Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কষ্টের জীবনে যা ছুঁতে পারিনি তা একবার হলেও ছুঁয়ে দেখতে চাই

রেজাউল হক রেজা
মিঠুন চক্রবর্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তবে চেহারায় বেদনার চেয়ে সুখের ছায়া স্পষ্ট। নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত মিঠুন বললেন হ্যাঁ এখনো ভাবি সেই দিনের কথা। মধ্যবিত্ত ঘরের এক বাঙ্গালী ছেলে। বোম্বে গেলাম ঝোঁকের মাথায়। তেমন কাউকে চিনি না। জানি না। মাথার ওপর ছাদ বলতে যা বোঝায় তাও নেই। কিন্তু ছিল নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর সততা। এই তিন বিষয়কে পুঁজি করে নেমে পড়লাম চলচ্চিত্রের বিশাল আঙ্গিনায়। তারপর… অনেক শ্রম আর জীবন সংগ্রামের ফসল আজকের মিঠুন। বোম্বেতে মিঠুনকে অনেকে আদর করে ডাকেন ‘বাঙ্গালী বাবু’ বলে। শুরুর দিকে একটা ছবিতে তিনি এক্সটার রোলে অভিনয় করেন। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত একটি ছবিতে মিঠুনকে দেখা গেছে মাত্র দুটো দৃশ্যে। যোগ্যতার যাদু দেখিয়ে সেই অমিতাভ বচ্চনের পাশাপাশি এখন সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। হিন্দী, বাংলা, মারাঠী মিলিয়ে মিঠুনের অভিনীত ছবির সংখ্যা তিনশো‘রও বেশী। তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ব্যস্ততার কারণে স্যুটিং ছাড়া ছবি দেখার সুযোগ পান না মিঠুন। কিন্তু যুগের চাহিদায় সর্বক্ষণ তিনি সমসাময়িক থাকার চেষ্টা করেন। ব্যস্ততার মাঝেও সময়ের আলোচিত টিভি অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান আইডল নিয়মিত দেখেন। অমিতাভের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। হোটেল ব্যবসায় পুরোদস্তুর ব্যস্ত এখন তিনি। গড়ে তুলেছেন স্কুল এবং কলেজ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল এই মানুষটি আগামীর স্বপ্ন প্রকাশ করলেন এক লাইনে, কষ্টের জীবনে যা ছুঁতে পারিনি তা একবার হলেও ছুঁয়ে দেখতে চাই। বাঙ্গালীর প্রাণের মানুষ মিঠুন চক্রবর্তী আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। স্যুটিং এর ফাঁকে সাংবাদিকদের নিয়ে বসেন মিঠুন। তারপর আনন্দ আলোকে সময় দেন আলাদা করে। প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে মিঠুন বৃত্তান্ত উঠে আসে স্মৃতির আয়নায়…
ব্যাটে বলে না মেলায়…: তেইশ বছর অনেক সময়। কেন বাংলাদেশে এলেন এতদিন পর? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মিঠুন বললেন, আসলে এর মধ্যে আমি দু’বার এসেছিলাম বাংলাদেশে ব্যক্তিগত কাজে। ব্যাটে বলে না মেলায় সিনেমার কাজে আসতে পারিনি।
বাংলাদেশের ছবি দেখা হয় না: প্রসঙ্গ উঠলো বাংলাদেশের ছবি নিয়ে। কোন প্রকার রাখঢাক না করেই মিঠুন বললেন, সত্যি বাংলাদেশের ছবি দেখা হয় না। শুধু বাংলাদেশ কেন সময়ের অভাবে কোলকাতার বাংলা ছবিও দেখতে পারি না। তবে হ্যাঁ, সময় পেলেই বাংলাদেশের সিনেমার খোঁজ নেই। যখন শুনি কাজ ভাল হচ্ছে তখন মন ভরে যায়।
হিন্দী সিনেমা পশ্চিম বাংলায় আর চলবে না: কথা প্রসঙ্গে কোলকাতার বাংলা সিনেমার ব্যাপারে উচ্ছ¦সিত হয়ে উঠলেন মিঠুন। দৃঢ়তার সাথে বললেন, হ্যাঁ কিছুদিন আগেও কোলকাতায় হিন্দি সিনেমার দাপট ছিল। আগে কোলকাতার ছবিতে আমি, আমরা সময় দিতে পারিনি। তাই পরিবেশ পাল্টে গিয়েছিল। এখন আমরা সময় দিচ্ছি। হিন্দি বই (সিনেমা) আর পশ্চিম বাংলায় চলবে না।

নকল না করে নিজেরটা সমৃদ্ধ করা জরুরী: মিঠুনের কথায় আবারো ফুটে উঠলো বাঙ্গালীর ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতির কথা। স্পষ্ট করে বললেন, অন্যেরটা নকল করার মানসিকতা আমাদেরকে শেষ করতে বসেছিল। বাংলা ছবি পারবে না, কাজেই দৌড়াও হিন্দির পেছনে। আরে বাবা হিন্দি ছবিতে কাহিনী আছে, অভিনেতা অভিনেত্রী আছে। বাংলা ছবিতেও একই জিনিস আছে। তো, হিন্দি সফল হলে বাংলা হবে না কেন? অন্যেরটা না বানিয়ে আমাদের উচিৎ নিজেরটা বানানো। সারেন্ডারের মনোভাব নিয়ে দর্শকের সামনে অলটারনেটিভ দিলে দর্শক আসলটা ভুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
