সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
জুয়েল আইচ, আপাদমস্তক একজন শিল্পী। মিষ্ঠভাষী, মিষ্টি হাসি, মিষ্টি পারফর্মেন্স-সবই মিষ্টি। মিষ্টি যেন মধু! মুহূর্তে দর্শক üদয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে তার জুড়ি নেই। সেই কিংবদন্তী সম জাদুশিল্পী যখন আরেকজনকে দেখে মুগ্ধ হন তাও আবার কোন এক মায়াবতী কন্যার, বিষয়টা ভাবনার! প্রখ্যাত এই জাদুশিল্পী প্রতিবছর দেশের বাইরে প্রচুর জাদুর প্রদর্শনী করে থাকেন। এবারও সেই সূত্রেই গিয়েছিলেন আমেরিকা। আমেরিকা সফরকালে তিনি দেখা পেয়েছেন সেই মায়াবতী কন্যার। কিছুতেই তার সেই ছড়িয়ে দেয়া ইন্দ্রজাল থেকে বের হতে পারছেন না। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ফিরে বরেণ্য এই জাদুশিল্পী আনন্দ আলোর কাছে তার সফরের উলেখযোগ্য স্মৃতিকথা শেয়ার করেছেন। বলেছেন মায়াবতী কন্যার গল্প। আনন্দ আলোর সাথে কথপোকথনের চৌম্বুক অংশ থাকছে পাঠকদের জন্য…. লিখেছেন প্রীতি ওয়ারেছা ।
আনন্দ আলো: সম্প্রতি আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে জাদু প্রদর্শন করে আসলেন। এবারের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জুয়েল আইচ: এই দেড় মাসে আমি অনেকগুলো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। সফরের প্রথম অনুষ্ঠানটি ছিল টেক্সাসের হিউস্টনে। অনুষ্ঠানটি অর্গানাইজ করেছে এনএবিসি (নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স)। এই অনুষ্ঠানটি তারা করছে প্রায় ৩০ বছর ধরে তবে এই প্রথম তারা বাংলাদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমার শো যে কনভেনশনে হয়েছিল সেটার নাম ছিল দ্য জর্জ বুশ গ্র্যান্ড বলর“ম। সেখানে তিন হাজার দর্শকের সামনে আমি জাদু প্রদর্শন করেছি। সাধারণত এতো বড় হল পূর্ণ হয়না। আমার সৌভাগ্য যে সেদিন হল কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। হিউস্টনে বসবাসরত বাঙ্গালীদের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারতীয়দের কাছেও আমি পরিচিত মুখ। সেই শোটির পরে বড় বড় সেলিব্রেটিরা আমার সাথে ছবি তোলার জন্য স্টেজে উঠে এসেছে। বিষয়টি আমার কাছে অসাধারণ ঠেকেছে যখন তাদের কেউ কেউ আমাকে বলেছে এই প্রথম আমি সেধে কারো সাথে ছবি তুলতে এসেছি। অর্গানাইজাররা আমাকে বিরল সম্মান দেখিয়েছেন। আমি ছিলাম তাদের একমাত্র অতিথি যার জন্য তারা হিলটন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটে থাকার ব্যবস্হা রেখেছেন। হিউস্টনের বিশাল সেই অনুষ্ঠানের পরে উড়াল দিয়ে গিয়েছি ফ্লোরিডার জ্যাকসন ভিলে। সেখানে আমি আইবিএল এর কনফারেন্স অংশ নিয়েছি। কনফারেন্সে বড় বড় ম্যাজিক্যাল জায়ান্টদের সাথে দেখা হয়েছে যারা আমার খুব কাছের বন্ধু। এরপরে গিয়েছি লাস ভেগাসে। ম্যাজিক লাইভ কনভেনশনে আমাকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পায় শুধুমাত্র পৃথিবীর অগ্রগামী শিল্পীরা। এটা আমার জন্য সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত সম্মানজনক একটি বিষয় ছিল।
আনন্দ আলো: নিজের ইন্দ্রজালে সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখেন। অন্যের ইন্দ্রজালে পড়েছেন কখনো?
