Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গানে গানে বঙ্গবন্ধু

মোহাম্মদ তারেক
এক মহাকাব্যের নাম বঙ্গবন্ধু। শব্দ আর সুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত গান বাঙালির জন্য প্রেরনার উৎস। সেই একাত্তর থেকে শুরু করে এখানো প্রায় প্রতিদিন রচিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ওপর গান। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখেছিলেন ওপার বাংলার প্রখ্যাত কবি, ছড়াকার, কাহিনীকার ও গীতিকার লক্ষ্মীকান্ত রায়। স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের পরিত্রাতা কে?/ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আজ ভাগ্য বিধাতা কে?/ একটি সুরেতে কে দিয়েছে বেঁধে বাঙালির অন্তরা সে তো শেখ মুজিবুর। ধন্য হে মুজিবুর।
একই সময়ে গৌরী প্রসন্ন মজুমদার লিখলেন সেই গান, যা সুর করলেন অংশুমান রায়। সেই এক গান আকাশ বাতাস ছাপিয়ে এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেল, আজ এই সময়ে এসেও সব বয়সী বাঙালিকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এই গান। সেই তুমুল জনপ্রিয় গানের প্রতিটা শব্দ যেন সবার মুখস্থ ‘শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে উঠে রনী, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’।
সরদার আলাউদ্দিন আহমেদের লেখা, সুরে ও কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল বিখ্যাত সেই গান ‘মুজিব বাইয়া যাওরে, নির্যাতিত দেশের মাঝে/জনগণের নাওরে মুজিব/বাইয়া যাওরে’।
জাতির পিতাকে নিয়ে আব্দুল জব্বার গেয়েছেন সাত কোটি মানুষের একটি নাম/মুজিবুর, মুজিবুর, মুজিবুর/ শ্যামল গুপ্তের লেখা এ গানটির সুর করেছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রথীন্দ্রনাথ রায় গেয়েছেন ‘শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’।
১৯৯০ সালের দিকে এসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি আরও একটি গান তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই গান মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে। হাসান মতিউর রহমান লিখলেন সেই কালজয়ী গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। নিজের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিলেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী। আবার নারী কণ্ঠে গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। এ ছাড়াও তিনি গেয়েছেন ‘যদি রাজ পথে আবার মিছিল হতো’ গানটি।
এখন কেমন আছে বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বর বাড়িটি?/ এখন কোথায় আছে বঙ্গবন্ধুর কালো ফ্রেমের চশমাটি?/ এখন কোথায় আছে বঙ্গবন্ধুর সেই ইজি চেয়ারটি… এমন কথার গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী। সুজন হাজংয়ের লেখা গানটির সুর করেন যাদু রিছিল। আর সংগীতায়োজন করেন সুমন কল্যাণ।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাইলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। ‘হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের এই গানের কথা লিখেছেন গাজী মাহজারুল আনোয়ার। সংগীতায়োজন করেছেন মানাম আহমেদ, সুর করেছেন তরুণ গায়ক ও সংগীত পরিচালক কিশোর। ‘হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু’/ তোমার কালো চশমাটা আমায় দাও/ আমি চোখে দিয়ে দেখব/ তুমি কেমন করে দেশটাকে এতো ভালোবাসো। এমন কথার একটি গান গাইতে পারায় ভীষণ আনন্দিত কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, এই গানের মধ্য দিয়ে তিনটি প্রজন্ম এক হয়েছে। জীবনে মনে হয় কোনো গান নিয়ে এতটা খুঁতখুঁতে ছিলাম না। গানটি শুধু একটি গান নয়, এটি তরুণ দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শনের একটি গল্প বলা। তাই তো সাতবার গানটিতে পাঠ দিয়ে চূড়ান্ত করেছি।

