Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এইতো আমাদের মুস্তাফিজ!

রেজানুর রহমান জাকীর হাসান

এলাম আর জয় করলাম। এ যেন তেমনই এক জাদুকরী গল্প। বাসৱবতাকেও যেন হার মানিয়েছে। বাংলাদেশেরই এক তরুণ ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান। এক বছর আগেও যাকে তার কুষ্টিয়া জেলার মানুষও ভালো করে চিনতো না সে এখন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট তারকা। ভারতে সদ্য সমাপ্ত আইপিএল-এ সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে হঠাৎ করেই তার আবির্ভাব। হালকা পাতলা লিকলিকে চেহারার এই তরুণকে দেখে হয়তো অনেকেই ভাবেননি সে এক বছরের মাথায় ক্রিকেটে বিশ্ব কাঁপাবে। সে যখন ক্রিকেট মাঠে দৌঁড় দেয় তখন কারো কারো মনে হতো- এই বুঝি বাতাসের ধাক্কায় পড়ে যাবে। কিন্তু বাতাসও জানে বাংলাদেশের এই মেধাবী তরুণ কতোটা বিস্ময় নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় পা ফেলেছে। ফলে অনেক সময় বাতাসও বোধকরি বুঝতে পারে না এই  তরুণ এতো ক্ষীপ্র গতিতে বোলিং করে কিভাবে?

সম্পর্কিত

নিজের দেশে ক্রিকেট খেলে ভারত, পাকিসৱান, সাউথ আফ্রিকাসহ ক্রিকেটের পরাশক্তি বলে খ্যাত দেশগুলোকে হতবাক করে দেয় মুস্তাফিজ। তার নামের আগে যুক্ত হয় কাটার মাস্টার। আইপিল-এ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে দুর্দানৱ পারফরমেন্স করা মুস্তাফিজুর রহমান এখন ক্রিকেট দুনিয়ায় শুধুই ‘ফিজম্ব নামে পরিচিত।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র মুস্তাফিজ ভারতের ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলীর চেয়েও ব্যাপক জনপ্রিয়। মুস্তাফিজের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবার আইপিএল-এর শিরোপা জিতেছে। সে কারনে মুস্তাফিজুর রহমান এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছেন।

মুস্তাফিজুর রহমানের বেড়ে ওঠা

এই তো বছর পাঁচেক আগের কথা। জেলা পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট খেলায় সাতক্ষীরার হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রতিপক্ষ মাগুরা জেলা দল। প্রথম দিনই আগুন ঝরল তার বলে। পেলেন দুই উইকেট। খেলা চলাকালে স্থানীয় কোচ আলতাফ হোসেন ফোন করে মুস্তাফিজের বড় ভাই মোখলেসুর রহমানকে বাগেরহাটে ডেকে নেন। আলতাফ ফোনে বলেন, মুস্তাফিজ দারুণ খেলছে। তাঁকে আসতেই হবে। মাঠে বসে মোখলেসুরও দেখলেন ছোট ভাইয়ের দুর্দানৱ বোলিং। দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। মুস্তাফিজের তখন আবদার ছিল একজোড়া নতুন জুতার। মোখলেসুর কথা দিলেন, পরের ম্যাচে তিন উইকেট নিতে পারলে ছোট ভাইটির আবদার পূরণ করা হবে। মুস্তাফিজ তার নিশানা ভেদ করলেন। কুষ্টিয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে ঝোলায় পুরলেন তিন উইকেট। মোখলেসুর পরদিন সানন্দে খুলনা শহর থেকে মুস্তাফিজকে কিনে দেন একজোড়া স্পাইক বুট। মুস্তাফিজের আনন্দ যেন আর ধরে না। বয়সভিত্তিক এই জেলা পর্যায়ের টুর্নামেন্টটির বাছাই পর্বেই ঘটেছিল বেশ মজার এক ঘটনা। মোখলেসুরের বাইকে চেপে সাতক্ষীরার সরকারি কলেজ মাঠে বোলিংয়ের পরীক্ষা দিতে এসেছেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজ একা নন, এসেছে আরো অনেক উঠতি তরুণ। আশঙ্কায় খানিকটা কুঁকড়ে গেলেন তিনি। তার মনে হয়েছিল, এত প্রার্থীর ভিড়ে পরীক্ষাই বুঝি দিতে পারবেন না। অবশেষে পালা আসে তার। কিন্তু হালকা টেনিস বলে খেলে অভ্যসৱ মুস্তাফিজ কাঠের বল হাতে প্রথমেই ঘটালেন বিপত্তি। প্রথম কয়েকটি বল ঠিকঠাক মতো পিচেই ফেলতে পারলেন না। দৌঁড়ে এলেন বড় ভাই মোখলেস। খানিকক্ষণ সাহস দিলেন ছোট ভাইকে। তারপর আর পিছু ফেরা নয়। একের পর এক দুর্দানৱ বল করে তিনি তাক লাগিয়ে দিলেন নির্বাচকদের।

