Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমি নাচতেও জানি —মেহজাবীন

মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: এত কাজ থাকতে অভিনয়ে এলেন কেন?
মেহজাবীন: অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল বলেই অভিনয়ে আসা।
আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে কাজটি
মেহজাবীন: ২০০৯ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আনন্দ আলো: প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মনে মনে কী বলেন?
মেহজাবীন: প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমি মনে মনে বলি দিনটা যেন আমার ভালো যায়।
আনন্দ আলো: টিভি দেখা হয়?
মেহজাবীন: হ্যাঁ। সময় পেলেই টিভি দেখি। টিভিতে আমি বাংলাদেশের নাটকই দেখি। নিজের কাজ দেখার পাশাপাশি অন্যজনের কাজও দেখি। অন্যের কাজ দেখলে সবার অভিনয় এবং কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
আনন্দ আলো: ক্যামেরার সামনে প্রথম দিন…
মেহজাবীন: আমার তখন ১৩ বছর বয়স। বাবা-মায়ের সঙ্গে দুবাইয়ে থাকি। বাচ্চাদের একটি জুয়েলারি পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হতে হবে। বাবা শুটিংয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। গিয়ে দেখি প্রচুর লোক। বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বাবার সামনে আরও বেশি লজ্জা পাচ্ছিলাম। সেদিনই আমার প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। স্পষ্ট মনে আছে, শুটিং শুরুর আগে আগে একজনকে ডেকে বলেছিলাম, আমার বাবাকে একটু বাইরে নিয়ে যান। তা না হলে ক্যামেরায় শট দিতে পারব না। পরে বাবা বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন। প্রথম দৃশ্য ওকে হতে বেশ কয়েকবার শট দিতে হয়েছিল সেদিন।
আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত প্রথম নাটক…
মেহজাবীন: লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার কিছুদিন পর প্রথম নাটকে অভিনয় করি। নাটকটির নাম ছিল ‘তুমি থাকো সিন্ধু পারে’। পরিচালক ছিলেন ইফতেখার আহমেদ। শুটিং শেষে পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম ১৫ হাজার টাকা। টাকাটা হাতে পাওয়ার পর বেশ ভালো লাগছিল। পরিশ্রমের প্রথম টাকা। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভ‚তি। ওই টাকাটা থেকে এক টাকাও খরচ করিনি। প্রথম ব্যাংক হিসাব খুলে পুরো টাকাটা ব্যাংকে জমা করেছিলাম।
আনন্দ আলো: যাকে অথবা যাদের দেখে এখনো অভিনয় শিখি…
মেহজাবীন: আমাদের দেশের সবার কাছ থেকে কম বেশি অভিনয় শেখার চেষ্টা করি। সুর্বনা মুস্তাফা, বিপাশা হায়াত, তারিন আপু এদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অভিনয় শিখছি।
আনন্দ আলো: প্রথম অটোগ্রাফ দেওয়ার অভিজ্ঞতা?
মেহজাবীন: প্রথম অটোগ্রাফ দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয় ২০১০ সালে। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার দিন। আমি যখন সুপার স্টার হওয়ার মুকুট পরে মঞ্চ থেকে নেমে ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন ওখানে প্রতিযোগীসহ অনেক মেয়ে দর্শক ছিলেন। এছাড়া অনেক স্বেচ্ছাসেবীও ছিলেন। তাদের অনেকেই দৌঁড়ে এসে ঘিরে ধরলেন আমাকে। কাগজ-কলম বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। অটোগ্রাফ দিতে হবে। তখনো আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আনন্দ-উত্তেজনার মধ্যে কোনো কিছু না বুঝেই সেদিন অনেককেই অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। তবে মনে আছে অটোগ্রাফে লিখেছিলাম, বেস্ট অব লাকÑ লাভ মেহজাবীন।
আনন্দ আলো: ‘অমৃত কথা’ নামের একটি নাটকে আপনি অভিনয় করেছেন। নাটকে কী এমন কথা বলেছিলেন?
Mehjabinমেহজাবীন: লুৎফর রহমান সোহেলের পরিচালনায় ‘অমৃত কথা’ নাটকটিতে আমি আর ইরফান সাজ্জাদ অভিনয় করি। নাটকটিতে আমার কোনো সংলাপ ছিল না।
আনন্দ আলো: তাহলে আপনি বোবা…
মেহজাবীন: এ নাটকে আমি বোবা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। যারা কথা বলতে পারে না, তারা তো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজেই যোগাযোগ করে।
আনন্দ আলো: আপনি নাকি অনেক চরিত্রে কাজ করতে এড়িয়ে যান। কথাটা কী সত্যি?