জুয়েল আইচ: এবারের সফরের পরে আমি এখনো ইন্দ্রজালেই আচ্ছন্ন আছি। জ্যাকসন ভিলে আমি রিজেন্সি প্যালেস জ্যাকসন ভিল হোটেলে ছিলাম। সেখানে এমন একটি ঘটনার সম্মুখিন হব কল্পনাও করিনি। একেকটা সফরে কত শত ঘটনা ঘটে কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা সবকিছুকে ছাপিয়ে স্মৃতিতে ঠাঁই করে নেয়। খুব ছোট বিষয়ও তখন বিশাল গুর“ত্ব বহন করে। র“ম ক্লিনার একটি মেয়ে আমার র“ম ক্লিন করতে আসলো। আমি তাড়াহুড়ো করছি। কনভেনশনে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। মেয়েটির কাজ প্রায় শেষের দিকে ঠিক এমন সময় কি ভেবে মেয়েটির দিকে তাকালাম। ক্লিনারদের দিকে তাকানোর যদিও কোন মানে হয় না তারপরেও আমার চোখ আটকে গেল। মুহূর্তেই আমি বুঝে গেলাম এই মেয়েটি ক্লিনার হতে পারে না। প্রত্যেকটা পেশার আলাদা একটা বৈশিষ্ট থাকে। একজন মানুষকে দেখলে তার পেশা সম্মন্ধে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। মেয়েটি কোনভাবেই ক্লিনার টাইপের না। ভীষণ গ্রেসফুল। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে দার“ণ উচ্চারণে ইংরেজিতে জানালো, তার নাম তিলা এবং সে একজন নেপালি। আমি তাকে বললাম তুমি নেপাল থেকে এখানে ক্লিনারের চাকরি নিয়ে এসেছো এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তুমি আবার ভেবো না আমি তোমার কাজকে অসম্মান করছি। আমি সব কাজকেই শ্রদ্ধা করি। আমি অশ্রদ্ধা করি তাকে যে কোনো কাজ করে না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে তুমি এখানে কিভাবে এলে? তখন সে কিছুটা আড়ষ্টবোধ করলো। আমতা আমতা করে বলল সে অনেক কষ্টের কথা, তোমার শুনতে ভালো লাগবে না। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম বললাম, আমি একজন ম্যাজিশিয়ান, তোমার প্রতিবেশি, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি ক্লিনার হিসেবে আমেরিকা আসোনি। তুমি তোমার কষ্টের কথাগুলো আমার সাথে শেয়ার করতে পারো, এতে তোমার মনের ভার কমবে। তিলা নামের মেয়েটি তখন যা জানালো সেটা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সে নেপাল থেকে এখানকার একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আইটি পড়তে এসেছে। কয়েকমাস আগে নেপালে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে তিলার মা ও একমাত্র ভাই মারা যায়। তাদের বাড়ি ঘর সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও সহায় সম্বল হারিয়ে তিলার বাবা ছোট ছোট পাঁচ মেয়েকে নিয়ে এখন পথের ভিখারি। বাবা বোনদের জন্য খাবার জোগাড় করবে নাকি দেখাশোনা করবে! সবমিলিয়ে তিলার পরিবারের মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়ার মত অবস্হা। নিজের পড়ালেখা নিয়ে এখন সে কিছুই ভাবতে পারছে না। পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে সে এখানে ক্লিনারের চাকরি নিয়েছে। এই চাকরিতে সে যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দবোধ করছে কারণ এখানে তাকে যথেষ্ট নিরাপত্তা দেয়া হয় যেটা অন্য কোথাও হয়ত সে তা পেতো না। তিলার ইচ্ছে ভরণপোষণের পাশাপাশি টাকা জমিয়ে পরিবারের সবাইকে আমেরিকায় নিয়ে আসা। আমি তৎ¶নাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম দুর্দশাগ্রস্ত এই মেয়েটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করব। তবে তিলাকে বিষয়টা জানালাম না। প্রথম পরিচয়ে সাহায়্যের প্রস্তাব দিলে সে গ্রহণ নাও করতে পারে, কারণ তার মধ্যে তীব্র আত্মমর্যাদাবোধ আমি খেয়াল করেছি। শুধু শুভকামনা জানিয়ে বললাম তোমার মনের আশা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। আমি কনভেনশনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম কিন্তু আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে তিলা। আমি সত্যিই আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। ক্রমাগত একটা ভাবনাই মাথায় কাজ করছে কিভাবে তিলাকে কনভিন্স করে টাকাটা দেয়া যায়। কনভেনশন থেকে রাতে ফিরে দেখি আমার বাথর“ম ভর্তি টয়লেট্রিস সামগ্রী। ৪টা ব্রাশ, ৪টা পেস্ট, ৪টা ডিওডোরান্ট, ৪টা হেয়ার ব্রাশ, ৪টা শ্যাম্পু, ৪টা বাথজেল, ২০টা কলমসহ নিয়মিত