Mostafizur-Rahman-Familyসাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার তেঁতুলিয়া গ্রামে মুস্তাফিজদের বাড়ি। বাবা আবুল কাশেম গাজী, মা মাহমুদা খাতুন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মুস্তাফিজ। কোনো ডাক নাম নেই তার। বড় ভাই মুখলেস বলেন, ‘নাম ওর একটাই- মুস্তাফিজ।’ ছোটবেলা থেকেই বাঁহাতি তিনি। এমনকি প্রথম প্রথম নাকি ভাতও খেতেন বাঁহাতেই। অনেক চেষ্টায় এই অভ্যাসটি পাল্টানো গেছে তার। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা আর বড়দের খুব মেনে চলতেন তিনি। খেলতে নামার আগেও ভোলেননি এই আদব-কায়দা। ফোন করে বাবা-মা, বড় ভাই, স্থানীয় মুরব্বি ও কোচদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবার দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়েই খেলতে নামেন তিনি। তেঁতুলিয়া গ্রাম থেকে সাতক্ষীরা শহরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। প্রায় প্রতিদিনই এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে প্রাকটিসে যেতেন মুস্তাফিজ। বড় ভাই মোখলেসুর, স্থানীয় কোচ আলতাফ ও জেলা কোচ তপু ভাইয়ের নিয়মিত পরিচর্যায় মুস্তাফিজ শানিয়ে নিতে থাকেন নিজের ধার। যেই ধারের কাছে কচুকাটা হতে থাকে প্রতিপক্ষের একের পর খেলোয়াড়। জেলা পর্যায়ের পর খুব বেশি দিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ডাক পেয়ে যান খুলনার বিভাগীয় দলে খেলার। বছর তিনেক আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে এসে কোচরা আর ছাড়েননি এই প্রতিভাকে। নিয়মিতই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। বল করতেন জাতীয় দলের নেটেও।

আইপিএল রেকর্ড দামে মুস্তাফিজ

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এক কোটি ৪০ লাখ রুপিতে (এক কোটি ৬২ লাখ টাকা)  বিক্রি হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সান রাইজার্স হায়দারাবাদ দলে ভিড়িয়েছে তাকে। ৫০ লাখ রুপি বেজ প্রাইজে নাম থাকলেও প্রায় তিন গুণ মূল্যে বিক্রি হয়েছেন এই বাংলাদেশি তরুণ ক্রিকেটার।

২০১৫ সালে ক্রিকেটের বিস্ময় হয়ে এসেছেন মুস্তাফিজ। গত এপ্রিলে পাকিসৱানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে দলে নেয়া হয়েছিল তাকে। সেই ম্যাচে তিনি শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট নিয়েছিলেন। এর দুই মাস পর জুনে তাকে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। আর তাতেই ইতিহাস গড়েন তিনি। মুস্তাফিজ জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটোরির পর ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকারী দ্বিতীয় বোলার। ৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ার তার। নিয়েছেন ২৬ উইকেট। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারেই ৩ বার ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

