Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এই সময়ে ব্রণ সমস্যা এবং ত্বকের যত্নে করণীয়

তীব্র গরম আর ধুলোবালিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের ত্বক। বিশেষ করে কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় যাদের বাইরে থাকতে হয় ত্বকের রোগের ঝুঁকি তাদেরই বেশি। তাই এই গরমে যাদের হরহামেশাই ঘর থেকে বেরুতে হয় ত্বকের ব্যপারে তাদের একটু বাড়তি যতœশীল হওয়াটা জরুরি।
গরমের দিনে ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বেশি যতœশীল হতে হয়। এজন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন গিøসারিন-সমৃদ্ধ সাবান অথবা ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ। তবে গরমে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার। মুখে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের গরমকালে কষ্ট হয় বেশি। তেলগ্রন্থিগুলো এ সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ধরনের সমস্যায় মেডিকেটেড ফেইস ওয়াশ ব্যবহার করলে ভালো ফল পেতে পারেন। আজকাল বাজারে ভালো মানের ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। ভালো ব্র্যান্ড দেখে ফেসওয়াশ কিনবেন। গরমের এই সময়ে ত্বকে ব্রণও বেশি দেখা দেয়। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাও অত্যন্ত জরুরি। যারা বাড়ির কাজ করেন, প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

যে কারণে ব্রণের সমস্যা রোধ করা যায় না
ব্রণ আমাদের ত্বকের খুব পরিচিত ও বিরক্তিকর সমস্যা। ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পিছনে ব্রণ দায়ী। কিন্তু কেন আমাদের ত্বকে ব্রণ হয় বা কেন এতো যতœ নেওয়ার পরেও ত্বক হতে ব্রণের সমস্যা যায় না তা আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার-দাবার, চলা-ফেরা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সব কিছুর ওপর নির্ভর করে ত্বকের স্বাস্থ্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনচর্চাই যদি সুস্থ না হয় তাহলে ত্বক সহ দেহেও দেখা দিতে পারে অনেক সমস্যা। যেহেতু ত্বকের সমস্যা ব্রণ নিয়ে আমরা সকলেই কম বেশি চিন্তিত থাকি তাই এব্যাপারে সমাধানের ব্যাপারটিও জানা জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নিই ব্রণ রোধ না হওয়ার পিছনের কারণগুলো।
ত্বকে চাপ প্রয়োগ করা: আপনি যদি সারাক্ষণ ফোনে কথা বলেন তাহলে ফোন আপনার মুখের ত্বকে চাপ প্রয়োগ করে, ফোনে ও হাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া যা খালি চোখে দেখা যায়না এবং এই কারণেও ত্বকে ব্রণ হয়ে থাকে। তাছাড়া আমরা অনেক সময় গালে বা
থুতনিতে হাত দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে কথা বলি বা চিন্তা করি। এ জন্যও ত্বকে ব্রণ হতে পারে কারণ হাতে থাকে অনেক জীবাণু।
ঘন ঘন মুখ ধোয়া: ত্বকে ব্রণ হওয়ার আরেকটি কারণ হল ঘন ঘন মুখ ধোয়া। ত্বক পরিষ্কার থাকলে ব্রণ হবেনা ভেবে অনেকেই কিছুক্ষণ পর পর মুখ ধুয়ে থাকেন এতে করে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায় এবং তখন ত্বকে হঠাৎ বেশি তেল উৎপাদন হয়ে ব্রণের সমস্যায় রূপ নেয়। তাই নিয়ম মেনে মুখ পরিষ্কার করুন।
ময়লা মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করা: শেষবার কখন আপনি মেকআপ ব্রাশ ও স্পঞ্জ পরিষ্কার করেছেন? আপনি যখনই যা কিছু আপনার ত্বকে ব্যবহার করেন না কেন তা অবশ্যই পরিষ্কার করে নেয়া জরুরি। মেকআপ সামগ্রীগুলো বার বার ব্যবহার করার ফলে এতে জমে যায় প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া যা থেকে ত্বকে ব্রণ হতে পারে। তাই মেকআপ সামগ্রী সবসময় পরিষ্কার রাখুন এবং ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।