মেহজাবীন: আমি শুধু দর্শকের ভালো লাগার জন্য কাজ করি না। তাই নিজে আনন্দ পাব না এমন চরিত্রের কাজ গুলো এড়িয়ে চলি। কারণ আমি মনে করি নাটক বা চরিত্র যদি আমারই ভালো না লাগে সে কাজ কোনোদিন দর্শকের কাছে ভালো লাগবে না। তাই আমার প্রতিটি কাজে বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করি।
আনন্দ আলো: প্রথম বই পড়ার অভিজ্ঞতা…
মেহজাবীন: ছোটবেলায় সিরিজ বইগুলো বেশি পড়া হতো। প্রথম বই পড়া শুরু করি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেই সময় হ্যারি পটার সিরিজের সাত খÐ পড়ি। এরপর সিরিজ সহ অনেক বই পড়েছি। মিডিয়ায় কাজ শুরু করার পর আর নিয়ম করে বই পড়া হয় না।
আনন্দ আলো: প্রথম বিদেশ ভ্রমণ…
মেহজাবীন: ছোটবেলায় দেশ ছেড়ে দুবাই গিয়েছিলাম। তাই ওই সময় তেমন কিছুই বুঝতে পারিনি। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন প্রথম পরিবারের সঙ্গে দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলাম। ওটা একটু একটু মনে আছে। আকাশ থেকে তুষার পড়ার দৃশ্যটি আমার খুব পছন্দ। আমার ধারণা ছিল, লন্ডনে তখন বরফ পড়ছে। ওখানে যাওয়ার পর দেখি তুষার পড়া তো দূরের কথা উল্টো গরম। ওটা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আনন্দ আলো: বন্ধুত্ব আপনার কাছে কী?
মেহজাবীন: আমার কাছে বন্ধু সেই যার কাছে মনের সব কথা খুলে বলা যায়। আমার প্রিয় বন্ধু হচ্ছে ভিট তারকা হাসিন। ওর সঙ্গে আমার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। ঘুম ভেঙ্গেই ওই প্রিয় বন্ধুর খোঁজ নেই। তবে কোনো কারণে তার সঙ্গে সকালে কথা না হলে দিনটি ভালো কাটে না। এছাড়া প্রতিদিন আমরা অল্প সময়ের জন্য হলেও দেখা করি। আর যেদিন দেখা হয় না সেদিন ফোনে ননস্টপ কথা চলে। বন্ধুত্বের শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে বোঝা পড়াটা বেশ ভালো।
আনন্দ আলো: কোন ধরনের মানুষ থেকে আপনি ১০০ হাত দূরে থাকেন?
মেহজাবীন: মুখোশপরা মানুষ থেকে দূরে থাকি।
আনন্দ আলো: কখন রেগে যান?
মেহজাবীন: জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে না পেলে।
আনন্দ আলো: সকালে উঠে কী খেতে ইচ্ছে করে যা এখনো খাননি?
মেহজাবীন: ডিনার।
আনন্দ আলো: কবে শেষ মিথ্যাকথা বলেছেন?
মেহজাবীন: মিথ্যা কথা কবে বলেছি মনে পড়ছে না।
আনন্দ আলো: যে নাটকটির জন্য এখনো প্রশংসায় ভাসছেন…
মেহজাবীন: দর্শকদের পাশাপাশি বড় ছেলে নাটকটির জন্য সিনিয়র শিল্পীদের কাছ থেকেও বেশ প্রশংসা পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি। আমার জন্য এটি অনেক বড় পাওয়া।
আনন্দ আলো: আপনি নাকি নাচেও পটু…
মেহজাবীন: অভিনয়ের পাশাপাশি ভালোবাসা থেকেই নাচ করি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে স্পেশাল কোনো নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেই। এছাড়া বিভিন্ন কর্পোরেটে প্রোগ্রামেও নাচ করি।
আনন্দ আলো: বিয়ের সাজে কবে পিঁড়িতে বসছেন?
মেহজাবীন: পর্দায় তো বউ সাজা হয় নির্মাতার নির্দেশে। কিন্তু বাস্তবের বিয়ে সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তা ঠিক করে রাখেন। তিনি যখন চাইবেন তখনই বিয়ে করবো। এছাড়া বিয়ে নিয়ে আমার পরিবার থেকে কোনো প্রকার চাপ নেই। এই মুহূর্তে ক্যারিয়ার নিয়ে আমার সব চিন্তা ভাবনা। আমার ক্যারিয়ার আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে চাই।