গেল বছরের শেষে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মুস্তাফিজ খেলেছেন ঢাকা ডিনামাইটসের হয়ে। ১০ ম্যাচ খেলেছিলেন। উইকেট নিয়েছেন ১৪টি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই দারুণ সাফল্য পাওয়া মুস্তাফিজ এখন আলো ছড়াচ্ছে ভারতের আইপিএলএ।

আইপিএল কোহলির চেয়েও জনপ্রিয় কাটার মুস্তাফিজ

ভারতীয় শীর্ষ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির চেয়েও জনপ্রিয় বাংলাদেশের মুস্তাফিজ। ইন্টারনেটে গত পনের দিনে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) খেলোয়াড়দের মধ্যে কোহলির চেয়েও বেশি খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসারকে। মাঠে চমক দেয়ার পর এবার ইন্টারনেট জগতেও আলোড়ন তুলছেন ২০ বছর বয়সী মুস্তাফিজ। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন, ক্রিকইনফো’ সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছে যে, কোহলির চেয়ে মুস্তাফিজকেই বেশি খোঁজেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।

আইপিএলে মুস্তাফিজ ভেলকি চলছেই। মুস্তাফিজ যেন পণ করেই আইপিএলে গেছেন যে প্রতি ম্যাচেই নিজেকেই নিজে ছাড়িয়ে যাবেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত একটি খবরে তরুণ মুস্তাফিজের বোলিং প্রতিভার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন অজি ক্রিকেটার ও আইপিএলে সান রাইজার্স হায়দরাবাদে খেলা ডেভিড ওয়ার্নার ও ময়সেস হেনরিক। সান রাইজার্স হায়দ্রাবাদের বোলিংয়ের প্রাণভোমরা বাংলাদেশী তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আর তাই দলের সেরা অস্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার।

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে ৫ উইকেটে হারানোর পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুস্তাফিজকে প্রশংসায় ভাসান ওয়ার্নার। ওই ম্যাচে চার ওভারে একটি মেডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। চমৎকার এই পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে তাকে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ওয়ার্নার বলেন, কিছুটা হলেও নার্ভাস এখন দ্য ফিজ। ক্রিকেটে সে অসাধারণ এক প্রতিভা। ইংরেজি ভাষা না বুঝলেও তার বোলিং ভাষা বোঝার ক্ষমতা এখনো ব্যাটসম্যানরা পড়ে ওঠতে পারেনি।

অজি অলরাউন্ডার ও হায়দরাবাদের আরেক টিমমেট ময়সেস হেনরিক মুস্তাফিজের প্রশংসা করে বলেন, মুস্তাফিজ অসাধারণ এক বোলার। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাকে কাজে লাগানো যায়। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার বোলিং অতুলনীয়।

এ কাটার মাস্টারের বিরল প্রতিভায় বিস্মিত খোদ আইসিসির সাবেক সভাপতি জহির আব্বাস। তিনি বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চান, ‘এমন সুপার বোলার আপনারা কোথায় পেয়েছেন’

আইসিসি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সরকারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোসৱফা কামাল বলেন, এই মুহূর্তে মুস্তাফিজ নি:সন্দেহে বিশ্বের এক নম্বর বোলার। দুর্দানৱ বোলার হিসেবে সারা বিশ্বে সে সমাদৃত। আমি ৪০ বছর ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। হলফ করে বলতে পারি, মুস্তাফিজের মতো বোলার আর নেই।

Mostafizur-Rahman-Iplটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে কমেন্ট্রি বক্সে এসেছিলেন বলিউডের সুপার স্টার কিং খান শাহরুখ। সেই সময় তিনি কমেন্ট্রি বক্সে থাকা শোয়েব আক্তার ও জহির খানের কাছে জানতে চান, ‘মুস্তাফিজ কিভাবে আলাদা ধরনের বল করেন? আমি তার বলে ইমপ্রেস হয়ে যাই। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলেন তো সে যখন বল করে তখন হঠাৎ করে বল কিভাবে  ো হয়ে যায়?

