সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন ‘মন্হন’ নামে একটি বিখ্যাত ছবি। ছবিটি গণঅর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল। ভারতের কেরালার আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেভান ২০১২ সালে গণঅর্থায়নে নির্মাণ করেন ‘সিআর নং৮৯’ নামে একটি ছবি। ১৯৮৬ সালে মালায়লি ভাষায় ‘আম্মা আরিয়ান’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন জন আব্রাহাম। আমেরিকা ও ইউরোপে গণঅর্থায়ন বা ক্রাউড ফান্ডিং-এ নির্মিত হয়েছে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক ছবি। এসব ছবিতে এক ডলার থেকে ৬ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন সাধারণ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
গণঅর্থায়নে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সিনেমা নির্মাণ করছেন নিরন্তর, কীর্তনখোলা ছবির জাতীয় চলচ্চিত্র প্রাপ্ত নির্মাতা আবু সাইয়ীদ। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম শুরু করলেন তিনি। ৭ অক্টোবর ২০১৫-তে সংবাদ সম্মেলন করে গণঅর্থায়নে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ। তার এই ছবির নাম দিয়েছেন ‘সংযোগ’। এই ঘোষণার এক মাস পর ৬ নভেম্বর ২০১৫-তে দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে। এই দিন তিনি বিগত ১ মাসে ‘সংযোগ’ ছবির নির্মাণ পরিকল্পনা ও গণঅর্থায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন। নির্মাতা আবু সাইয়ীদ বলেন, ১ মাসে ৫১৬ জন মানুষ সংযোগ ছবির সাথে সংযুক্ত হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছি ৫,৬০,৭০০ টাকা। এর মধ্যে দুইজন পৃষ্ঠপোষক, প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। ৬ জন দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা করে। বাকী অর্থ এসেছে ১ হাজার ও ১শ টাকা কূপন গ্রহণ ও বিকাশের মাধ্যমে। সংযোগ ছবিটি নির্মাণের জন্য এ অর্থ যথেষ্ট না হলেও বিভিন্ন জনের যোগাযোগ ও স্বত:স্ফূর্ত আগ্রহ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করেছে।
এ ছবির জন্য গণঅর্থায়ন সংগ্রহে আমাদের টার্গেট ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছবিটি সেন্সরে দেয়া পর্যন্ত এই পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। আমরা আশা করছি এই অর্থ পেয়ে যাব। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের এপ্রিলে ‘সংযোগ’ ছবির কাজ শুরু হবে এবং ঐ বছর ডিসেম্বরের আগেই ছবির সকল কাজ শেষ করে সেন্সরে জমা দেয়া হবে।
সংযোগ ছবির গল্প কিছুটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ভিত্তিক। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সমাজ বাস্তবতা। ছবির অনেকাংশ জুড়ে রয়েছেন সংবাদ কমর্ীরা। রিপোর্টিং সংবাদ পাঠ, টকশো ইত্যাদি কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ ছবি ও গণঅর্থায়ন সম্পর্কে আবু সাইয়ীদ আরো বলেন, বাংলাদেশে এটি সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারণা। এই গণঅর্থায়নের মাধ্যমে দেশে চলচ্চিত্রপ্রেীরা ছবি শুধু দেখবেন তা নয় এর নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত হবেন। এতে চলচ্চিত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরো বাড়বে।
