Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কে জিতবে বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের বছরে পেপ গার্দিওলা যে দেশের ক্লাব ফুটবলের কোচিং করিয়েছেন, সে দেশ দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে। এবারও কি গার্দিওলার কারণে বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে ইংল্যান্ড?

বিরক্তি জাগতেই পারে, কেবল গ্রæপের দুটি ম্যাচ জিতে সারতে পারল না, আর এতেই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে ইংল্যান্ড! না, এতটা বাড়াবাড়ি চিন্তাভাবনা ইংলিশ মিডিয়া ছাড়া আর কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত ইংলিশরা যে দুর্দান্ত ছন্দে আছে, শুধু তার ওপর ভিত্তি করেই থ্রি লায়ন্সদের শিরোপা জিতিয়ে দেয়া হচ্ছে না। ইংল্যান্ডকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেয়া ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি, পেপ গার্দিওলা।

গার্দিওলা না ম্যানচেস্টার সিটির কোচ, তাঁর সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জেতার সম্পর্ক কী? এমন চিন্তা মাথায় এলে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। স্প্যানিশ এই কোচ ইংলিশদের দায়িত্ব নেননি। কিন্তু তিনি যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের একটি ক্লাবের কোচ, আর তাতেই মঙ্গল হয়েছে ইংল্যান্ডের। কীভাবে? একটু পেছনে ফিরে দেখুন শেষ দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে জার্মানি ও স্পেন। ২০১০ সালে গার্দিওলা যেবার লা লিগায় বার্সেলোনার কোচ, সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ফিরেছে স্পেন। গার্দিওলা স্পেন ছেড়ে ২০১৩ সালে জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নিল। আর শিরোপাভাগ্যটাও তো গার্দিওলার পেছন পেছন জার্মানিতে হাঁটা ধরল। মৌসুম শেষে জার্মানির ২০১৪ বিশ্বকাপ জয় তো এরই প্রমাণ। ১৯৯০ সালের পর যে বিশ্বকাপ শিরোপা জার্মানদের কাছে হয়ে উঠেছিল অনেক দূরের বাতি, যেই গার্দিওলা সে দেশে পা রাখল, অমনিই তারা চ্যাম্পিয়ন। বুঝুন তাহলে ‘গার্দিওলা এফেক্ট’ কী! এবার গার্দিওলা প্রিমিয়ার লিগের কোচ। আগের দুই বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হলেই তো ৫২ বছর পরে আবার বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। দেখা যাক অলৌকিক কারণটা মিলে যায় কি না!

আইসল্যান্ডের সবার নামে কেন ‘সন’?

মাত্র সাড়ে তিন লাখ লোকের দেশ আইসল্যান্ড। নরডিক দেশটির বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই তো একটা চমক। তবে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিষেকের জন্য যেন আরও বড় চমক জমিয়ে রেখেছিল গুনারসনরা। জমাট রক্ষণে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে রুখে দিয়ে এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছিল আইসল্যান্ড। তবে ‘বিগিনারস লাক’ ফুরিয়েছে পরের ম্যাচেই, নাইজেরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে। তবে মাঠে শুধু আইসল্যান্ডের খেলাই তাদের দিকে আলাদা দৃষ্টি দেয়ার একমাত্র কারণ নয়। আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়দের পায়ে বল মানেই তো ধারাভাষ্যকারদের মুখে ‘সন, সন আর সন’! নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের একাদশটাই দেখুন- হলডরসন, স্যাভারসন, আরনাসন, সিগুর্ডসন, মাগনুসন, গিসলাসন, গুনারসন, সিগুর্ডসন (আরেকজন), বিয়ারনাসন, ফিনবোগাসন ও বোডভারসন। বদলি নামা তিনজনের নামও মিলিয়ে নিনইনগাসন, সিগুরডার্সন ও স্কুলাসন! আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এই কজনের বাইরে ছিলেন শুধু গুডমুন্ডসন! Icelandধারাভাষ্যকারদের নাভিশ্বাস উঠতে আর কী লাগে! প্রশ্ন জাগা খুব স্বাভাবিক, আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সবার নামের শেষে সন কেন? তাঁদের সবার পদবিই কি এক? উত্তর জানতে, জানতে হবে আইসল্যান্ডের একটুখানি ইতিহাস। আইসল্যান্ডিক মানুষদের নামকরণের রীতি ইউরোপের অন্য দেশগুলোর থেকে আলাদা। আইসল্যান্ডের মানুষের নামের শেষে পূর্বপুরুষদের নামের শেষের অংশ সরাসরি যুক্ত হয় না; বরং পদবি আসে সরাসরি বাবার নাম থেকে (ক্ষেত্রবিশেষে মায়ের নাম থেকে, যদি মা পরিবারের প্রধান হন)। ধরা যাক কারও নাম ওলাফুর। আর তাঁর বাবার নাম ইয়ান এরিকসন। তবে ওলাফুরের পুরো নাম হবে ওলাফুর ইয়ানসন। আর ইয়ান এরিকসনের আনা নামে কোনো মেয়ে থাকলে, তাঁর পুরো নাম হবে আনা ইয়ানসডটির (সন যেমন ছেলেদের পদবি, তেমনি ডটির হলো মেয়েদের পদবি)। আইসল্যান্ড ফুটবল দলের সবাই যেহেতু ছেলে, তাই সবার নামের শেষে স্বভাবতই বসেছে সন। নামকরণের এই ঐতিহ্য আগে সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্কে থাকলেও এখন চালু আছে কেবল আইসল্যান্ডে ও সুইডেনের কিছু অংশে।

এই সন ধারার ব্যতিক্রমও কিন্তু আছে। আছে এই আইসল্যান্ড দলেই। বিশ্বকাপের দলের তিন গোলকিপারের একজনের নাম ফ্রেডেরিক স্ক্রাম (২৩ জনের দলের একমাত্র ব্যতিক্রম)। বংশপরম্পরায় কোনো পদবি চলে আসলে (যদিও সেটা আইনত বৈধ হতে হবে!) এই নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব। আইসল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম যেমন গের হার্ডে, ফুটবল তারকা আইডুর গুডইয়ানসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক বালতাসার করমাকুর সাম্পার। মজার ব্যাপার, আইসল্যান্ডিকদের নামের প্রথম অংশ রাখার ক্ষেত্রেও আইসল্যান্ডিক নাম-নির্ধারণ কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হয়। যদি নামের সব অক্ষর আইসল্যান্ডিক অক্ষরের না হয়, নাম যদি পদবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে সেই নাম কমিটি বাতিল করে দেয়! আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, পুরুষদের নারী জাতীয় নাম এবং নারীদের পুরুষ জাতীয় নাম দেয়া আইনত অবৈধ। ২০১৩ সালে এক মেয়ের নাম ‘বø্যার’ রাখা না রাখা নিয়ে কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল তাঁর বাবা-মা! দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মেয়েটির নাম শেষ পর্যন্ত বø্যারই ছিল।