ভারতের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী মুস্তাফিজের বোলিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলিং মণিহারে এখন সবচেয়ে দামি উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় মুক্তা হচ্ছে মুস্তাফিজুর’।

অন্য সকলের মতো মুস্তাফিজ এর প্রশংসা করেছে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসও। তারা দূতাবাস অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মুস্তাফিজের ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছে। পোস্টে লেখা ‘বাংলাদেশী তরুণ ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান কি অসাধারণভাবেই না পার করলেন আনৱর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম বছরটি! আইপিএল-এ তাঁর দুর্দানৱ পারফরমেন্স বিস্মিত করে চলেছে সবাইকে। “টক অব দ্য আইপিএল”-এ পরিণত হয়েছেন তিনি। দেশের মাথা উঁচু করে চলেছেন বিস্ময়কর মুস্তাফিজ! এই অসাধারণ ক্রিকেটারকে কি নাম দেয়া যায়?’

মুস্তাফিজের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের স্কট স্টাইরিশও। সাবেক এই অলরাউন্ডার এক টুইটে লিখেছেন, কি দারুণ বোলিংই না করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। মুগ্ধ হলাম ওর  োয়ারগুলো দেখে। ইংল্যান্ডের হয়ে এক সময় ক্রিকেট খেলা লুক রাইটের কণ্ঠেও মুস্তাফিজের প্রসংশা। এই লুক রাইটের দল সাসেক্সের হয়ে কাউন্ট্রিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। ভবিষ্যৎ সতীর্থের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের নতুন খেলোয়াড় মুস্তাফিজের দারুণ বোলিং দেখলাম। ‘সিরিয়াস’ প্রতিভা টিভিতে ওর  োয়ার দেখে বোঝা মুশফিল। সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক অনিল কুম্বলের কণ্ঠেও ছিল মুস্তাফিজের প্রশংসা।

ভারতের বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারা ভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার বলেন, মুস্তাফিজ শুধু বিস্ময়করই না তার চেয়ে বেশি কিছু। তাকে যতই দেখি ততই অবাক হই।

বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্যাটিং জিনিয়াস সচিন টেন্ডুলকার বলেন, মুস্তাফিজ বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অসাধারন এক প্রতিভার নাম। সে বলের এতো ভেরিয়েশন কোথায় রপ্ত করল সেটাই আমার প্রশ্ন। মুস্তাফিজ অনেক দুর যাবে তার এই বিরল প্রতিভা নিয়ে। তার জন্য আমার শুভ কামনা।

পাকিসৱানের অলরাউন্ডার ও তারকা ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা: মুস্তাফিজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ এই মুহুর্তে দুনিয়ার সেরা আর তারা যদি আপনাকে খেলতে না-পারে তাহলে বলতেই হবে আপনার মধ্যে তারকা হয়ে ওঠার মালমশলা আছে।

মানে মুস্তাফিজের একটা দারুণ ক্রিকেটিং বোলিং মসিৱষ্ক আছে। ও ন্যাচারালি গিফটেড ক্রিকেটার।

যেমন ধরুন মুস্তাফিজুর এই ধোঁকাটা দারুণ দিতে পারে ও যখন ওর নর্মাল ডেলিভারিগুলো করতে করতে ওর বিখ্যাত কাটারটা করে, তখন ওর অ্যাকশনে সামান্যতম কোনও অ্যাডজাস্টমেন্ট থাকে কি না, সেটা কিন্তু ধরা খুব মুশকিল। মানে ওর স্বাভাবিক ডেলিভারির চেয়ে ওর  োয়ারে প্রায় কোনও পার্থক্য ধরাই যায় না।

আহারে দেশীর গাড়িটা যদি নষ্ট কইরে দেয়!

