Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এই করোনাকালে সিনেমার ভবিষ্যৎ কী?

আরিফ খান
ছোট্ট একটি বিন্দু, এতই ছোট যে খালি চোখে দেখার কোনই সুযোগ নেই। তেমন একটি বিন্দু তোলপাড় করে দিল সারাবিশ্ব, পৃথিবী সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বা দূর্বল দেশ থেকে শুরু করে সর্ববৃহৎ বা শক্তিশালী দেশ কেউই বাদ যায়নি এই বিন্দুর আঘাতে বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে। স্থবির করে দিল সারা বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে। জীবন-যাত্রা, ব্যাবসা-বানিজ্য, শিক্ষা-রাজনীতি পর্যটন-বিনোদন কোন দিকটায় ধস্ নামেনি সেটা খুঁজে পাওয়াই এখন কঠিন। বিশ্ব আটকে গিয়েছিল বা এখনো আটকে আছে লকডাউন নামের এক শব্দের বেড়াজালে। এই লক ডাউনে ছিন্নবিন্ন হয়ে যায়নি বা এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি এমন কোন সেক্টর খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। সব কিছুর মত স্থবির হয়ে গেছে বিনোদন মাধ্যমও। বিনোদনের প্রতিটি মাধ্যম থমকে গেছে। টিভি, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, পর্যটন কোনটাই রেহাই পায়নি এই বিপর্যয় থেকে।
৮ মার্চ প্রথম সনাক্ত হয় এদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী, নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয় লকডাউন। যে সময়টা এই লক ডাউন শুরু হয় সেই সময় বিনোদন জগতের মৌসুম বলা চলে। এই সময়টা অনুষ্ঠিত হয় পরপর কয়েকটি উৎসব। পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, এই উৎসবের সময় আনন্দ উদযাপনের প্রধান উৎসই থাকে বিনোদন। এই সব উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পরে টিভি মাধ্যম গুলো নানারকম নাটক ও অনুষ্ঠান নির্মাণে। সিনেমা পাড়াও ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি নির্মাণে। সবই থমকে গেল এই লকডাউনের বেড়াজালে, যার উৎস ওই ছোট্ট একটি বিন্দু।
করোনার প্রভাব থেকে মুক্ত না হলেও জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ক্রমশ শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। কাজে নেমে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। খুলে দেয়া হয়েছে অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে শুরু হয়ে গেছে টিভি নাটকের শুটিংও। যা বলতে গেলে এখন নিয়মিতই চলছে। শুধু থেমে আছে আমাদের চলচ্চিত্র মাধ্যম। না খুলছে সিনেমা হল, না শুরু হচ্ছে শুটিং। যদিও শোনা যাচ্ছে একটু একটু করে শুরু হতে যাচ্ছে সিনেমার শুটিং। কিন্তু খুলছে না সিনেমা হলগুলো। আর হল না খুললে, ছবি না চললে শুটিংই বা করে কি হবে এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসে। তারপরেও সিনেমার শুটিং যে পরিসরে হয় স্বাস্থবিধি মেনে সেভাবে শুটিং করা খুব সহজ না। আবার ব্যয় বহুলও। এমন ব্যাখ্যাই দিয়েছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যাক্তিত্ব। এখানে তুলে ধরা হলো তাদের মতামত।
শোকের মঞ্চে ঐক্যের ডাক
আমাদের চলচ্চিত্রের উম্মেষ ধারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনেক। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুই আবার চলচ্চিত্রের মানুষ গুলোকে একই মঞ্চে উপস্থিত করলেন। শোকাবহ ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এফডিসিতে অনুষ্ঠিত শোক সভায় বিবাদমান সফল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। একই মঞ্চে পাশাপাশি, কাছাকাছি বসেছেন। কুশল বিনিময় করেছেন। ফলে নতুন করে আশার আলো দেখা দিয়েছে। অভিজ্ঞ জনের মন্তব্য, শোকাবহ ১৫ আগস্টের মঞ্চে চলচ্চিত্রের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের অংশ গ্রহণ সত্যি সত্যি অনেক সম্ভাবনার আলো ফেলেছে। সম্বন্বিত এই আন্তরিক উদ্যোগ ধরে রাখতে পারলে আমাদের চলচ্চিত্র আবার কাঙ্খিত পথে ঘুরে দাঁড়াবে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই শোক সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চিত্র নায়ক শাকিব খান, রিয়াজ, ওমর সানী, অনন্ত জলীল, সাইমন সাদিক, মিশা সওদাগর, নায়িকা নতুন, রোজিনা, মৌসুমী, নিপুন, অপু বিশ্বাস। প্রযোজক সমিতির সভপাতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।
উল্লেখ্য, ১৮ সংগঠন কর্তৃক বহিস্কৃত শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর এই সভায় উপস্থিত থাকলেও বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক জায়েদ খান উপস্থিত ছিলেন না।
নাই কাজ তো খই ভাজ!
