Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমাদের শোবিজ ভার্চুয়ালিটি

তানভীর তারেক

Tanvir-Tareqভার্চুয়াল এই জগতে এখন তারকাদের ভালোবাসার পাশাপাশি ঘৃণাও গুনতে হয়। বছর দুয়েক আগে যে সকল তারকা নিজেদের ফ্যান ফলোয়ার কয়েক লাখ বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন তারাই এখন এসব ফ্যান ফলোয়ারের গুণিতক মানকে নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য গোনায় ধরছেন না। কারণ হঠাৎ করেই এই মুদ্রার উল্টোপিঠও যে প্রকাশিত হয়ে গেছে !
তাই এই জমানায় এখন তারকারা লাইকের পাশাপাশি ডিজলাইকগুলো মিলিয়ে তবে স্বস্তি গোনেন। প্রিয় পাঠক সকলেরই লাভার্স ও হেটার্স আছে, ছিল ও থাকবে। কিন্তু রাজ্জাক-শাবানা বা সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাদের যে কঠিন পথ পার হতে হয়নি , তা হলো ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারের কমেন্ট ও লাইক , ডিজলাইক অপশন। একজন তারকা বা কোনো সাধারণ মানুষের মন ভালো হবার পাশাপাশি মন খারাপের বড় কারণ হিসেবে ধরা দিচ্ছে লাইক ডিসলাইক অপশন।
জ্বি অতি সম্প্রতি অভিনেত্রী – মডেল , প্রাক্তন আরজে , উপস্থাপক নুসরাত ফারিয়া যখন নিজেকে গায়িকা হিসেবেও মেলে ধরতে চেয়েছিলেন জেনিফার লোপেজ বা প্রিয়াংকা চোপড়ার মতো, তখন এই অভিযান যেন বুমেরাং হয়ে গেল। ইউটিউবে ডিসলাইকের রেকর্ড তৈরি করলেন তিনি। ভার্চুয়াল মিডিয়ার সামনে এখন লাইভে আসতে খানিক দ্বিধায় ভোগে।
অনলাইন জমানার অপার স্বাধীনতার প্রতিফলন বুঝি এটিই। যাকে আপনি আজ চাইলেও ইগনোর করতে পারবেন না। সম্প্রতি নুসরাত ফারিয়ার পটাকা গানটি রিলিজের পর স্বাভাবিক ভাবেই আমি আমার একটি এফ এম স্টেশনের লাইভে তাকে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু লাইভ শুরু দুই ঘণ্টা আগে তিনি জানান, তিনি শো টাতে ফেসবুক লাইভে যেতে চান না। এই যে একজন তারকার তার ভক্ত অনুরাগীদের প্রতি ভয়। এটা কিন্তু আগের জমানায় ছিল না! এখন যা করতে হচ্ছে।
একই ভাবে এবারের ঈদে অভিষেক হতে যাওয়া তারকা সিয়ামের ক্ষেত্রেও ভয়টা একই রকম। এক আড্ডা শেষ করে বলছেন, তানভীর ভাই , ফিল্মে যে পলিটিক্স। জানি না, কীভাবে কি করবো।’
সিয়ামের পোড়ামন টু ছবির প্রথম গান রিলিজের পর তৈরি হলো ঈষৎ বিতর্ক। কারণ ছবির গানটি তিনি প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহকে ট্রিবিউট করে গেয়েছেন। গানের লাইন ‘তুমি ছাড়া সবাই জিরো, তুমিই নাম্বার ওয়ান হিরো।
অমনি প্রতিক্রিয়াশীল ফেসবুকার ও ইউটিউবের দর্শকেরা এটিকে অন্য এক সংজ্ঞায় মাপা শুরু হলো। কারণ এখানে দুটি। প্রথমটি হলো কেন বলা হলো ‘তুমি ছাড়া সবাই জিরো’। এ নিয়ে সিয়াম আহমেদ আবার জবাব দিয়েছেন যে, এই ২২ বছরে কেউ তো সালমান শাহকে স্মরণ করলো না। আমরা তবুও করেছি।
অন্যদিকে সালমান শাহ স্মরণে এই গানটি প্রযোজক গাইয়েছেন কলকাতার এক উঠতি শিল্পী আকাশকে দিয়ে। এ নিয়েও বাংলাদেশি শিল্পীরা স্বাভাবিক ভাবে তাদের আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
তাই ছবি বা গান রিলিজের পরে এখন সরাসরি দর্শক প্রতিক্রিয়া অনেক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ জনপ্রিয়তা এখন সত্যি তারা মেপে নিচ্ছে। এখন দেখার বিষয় ঈদের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এই ভার্চুয়াল জরিপ কতটা প্রভাব ফেলে।