খালেদ মুহিউদ্দীন

মুস্তাফিজকে সরাসরি দেখে একটু যেন অবাকই হলাম। এই লিকলিকে পাতলা চেহারার ছেলেটি বাতাসের আগে দৌড়ায় কি করে? বাতাসই তো ওকে উড়িয়ে নেবার কথা। অথচ সেই নাকি বাতাসকে উড়িয়ে নেয়।

সাতক্ষীরা টাইগার্স নামে একটি অনুষ্ঠান করার জন্য গত বছর ঈদের আগে গিয়েছিলাম সাতক্ষীরায়। সৌম্য সরকার, রবিউল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান, ক্রিকেটের এই তিন তারকাকে নিয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জন্য একটি অনুষ্ঠান বানাবার ইচ্ছে। মূলতঃ সৌম্য সরকারের সাথে এব্যাপারে কথা হয়েছে। সৌম্যই আমাদেরকে সাতক্ষীরায় স্বাগত জানাল। বলল- সব কিছু ঠিক আছে। মুস্তাফিজুরের সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়িতে যেতে হবে। কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমানকে আমরা সাতক্ষীরাতেই পেয়ে গেলাম। সাতক্ষীরা শহরে সৌম্য সরকার ও রবিউলের জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই পাওয়া গেল মুস্তাফিজুর রহমানকে। তারপর থেকেই ঘটতে থাকলো বিস্ময়কর আনন্দমুখর নানা ঘটনা।

মুস্তাফিজকে খেলার মাঠে  দেখতে যেমন লাগে বাসৱবে সে পুরোপুরি ভিন্ন মানুষ। তার সাথে না মিশলে বোঝা যাবে না সে যে কতোটা সহজ-সরল। মনের ভেতর কোনো প্রকার ‘প্যাঁচ গোজ’ নাই তার মধ্যে। কথা বলার সময় গুরু গম্ভীর কিছু ভেবে-চিনেৱ কথা বলেন না। তাই বলে বেয়াদুব টাইপের নন তার মধ্যে আছে শুধু সরলতা। মুস্তাফিজ যে কতোটা সরল তার একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে।

সৌম্য আমার সাথে মুস্তাফিজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, ‘মুস্তাফিজ উনি হচ্ছেন খালেদ ভাই, ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক। উনি টক শোও করেন। চিনতে পারছিস?’। সৌম্যর কথায় মুস্তাফিজ সহজভাবে উত্তর দিলেন, ‘না, চিনি নে। আমি উনাকে দেখি নে কোনো দিন।’ মুস্তাফিজের এমন কথায় সৌম্য আমার সামনে বেশ বিব্রত হয়েছে বুঝতে পারছিলাম। সৌম্য তাকে আবার বোঝানোর চেষ্টা করছে। টক শো-এর উদাহরণ দিচ্ছে। এমনকি সৌম্য যে আমার ‘আজকের বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে এসেছিল সেটাও বলছে। কিন্তু মুস্তাফিজ হঠাৎ যেন খানিকটা উত্তেজিত হয়েই বললো, ‘এখন আমি চিনি নে তো কী বলবো?’

এবার আমি পরিস্থিতিটা সামলে নিলাম। সাতক্ষীরা জেলা মাঠে সংবর্ধনার সেই অনুষ্ঠানে আমি, মুস্তাফিজুর এবং সৌম্যসহ অনুষ্ঠানের লোকজন বসা। তখনোও দেখলাম সৌম্য মুস্তাফিজকে বুঝানোর চেষ্টা করছে- ‘উনাকে চিনো নাই তুমি?’। তখন মুস্তাফিজ আবার বললো, ‘ভাই আমি বলেছিনে চিনি না। আমি ঐসব টক শো-টো দেখিনে…’। মনে মনে ভাবলাম মুস্তাফিজ কতো সহজ-সরল! অন্য কেউ হলে হয়তো না চিনেও বলতো, হুম চিনি, ও হ্যাঁ টিভিতে দেখিছি ইত্যাদি ইত্যাদি…। কিন্তু মুস্তাফিজ সেটা করেননি। সে সহজ-সরলভাবে বলে দিলো, ‘আমি চিনি না।’ আমি মুস্তাফিজের সরলতায় এক কথায় মুগ্ধ। তার সত্য বলাটা আমাকে অভিভূত করল।