যত উপাদান থাকা দরকার এবং তিলার সাধ্যে সেগুলোর যতগুলো করে দেয়া সম্ভব সব এনে থরে থরে সে আমার জন্য সাজিয়ে রেখে গেছে। মনে হল যেন কোন এক দোকানঘরে এসে ঢুকলাম। আমার কেন জানি তখন খুব কান্না পেয়ে গেল। আমি মেয়েটির জন্য কিছুই করিনি শুধু ওর কথা শুনেছি, একটুখানি সহানুভূতি দেখিয়েছি, আর তাতেই সে এতটা প্রশান্তিবোধ করেছে যে তার সাধ্যের সবকিছু আমার জন্য রেখে গেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল দেরী করে র“ম থেকে বের হব, কনভেনশনের প্রথম সেশন বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে উপস্হিত থাকবো এবং এই সময়ের মধ্যে তিলাকে কনভিন্স করে একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ওর হাতে ধরিয়ে দেব। ভয়ও হচ্ছিল বিষয়টা সে কিভাবে নেবে! টাকার পরিমাণটা বেশি সেটাও একটা সমস্যা, হয়তো সে নেবেনা। তাই টাকাগুলো খামে ভরে আঠা দিয়ে খামের মুখ আটকিয়ে রাখলাম। পরেরদিন সকালে আমি তিলার জন্য অপে¶া করছি। সময় চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে- হঠাৎ করে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। আমি চোখের পলকে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুললাম। দেখি ইয়া মোটা একজন মেক্সিকান মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে। মেক্সিকান উচ্চারণে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কি তোমার র“মটা ক্লিন করতে পারি। আমি উত্তর না দিয়ে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তিলা কোথায়? সে জানালো তিলাকে অন্য ফ্লোরে শিফট করা হয়েছে। মহিলার কাছে তিলা সম্মন্ধে আর বেশি কিছু জানতে চাওয়া ঠিক হবে না জেনে বললাম- আজ র“ম পরিস্কার করতে হবে না। মহিলাতো খুশি! তার কাজটা করতে হলনা। সব দাঁত বের করে হাসছে। এরপর তিলার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। আমার প¶েও ওর খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি কারণ ভেবেছি ভালো করতে গিয়ে যদি তার ¶তি করে বসি! একটা ক্লিনারের জন্য একটা বোর্ডারের এতো আগ্রহের কারণ অনুসন্ধান করে কতর্ৃপ¶ যদি তাকে চাকরিচ্যুত করে! বিভিন্ন ভাবনা এসে মনে ভীড় করেছিল। এখনো ভাবি যদি কোনভাবে যোগাযোগ করা যেত তিলার সঙ্গে! আমাকে কি যে তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছে মেয়েটি, বলে বোঝাতে পারবো না! প্রতিমুর্হর্তে কি ভীষণ যে তাগাদা অনুভব করছি মেয়েটিকে একটু যদি সাহায্য করতে পারতাম!
আনন্দ আলো: সফর মানেই টুকরো টুকরো স্মৃতির সম্ভার। একেকটা সফর একেকটা পান্ডুলিপি। এবারের সফরকালীন ভীষণ মজার কোন স্মৃতিকথা জানতে চাই-
জুয়েল আইচ: আইবিএল ( ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অব ম্যাজিসিয়ান) এর সাংগঠনিক জায়গায় কর্তাব্যক্তি হিসেবে যারা থাকে তারা সাধারনত খুব উঁচু মানের জাদুশিল্পী হয় না। কারণ সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় জাদু প্র্যাকটিস করা তাদের হয়েই ওঠেনা! আইবিএল ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন যিনি বিখ্যাত একজন জাদুশিল্পী, তার নাম শন্ ফ্রাকোয়াঁ। সে আমার ভীষণ ভালো একজন বন্ধু। ফিজ্ম নামের একটা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন আছে। শন্ সেখানকার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন কার্ড ম্যাজিশিয়ান। আমরা সাধারণত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টকে ভীষণ গুর“গম্ভীরভাবে মঞ্চে উপস্হিত হতে দেখি। কিন্তু চিরাচরিত প্রেসিডেন্টদের থেকে শন একেবারেই আলাদা। শন মঞ্চে প্রবেশ করল দুই রোবটকে নিয়ে। মুভিতে যেমন দেখেছি অন্য গ্রহ থেকে আসা এলিয়েনের হাতে যেমন সাজোয়া অস্ত্র থাকে ঠিক তেমনি অস্ত্র হাতে দুই রোবট শনের দুইপাশে লেফট রাইট করতে করতে মঞ্চে প্রবেশ করল। শন্ মঞ্চে দৃশ্যটিকে এতটাই মজার করে উপস্হাপন করল যে উপস্হিত অতিথি ও দর্শকদের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার অবস্হা।
আনন্দ আলো: আপনার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আপনার সেলফোন হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। কিভাবে ফেরত পেলেন?
