Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

খেলনা নিবে গো খেলনা

সব শিশুই খেলনা ভালোবাসে। খেলনার কথা বললেই শিশু মন আনন্দে নেচে ওঠে। খেলনা পেলেই শিশুরা হাসে, বিনয়ী হয়, বড়দের কথা শোনে। পড়াশুনাসহ ভালো কাজে মনযোগ দেয়। আবার খেলনার সঙ্গে সখ্যতা গড়েই শিশুরা স্বপ্নবিলাসী হয়। একথায় একটি খেলনা দিয়েই ভালো কাজে শিশুর মনযোগ আকর্ষণ করা যায় সহজেই।

একটি ছোট্টগল্প বলি। মেয়েটির নাম পপি। ক্লাস থ্রির ছাত্রী। একদিন পরিবারের সবাই দেখলো পপির মন খারাপ। পড়ে না। খায়ও না। ভালো করে কথাও বলে না। বাবা-মা পপির জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। নানাভাবে নানা কায়দায় পপিকে জিজ্ঞেস করা হলো- বলোতো সোনামণি তোমার কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? কেউ তোমাকে বকেছে? পপি উত্তর দেয় না। বাবা-মা আরও অস্থির হয়ে ওঠেন। কয়েকদিন পর বাবা-মা আবিষ্কার করেন তাদের মেয়ে পাশের বাড়ির একটি মেয়ের হাতে নতুন পুতুল দেখেছে। মেয়ে পুতুল। রাজকুমারীর মতো দেখতে। ঐ ধরনের একটি পুতুল তার চাই।

বাবা-মা নতুন মেয়ে পুতুল কিনে আনলেন। পুতুল পেয়ে মেয়ে তো আনন্দে আত্মহারা। খাওয়ার সময় পুতুল, পড়ার সময় পুতুল, ঘুমানোর সময় পুতুলটি তার সঙ্গে থাকা চাই। পুতুলটির নাম দিয়েছে ‘সুন্দরী’।

khelna-bank-1প্রিয় পাঠক, পুতুল বিষয়ক কতই না গল্প আছে। গান আছে, কবিতাও আছে। একটি পুতুল উপহার দিয়ে ছোটদের মন সহজেই জয় করা যায়। কিন্তু এই কথাতো সত্য, দেশের সকল শিশুর হাতে পুতুল পৌঁছায় না। এক্ষেত্রে পরিবারের সামর্থ্যের প্রশ্নটি বেশ গুরুত্বপুর্ণ। পুতুল কিনতে টাকা লাগে। পরিবারের অন্য প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে অনেকের পক্ষে একটি পুতুল চাই, ছোট্ট সদস্যের এই আবদার মেটানো সম্ভব হয় না।

আবার অনেক পরিবারে এমন ঘটনাও ঘটে। ছেলে-মেয়েদের জন্য একটার পর একটা পুতুল কেনা হচ্ছে। কিছুদিন ব্যবহার করার পর পুতুলগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে খাটের নীচে অথবা সিঁড়ি ঘরের নীচে, অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে দেশে গড়ে উঠেছে শিশুদের জন্য একটি খেলনা ব্যাংক। পড়বো, খেলবো, গড়বো বাংলাদেশ এই শ্লোগান নিয়ে এই ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে।

খেলনা ব্যাংক মনে করে একটি খেলনা সকল শিশুর কাছেই মূল্যবান। কিন্তু বাস্তবতা হলো-সকল শিশুর কাছে খেলনা পৌঁছায় না। কারও আছে অনেক খেলনা আবার কারও একটিও নাই। খেলনা ব্যাংক শিশুদের মাঝে এই ভেদাভেদ ঘোচাতেই উদ্যোগী হয়েছে। এই ব্যাংকের উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুলে যাচ্ছে তরুণ কর্মীরা। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পুরনো খেলনা সংগ্রহ করছে। সংগৃহীত পুরনো খেলনা ধোয়া মোছার পর প্যাকেটে মুড়িয়ে সেটাই আবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে যাদের খেলনা নাই সেই সব ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে।

khelna-bank-3খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খেলনা ব্যাংক এপর্যন্ত দেশের ২০টি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পুরনো খেলনা সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত খেলনাগুলো বাছাইকরণ, স্যানিটাইযেশন এবং প্যাকেজিং এর পর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২টি স্কুলে কিছু খেলনা পৌঁছে দিয়েছে। ব্যাংকের একজন তরুণ কর্মী বললেন- আমরা অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধা প্রাপ্ত স্কুলে গিয়ে প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাই-তোমাদের নিশ্চয়ই অনেক খেলনা আছে। কিছু খেলনা হয়তো আর ব্যবহারই করো না। খাটের নীচে অথবা সিঁড়ি ঘরের কোনায় খেলনাগুলো ফেলে রেখেছো। অথচ জানো এই দেশে অনেক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে খেলনা পৌঁছায় না। তোমরা তাদের জন্য খেলনা উপহার দিতে পার। আমরা তোমাদের পক্ষে খেলনাগুলো তাদেরকে দিয়ে আসব। খেলনা সংগ্রহের জন্য একটি স্কুলে কমপক্ষে ৪দিনের কর্মসূচি চলে। তারপর সময় নির্ধারণ করে বিনামূল্যে খেলনা বিতরণের জন্য অপেক্ষাকৃত কম সুবিধা প্রাপ্ত স্কুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হয়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যারা সেরা নির্বাচিত হয় তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয় সংগৃহীত খেলনা।

khelna-bank-2জানা গেছে, খেলনা ব্যাংকের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৭। তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম খেলনা লাইব্রেরি। দেশে প্রাক-প্রাথমিক সকল শিক্ষার্থীর হাতে খেলনা পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। খেলনা ব্যাংক এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। খেলনা ব্যাংক চায় দেশের প্রতিটি শিশুর কাছে খেলনা পৌঁছে দিতে এবং দেশের প্রতিটি স্কুলে খেলনা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে। যেন লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুরা খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারে এবং স্কুলে আসতে আগ্রহী হয়।

খেলনা ব্যাংক খেলনা আদান প্রদানের পাশাপাশি দেশের সকল স্কুলের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের অগ্রসরমান ১৬টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে এ ব্যাপারে মতবিনিময় করা হয়েছে। খেলনা ব্যাংকের স্বপ্ন বছরে একটি দিন হবে শিশুদের জন্য ‘খেলনা দিবস’। সারা বিশ্বে থাকবে না খেলনা বঞ্চিত কোনো শিশু।

প্রিয় পাঠক, ইচ্ছে করলে আপনিও খেলনা ব্যাংকের পাশে দাঁড়াতে পারেন। আপনার বাসায় যদি পুরনো খেলনা অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে তাহলে সেটি পাঠিয়ে দিতে পারেন খেলনা ব্যাংকে। ভেবে দেখুন তো আপনার দেয়া একটি খেলনা সুবিধাবঞ্চিত কোনো শিশুর হাতে পৌঁছে গেছে। তার মুখের হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। নিশ্চয়ই খুশিতে আপনারও মন ভরে যাবে। কাজেই আর দেরি করবেন না। পুরনো খেলনা উপহার দেয়ার জন্য যোগাযোগ করুন এই ঠিকানায়-

https://www.facebook.com/KhelnaBank/ খবর পেলে খেলনা ব্যাংকের কর্মীরাই আপনার স্কুলে ছুটে যাবেন। সবাই ভালো থাকবেন।