সৌম্য নতুন গাড়ি কিনেছেন। গাড়ি নিয়ে তিনি এলাকায় গেছেন। আমরা সৌম্যর গাড়িতে উঠলাম। আমি সৌম্যর সাথে সামনে বসা আর পেছনে মুস্তাফিজ এবং রবিউল। পথে সৌম্য-মুস্তাফিজ এবং রবিউলকে একসাথে পেয়ে সাতক্ষীরার মানুষজন ঘিরে ধরেছে। সেকারনে পুলিশ পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে। কিন্তু উৎসুক মানুষ নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়েছে। গাড়ি চলছে খুব আসেৱ আসেৱ। কারন মানুষের ভীড়ের জন্য গাড়ি জোরে চালানো যাচ্ছিল না। হঠাৎ মুস্তাফিজকে বলতে শুনলাম, ‘হায়রে মানুষরা এমন করছে কেনো, আমার দেশীর (মুস্তাফিজুর রহমান সৌম্যকে ‘দেশী’ বলে সম্বোধন করে) গাড়িতে কেউ যদি আঁচড় দেয়, কেউ যদি ঢিল মারে, ইস কেউ যদি গাড়িতে লাত্থি মারে’- এমন নানান কথায় মুস্তাফিজকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। কতো সহজ সরল হতে পারে একজন মানুষ! এক সময় মুস্তাফিজকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি তো ভালো বল করেন। ক্রিকেটে সারাদেশে আপনি অনেক বড় তারকা। আপনার নিজের কী মনে হয়?’ আমার প্রশ্ন শুনে মুস্তাফিজ গুরুত্বহীন ভঙ্গিতে বললেন, ‘কিসের বড় তারকা। আর কী ভালো খেলি? ভালো খেলে তো আমার দেশী  (সৌম্যকে দেখিয়ে বললো)। কি যে ব্যাটিং করে। চার, ছক্কা মারে। এটা তো আমি পারি না। আমি তো বল করি। এটা কিছূই না। বোলার হয়ে টিমে চান্স পাওয়া সহজ, তবে ব্যাট করে চান্স পাওয়া কঠিন। আর আমি ভালো খেললে তো গাড়ি পেতাম। এই যে দেশী গাড়ি পেয়েছে (তখনো মুস্তাফিজ গাড়ি পায়নি)।’

গাড়ি চলছে। শহরের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আমরা যাবো। ঠিক ঐ মুহূর্তে মুস্তাফিজুরের কিছু কথা জানতে পারলাম। মুস্তাফিজ যে এলাকায় বড় হয়েছে, সেখানে ব্যাট-বল ও স্ট্যাম্প হাতে ছেলেরা ক্রিকেট খেলে প্রচুর। মুস্তাফিজও ক্রিকেট খেলতো। তবে তিনি যে বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান হবেন সেটা কোনোদিনও চিনৱা করেননি। যখন পাড়ায় বড় ভাইয়েরা ক্রিকেট খেলতে যেতো, তখন কোনো দলে খেলোয়াড় কম পড়লে পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকা মুস্তাফিজকে ডেকে ফিল্ডিংয়ের জন্য নিয়ে নিতেন। কখনো করতো বল কখনো ফিল্ডিং। আর মাঝে সাজে ব্যাটিং। ক্রিকেট নিয়ে কোনো জ্ঞানই ছিলো না তার। জানতো না বিশ্ব ক্রিকেটের কোনো তথ্য কিংবা তারকা খেলোয়াড়ের নাম। সেই মুস্তাফিজুর রহমান আজ বিশ্ব ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল তারকা। শুধু তারকা বললে ভুল হবে বিশ্বের বড় বড় খেলোয়াড়ের জন্য মুস্তাফিজ এক আতংকের নামও বটে।

