Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমি ফ্রিও নই ইজিও নই!

চলচ্চিত্রে আমরা খুবই খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। একদিকে যেমন ছবির ব্যবসা মন্দা। অন্যদিকে সারাদেশে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আশংকাজনক হারে ছবি নির্মাণ কমে যাওয়ায় তারকারা হয়ে পড়ছে বেকার। আমার নিজের একটি গল্প বলি, একজন নতুন পরিচালকের ছবি সাইন করেছি। কয়েকদিন শুটিং করার পর নবীন এক নায়িকা এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। কুশল বিনিময়ের পর বলল সেও এই ছবিতে অভিনয় করছে। তার চরিত্রটি নেগেটিভ। সে নায়ককে ভালোবাসে কিন্তু নায়ক তাকে ভালোবাসে না। নায়ক ভালোবাসে আমাকে। পরে দেখা গেল সেই নবীন নায়িকা ছবির প্রধান নায়িকা আর আমি…। কিছুদিন পর পর আমার কাছে কিছু পরিচালক ছবির অফার নিয়ে আসেন। তারা প্রথমেই জানতে চান আমি কতটুকু ফ্রি। আমি পরিচালক প্রযোজকের সঙ্গে কতটুকু ইজি হতে পারব। এই নবীনদের কথা শোনার পর বলি- আমি অনেকের মতো অতো ফ্রিও নই অতো ইজিও হতে পারব না। তখন তারা বলেন, তাহলে আপনাকে নিয়ে তো কাজ করা সম্ভব হবে না। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী পপি। সম্প্রতি এক দুপুরে আনন্দ আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন পপি। সম্পাদকীয় কার্যালয়ে বসে কথা বলতে বলতে জমে উঠে আড্ডা। নিচে সেই আড্ডার অংশ বিশেষ।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার উপলব্ধি কেমন?

পপি: চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা আমার কাছে অচেনা, অজানা ও অস্বস্থিকর। এখানে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না কেউ। একজন দর্শক কোন ধরনের গল্প পছন্দ করে, কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয় দেখতে চায় এটা এখন আর যাচাই বাচাই করা হয় না। প্রযোজক পরিচালক যে নায়ক বা নায়িকাকে পছন্দ করেন যাদের সঙ্গে তাদের ভালো সখ্যতা আছে তাদেরকে ছবিতে নিচ্ছেন। ডিজিটালের নামে মোবাইল দিয়ে ছবির শুটিং করছেন এতে ছবি হিট হবে না ফ্লপ হবে সেই চিন্তা তাদের নেই। আগে দেখা যেত ছবি শেষ করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। সাংবাদিকদের সঙ্গে ছবির পাত্রপাত্রীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো। মিডিয়ায় ছবির স্টিল সরবরাহ করা হতো। মিডিয়ায় ছবির ব্যাপক প্রচারের পর দর্শকরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখত ছবিটি দেখার। এখন মিডিয়া জানেই না কবে কার কোন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। প্রচার যদি না থাকে তাহলে দর্শকরা জানবে কিভাবে ছবি রিলিজ হয়েছে। প্রচার ছাড়াই এখন নিরবে নিভৃতে ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এ কারণেই ছবির ব্যবসা হচ্ছে না। এটা কেন করা হচ্ছে আমার মাথায় আসে না।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রে আপনার ব্যস্ততা এখন কেমন?

পপি: আমার ব্যস্ততা বেড়েছে তবে আগের মতো নয়। হাতে আছে নয়টি ছবি। এই ছবিগুলোর সবটিতে আমি প্রধান নায়িকা। এখন চলচ্চিত্রের যে দুরাবস্থা এই সময়ে একজন নায়িকার হাতে ৯টি ছবি থাকা অনেক বড় ব্যাপার। এছাড়াও বেশ কিছু ছবির ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। পছন্দ হলে সেগুলো সাইন করবো।

আনন্দ আলো: আপনি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন অনেক প্রযোজক পরিচালক আপনাকে ব্যাক ডেটেড এবং ইজি নন বলেন এর কারণ কী?