জামা-কাপড়: যদি আপনার মুখে ব্রনের সমস্যা দেখা দেয়, জামা-কাপড়ের জন্যও হতে পারে। কাজেই ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনার জামা-কাপড়ের দিকে নজর দিন। যদি আপনি খুব বেশি পরিমাণে সিনথেটিক জাতীয় জামা পরেন তাহলে মুখের ত্বকে ব্রণ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। কারণ এই জাতীয় কাপড়গুলো মুখের মৃত কোষ ও ঘাম বের হওয়ার পথ বন্ধ করে ব্রণের সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার খাওয়া: মুখের ত্বকে ব্রণের আক্রমন দেখা দিতে পারে ডায়েট মেন্যুর কারণেও। যদি খুব বেশি পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার খাওয়া আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়। তাহলে ত্বকও তৈলাক্ত হবে বেশি এবং মুখে ব্রণ হবেই। তাই চেষ্টা করুন তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে যেমন- পিৎজা, ফাস্ট ফুড এগুলো ত্বককে অনেক বেশি তৈলাক্ত করে ফেলে।
ত্বকের যতেœ রুটিন না মেনে চলা: মুখ প্রতিদিন সকালে ও রাতে পরিষ্কার করা, ময়শ্চার করা জরুরি এবং এটি নিয়মিত করলে ব্রণ সমস্যা থাকবে না।
ঘুমের সমস্যা: স্ট্রেস এবং ঘুমের সমস্যার কারণেও মুখের ত্বকে ব্রন হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন স্ট্রেসমুক্ত থাকতে এবং প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমাতে। স্ট্রেস আমাদের শরীরে ত্বকের গঠনে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং ব্রণের সমস্যা তৈরি করে আর ঘুমের সমস্যার কারণে আমাদেরকে দেখতে আরও বেশি স্ট্রেসড লাগে।
নির্দিষ্ট সময়ে বালিশের কাভার পরিবর্তন না করা: তোয়ালে ও বালিশের কভার উভয়ের কারণেই ত্বকে দেখা দিতে পারে ব্রণ। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে ২ বার তোয়ালে ও বালিশের কাভার ধুয়ে পরিষ্কার কারুন।
ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে
ত্বকের যে সম্যসায় কম বেশী আমরা সবাই ভুক্তভোগি তা হল ব্রণ। নরমাল বা শুষ্ক ত্বকের চেয়ে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা বেশী দেখা যায়। এই ব্রণ আর তার কালো দাগ দূর করার জন্য আমরা অনেকেই ব্যবহার করে থাকি নানা রকম কসমেটিক্স ও ঔষধ। এর পরিবর্ততে ব্যবহার করতে পারেন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি যা সহজেই আপনার ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক দ্রæত প্রাকৃতিকভাবে ব্রণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ কিছু উপায়।
সবচেয়ে সহজলভ্য এবং কার্যকরী উপায় হল বরফ। এটি ব্রণের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। একটি বরফের ছোট টুকরো পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে নিয়ে এক মিনিটের জন্য ব্রণের উপর রাখুন। এইভাবে বার বার করুন। এই পদ্ধতি ব্রণের লাল হওয়া ও ফোলাভাব কমাবে।
লেবুর রস খুব দ্রæত ব্রণ শুকাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উৎস। এক টুকরো তুলোর মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণে লাগান। সারা রাত রাখুন। সকালে ঠাÐা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দূর করতে এই পদ্ধতিও বেশ কার্যকর।
টুথপেষ্ট নামটা শুনে কিছুটা অবাক হতে পারেন। কিন্তু দ্রæত ব্রণ দূর করতে টুথপেষ্টের জুড়ি নেই। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ব্রাশ করার সময় কিছুটা পেষ্ট ব্রণে লাগিয়ে নিন। সকালে ভালভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং দেখুন ম্যাজিক। চাইলে দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যদিকে রসুনে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান; যা ব্রণ দূর করে থাকে। এক টুকরো রসুন থেঁতলে ব্রণের উপর আলতো করে ঘষুন। ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই কাজটি দিনে কয়েকবার করতে পারেন। মধু হল প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক যা ব্রণ দ্রæত নিরাময় করে থাকে। এক টুকরো পরিষ্কার তুলায় মধু লাগিয়ে ব্রণে লাগান। আধা ঘণ্টার পর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মধু এবং দারুচিনির পেষ্ট তৈরি করেও ব্রণে লাগাতে পারেন। সারা রাত রেখে সকালে ঠাÐা পানি দিয়ে ভালভবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তবে নিয়মিত মধু ব্যবহারে ব্রণ একেবারেই সারবে কি না, তা নিয়ে গবেষকরা এখনো দ্বন্ধে রয়েছেন। তাঁদের পরামর্শ, চেষ্টা করুন অপ্রক্রিয়াজাত বা টাটকা মধু ব্যবহার করতে।