কথায় আছে নাই কাজ তো খই ভাজ। আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গণের এখন এমনই অবস্থা। করোনার অযুহাতে নির্মাণ কাজ বন্ধ। তাই বলে বসে থাকলে তো চলবে না। কিছু একটা কাজ তো খুঁজে নিতে হবে। অনেকেই চমৎকার কাজ খুঁজে পেয়েছেন। সংগঠনের কার্য্যালয়ে বসে আড্ডা দেয়া আর প্রতিপক্ষকে ‘দেখে নেয়ার’ হুশিয়ারি দিয়ে চলেছেন বিরামহীন। অথচ এই করোনাকালীন দুঃসময়ে চলচ্চিত্রের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একটা সুদৃঢ় ঐক্যের আন্তরিক উদ্যোগ কামনা করেছিল চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। করোনার ভয়ে শুটিং বন্ধ। কিন্তু ভবিষ্যতে করোনামুক্ত পরিবেশে যাতে বিপুল উদ্যমে সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু করা যায় সে ব্যাপারে কার্যলর উদ্যোগ আশা করেছিল সাধারন দর্শক। চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজানো যেত। ভালো গল্পের খোঁজে একটা ক্যাম্পেইন শুরু করা যেতো। করোনাকালীন এই দুঃসময়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ ভাবনা নিয়ে পারস্পারিক মত বিনিময় করা যেত। সমন্বিত উপায়ে অভাবগ্রস্থ শিল্পী কলাকুশলীদের পাশে দ্াড়ানো যেত। অথচ এসবের কিছুই করা হয়নি। বরং ‘বয়কট’ সংস্কৃতিই এখন চলচ্চিত্রাঙ্গনের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ আরও বেশী হুমকির মুখে পড়েছে।
দাবি পূরণ না হলে বন্ধ হতে পারে সিনেপ্লেক্স।

Poramon

করোনার কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। কবে প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা এই ক্ষতির জাঁতাকল থেকে মুক্ত হবেন, তা জানেন না। এদিকে বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, পাঁচতারা হোটেল, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, পর্যটনসহ দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতের চাকা সচল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধ আছে প্রেক্ষাগৃহ। দেশের প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকাটা তাঁদের জন্য একটি অশনিসংকেত। এ অবস্থায় সরকার আন্তরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে না এলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের জনপ্রিয় সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্স। সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান।
সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারের সিনেপ্লেক্স শাখায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেভ বিডি সিনেমা হ্যাশট্যাগ দিয়ে সেখানে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরে। যেগুলো পূরণ হলে স্টার সিনেপ্লেক্স এ দেশে সিনেপ্লেক্স ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করে তারা। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিগগিরই সিনেমা হল খুলে দেওয়া, জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করা, সিনেমা হলের টিকিটের ওপর সব ধরনের মূসক ও কর মওকুফের সুযোগ প্রদান, সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমোদন এবং উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র শর্তহীনভাবে আমদানির অনুমতি প্রদান।
শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে মাহবুব রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখা বিভিন্ন শপিং মলে ভাড়ায় পরিচালিত হয়। এই করোনাকালে শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া মওকুফ করা ও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার অনুরোধ করছি।’ প্রযোজক সমিতির কাছে অনুরোধ করে তিনি বলেন, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলো মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শুধু সিনেমা হল খুললেই হবে না, নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে আসবেন না।
