Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এর ফলে প্রচুর বেনিফিট পাবেন আমাদের কাস্টমাররা

-মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সিইও, রবি আজিয়াটা লিমিটেড

রাজু আলীম

মুঠোফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেশের কোনো বহুজাতিক মুঠোফোন অপারেটরের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি রবি’র মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদে কর্মরত ছিলেন। রবির সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডেপুটি সিইও হিসেবে যোগ দিয়ে সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রসৱুতি শুরু করেন। আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ পরিচালিত একসেলারেটেড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরের পরিকল্পনার আওতায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর রবি’র বিদায়ী সিইও সুপুন বীরাসিংহে শ্রীলঙ্কার মুঠোফোন অপারেটর ডায়ালগ আজিয়াটার সিইও হিসেবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব নেবেন। আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদে  যোগ দেয়ার আগে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে রবিতে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিএফও হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেন। রবিতে যোগ দেয়ার আগে তিনি ১৭ বছর ইউনিলিভারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন। সে সময় তিনি ইউনিলিভার পাকিসৱান, ইউনিলিভার আরব ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের ফিন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলেরও শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দেশের টেলিকম সেক্টরের নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। ‘গেল দশকে বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। টেলিকম সেক্টরের এই গ্রোথের মধ্যে এই দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান রবি’র কন্ট্রিবিউশনও উল্লেখ করার মতো।

টেলিকম প্রতিষ্ঠানের নতুন একজন সিইও হিসেবে এই সেক্টরের গ্রোথের ব্যাপারে তার মূল্যায়ন কি?’ এই প্রশ্নের জবাবে রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর/সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত দশকে এই সেক্টরে বাংলাদেশে সত্যিই একটা রিভল্যুশন হয়েছে। একসময় আমরা মোবাইলে ৪ টাকা/১০ টাকা, এমনকি ১৪ টাকায়ও এক মিনিট কথা বলেছি। আর এখন মাত্র ২৫ পয়সায়, এক টাকায় কথা বলা যাচ্ছে। টোটাল জিডিপি’র ৩ পারসেন্ট কন্টিবিউশন করছে মোবাইল অপারেটররা। আর রেভিনিউ-এর হিসাব করলে দেশের ১০ পারসেন্ট রেভিনিউ আসে এই সেক্টর থেকে। ৯৯ পারসেন্ট পপুলেশন বর্তমানে মোবাইল অপারেটররা কাভার করছে। ৯৯ পারসেন্ট মানুষ পাচ্ছেন কথা বলার সুবিধা, প্রডাকটিভিটি বাড়ছে। এই সবই মোবাইল ফোনের কল্যাণে হচ্ছে। মোবাইল ফোন জনগণের জীবন ধারা করে দিয়েছে। এটা সিগনিফিকেন্ট অবশ্যই। তাছাড়া মোবাইল অপারেটরা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নানা রকম কাজ করছে। বিভিন্ন সিএসআর অ্যাকটিভিটিজ করছে। যেমন রবি’র কথাই বলি- আমাদের টেন মিনিট স্কুল নামের একটি অ্যাকটিভিজ চলছে। সেখানে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি পার্টিসিপেটরি আছে। স্টেট অব দ্যা আর্ট ই লাইব্রেরী করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, নারী উন্নয়নে আইসিটি নামে অতি সম্প্রতি আমরা একটা প্রোগ্রাম চালু করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করেছেন। ৬টি বাস সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবে এবং এই আইসিটি বাস নারীদের আইসিটিতে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই ধরনের প্রচুর সামাজিক কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করছি। রবি স্ট্যান্ডস ফর সোসাইটি, রবি স্ট্যান্ডস ফর প্যাট্রিওটিক ফিলিং অ্যান্ড হেরিটেজ অব দ্যা কান্ট্রি। চ্যানেল আই এর সঙ্গেও আমরা একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম- হিউম্যান ফ্ল্যাগ। গিনেজ বুক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড এ এসেছিল এই প্রোগ্রাম। আমরা এবং চ্যানেল আই যৌথভাবে ওই প্রোগ্রাম করেছিলাম।’

‘আপনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রবি আজিয়াটা’য় সিইও হিসেবে যোগদান করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশের কর্পোরেট অঙ্গনের তরুণদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ তৈরি হবে। ব্যাপারটা আপনি কীভাবে দেখেন?’ এই প্রশ্নের উত্তরে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন,  ‘এই ধরনের অ্যাচিভমেন্ট… ইট এ কালেকটিভ অ্যাফোর্ড। আমি যদি বলি এটা একা অর্জন করেছি- তাহলে তা ভুল বলা হবে। কারণ বিগত ২৫ বছর ধরে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রকাশিত টিমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। প্রত্যেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন ভালো কিছু করার জন্য। এটা একটা কালেকটিভ অ্যাফোর্ড। আমি আইডিএলসিতে কাজ করেছি। ইউনিভাল এ ছিলাম ১৭ বছর আর রবি’তে আছি ৬ বছর। আই ডোন্ট লাইক টু চেঞ্জিং জব ফ্রিকোয়েন্টলি। তাই এই হিসেবে প্রত্যেকে আমাকে হেল্প করেছেন  আজকের পজিশনে আসার জন্যে। আমি কোন স্ট্যাটাসে বিশ্বাস করি না। আমি একই অবস্থানে দুই তিন বছরের বেশি কোনো গোলে থাকতে পছন্দ করিনি। দুই তিন বছর পরে আমি বোর ফিল করি। লাইক টু গো ফর নিউ চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মানেই হলো- রিস্ক। এই রিস্ক-এর পেছনে কিন্তু ইনটেনশন থাকতে হবে। অনেকে কমফোর্ড জোনে থাকতে পছন্দ করে। আমি মনে করি আমার সাকসেস-এর পেছনে অন্যতম  একটা কারণ হলো- টেকিং রিস্ক অল দ্যা টাইম। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন এনভায়রনমেন্ট, বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করেছি- এটাও অন্যতম কারণ সফলতার।’

‘রবি এবং এয়ারটেল নিজেদের এক সঙ্গে যুক্ত করছে। ফলে সুবিধা কি হবে বলে মনে করেন?’ এই প্রশ্নের জবাবে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ এর ফলে নেতিবাচক প্রচুর প্রভাব পড়বে। আমরা কেন এক সঙ্গে হয়েছি? মূলত একটা অপারেটর ছাড়া কোন অপারেটর কিন্তু এই মার্কেটে প্রফিট করতে পারছে না। বছরের পর বছর ব্যবসা করছে কিন্তু কেউ প্রফিট ঘরে তুলতে পারছে না। আর এই ইন্ডাস্ট্রিতে ইনভেস্টমেন্ট খুব বেশি করতে হয়। তাই বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের সাসটেন করতে হলে এরকম কিছু করতেই হবে। এটা একটা গ্লোবাল ফেনোমেনা। বাংলাদেশে এই ধরনের উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায় না। নিজেদেরকে শক্তভাবে এগিয়ে নেবার জন্যই এটা করেছি। এতে আমাদের সাবসক্রাইবার বেজ আরো বড় হয়ে যাবে। প্রচুর বেনিফিট পাবেন আমাদের কাস্টমাররা। যে তরঙ্গ আমরা পাচ্ছি তার সিগনিফিকেন্স ডাবল হবে অর্থাৎ কোয়ালিটি ডাবল হবে।’