বঙ্গবন্ধু তুমি স্বপ্ন বাঙালির/হাজার বছর ধরে/বঙ্গবন্ধু তুমি ভোরের সূর্য উঠুক পৃথিবী জুড়ে… এমন কথার গানটিতে কণ্ঠ দেন দুই বাংলার নন্দিত কণ্ঠ শিল্পী নচিকেতা। সুজন হাজংয়ের রেখা গানটি করেছেন যাদু রিছিল। সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু। হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান গাইতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নচিকেতা। ওপার বাংলার আরেক জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্তও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাইলেন। গানের কথাÑ এখনও মুক্তি পায়নি, এখনও মুক্তি পায়নি, অনেক মন এখনও চলছে মানুষের হাহাকার, তাই স্বাধীন চিন্তায় যতবারই হবে খুন মনে পড়ে যায় তোমাকে বন্ধু আমার।
জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী ফাহমিদা নবী গেয়েছেনÑ ‘পিতার রক্তে রঞ্জিত’ শিরোনামের গান। গানটি লিখেছেন সুজন হাজং এবং সুর করেছেন সুমন কল্যাণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রবি চৌধুরী গেয়েছেন ‘তিনি বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান/হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি/আমাদের অহংকারের নাম’ এমন কথা গানটি লিখেছেন শুল্কা পঞ্চমী এবং সুর করেছেন মুরাদ নূর। গানটির শতবর্ষ বার্ষিকীতে ভিডিও আকারে প্রকাশ হবে। আট বছর আগে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ দিবস উপলক্ষে আরেকটি গান গেয়েছিলেন রবি চৌধুরী।
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী এসডি রুবেল গেয়েছেনÑ ‘বঙ্গবন্ধু তুমি শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শিরোনামের গান। গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির কথা, সুর ও সংগীতোয়াজন করেছেন শিল্পী নিজেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী এস আই টুটুল গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি আমার সোনার বাংলাদেশ’। দূরবীন ব্যান্ডের প্রধান গায়ক শহীদের কণ্ঠে উঠে আসে ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’ শিরোনামের গান। ফয়সাল রাব্বিকীনের কথায় গানটি সুর করেছিলেন রেজোয়ান শেখ।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শফিক তুহিন গেয়েছেন ‘শোকের গান’। গানটি লিখেছেন শফিক তুহিন ও আবু সায়েম চৌধুরী। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন শফিক তুহিন নিজেই। এর আগেও ‘মুজিব মানে স্বাধীনতা’ শিরোনামে আরেকটি গান গেয়েছিলেন তিনি। ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রধান গায়ক লুমিন গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের গান। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন আর মৃত্যু নিয়ে দেওয়ান লালন আহমেদের কথায় গানটির সুর করেছেন সাজেদ ফাতেমি। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর এবং ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে চিত্রায়িত হয়েছে গানটির ভিডিও।
বঙ্গবন্ধু পাঠচক্র সংগঠনটি জাতির জনকের সংগ্রামী জীবন ভিত্তিক নানা কাহিনী কথা ও সুরের ছন্দে ‘বঙ্গবন্ধু গান’ নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। অ্যালবামটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১২টি গান রয়েছে। অগ্নিবীনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মিক্সড অ্যালবাম ‘বজ্র কণ্ঠের সৈনিক’ অ্যালবামটিতে গান রয়েছে ১০টি। সবকটি গানের কথা লিখেছেন আসমা টগর। সংগীতায়োজন করেছেন সুজেয় শ্যাম।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে’, অশোক পাল গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’, আবুল লায়েস গেয়েছেন ‘তিনি কি আসবেন’, শেখ ফরিদ গেয়েছেন ‘সাত কোটি মানুষের মুক্তির জন্য’, দিলীপ সেন গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা দিয়েছো বাঙালির’, বেগম মমতাজ হোসেন গেয়েছেন ‘মধুমতী নদীর ধারে টুঙ্গী পাড়া গ্রাম’, সুভাষ দাস গেয়েছেন ‘ও মুজিব তুমি মিশে আছ’, সায়েফ আলী গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এসো’, রোজিনা গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’, মতিয়ার রহমান গেয়েছেন ‘তুমি বাংলাদেশ, সেই ১৫ আগস্ট’, ‘বাংলাদেশের খোকা’, ‘দেশরত্ন’, অটামনাল মুন গেয়েছেন ‘তুমি আমার বঙ্গবন্ধু’, বর্ষা গেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু হে মহান নেতা’, বিটিভির শিল্পীবৃন্দ গেয়েছেন ‘শুভ জন্মদিন’ জাতির পিতা তোমার শুভ জন্মদিন’, বিটিভির আর্কাইভস সংগৃহীত ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল’ ইত্যাদি।