়ে আপনারা বাংলা ছবি দেখবেন। এটাই আমার দর্শকদের কাছে সব সময় চাওয়া বা প্রত্যাশা।