পেঁপে ব্রণের খুব ভাল প্রতিষেধক। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ এবং এনজাইম আছে যা ব্রণ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে থাকে। কাঁচা পেঁপে রস করে সেটি ব্রণে লাগান। শুকানোর জন্য ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাÐা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ঘরোয়া উপায়ে ব্রণর সমস্যার সমাধান
মুখে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় ব্রণ। সাধারণত গাল, কপাল, নাকে ব্রণ হয়ে থাকে। কেউ কেউ অনেক চেষ্টা করেও এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পান না। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হরমোনের পরিবর্তনের জন্যই প্রধাণত ব্রণ সমস্যা দেখা দেয়। তবে কোনোরকম রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্রণের সমস্যা সমাধানের কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। চলুন জেনে নেই জেনে নিই সেগুলো সম্পর্কে।
১. ব্রণ, ব্রণের দাগের সমস্যা দূর করতে সবথেকে ভালো ঘরোয়া উপাদান হল টুথপেস্ট। সারারাত ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ জায়গা, যেখানে ব্রণ হয়েছে, সেখানে টুথপেস্ট লাগিয়ে রাখুন। সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. ব্রণের জায়গায় ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করুন। এর পর সেটি শুকনো হতে দিন। টানা ৪ বার ব্যবহার করুন। ফল পাবেন।
৩. আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেএরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রঙ হালকা করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।
৪. সমপরিমাণ লেবুর রস এবং গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় ব্যবহার করুন। খুব সহজেই ব্রণ’র হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
৫. অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান হিসেবে রসুন ব্যবহার করা হয়। ব্রণের ওপর সরাসরি রসুন বাটা ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাবেন আশাকরি।

ব্রণ নিরাময়ে আরো
যা যা করতে পারেন
১. গরমে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সঙ্গে সানগøাস ও ছাতা নিতে ভুলবেন না।
২. শুধু বাহ্যিক যতœ করলেই হবে না, প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ যতেœরও। গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল এবং কমপক্ষে ১০-১২ গøাস পানি পান করতে হবে।
৩. এ সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, এ জন্য গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। টক, ভাজাপোড়া এবং খুব বেশি গরম খাবার খাবেন না।
৪. রোদে বের হবার আগে সানগøাস নিতে ভুলবেন না যেন। সানগøাস আপনার চোখকে রোদ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আপনার মধ্যে একটা স্মার্ট লুক নিয়ে আসবে।
৫. বাইরে যেহেতু নিয়ম করে মুখ ধোয়া সম্ভব নয় তাই সঙ্গে ফেসিয়াল টিস্যু রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলে নিজেকে অনেক ফ্রেশ ও সতেজ মনে হবে।
৬. গরমে লেবুর শরবত হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এক চমৎকার পানীয়। শরবতে একটু লবণ ও চিনি মিশিয়ে নিন। চিনি শক্তি জোগাবে, আর লবণ পূরণ করবে আপনার শরীর থেকে ঘামের সাথে বেরিয়ে যাওয়া লবণের অভাবটুকু। লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। এই গরমে ভিটামিন সি ফিরিয়ে দেবে আপনার ত্বকের লাবণ্যতা।
৭. গরমের দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন আপনার অভ্যাসের পরিবর্তন। নিজেকে বদলে ফেলুন। ত্বকের প্রতি দৃষ্টি দিন। সামান্য কিছু সতর্কতা আপনার ত্বককে করবে আরও বেশি আকর্ষণীয়।
মেকওভার : অরা বিউটি লাউঞ্জ