জুয়েল আইচ: আমি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে চলে এসেছি। হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নেই। আমার সন্দেহ যে ট্যাক্সি করে আমি এয়ারপোর্টে এসেছি ফোনটা আমি সেখানেই ফেলে চলে এসেছি। আমার ভাইকে যে ঘটনাটা জানাব সেই উপায়ও নেই কারণ এয়ারপোর্ট আমাকে লং ডিসট্যান্ট কল করতে দিচ্ছে না। এর আগে আমার সহযোগীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের জিনিসপত্র হারিয়ে পরবর্তীতে ফেরতও পেয়েছে। এমনকি হংকংয়ের মত একটা দেশেও মোটা অংকের ডলার ও পাসপোর্টসহ ওয়ালেট হারিয়ে সেটাও ফেরত পেয়েছে। সুতরাং আমি ট্যাক্সি ড্রাইভারের জন্য ওয়েট করতে থাকলাম। আমি এয়ারপোর্টের অপারেটরকে বললাম তুমি লং ডিসট্যান্ট দিতে পারবে না কিন্তু নিউ অরলিন্স হোটেলে কি ফোনটা দিতে পারবে? অপারেটর জানাল সে পারবে। আমি হোটেল কতর্ৃপ¶কে জানালাম, আমার ধারণা মোবাইল ফোনটা ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছি, তবে হোটেল র“মেও ফেলে আসতে পারি। যদি মোবাইলটা পাওয়া যায় তাহলে সেটা আমার ভাইয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে অনুরোধ করলাম। আমার ভাইয়ের ঠিকানা ওদের কাছে ছিল কারণ সে সিজে র“মটা বুকিং করেছিল। আমার মনটা কি যে খারাপ হল! কাছে দুরের অসংখ্য মোবাইল নম্বর আমার ঐ সেটে। নিজেকে হতদরিদ্র লাগছিল। এরপর হোটেল কর্তৃপ¶ মোবাইলটি পেয়ে আমার ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেয়। আমি হোটেল র“মে মোবাইল চার্জ দিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গিয়েছিলাম। ভাই ফোনটি পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশে।
আনন্দ আলো: দেশে বাইরের প্রচুর জাদু প্রদর্শনী করেছেন। বাংলাদেশ সম্মন্ধে ওদের ধারণা কেমন?
জুয়েল আইচ: মানুষ সত্ত্বার উৎকৃষ্টতাকে দেখতে ভালোবাসে। সত্ত্বা থেকে বের হওয়া আলোক রশ্মিকে অর্ঘ্য দেয়। সেই সত্ত্বাকে ফুলে ফলে বিকশিত করার জন্য তার দেশের পটভূমির বিরাট ভূমিকা থাকে। ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ সাহেবের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাািড়য়া। কিন্তু ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সবাইতো ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ সাহেবের মত না। ওস্তাদ আলাউদ্দনি খাঁ ওস্তাদের ওস্তাদ। একজন লতা মুঙ্গেশকরের জন্য সবাই ভারতবর্ষ চেনে। ভারতবর্ষের সবাই কিন্তু লতা মুঙ্গেশকর নন। আমাকেও যারা চেনেন তারা বাংলাদেশকে চেনেন। তবে তাদের ভাবনাটা ঐরকম না যে বাংলাদেশের প্রত্যেকেই জুয়েল আইচ। একজন আর্টিস্টকে দেখে তার দেশ সম্মন্ধে সম্মক ধারণা করতে পারাটা কঠিন। তারপরেও দেশের বাইরে বাংলাদেশের কেউ যদি রাস্তা নোংরা করে তখন কিন্তু সেই ব্যক্তিটি নোংরা করে না, করে বাংলাদেশ। আবার ভালো কাজ করলেও করে বাংলাদেশ। একজন ব্যক্তি প্রত্য¶ কিংবা পরো¶ভাবে তার দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করে। আমিও করি। দেশের বাইরে আমি অনুষ্ঠান শেষ করি শূণ্য থেকে বারফুট লম্বা একটা দন্ডে বাঁধা দশফুট দীর্ঘ বাংলাদেশের একটি পতাকা তৈরি করে। একদিকে পতাকা উড়তে থাকে আর আমি বাঁশিতে জাতীয় সঙ্গীতের সুর বাজাই। ঠিক সেইসময় অভিনব একটা ব্যাপার ঘটে, সবজায়গাতেই ঘটেছে। উপস্হিত সমস্ত দর্শক তখন দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
আনন্দ আলো: শি¶া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কি জাদু শেখা সম্ভব?
