Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আলোর মেলা

ইফতেখারুল ইসলাম:  চারদিকে নতুন বই, নানাভাবে সাজানো স্টল । মনে হয় উজ্জ্বল আলোয় ভরা একটা বিশাল অঙ্গনে এলাম। একুশের বইমেলায় ঢুকলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। অনেকখানি জায়গা নিয়ে, খোলামেলা পরিবেশ। নানা বয়সের মানুষ। পরিসর বেড়ে যাবার ফলে বইমেলা এখন সহজেই অনেক বেশি মানুষকে ধারণ করতে পারছে। অনেকগুলো প্রবেশদ্বার থাকায় বিনা ঝক্কিতে ঢুকে পড়া যায়। এবারের মেলাটিকে আগের বছরের চেয়েও গোছানো মনে হয়। বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে বই দেখা আর কেনার সুবিধে করে দেওয়ার জন্য বড় স্টলগুলো দুই বা তিনদিক খোলা রেখেছে। তবুও ভিড় জমে যায় বড় কোনো কোনো স্টলে। আর সারিবদ্ধ অনেকগুলো ছোট স্টল আছে যেখানে ক্রেতা সমাগম একটু কম। তাও একধরনের ভারসাম্য আছে।  এবারের বইমেলার বড় স্টলের অনেকগুলোই বেশ সমৃদ্ধ ও সুন্দর। অন্যপ্রকাশ, সময়, অনন্যা, মওলা ব্রাদার্স, আগামী, দিব্যপ্রকাশ, বিদ্যাপ্রকাশ, কাকলি, এডর্ন, জাগৃতি, চন্দ্রাবতী, প্রথমা, শৈলী, ইউপিএল এগুলো সবই বড় আকারের স্টল। অন্যপ্রকাশ এখনও হুমায়ুন-আহমেদ-কেন্দ্রিক। সুসজ্জিত স্টল থেকে তাঁর অনেকগুলো মূল বই আর কিছু উপন্যাস-সংকলন আগ্রহের সঙ্গে কিনছেন পাঠক। এরপর আছে অনন্যা, সময় এবং ইউপিএল। ছোট স্টলকে কতোটা আকর্ষনীয় করে তোলা যায় তার একটা উদাহরণ দেখিয়েছে বাতিঘর। বইয়ের সংখ্যা বেশি নয়। কিন্তু তাদের কিছু নতুন বইয়ের প্রকাশনার মান সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লেখক তালিকা ও বিষয় বৈচিত্র্যে এই স্টল খুবই আকর্ষনীয় বলে মনে হয়। নিজে কেনার জন্য আমি অল্প কয়েকটা বই বেছে নিই। ইমদাদুল হক মিলন এবং মঈনুল আহসান সাবেরের ছোটগল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে অনন্যা ও দিব্য থেকে। বিজ্ঞাপন দেখে আর একটা বই খুঁজলাম। সেটা এখনো আসেনি। গোপনসূত্রে খবর পেলাম মিলন তখনও লিখে চলেছে। প্রিয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকের কবিতার বই ‘পূর্বাহ্নে সামগান’ আর মাসুদুজ্জামানের ‘মনপুঁথি’ খুবই চমৎকারভাবে বের করেছে চৈতন্য। এগুলো কেনার পর সময় থেকে কিনি নবীন কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদের উপন্যাস ‘নিজের সঙ্গে একা’। কথাসাহিত্য ও কবিতার বই সব সময়ই জনপ্রিয়। তবে আমার বেশি প্রিয় হলো আত্মজীবনী, প্রবন্ধের বই এবং স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বই। মওলা থেকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইব্রাহীম-এর আত্মজীবনী কিনি। প্রথমা থেকে বেরোনো আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ বইটি সংগ্রহ করতেই হয়। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই। কিনলাম আবুল কাসেম ফজলুল হক-এর প্রবন্ধ সংকলন ‘রাজনীতিতে ধর্ম মতাদর্শ ও সংস্কৃতি’। আর দীপনের সম্পাদনা করা বইটাকে অমূল্য করে দিলো রাজিয়া রহমান জলির দর্শনীয় অটোগ্রাফ।  দেশে কবি, কথাসাহিত্যিক বা মননশীল গদ্য-লেখকের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে সাক্ষরতা ও উচ্চশিক্ষার হার। পাঠকের সংখ্যাও নিশ্চয় বেড়েছে। অথচ দুতিনজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বা কিশোর-সাহিত্যিক ছাড়া বেশি ভাগ লেখকের বই বড়জোর কয়েকশ কপি বিক্রি হয়। ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ বা জাপানি ভাষার মাঝারি মানের স্বল্পখ্যাত লেখকের বইয়ের মুদ্রণ ও বিক্রির সংখ্যা শুনলে আমাদের খুব লজ্জা পাওয়ার কথা। এত যে মানুষ মেলায় আসেন তাঁরা সবাই যদি একটা করেও বই কিনতেন তাহলে তো বইয়ের বিক্রি অনেক বেশি হবার কথা। সেরকম দিনের আশায় আরো কতদিন থাকতে হবে কে জানে।