Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চলে গেলেন চাঁদ কা টুকরা!

পিয়া ইসলাম: তার নামটা যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর ছিল তার অভিনয়। শ্রীদেবী। এক নামে যার জগৎ জোড়া খ্যাতি। হিন্দী সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় ছবির দাপুটে অভিনেত্রী। বাংলাদেশে সিনেমা প্রিয় মানুষের অনেক আপন ছিলেন তিনি। শ্রীদেবীর সিনেমা দেখেননি এমন সিনেমা দর্শক আমাদের এই বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা স্মৃতি আওড়ালেন এভাবেÑ ‘নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে লন্ডনে শ্রীদেবীর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। তখন সেখানে ‘চাঁদ কা টুকরা’ ছবির শুটিং চলছিল। আমির খানের সঙ্গে শুটিং করছিলেন শ্রীদেবী। ওদের শুটিং স্পটের কাছেই আমি ছিলাম। শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন শ্রীদেবীর সাথে ‘হাই’ ‘হ্যালো’ ছাড়া আর তেমন কোনো কথা হয়নি।

এই ঘটনার দুই দশক পর ২০১২ সালে ‘সুরক্ষেত্র’ নামে একটি রিয়েলিটি শো’র বিচার কাজ করতে গিয়ে রুনা লায়লার সঙ্গে দেখা হয় শ্রীদেবীর। সেদিনও শ্রীদেবীর সাথে তেমন কথা হয়নি রুনা লায়লার। দু’জনে ছবি তুলেছিলেন।

দুবাইয়ে আশা ভোসলের মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে শ্রীদেবীর সঙ্গে রুনা লায়লার দেখা হয়েছিল। সেদিনই খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দু’জনে তুমুল আড্ডা দিয়েছিলেন। এসব স্মৃতি আউড়িয়ে রুনা লায়লা বললেন, এমন প্রাণবন্ত একজন মানুষ হঠাৎ করেই চলে গেলেন… একদমই অপ্রত্যাশিত হ্যাঁ, অপ্রত্যাশিত তো বটে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান শ্রীদেবী। হোটেলের গোসল ঘরে তার নিথর দেহ পড়েছিল। কিংবদন্তি এই অভিনয় শিল্পীর মৃত্যুতে ভারতের মতো বাংলাদেশেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শ্রীদেবীকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কত স্মৃতি, কত তথ্যই না ঘুরপাকখাচ্ছে।

১৯৬৩ সালে শ্রীদেবীর জন্ম। ছোটবেলায় শ্রী আম্মা ইয়াংগার আয়াপান নাম ছিল তার। মাত্র ৪ বছর বয়সে ‘থুনাইভান’ নামের একটি ছবিতে তিনি অভিনয় শুরু করেন।

শ্রীদেবী বলিউডের প্রথম ও নব্বইয়ের দশকের একমাত্র নায়িকা যিনি একটি ছবির জন্য ১ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিতেন। নায়ক নির্ভর বলিউডে তাকে বলা হতো নারী মহাতারকা।

স্পিলবার্গের বহুল আলোচিত সিনেমা জুরাসিক পার্কে অভিনয়ের অফার পেয়েছিলেন শ্রীদেবী। কিন্তু অন্যছবিতে শুটিং এ ব্যস্ত থাকার কারণে সেই অফার ফিরিয়ে দেন।

শ্রীদেবীর শেষ ছবির নাম ‘জিরো’। শাহরুক খানের সঙ্গে এই ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শ্রীদেবী ঠিকমতো হিন্দী বলতে পারতেন না। শুরুর দিকে ছবিতে তার কণ্ঠ দিতেন অন্যরা। ‘চাদনী’ ছবিতে প্রথম শ্রীদেবীর কণ্ঠ শোনা গেছে।

সিনেমায় মেয়ে জাহৃবীর ব্যাপারে অনেক আশাবাদী ছিলেন শ্রীদেবী। জাহৃবী ‘ধারাক’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সিনেমায় মেয়ের অভিষেক দেখার খুব ইচ্ছে ছিল শ্রীদেবীর।

জুলি ছবিতে শিশু অভিনেত্রী হিসেবে শ্রীদেবীর অভিনয় জীবন শুরু হয়। তার বহুল আলোচিত ছবির নামÑ তোফা, হিম্মতওয়ালি, নাগিন, চাঁদনী, সাদমা, লমহে, গুমরাহ, মিস্টার, ইন্ডিয়া, লমহেসহ আরও অনেক ছবি। ইংলিশ ভিংলিশ ও ‘মম’ নামের ছবি দুটিতে শ্রীদেবীকে অন্যভাবে দেখা গেছে। ১২৬টি হিন্দী ছবির এই গুণী অভিনেত্রীর অকাল প্রয়াণে বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত বলেছেন, ‘ঘুম ভাঙ্গলো শ্রীদেবীর চলে যাওয়ার হৃদয় বিদারক খবর শুনে। পৃথিবী থেকে অসম্ভব মেধাবী একজন শিল্পী চলে গেলেন। আমির খান বলেছেন, শ্রীদেবীর অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। আমি তার কাজের অসম্ভব রকমের ভক্ত ছিলাম। জহি চাওলা বলেছেন, শ্রীদেবীর প্রায় সব ছবিই আমি দেখেছি। ‘পুতুলের মতো অপরূপ’, দারুণ মজার মানুষ ছিলেন তিনি। পর্দায় অভিনয়ের জাদু দেখতেন। যা বলতেন, তা-ই করে দেখাতেন। বিদ্যা বালান বলেছেন, আমার অনুপ্রেরণা আজ চলে গেল। শিল্পা শেঠি বলেছেন, কী ভয়ঙ্কর খবর শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কান্না থামাতে পারছি না…