পপি: সবাই বলেন না, কেউ কেউ বলেন। এখন যারা ছবি প্রযোজনা করতে আসছেন তাদের বেশির ভাগই চান নায়িকা তার কথামতো চলবে। যখন যা বলবে তাই করবে। আমিতো আর ছবির কাজ ফেলে প্রযোজক বা পরিচালকের সঙ্গে আড্ডা মারা, ঘুরতে যাওয়া বা চাইনিজ খেতে যেতে পারি না। এসব আমি পছন্দ করি না। এসব করার জন্য অনেক নায়িকা আছেন তাদের মতো আমি হতে পারব না। এজন্যই কেউ ব্যাকডেটেড বলেন কেউ বলেন ইজি না। এই বিষয়গুলো আগে শুনতে হতো না। ইদানিং শুনতে হচ্ছে। এসব শুনে আমি খুব আহত এবং মর্মাহত হই। সত্যিকার অর্থেই চলচ্চিত্রের এখন শুধু দুরাবস্থা চলছে না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে মূল্যবোধেরও অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এবং কিছু কিছু জায়গায় ঘুন ধরেছে। এই ঘুনে ধরা চলচ্চিত্রকে এখনই মেরামত করা প্রয়োজন।

আনন্দ আলো: এক নায়িকার সঙ্গে সমসাময়িক আরেক নায়িকার শীতল সম্পর্কের কথা আমরা প্রায়ই শুনি। আপনার সঙ্গে এই সময়ের নায়িকাদের সম্পর্ক কেমন?

Popy-1পপি: এই সময়ের নায়িকাদের সঙ্গে আমার অতোটা যোগাযোগ নেই। কারন তারা আমার চেয়ে ফাস্ট। আমি সব সময়ই সমসাময়িক নায়িকাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখি। আমার দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে কখনোই কোনো নায়ক বা নায়িকার সঙ্গে কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়নি। এই অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। প্রসঙ্গক্রমে বলি, বরাবরই আমার জন্মদিনে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ সিটিসেল তারকাকথন সরাসরি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানায়। এবারও এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন করেছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শাবনূর। তিনি সরাসরি অনুষ্ঠানে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। একজন সিনিয়র জনপ্রিয় নায়িকার কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়া মৌসুমী আপু, পূর্ণিমার সঙ্গেও আমার অনেক ভালো সম্পর্ক।

আনন্দ আলো: টিভি নাটক ও মডেলিং-এ প্রচুর অফার আসে বলছিলেন কিন্তু নাটকে অভিনয় করেন না কেন?

পপি: চলচ্চিত্রেই আমি ব্যস্ত থাকতে চাই সব সময়। নাটকে প্রচুর অফার এলেও গল্প পছন্দ না হওয়া ও সম্মানী সময়ের চাহিদা অনুযায়ী না পাওয়ায় নাটকে অভিনয় করা হচ্ছে না। তাছাড়া ছবির কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত হওয়ায় নাটক ও মডেলিং-এ ভালো অফার এলেও করতে পারছি না।

আনন্দ আলো: আগামী দিনের জন্য কী পরিকল্পনা সাজিয়েছেন?

পপি: চলচ্চিত্রের যে অবস্থা তাতে আগামী দিনের জন্য কোনো পরিকল্পনা করে তো লাভ নেই। কোনো কাজের পরিকল্পনা করে এখন এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এবছরের শুরুতে মনে হয়েছিল চলচ্চিত্রের অবস্থা আস্তে আস্তে ভালো হবে। বেছে বেছে কিছু ভালো ছবিতে অভিনয় করব। কিন্তু সেই পরিকল্পনা মাফিক আর কাজ করতে পারলাম না। আশংকাজনকভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি কমছে, ছবির বাজেট কমছে এবং সম্মানীও কমছে। এই অবস্থায় কী আগাম পরিকল্পনা করে কাজ করা যায়? পাশের দেশ ভারতের কলকাতার কথাই ধরুন ওখানে একটি ছবির বাজেট ১০০ কোটি রূপী ছাড়িয়েছে। শিল্পী কলাকুশলীরা সর্বোচ্চ সম্মানী পাচ্ছে। আর আমরা যেখানে ছিলাম দিনের পর দিন সেখান থেকে নিচে নেমে যাচ্ছি।