Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

একটি হোটেল এবং ইতিহাসের ক্যানভাস

তখনকার দিনে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলই ছিল একমাত্র পাঁচ তারা মানের আন্তর্জাতিক হোটেল। রাষ্ট্রীয় অতিথি, বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধি ও বিদেশী সাংবাদিক যারাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসতেন সঙ্গত কারণে তারা সকলেই এই হোটেলে উঠতেন। ফলে ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর আগে হোটেলটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠে। এই হোটেলটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ইতিহাস। ঐতিহ্যবাহী এই হোটেলটি আবার নতুন করে চালু হয়েছে। শুরুতে নাম ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। তারপর নাম হয় শেরাটন। আবার শেরাটন নাম পাল্টে হয় রূপসী বাংলা। অবশেষে আবারও নাম পেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরুতেই সীমিত পরিসরে হোটেলটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মূল ভবন বাদে ভিতরে হোটেলটির চেহারাই বদলে ফেলা হয়েছে। বদলেছে সাজ সজ্জা, থাকার কক্ষ, রেস্তোরা হল রুমের অবয়ব। সেই সাথে প্রবেশ পথও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে হোটেলটির রেস্টুরেন্টে শতাধিক অতিথি রাতের খাবারের জন্য ভিড় করেন। তবে হোটেলকক্ষে রাত যাপনের জন্য অতিথি ছিলেন পাঁচজনের মতো। হোটেল-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সীমিত পরিসরে চালু করায় এবং প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অতিথিদের আগমন কম ঘটেছে। তবে পর্যায়ক্রমে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর দেশি-বিদেশি অতিথি সমাগমও বেড়ে যাবে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় তৎকালীন রূপসী বাংলা হোটেলটি। ২০১১ সালের মে মাসে শেরাটন কর্তৃপক্ষ হোটেলটির ব্যবস্থাপনা থেকে সরে যাওয়ার পর রূপসী বাংলা নামে এটি পরিচালনা করে সরকার। এর আগে ২০১২ সালে হোটেলটির মালিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রæপের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ৩০ বছর হোটেলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল।
এই চুক্তির আওতায় হোটেলটির ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সংস্কারকাজের মাধ্যমে চেহারা অনেকটাই বদলে হয়েছে। এ সংস্কারকাজে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা।
সর্বশেষ রূপসী বাংলা হোটেল হিসেবে যখন এটি চালু ছিল তখন তাতে ছোট-বড় মিলিয়ে কক্ষসংখ্যা ছিল ২৭২। সংস্কারের পর কক্ষের সংখ্যা কমে ২২৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে আয়তন বেড়েছে প্রতিটি কক্ষের। পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিংপুল ও ডাইনিং হলের স্থানও। স্থানান্তর করা হয়েছে হোটেলটির প্রবেশপথও।
হোটেলটির ভেতরে নকশা থেকে শুরু করে আসবাব, অঙ্গসজ্জা বদলে গেছে। হোটেলকক্ষ থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, হলরুম, লবি সবকিছুরই পরিসর অনেক বেড়েছে।
একজন কর্মকর্তা জানালেন, শুধু অবস্থান ও ভবনটি ছাড়া হোটেলের বাকি সবকিছুই নতুন করে সাজানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্পা জোন। সারা বিশ্বে এটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের ২০৩ নম্বর হোটেল। সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষাকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য পুরো হোটেলের আলোকসজ্জা এমনভাবে করা হয়েছে যেখানে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
রাজধানীর শাহবাগে প্রায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর অবস্থিত এ হোটেলটি ১৯৬৬ সালে চালু হয়। শুরু থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ১৯৮৪ সালে যুক্ত হয় শেরাটন হোটেল। ২০১১ সালের এপ্রিল শেরাটন চলে যাওয়ার পর ২০১৪ সালে সংস্কারের জন্য বন্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত এটি সরকারি উদ্যোগে ‘রূপসী বাংলা’ নামে পরিচালনা করা হয়। ২০১৮ সালে এসে পুনরায় এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে যাত্রা শুরু করে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও হোটেলটি চালু ছিল। সে সময় হোটেলটিকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। হোটেলটিতে অবস্থান করে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন একদল বিদেশি সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান আর্নল্ড জেইটলিনসহ আরও অনেক সাংবাদিক।