ঈদ মৌসুমে টিভি নাটকগুলোও এখন ইউটিউব নির্ভর হয়ে পড়েছে। খুব অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গত বছরের আলোচিত নাটক ‘বড় ছেলে’ জনপ্রিয় হওয়ায় নাটকের পরিচালক লাভবান হতে পারেননি। এমনকি নাটকের কলাকুশলীরা একটা টাকাও বেশি পাননি। এমনকি নাটকের প্রযোজকও খুব একটা ভালো লাভ পাননি কারণ একটি অডিও কোম্পানির কাছে তারা স্বত্ব বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কারণ তারাও প্রত্যাশা করেনি এতটা সাড়া দেবে দর্শকেরা। অবাক করার মতো বিষয় হলো অনেকে জানেই না যে, নাটকটি কোন চ্যানেলে প্রচার হয়েছিল।
এইসব কথা আমার এই ঈদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো , এবারের ঈদের চলচ্চিত্র , বা গান কিংবা নাটক সবকিছুই এবারে তাদের সাফল্য নির্ধারণ করবে বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া।
আর ডিসলাইকের একটি ট্রেন্ড যেহেতু চালু হয়েছে। তাই বছর শেষে সালতামামিতে কার কোন চলচ্চিত্র, কার কোন গান বা নাটক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত হলো সেটিরও একটা নমুনা পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গ শাকিব খান
চলচ্চিত্রের বড় সংকট শাকিব খানের চলচ্চিত্র নিয়ে প্রায় প্রতিটি ছবির ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এবারের ঈদেও এ নিয়ে কম বাহাস হয়নি। অবশেষে ঈদে মুক্তি দেয়া হবে না কোনো আমদানিকৃত ছবি। এটিই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মানে এটিই প্রমাণিত হয় যে, আমদানি হোক বা যৌথ প্রযোজনার হোক তা আমাদের মূল ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে বা হুমকিস্বরূপ। তাই সকলেই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একই সাথে শাকিব খানের বড় বাজেটের চলচ্চিত্র নিয়ে নানান রকম বাধা বিপত্তি নিয়ে যে তর্ক ওঠে তা মোটেই সুফল বয়ে আনে না। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক আড্ডায় শাকিব খান নিজেই বললেন,‘আমি কি তাহলে এ দেশে নিষিদ্ধ? তবে কেন আমার ছবি নিয়েই এমন বাধা দেয়া হবে।’
চলচ্চিত্রে তাই বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত একটি সমাজ বিরাজ করছে। এই অসুস্থ শত্রæতা আমাদের প্রথমে থামাতে হবে। নয়তো ভার্চুয়াল এই যুগে আজ কিন্তু সেই মফস্বলের একটি সাধারণ সিনেমা প্রেমী যুবকও জানেন যে বর্তমান সময়ে চিত্রনায়ক ফারুক ও শাকিব খানের সাথে একটি মতবিরোধ চলছে। এই ধরনের খবর কখনই ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
কারণ আমরা স্বীকার করি বা না করি। ভার্চুয়াল পৃথিবীতে অলিখিতভাবে বন্দি। আজকের দিনে প্রতিটি পত্রিকা অফিস এক একটি টিভি স্টেশন। [কারণ ডিজিটাল মার্কেটে তাদের খর বিক্রি করতে হবে ]
প্রতিটি অডিও কোম্পানি এক একটি ইউটিউব চ্যানেলেই বন্দি [তাই ধীরে ধীরে গানের পাশাপাশি অডিও কোম্পানিগুলো ওয়েব সিরিজ নির্মাণ ও প্রকাশ শুরু করেছে।]
সিনেমার এখন টুকরো টুকরো কন্টটেন্ট বিক্রি করছেন চলচ্চিত্র প্রযোজকরা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। তাই এই ডিজিটাল প্রমোশনের যুগে এখন আর আমাদের কোনো কিছু আঞ্চলিক নেই। সবকিছুরই বিশ্বায়ন চলছে।
আজ আপনি একটি গান রিলিজ দিলে সেটি তৎক্ষণাৎ বিশ্ববাজারের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এখন প্রয়োজন একটি ঐক্য। বিরোধ গড়ে কাজ করলে হয়তো আমাদের শাকিব খানের চলচ্চিত্রও কদিন বাদে আমদানি করে দেশের হলে দেখতে হবে।
লেখক : উপস্থাপক, সংগীত পরিচালক ও সংবাদ কর্মী