পরের দিন সাতক্ষীরা থেকে আমরা সৌম্য আর রবিউলকে নিয়ে প্ল্যান করলাম মুস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে যাবো। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার তেতুলিয়া গ্রামে। সাতক্ষীরা থেকে যেতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগলো। আমরা মুস্তাফিজুরের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু তার বাবা-মা বললেন সে বাড়িতে নেই। আমরা তার কাছে আসব এটা তিনি জানতেন। কারন ইতোমধ্যে সৌম্য তাকে জানিয়েছেন। বাড়ির লোকজন বললেন- মুস্তাফিজকে হয়তো একটা বিলের ধারে পাওয়া যাবে। তাদের কথা এবং ঠিকানা অনুযায়ী আমরা পুরো টিম সেই বিলের দিকে রওয়ানা দিলাম। বাড়ি থেকে বেশ খানিক দূরে কিছুটা কর্দমাক্ত এলাকা পার হয়ে তাকে একটা বিলের ছোট্ট ঘরে আবিস্কার করলাম। যেটা তাদের চিংড়ির ঘেড়ের জায়গা। সেখানে সে প্রায়ই একা সময় কাটায় এবং গান শুনে। বিষয়টাতে খুব অবাকই হলাম। তাকে যতো দেখছি ততোই বিস্মিত হচ্ছি। মুস্তাফিজুরের মধ্যে একটা অদ্ভুদ ছেলে-মানুষি টাইপের দুষ্টুমি লক্ষ্য করলাম।

সৌম্য আর মুস্তাফিজুরের মধ্যে সম্পর্কটা বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ। একই এলাকার মানুষ বলে নয়, দু’জনের হৃদ্যতা আসলেই বেশ উজ্জ্বল। বিদেশে কোথাও খেলতে গেলে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী রাতে খেলোয়াড়রা আলাদা আলাদা রুমে থাকেন। কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমান প্রায়ই সৌম্যর রুমে চলে যান এবং গল্প করেন। কথায় কথায় মুস্তাফিজকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সৌম্য এতো শানৱশিষ্ট ছেলে আর আপনি তো একটু চঞ্চল, আপনার দেশী আপনাকে কিছু বলে না?’। মুস্তাফিজুরের সহজ-সরল উত্তর- ‘একবার ভাব নিয়েছিল। তখন তার মুখের মধ্যে বালিশ চাইপে ধরে রাখছিলাম এবং বলেছিলাম- দেশী আমার সাথে কখনো ভাব নিবে না।’ মুস্তাফিজ যে কতো সরল এমনই একটা গল্প বললেন সৌম্য। আমাদের ঐ অনুষ্ঠান রেকর্ডিং-এর সময় সৌম্য বলেন, ‘হয়তো আনৱর্জাতিক কোন ক্রিকেট খেলা চলছে। পত্রিকায় যেদিন মুসৱফিজের ছবি ছাপা হয়, সেটা নিয়ে এসে আমাদের সবাইকে দেখায় এবং বলে- দেখো না দেশী ছেলেটা (নিজেকে দেখিয়ে দিয়ে মুস্তাফিজ) দেখতে সুইট আছে না!’ সৌম্য তখন হয়তো বলে, ‘হ্যাঁ সুইট আছে। একটু কালো হলেও দেখতে সুইট আছে’। তখন মুস্তাফিজ খুব খুশী হয়। এই হচ্ছে আমাদের মুস্তাফিজুর রহমান।