চলচ্চিত্র সমাজ বিচ্ছিন্ন নয়: চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে কাহিনী সর্বস্ব, অশ্লীল মারদাঙ্গা চলচ্চিত্রের কথা উঠতেই মিঠুন বললেন, আসলে আমরা কেন যেন একটা কথা মানতেই চাই না, তাহলোÑ চলচ্চিত্র সমাজ বিচ্ছিন্ন নয়। সামাজিক পরিবেশ, পরিস্থিতি থেকেই চলচ্চিত্রের কাহিনী উঠে আসে। দৈনন্দিন যা ঘটে তা থেকে কাহিনী বেছে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। কাজেই চলচ্চিত্রকে শুদ্ধ করতে হলে সমাজকে আগে শুদ্ধ করতে হবে।
পরিবেশ যা চায় তাই দেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে: তাহাদের কথা যারা দেখেছেন তারা মিঠুনকে পেয়েছেন অন্যভাবে। বলা যায় তাহাদের কথায় শক্তিশালী এক অভিনেতা মিঠুনকে দর্শক পেয়েছেন অত্যন্ত আপন করে। বিশেষ করে বাঙ্গালী দর্শকের কাছে তাহাদের কথায় মিঠুন অন্যরকম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রসঙ্গ উঠতেই মিঠুন বললেন, আপনারা যদি আমার ক্যারিয়ারের দিকটা একবার ভাবেন তাহলে দেখবেন আই এ্যাম দ্যা অনলি এক্টর যে বাণিজ্যিক এবং মূলধারা দুটোতেই সফলভাবে উতরে গেছি। একবার মেলাবার চেষ্টা করুন তো কোথায় ডিসকো ডান্সার? কোথায় ভগবান? আর কোথায় তাহাদের কথা? এখানে পরিবেশ, সময় এবং ইতিহাস আমার কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। পরিবেশকে ছুঁতে পেরেছি বলেই হয়তো আলোচিত হয়েছি।
তাহাদের কথায় আমার বিপ্লবী চেহারা ফুটে উঠেছে: চলচ্চিত্রে আসার আগে মিঠুন নকশালের সাথে জড়িত ছিলেন। বিপ্লবটা চেতনায় ছিল। প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, হ্যাঁ তাহাদের কথায় আমি আমার বিপ্লবী চেহারা খুঁজে পেয়েছিলাম। এটি আমার শ্রেষ্ঠ ছবির মধ্যে একটি।
অমিতাভ নিজেই নিজের তুলনা: ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের নানা ঘটনার পর অমিতাভ প্রসঙ্গ উঠতেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে মিঠুন বললেন, ওরে বাবা… ওর কথা বলবেন না। ওতো হল গুরু। অমিতাভ নিজেই নিজের তুলনা। দারুন অভিনেতা।
শাহরুখ ইজ দ্যা বেষ্ট: প্রসঙ্গক্রমে মিঠুন বললেন, যদি সাকসেসফুলি বলেন, তাহলে আমি শাহরুখের পক্ষে রায় দেব। বলবো শাহরুখ ইজ দ্যা বেষ্ট। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি রায় দেব সালমান খানের পক্ষে। আমির খানও আমার পছন্দের তারকা।
ওদের কথা বলবো না, ঝগড়া বেধে যাবে…: রেখা, শ্রীদেবীসহ অন্যান্য অভিনেত্রীর প্রসঙ্গ উঠতেই মিঠুন না-না করে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ওদের কথা থাক। কাকে রেখে আবার কার কথা বলবো। শেষে ঝগড়া বেঁধে যাবে…( হা-হা-হা)।
যুগের চাহিদায় দেবদাস ভাল: সময়ের আলোচিত হিন্দি ছবি দেবদাসের কথা উঠতেই মিঠুন একটু নড়েচড়ে বসলেন। মুহ‚র্ত ভেবে নিয়ে বললেন, ভাল খুব ভাল। বাস্তবতায় দেবদাসের নির্মাণ ধারা এমনই হওয়া উচিৎ।
মৌসুমী তখন ছিল একটা পুচকে মেয়ে: মিঠুন যখন অবিচার ছবিতে অভিনয় করতে আসেন তখন তার নায়িকা ছিলেন রোজিনা। এবার নায়িকা হয়েছেন মৌসুমী। প্রসঙ্গ তুলতেই হেসে ফেললেন মিঠুন। স্মৃতির ঝাপি খুলে ধরলেন এভাবে ওতো তখন ছিল একটা পুচকে মেয়ে। কোলে নেয়া যেত। এখন সেই আমার নায়িকা। ভাবতে ভাল লাগছে। মৌসুমী খুব ভাল অভিনেত্রী। নিষ্ঠা থাকলে ও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
বাবার পথে ছেলে: মিঠুনের ৩ ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম মহাকশয় চক্রবর্তী। ডাক নাম মিমো। মেজ ছেলের নাম উশ্মেয় চক্রবর্তী। ছোট ছেলের নাম নমোশী। একমাত্র মেয়ের নাম দিশানী। স্ত্রীর নাম যোগিতাবলী। মিঠুনের বড় ছেলে মহাকশয় ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পা বাড়িয়েছেন। অন্যরা পড়াশুনায় ব্যস্ত।