সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
অনেক আশঙ্কা ছিল। তার মধ্যে প্রথমটি হলো বৃষ্টি হানা দিবে নাতো? বৈশাখের প্রথম দিন ঝড়ো হাওয়া বইবে, আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বৃষ্টি নিয়েই আশঙ্কা ছিল বেশী। কিন্তু বৃষ্টি নামেনি। আকাশ কাঁপেনি একবারও। বরং আকাশে ছিল আলোর বন্যা। যে দিকে তাকাই শুধুই আলো আর আলো। থই থই আলো আর আনন্দ চারদিকে। হবেই বা না কেন? আনন্দ আলোর জন্মদিন বলে কথা। সেখানে আলো আর আনন্দ না থাকলে কি চলে?
দিনটি ছিল পহেলা বৈশাখ। বাংলা ১৪২৩ সালের প্রথমদিন। বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালীর সার্বজনীন উৎসব। তাই সারাদেশ উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছিল। রাজধানী ঢাকায় রমনা বটমূলে ছায়ানট ও বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে চ্যানেল আই এবং সুরের ধারার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। এছাড়াও রাজধানী জুড়ে আরও ছিল বর্ষবরণের বাহারী আয়োজন। এই নিয়েও আশঙ্কা ছিল। সারাদিনমান এত উৎসব আয়োজনে যুক্ত হওয়ার পর সন্ধ্যায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে জমবে তো মেলা? আসবেন তো অতিথিরা? কেননা সেদিন ভয়াবহ যানজটে নাকাল হয়ে উঠেছিল জনজীবন। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়াটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে কারনে আশঙ্কাটা ছিল একটু বেশী।
কিন্তু আনন্দ আলোর জন্মদিন বলে কথা। ১১ বছর পার করে ১২ বছর অর্থাৎ এক যুগে পা ফেলেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর বিনোদন পাক্ষিক দেশ সেরা বিনোদন পত্রিকা আনন্দ আলো। প্রিয় পত্রিকার জন্মদিনে কি ঘরে বসে থাকা যায়? তাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সন্ধ্যা হতে না হতেই আনন্দ আলোর শুভাকাঙ্খী, বন্ধু ও তারকা জগতের বিশিষ্টজনেরা চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এসে হাজির। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন খোলা মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য রাখা ছিল বসার জন্য চেয়ার। অনুষ্ঠান মঞ্চের একটু দূরে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল। নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট পর অর্থাৎ ৭টা ১৫মিনিটে আনন্দ আলোর এক যুগ শুরু উপলক্ষে তারকামেলার শুভ সূচনা হয় মোমবাতির আলোয়…
আনন্দ আর আলো। দুইয়ে মিলে আনন্দ আলো। তাই অনুষ্ঠানের শুরুতেই মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর সাথে আনন্দ ছড়িয়ে দেন অতিথিরা। দর্শক সারীতে অতিথিদের হাতে জ্বলছিল মোমবাতি। আলোর বন্যায় মঞ্চে বাঁশির সুর বেজে ওঠে। যেন এক অনত্মরছোয়া পরিবেশ। মোমের আলোয় বাঁশির সুর শুনে অতিথিরা যার পর নাই অভিভূত হন। এমনই এক পরিবেশে মঞ্চে গান গাইতে আসেন চ্যানেল আই এর জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো আড়ং ডেইরী বাংলার গানের সাত শিল্পী। তাদের হৃদয় ছোয়া গানের সুরে শুরুতেই জমে যায় আনন্দ আলোর জন্মদিনের তারকামেলা।
১১ পেরিয়ে ১২ বছরে পদার্পণ করেছে ইমপ্রেস এর বিনোদন পাক্ষিক দেশ সেরা পত্রিকা আনন্দ আলো। জন্মদিনের অনুষ্ঠান। হাসি আর গান এবং খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমেই কাটিয়ে দেওয়া যেত সময়। সাথে থাকতো হৈ হুল্লোড়ের ব্যবস্থা। কিন্তু আনন্দ আলো জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে শুধুমাত্র হাসি আর গানের মাধ্যমে সেলিব্রেট করতে চায়নি। ভেবেছে শেকড়ের কথা। এই যে আমাদের বিনোদন জগত আজ এত বড় হয়েছে এটা কি হঠাৎ করেই? নাকি এর পেছনে আমাদের অগ্রজদের ভূমিকা আছে? সেই প্রশ্ন মাথায় রেখে আনন্দ আলো সিদ্ধানত্ম নেয় ১২ বছর উপলক্ষে ১২ জন সম্পাদক ও সংস্কৃতিসেবীর হাতে সম্মাননা তুলে দিবে। ভাবনাটি মাথায় আসার পর এব্যাপারে সিদ্ধানত্ম গ্রহনের ক্ষেত্রে সামান্যতম সময় ক্ষেপন করেনি আনন্দ আলো কর্তৃপক্ষ। বরং অত্যনত্ম দ্রুততার সাথে সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়ন করেছে।
সিদ্ধানত্ম হয়েছিল ১২ বছরে ১২ জন গুণী সম্পাদক ও সংস্কৃতিকর্মী আনন্দ আলো সম্মাননা পাবেন। তারা হলেন: সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, বিশিষ্ট সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, মতিউর রহমান চৌধুরী, সুর্বণা মুসত্মাফা, আরেফিন বাদল, চিন্ময় মুৎসুদ্দী, শহীদুল হক খান, শাহজাহান চৌধুরী, আবদুর রহমান, অরুণ চৌধুরী, মাজহারুল ইসলাম ও কানিজ আলমাস খান।