মাহবুব রহমান আরও বলেন, ‘আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। নির্ধারিত আসনের জন্য অল্পসংখ্যক লোক টিকিটের বিনিময়ে সিনেমা দেখেন। অন্যান্য জনবহুল স্থানের তুলনায় এখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মানুষের বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। স্টার সিনেপ্লেক্স বরাবরই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন।’
সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান আরও বলেন, চলচ্চিত্রশিল্পের মেরুদণ্ড বলা যায় সিনেমা হলকে। হল না থাকলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। তাই সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন করেন শিগগিরই দেশের হলগুলো খুলে দেওয়ার। এ ছাড়া সুদবিহীন ঋণসহ পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তারও আবেদন করেন তাঁরা।
শিল্পী সমিতির বাদ পড়া সদস্যরা গড়লেন
নতুন সংগঠন
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে বাদ পড়া ১৮৪ জন সদস্য মিলে তৈরি করলেন নতুন একটি সংগঠন। নিজেদের সদস্যপদ ফিরে পেতে গড়ে তোলা এই সংগঠনের নাম তাঁরা দিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী অধিকার রক্ষা ফোরাম। এই সংগঠনে আছে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদও। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) এ নিয়ে বাড়ল আরেকটি সংগঠন।
সংগঠনের মূল কমিটিতে ১ জন আহ্বায়ক, ৩ জন যুগ্ম আহ্বায়ক, ১ জন সদস্যসচিব, ৪ জন যুগ্ম সদস্যসচিব, কার্যনির্বাহী সদস্য ১২ জনসহ মোট ২১ জন সদস্য আছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী অধিকার রক্ষা ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা চিত্রনায়ক ওমর সানি বলেন, ‘মূলত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অধিকারবঞ্চিত সদস্যদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই সংগঠনের জন্ম হয়েছে। সংগঠনের চিন্তাভাবনা যৌক্তিক মনে হওয়াতে আমাদের পূর্ণ সমর্থনও আছে।’
চলচ্চিত্র শিল্পী অধিকার রক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক ফিরোজ শাহী জানান, ৮ আগস্ট সংগঠনটি গোছানোর কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার পরিচালক ও প্রযোজক সমিতি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর চলচ্চিত্র পরিবারে এ সংগঠন যুক্ত হয়।
এই করোনার মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের খবর পাওয়া না গেলেও সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে মুখর ছিল চলচ্চিত্রজগৎ। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন আর বয়কট—চলচ্চিত্র পাড়ায় শুধু এসব নিয়ে এখন বেশি আলোচনা। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বাদ পড়া সদস্যরা সংগঠনটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের পদত্যাগে কঠোর অবস্থান নেন। এদিকে শিল্পী সমিতি বাদে চলচ্চিত্রের বাকি সংগঠনের নেতারা মিশা ও জায়েদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে তাঁদের বর্জনের আহ্বান জানান। এই প্রেক্ষাপটে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বর্জনের আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতিতে যাওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সপ্তাহ পার হওয়ার পরও চলচ্চিত্রের বাকি সংগঠন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানালে, শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সবার একটাই কথা, মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা করতে রাজি নন তাঁরা।
সিনেমা হল খুলতে হবে দিতে হবে প্রণোদনাও