মুস্তাফিজুরের বাড়িতে আমরা পাঁচটা ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম। বিশ জন ক্রু ছিলো। ফলে তাদের গ্রামে এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেলো। কারন এর আগে তাদের গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেনি। অনেকেরই ধারনা মুস্তাফিজুর রহমান বেশ গরিব ঘরের ছেলে। আসলে কিন্তু তা নয়। তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো। চিংড়ির ঘেড়, জমিসহ তাদের আয়ের উৎস ভালোই। কথায় কথায় তার বাবার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, ভারতের সাথে খেলায় ধোনি যে আপনার ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আপনার তখন কেমন লেগেছিলো? তার বাবার উত্তর, ‘দোষ তো আমাগোর মুস্তাফিজুরেরই ছিলো। সে কেনো ধনীর রান নেয়ার জায়গায় দাঁড়িয়েছে। ও তো আরেকটু সরে দাঁড়াবে। ধোনি ঠিকই আছে। সে যদি দৌঁড় না দেয় তাহলে তো আউট হয়ে যাবে। দোষ তো মুস্তাফিজুরের।’ বাবার এমন সহজ সরল উত্তরে শুধু অবাকই হয়নি। বরং বিস্মিতও হয়েছি। অন্য কেউ হলে হয়তো ছেলের পক্ষ্য নিয়ে কথা বলতেন। তখনই বুঝেছি এই বাবা কি শিক্ষা মুস্তাফিজকে দিতে পারেন। সাধারণত মানুষ তার আপনজনের পক্ষে থাকে কিন্তু মুস্তাফিজুরের বাবা তা করেননি। সহজ-সরলভাবে যা সত্যি তাই বললেন। আর এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় তা হলো মুস্তাফিজ খুব মা ভক্ত একটা ছেলে। আমি এমন মা ভক্ত ছেলে খুব কম দেখেছি। আমাদের শুটিং করার সময় এদিক-ওদিক যাওয়া, যেকোনো বিষয়ে মা, মা, মা বলে অস্থির ছিল সে। খেলার জন্য সে বাইরে থাকলে মাকে ভীষণ মিস করে সেকথা বললো এবং মায়ের হাতের খিচুড়ি যে তার খুব প্রিয় সেটাও বার বার মনে করায়।

মুস্তাফিজুরের বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে একসময় পেয়ারা গাছের নীচে এসে একটা পেয়ারা হাতে নিয়ে তাকে বললাম, ‘আচ্ছা, মুস্তাফিজ এই পেয়ারাটা সুয়িং করানো যাবে?’ মুস্তাফিজ পেয়ারাটা হাতে নিলেন এবং ক্রিকেট বল দেখার মতো চোখ কোনা করে বললেন, ‘জায়গা মতো ফেললে পরে এটাও সুয়িং হবে।’ এই হলো আমাদের মুস্তাফিজ।

ছাত্রজীবন থেকেই স্পোর্টস নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ। আর সাংবাদিকতায় আসার পর তো এ নিয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকতার প্রায় বিশ বছরের ক্যারিয়ারে মুস্তাফিজকে নিয়ে যদি কোনো মনৱব্য করতে বলা হয় তাহলে আমি বলবো- শারীরিক কোনো অসুখ-বিসুখ না হলে আমাদের মুস্তাফিজ অনেক দূর যাবেন। যারা পৃথিবীতে স্পোর্টস-এর দুনিয়ায় তারকা হয়েছেন তাদের অনেককেই শুরুতে দেখে বলে দেয়া গেছে যে কার কী অবস্থান হবে। যেমন শচীন টেন্ডুলকার, ওয়াসিম আকরাম, শেন ওয়ান, রাহুল দ্রাবিড় কিংবা সৌরভ গাঙ্গুলিসহ বিশ্ব ক্রিকেটের তারকাদের শুরুতেই বলে দেয়া গেছে তারা অনেক দূর যাবেন। ঠিক তেমনি আমার পর্যবেক্ষণে মুস্তাফিজুর রহমান ক্রিকেট বিশ্বে আধিপত্য বিসৱার করবেন বলে মনে করি।

লেখক: এক্সিকিউটিভ এডিটর, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

অনুলিখন: সৈয়দ ইকবাল