সেদিন সত্যি সত্যি আনন্দ আলোর আয়োজনে তারকামেলা জমে উঠেছিল। বিশেষ করে আনন্দ আলো সম্মাননা প্রাপ্ত ১২ জন গুণী ব্যাক্তির হাস্যোজ্বল উপস্থিতি তারকামেলার রঙ ও রুপের দ্যূতি ছড়িয়ে দেয়। সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজনদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন আরও অনেক গুণীজন। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ হাসান ইমাম, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা সৈয়দ হক, কাজী রোজী, রামেন্দু মজুমদার, শাহাবুদ্দীন নাগরী, সৈয়দ আল ফারুক সহ অনেকেই আনন্দ আলোর জন্মদিনে ফুলের শুভেচ্ছা উপহার দেন। এক সময় গানের মূর্চ্ছনায় শুরু হয় সম্মাননা প্রদান পর্ব। আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মাননা পর্বটি সত্যিকার অর্থে তারকার এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। এই পর্বে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, বিশিষ্ট সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, মতিউর রহমান চৌধুরী, সুবর্ণা মুসত্মাফা, আরেফিন বাদল, চিন্ময় মুৎসদ্দী, শাহজাহান চৌধুরী, শহীদুল হক খান, আবদুর রহমান, অরুণ চৌধুরী, মাজহারুল ইসলাম ও কানিজ আলমাস খানের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয় তুলে দেন যথাক্রমে চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ইমপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চ্যানেল আই এর পরিচালক আব্দুর রশিদ মজুমদার, সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্য ব্যক্তিত্ব তারিক আনাম খান ও বিশিষ্ট উপস্থাপক ফরহাদুর রেজা প্রবাল। সম্মাননা প্রাপ্ত গুণী জনেরা একে একে মঞ্চে উঠে সম্মাননা গ্রহণ করছিলেন আর অনুষ্ঠান মঞ্চে ক্রমান্বয়ে এক বিস্ময়মাখা চিত্রমালা তৈরি হচ্ছিলো। এক সময় ১২ জন গুণী ব্যক্তি ও সম্মানীত অতিথি যখন অনুষ্ঠান মঞ্চে এক সাথে দাঁড়িয়ে যান তখন আনন্দ আর আলোর বন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। বিনোদন জগতের এই ১২ গুণী ব্যক্তিত্ব ইতিপূর্বে হয়তো এভাবে এক মঞ্চে উপস্থিত হননি। সে কারনে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা যেন একটু বেশীই মনে হচ্ছিল। সেটা মঞ্চে যেমন দর্শক সারীতেও তেমনই দেখা যাচ্ছিল। সম্মাননা প্রদান পর্ব শেষ হতে না হতেই মঞ্চে চলে আসে আনন্দ আলোর জন্মদিনের বিশাল আকারের কেক। অতিথিরা সবাই মিলে আনন্দ আলোর জন্মদিনের কেক কাটেন। এরপর শুরু হয় আনন্দ আলোর জন্মদিনকে ঘিরে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানের পালা। সম্মাননা প্রাপ্ত গুণী ব্যক্তিরা একে একে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা সকলেই আনন্দ আলোর ভূয়শী প্রশংসা করে ভবিষ্যৎ কিছু দিক নির্দেশনাও প্রদান করেন। সম্মাননা প্রদানের আনন্দ মুখর পর্ব শেষে শুরু হয় তারকামেলার আরেক আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্ব। এপর্বের বিশেষ চমক ছিল স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত গুণী শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও গুণী শিল্পী ফেরদৌস আরার আনন্দ মুখর উপস্থিতি। আনন্দ আলোর একযুগ শুরুর বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ মুখ হয়েছেন গুণী শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আনন্দ আলো আমার খুবই প্রিয় একটি পত্রিকা। প্রিয় পত্রিকায় প্রচ্ছদ মুখ হয়েছি মনে হচ্ছে এই বৈশাখে এটা আমার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। আনন্দ আলোর শতায়ু কামনা করি।
গুণী শিল্পী ফেরদৌস আরা বলেন, আনন্দ আলো আমার অনেক প্রিয় একটি পত্রিকা। তার জন্মদিনে আসতে পেরে খুউব আনন্দ হচ্ছে। জয়তু আনন্দ আলো। গুণী শিল্পী ফেরদৌস আরা পর-পর কয়েকটি গান গেয়ে শোনান অতিথিদের।
আনন্দ আলোর জনদিনে গান শোনাতে আরও এসেছিলেন গুণী শিল্পী কনক চাপা, অনিমা রায় ও তার দল এবং ইবরার টিপু সহ অনেকে। অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই এর জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো আড়ং ডেইরী চ্যানেল আই বাংলার গানের ৭শিল্পীর পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে। পাশাপাশি ‘এথিক’ এর পরিবেশনায় একটি মঞ্চ কোলাজ দর্শকদের প্রভুত আনন্দ দেয়। অনুষ্ঠানে আনন্দ আলোর সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এশিয়ান টিভির কর্মকর্তা সৈকত সালাহউদ্দিন। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও বাসত্মবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজার (অনুষ্ঠান) আমীরুল ইসলাম। অনুুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন মৌসুমী বড়ুয়া।