সিনেমা নেই। নিঃসঙ্গ ‘বলাকা’র ফাঁকা বোর্ডে নেই কোনো সিনেমার ব্যানার। করোনায় বন্ধ হয়ে ধুঁকতে শুরু করেছে পুরোনো সব সিনেমা হল। নীলক্ষেতের বলাকাও সেই দলে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো মাল্টিপ্লেক্সও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ব্যবসা অনেক আগেই ‘ভোকাট্টা’ হয়ে গেছে। মফস্বলের অনেক হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পালাক্রমে বন্ধ হতে পারে আরও। শহরের অনেক হলের একই দশা হবে বলে বারবার জানিয়েছেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। আর করোনা যেন সিনেমা ব্যবসার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। সবকিছু খুলে গেলেও এখনো খোলেনি সিনেমা হল। খোলা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতের মতো প্রেক্ষাগৃহও খুলে দিতে হবে। এ ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দিতে হবে প্রণোদনা, অনুমতি দিতে হবে উপমহাদেশীয় সিনেমা চালানোর।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, ‘সারা দুনিয়ার সরকার সিনেমা–সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং থিয়েটারগুলোকে বিভিন্ন রকম প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। যদি সত্যিই সিনেমার ভালো চান, তাহলে সংশ্লিষ্টদের প্রণোদনার আওতায় আনুন। স্টার সিনেপ্লেক্স স্রোতের বিরুদ্ধে ব্যবসা চালু করে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশের সিনেমা প্রদর্শনের একটা বড় জায়গা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
করোনার এই সময়ে নতুন ছবি মুক্তি দিতে আগ্রহী নন অনেক প্রযোজক। তাঁদের আশঙ্কা, করোনাকালে মুক্তি পেলে ব্যবসা করতে পারবে না ছবি, টাকাও উঠবে না। অন্যদিকে প্রদর্শকেরা মনে করেন, এই সময়ে হলগুলোতে পুরোনো হিন্দি ছবি চালানো গেলে একদিকে হল চালু করা যাবে, কিছুটা ব্যবসাও আসবে। প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘পুরোনো হিন্দি ছবি চালানো হলে এখনো হল বাঁচানো সম্ভব।’ তবে প্রযোজকদের কাছে সেন্সর পাওয়া নতুন ছবিগুলোও মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন কোনো কোনো প্রদর্শক।
হিন্দি ছবি চালানোর বিপক্ষে ছিল প্রযোজক সমিতি। এখন তারাও বলছে, হিন্দি ছবি চালাতে হবে। আগে হল বাঁচাতে হবে। প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘হল বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে। এ জন্য আমরা আমাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছি। আমরা চাই দেশে উপমহাদেশীয় ছবি চলুক।’
মাল্টিপ্লেক্সগুলো হলিউডের সঙ্গে একই সময়ে দেশে নতুন ছবি মুক্তি দিয়ে দারুণ ব্যবসা করেছে। বড় পর্দায় ছবি দেখার সুযোগ তরুণদের সিনেমারুচি ও অভিজ্ঞতার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেখানে একই সঙ্গে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র চালানোর ব্যবস্থা সিনেমাকে এগিয়ে নেবে বলে অনেকেরই বিশ্বাস। নির্মাতা ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ হারে কর আরোপ করে দেশে সব ভাষার ছবি চালানো উচিত। তবে নিয়ম করে সেগুলোর প্রদর্শনী সীমিত রাখতে হবে।’
সহায়তা না পেলে স্টার সিনেপ্লেক্স বন্ধ করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ, তুলে ধরেছে নানা দাবি। এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত খবরে মন্তব্য করেন পাঠকেরা। এক পাঠক লিখেছেন, ‘আমেরিকান নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম- এসবের ভিড়ে এমনিতেই অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমেরিকান বুদ্ধির কাছে সবাইকে সবকিছুতে আত্মসমর্পণ করতে হবে একদিন…,
আরেক পাঠক মন্তব্য করেন, ‘উপমহাদেশের সিনেমা বাংলায় ডাবিং করে মুক্তি দিতে হবে। বলিউডের সিনেমা সাউথ ইন্ডিয়াতে তামিল-তেলেগু ভাষায় রিলিজ দেওয়া হয়, একটি স্বাধীন দেশে কেন হবে না? এতে আমাদের ডাবিং আর্টিস্টদেরও কর্মসংস্থান হবে।’
আবার হিন্দি ছবি আমদানির বিরুদ্ধেও বলেন এক পাঠক। তিনি লিখেন, ‘একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে আমদানি করার পাঁয়তারা করছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।’