আবু সাইয়ীদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যারা এই ছবি নির্মাণে অর্থায়ন করছেন তারা ছবি মুক্তি পাওয়ার পর কী লভ্যাংশ পাবেন না তাদের টাকা ফেরৎ দেয়া হবে। তিনি বলেন, যারা ১শ টাকা দিচ্ছেন কূপনের মাধ্যমে তারা কূপন দেখিয়ে ছবিটি একবার দেখতে পাবেন। যারা ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ বা তার অধিক টাকা অর্থায়ন করবেন তাদের জন্য এ ছবির একটি বিশেষ প্রদর্শনীতে ১০ জনের জন্য প্রবেশ পত্র এবং নির্দিষ্ট দশটি আসন সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া উপহার হিসেবে ছবির একটি ডিভিডি ও ২টি শার্ট পাবেন।
পৃষ্ঠপোষকের জন্য আর্থিক অংশগ্রহণের পরিমাণ হবে এক, তিন এবং পাঁচ লাখ টাকা। এই পৃষ্ঠপোষকবৃন্দ যথাক্রমে সিলভার, গোল্ড ও প্লাটিনাম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচিত হবেন। ছবির শুরুর টাইটেলে ও স্যুভেনিরে পৃষ্ঠপোষকদের নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ থাকবে। ছবির প্রিমিয়ার শো অথবা ‘পৃষ্ঠপোষক রাত্রি’ নামে একটি বর্ণাঢ্য বিশেষ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকদের সম্মানিত করা হবে। তাদেরকে সংযোগ ছবির ইউনিটের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। ছবির প্রিমিয়ার শো অথবা একটি বিশেষ প্রদর্শনীতে সিলভার, গোল্ড ও প্লাটিনাম পৃষ্ঠপোষকদের জন্য যথাক্রমে ১০, ৫০ ও ১০০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে তার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের জন্য। সিলভার, গোল্ড ও প্লাটিনাম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ২০, ৭ ও ৩ জনকে গ্রহণ করা হবে।
সহযোগিদের ব্যক্তিগত আর্থিক অংশগ্রহণের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারিত পরিমাণ অনুদান সংগ্রহ করা। দুই লাখ, পাঁচ লাখ এবং দশ লাখ বা তার অধিক অনুদান প্রদান ও সংগ্রহ করলে একজন ব্যক্তি যথাক্রমে সহযোগী, সহযোগী প্রযোজক ও সহ-প্রযোজক হিসেবে বিবেচিত হবেন। ব্যক্তিগত অনির্ধারিত অনুদানের পাশাপাশি তারা মূলত সম্মানিত দর্শক ও পৃষ্ঠপোষকের মাধ্যমে এই অনুদান সংগ্রহ করবেন। সহযোগি, সহযোগি প্রযোজক ও সহ-প্রযোজকদের ছবির শুরু অথবা শেষ টাইটেল ও স্যুভেনিরে নাম থাকবে। ছবির প্রিমিয়ার শো অথবা একটি বিশেষ প্রদর্শনীতে সহযোগি, সহযোগি প্রযোজক, সহ-প্রযোজকদের জন্য যথাক্রমে ১০, ৪০ ও ১০০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে তার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের জন্য। সর্বোচ্চ ১৫, ৭ ও ৩ জনকে যথাক্রমে সহযোগি, সহযোগি প্রযোজক ও সহ-প্রযোজক হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
সঙ্গত কারণে একটি সহজ প্রশ্ন সবার মনেই আসছে, ছবি নির্মাণের পর সিনেমা হল, টেলিভিশন ও ডিভিডি বিক্রয়ের মাধ্যমে যে অর্থ ফেরত আসবে তার কী হবে? যিনি যে পরিমাণ টাকা দেবেন তা কি আনুপাতিক হারে ফেরত পাবেন? আসলে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ছবি নির্মাণের পর সিনেমা হল, টেলিভিশন ও ডিভিডি বিক্রয়ের মাধ্যমে যে অর্থ ফেরত আসবে, তার পরিমাণ যাই হোক না কেন তা দিয়ে আবার নতুন ছবি নির্মাণ করা হবে। এভাবেই এই টাকা বিনিয়োগ ও পুনঃবিনিয়োগ হতে থাকবে। এই চলমান প্রক্রিয়ায় ‘সংযোগ’ ছবির সম্মানিত দর্শক, পৃষ্ঠপোষক এবং সহযোগিবৃন্দ পরবতর্ী ছবিতে বিশেষ সুবিধা পাবেন।