জুয়েল আইচ: কোন প্রতিষ্ঠানই সাধক তৈরি করতে পারেনা। সাধনা সম্পূর্নর“পে ব্যক্তিগত উপাসনা। নিজের মধ্যে যদি একজন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ তৈরি না হয়, নিজের মধ্যে যদি একজন পন্ডিত রবি শঙ্কর তৈরি না হয়, নিজের মধ্যে যদি একজন ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ তৈরি না হয় কোন প্রতিষ্ঠানেরই ¶মতা নেই কোন ব্যক্তিকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে যায়। দ্রোনাচার্যকে কখনো না দেখেই একলব্য তাকে কল্পনার গুর“ মেনে দিন-রাত তীর সাধনা করতে শুর“ করেন। মনে মনে ভাবতেন গুর“ নিশ্চয়ই এই পন্হায় তাকে শেখাতেন! নিজেই পন্হা আবিস্কার করতেন নিজেই সাধনালব্ধ হতেন। একদিন একলব্যের সাধনায় ব্যাঘাত ঘটায় একটি কুকুর। তার ক্রমাগত ঘেউ ঘেউ শব্দে তীর সাধনায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছিল একলব্যের। বিরক্ত হয়ে একটি তীর ছুঁড়ে দেন। কুকুরটিকে একলব্য মারতে চাননি শুধু কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন। একলব্যের ছোঁড়া তীরটি শব্দের উৎস খুঁজে নিয়ে কুকুরটির দুই ঠোঁট বিদ্ধ করে দেয়। শব্দের উৎস খুঁজে বের করার একলব্যের এই সাধনা কি গুর“ দ্রোনাচার্য্যের প¶ে ও শেখানো সম্ভব ছিল! সাধনায় একলব্য এতোটাই বড় হয়েছিলেন যে স্বয়ং দ্রোনাচার্য তাকে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সাধনা হল ভালোবাসার প্রতি একনিষ্ঠতা জ্ঞাপন এবং ল¶ে পৌঁছানো। লালন সাঁইজি গুর“ মেনেছিলেন সিরাজ সাঁইকে। সিরাজ সাঁই কিন্তু কোন বাস্তব চরিত্র নন, তিনি ছিলেন লালন সাঁইজির কল্পনার গুর“। কল্পনায় গুর“কে সাধনা করে লালন সাঁইজি আত্মশুদ্ধি লাভ করেছেন। তবে হ্যাঁ প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য শি¶া প্রতিষ্ঠানও লাগে। তবে বড় হতে গেলে- অর্থাৎ একজন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ হতে গেলে, রবি শঙ্কর হতে গেলে, ডেভিড কপারফিল্ড হতে গেলে অবশ্যই তাকে একজন সাধক হতে হবে।
আনন্দ আলো: আমাদের দেশে জাদুশিল্প চর্চার অগ্রগতি কেমন? জুয়েল আইচের হাইট ছুঁতে পারবে কিংবা তাকে ছাড়িয়ে যাবে এমন কেউ কি তৈরি হচ্ছে?
জুয়েল আইচ: অনেক তর“ণ প্রাণ আসছে জাদুশিল্পে। সেই তর“ণদের মাঝে অনেক ভালো সম্ভাবনা আছে। অপার সম্ভাবনার যাত্রী হিসেবে একটা মেয়েও আছে। তার নাম তানহার। রংপুরের মেয়ে। চেষ্টা করলে নিজের ¶েত্রে সে একজন রবীন্দ্রনাথ হতে পারবে, একজন কাজী নজর“ল ইসলাম হতে পারবে, একজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হতে পারবে। ওর বাবার খুব শখ ছিল জাদুশিল্পী হওয়ার। কিন্তু তানহারের দাদা ছিল ছেলের শখের বিপ¶ে। যার কারণে বাবাকে থেমে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তানহারকে তার বাবা থেমে যেতে দেয়নি। সে সুপার ট্যালেন্টেড একটা মেয়ে। মেয়ের ভালোবাসাকে বাবা ভীষণ প্রশ্রয় দেয়। সাধনা করলে আগামীর সময়টা হবে তানহারের। সে উচ্চকিত প্রতিনিধিত্ব করবে তার দেশকে।