Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গানে ফিরেছে সেই বিস্ময় বালক!

এক সময়ের জনপ্রিয় শিশু শিল্পী সাহস মোস্তাফিজ ক্যামেরার সামনে নিয়মিত হয়েছেন প্রায় ১১ বছর পরে।  শিশু শিল্পী হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন বিস্ময় বালক নামে।  তখন শিশুসুলভ চিকন কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গাইতেন।  হঠাৎ কিশোরবেলায় সেই শিশু শিল্পী তার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মিডিয়া জগত থেকে ডুব দিয়েছিলেন।  এখন অনেক পরিণত সাহস মোস্তাফিজ।  কয়েকদিন আগে বাবা এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, মা সালমা মোস্তাফিজ ও বোন মনিকা মোস্তাফিজ মনকে নিয়ে সাহস এসেছিলেন আনন্দ আলো অফিসে।  সাহসের পুরো পরিবারই ভাওয়াইয়া গানের সাথে জড়িত।   ভবিষ্যতের গান ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে সাহস কথা বলেন আনন্দ আলোর সাথে… লিখেছেন প্রীতি ওয়ারেছা  

আনন্দ আলো: আপনার অ্যালবাম ‘সাহস রিটার্নস’ আধুনিক গানের একটি অ্যালবাম।  আপনার শুরুটা কী আধুনিক গানের সাথেই ছিল?

সাহস মোস্তাফিজ: আমার জন্ম রংপুরে।  গানের শুরুটা হয়েছে ভাওয়াইয়া গান দিয়ে।  আব্বু রংপুর বেতারে চাকরি করতেন।  আব্বুর কাছে আগ্রহী শিল্পীরা নিয়মিত গান তুলতে আসতেন।  তাদের গান শুনতে শুনতেই আমার গানে হাতেখড়ি।  বাবা মায়ের কাছে কোন শিল্পী গান তুলতে এসেছে… দেখা যেত আমিই তার আগে গানটি কণ্ঠে তুলে ঘুরছি আর গাইছি।  আড়াই বছর বয়সে রেডিওতে আমি প্রথম কলকাকলীর আসরে গান গাই।  তিন বছর বয়সে আমি প্রথম স্টেজে গান গাই।  এভাবেই শুরুটা হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দ আলো: বিস্ময় বালক হিসেবে পরিচিতি কখন পেলেন?

সাহস মোস্তাফিজ: প্রায় ছয় বছর বয়সে ১৯৯৬ সালে রংপুর টাউন হলে আমার গানের প্রথম একক সন্ধ্যা হয়।  আমি দশটা ভাওয়াইয়া গান জানতাম।  সেই দশটা গান গাওয়ার পরে শ্রোতারা যখন আরো গান শুনতে চাইলেন তখন আমি বললাম আমি আর গান জানি না।  শিশু শিল্পী হিসেবে পরিচিতিটা সেখান থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল।  এরপর আমাদের পরিবার ঢাকায় চলে আসে।  ঢাকায় আসার পর আমার পরিবারকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।  ঢাকা অনেক বড় শহর।  তেমন কেউ পরিচিত নেই।  বাবা ভাওয়াইয়া গানের ওপর সাংগঠনিক কাজ করতেন।  পাশাপাশি আমাকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করতে থাকেন।  তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমাকে নিয়ে যেতেন।  উদ্দেশ্য পত্রিকার সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার অথবা সম্পাদককে বোঝানোর চেষ্টা যে তার ছেলে ভালো গান গায়, সুতরাং তাকে পরিচিত হবার সামান্য সুযোগ যেন করে দেয়া হয়।  এভাবে বেশ কিছুদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে।  তারপর হঠাৎ একটা সুযোগ চলে আসে।  বাবা এবং সমমনা আরো কয়েকজন মিলে ‘হামরা কয়জন’ নামে একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।  সবাই ঠিক  করেন আমার একটি একক ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন।  ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।  ঐ অনুষ্ঠানটি করার এক সপ্তাহ আগে বাবা আমাকে নিয়ে তখনকার আলোচিত একটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়ে যান।  পত্রিকাটিকে অনুরোধ করেন অনুষ্ঠানটির কভারেজ করার জন্য।  পত্রিকা থেকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হলো না।  সেসময় আমার বয়স ছিল আট বছর চব্বিশ দিন।  তখনকার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমার সেই একক গানের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন।  মুস্তাফা জামান আব্বাসীসহ ভাওয়াইয়া ঘরানার অনেক গুণী শিল্পীও অনুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন।  হল ভর্তি শ্রোতারা গান শুনলেন।  প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলাম।  পরদিন উল্লেখিত পত্রিকার প্রথম পাতায় বক্স করে ‘বিস্ময় বালক সাহসের নৈপুণ্য ও কণ্ঠ লালিত্যে শ্রোতারা বিস্মিত’ শিরোনামে আমাকে নিয়ে ফিচার ছাপা হয়।  আরো অনেক দৈনিক পত্রিকায় নিউজটি আসে।  এভাবেই শিশু শিল্পী হিসেবে একটা পরিচিতি লাভ করি।  আমি ২০০৩ সাল পর্যন্ত শিশু শিল্পী হিসেবে গান গেয়ে গেয়েছি।

আনন্দ আলো: প্রায় ১১ বছর মিডিয়ার সামনে আসেননি।  গানের চর্চা তো ছিল?

সাহস মোস্তাফিজ: হ্যাঁ চর্চা ছিল।  চর্চা না করে আসলে উপায়ও ছিল না কারণ বাড়ির পরিবেশটাই গানের।  ভাওয়াইয়া ছাড়াও তখন আমি অন্য গানও শোনা শুরু করি।  আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছি।  বিভাগীয় বাৎসরিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় গত কয়েক বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছি।  গত বছর আমার একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।  সেখানে আধুনিক গান, সেমি ক্লাসিক গান আছে, ইউনিভার্সিটি জীবন নিয়ে মজার একটি গান আছে- সবমিলিয়ে বিভিন্ন রকমের গান আছে।

আনন্দ আলো: ভাওয়াইয়া দিয়ে শুরু।  অ্যালবামটি করলেন আধুনিক গানের।  ট্র্যাক চেঞ্জ করলেন কেন?

সাহস মোস্তাফিজ: ট্র্যাক চেঞ্চ করিনি আসলে।  অ্যালবামটিতে একটি ভাওয়াইয়া গানও আছে।  তবে ভালোবাসার জায়গায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক কিছু।  আমি শুধু ভাওয়াইয়া না সঙ্গীতের চর্চা করেছি।