Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আপু, একটা সেলফি প্লিজ…

মোহাম্মদ তারেক:

আনন্দ আলো: আপনি কী আঁখি?

আঁখি আলমগীর: হ্যাঁ। আমি আঁখি আলমগীর।

আনন্দ আলো: আঁখি নামের অর্থ কী?

আঁখি আলমগীর: আঁখি নামের অর্থ চোখ।

আনন্দ আলো: এত কিছু থাকতে গানে এলেন কেন?

আঁখি আলমগীর: বড় হয়ে ডাক্তার হব এমনই চাইতেন বাবা। আমারও ঐ একই ইচ্ছা ছিল। ছোটবেলায় লেখাপড়া করার পাশাপাশি গানও শিখতাম। বাবা বলতেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি ভালো করে গান শিখে আমাকে শোনাবে। কিন্তু গান শিখে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বা বাইরে গাইতে হবে এমন কোনো পরিকল্পনা বাবা ও আমার কারোরই ছিল না। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাবাকে চলচ্চিত্রের তারকা শিল্পী হিসেবে দেখেছি। কিন্তু বাবা একবারও অভিনয় শিল্পী হওয়ার কথা বলতেন না আমাকে। তবে চলচ্চিত্রের লোকজন চাইতেন আমি অভিনয় করি। ছোটবেলায় ‘ভাত দে’ (১৯৮৪) ছবিতে অভিনয় করে শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। জীবনে ঐ একটি ছবিতেই অভিনয় করেছি। এভাবে একদিন স্কুল পেরিয়ে বাণিজ্য বিভাগে কলেজে ভর্তি হলাম। ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেল। তখনো পরিবারের জন্যই টুকটাক গান করি। কলেজে পড়ার সময়ই দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব আসে। বাবা প্রথমে রাজি ছিলেন না। গানটি মুক্তির পর বেশ আলোচনা হলো। এরপর প্রথম গানের অ্যালবাম করলাম। সেটিও দারুণ সাড়া ফেললো। ঐ সময়টাতে না চাইতেই যেন সবকিছু হাতে ধরা দিচ্ছিল। তখন থেকে মূলত নিয়মিত গান গাওয়া শুরু।

আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে গানটি?

আঁখি আলমগীর: ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় আমার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘বিষের কাঁটা’। এই অ্যালবামের পিরিতি বিষের কাঁটা বিধল আমার গায় গানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আনন্দ আলো: দেশের টিভি দেখেন?

আঁখি আলমগীর: অবশ্যই দেশের টিভি চ্যানেল দেখি। আমাদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো দেখি। বাংলা সিনেমা দেখি। নাটক দেখি। সংবাদ দেখি।

আনন্দ আলো: গান ছাড়া আর যা ভালো করতে পারেন?

আঁখি আলমগীর: উপস্থাপনা করতে পারি, অভিনয় করতে পারি। এমন কি ভালো রান্নাও করতে পারি।

আনন্দ আলো: আপনাকে একদিনের জন্য মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হলে কাকে সঙ্গে নিতে চাইবেন?

আঁখি আলমগীর: আমার দুই মেয়ে ¯েœহা ও অরিয়াকে সঙ্গে নিতে চাইব।

আনন্দ আলো: স্টুডিওতে প্রথম দিন…

আঁখি আলমগীর: আমি প্রথম যেদিন মায়ের সঙ্গে স্টুডিওতে যাই সেদিন শওকত আলী ইমন আমার মায়ের লেখা কিছু গান অন্যশিল্পীর জন্য করছিলেন। ঐ সময় গানগুলো শুনে আমি গুন গুন করে গাইতে থাকি। আমার গাওয়া দেখে ইমন বললেন, তুমিতো ভালো গান গাও। এই গানটা গেয়ে শোনাও তো। তখন আমি প্রথম মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গান গাইলাম। সম্ভবত গানের কথা ছিল ‘প্রথম চিঠি পেলাম’। সেদিন একটা গান গাওয়ার পরে উনি আমাকে দাঁড় করিয়ে আরো পাঁচটি গান করান।

আনন্দ আলো: গান গেয়ে প্রথম পারিশ্রমিক…

Akhi-Catoonআঁখি আলমগীর: ১৯৮৪ সালের ঘটনা। আমি প্রথম প্লেব্যাক করি দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘বিদ্রোহী বধূ’ ছবিতে। ডুয়েট গানটিতে আমার সহশিল্পী ছিলেন সাগর। সংগীত পরিচালক ছিলেন আনোয়ার জাহান নান্টু। প্রথম পারিশ্রমিক হিসেবে সেদিন পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। জীবনের প্রথম পারিশ্রমিক পাওয়ার স্মৃতিটা এখনো মনে পড়ে।

আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোন গানটি এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?

আঁখি আলমগীর: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে প্রথম কলি, বোকামন, জোরকা ঝাটকা, শ্যামপিরিতি, বিষের কাটা, জল পড়ে পাতা নড়ে গানগুলো মাঝে মাঝে হৃদয়ে নাড়া দেয়।

আনন্দ আলো: বাবার সিনেমায় গান করতে গিয়ে নাকি খুব ভয় পান?

আঁখি আলমগীর: কিছুদিন আগে বাবার ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গানটি ছিল ‘আমার পৃথিবী তুমি একটাই’। কবির বকুলের কথায় গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন এস আই টুটুল। আমার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠও দিয়েছেন তিনি। বাবার নির্মিত দুটি ছবিতে আমি আগেও কণ্ঠ দিয়েছি। বাবা কখনো প্রফেশন আর পরিবারকে এক করে দেখেননি। তা না হলে তার সব ছবির গান আমিই গাইবার সুযোগ পেতাম। বাবার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারটা বরাবরই ভিন্ন। শুধু আমার ক্ষেত্রে না, সবার জন্যই। কারণ তিনি প্রতিটি কাজে যেমন নিখুঁত তেমনি তিনি নিজেও গানে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গানের প্রতিটি শব্দ আর মিউজিক পিস উনার পছন্দ হতে হবে। তার আগে গান শেষ হবে না। স্বাভাবিক ঐ গানটি করতে গিয়ে আমরা খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। পুরো গানের রেকর্র্ডিংয়ে উনি বসেছিলেন। উনার সামনেই আমাদের গাইতে হয়েছে। এটা যে কত বড় চ্যালেঞ্জ এবং কত আনন্দের সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

আনন্দ আলো: আপনার কাছে সংগীত কী?

আঁখি আলমগীর: আমার কাছে সংগীত হচ্ছে আমার প্রাণ। আমার জীবন। ঠিক যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া মানুষ বাঁচে না ঠিক তেমনি সংগীত আমার কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সেই অক্সিজেনের মতো।

আনন্দ আলো: আপনি একজন কণ্ঠশিল্পী, উপস্থাপিকা, অভিনয় শিল্পী এবং মডেল। নিজেকে কোন পরিচয়ে বেশি প্রাধান্য দিবেন?

আঁখি আলমগীর: আমি যেহেতু গানের শিল্পী তাই আমার প্রথম পরিচয় একজন সংগীত শিল্পী। সংগীত শিল্পী হিসেবে শ্রোতারা আমাকে প্রথমে ভালোবাসে। অভিনয় তেমন একটা করি না। হয়তো আমার গানে আমি অভিনয় করেছিলাম। মায়ানগর এবং এককাপ চা ছবি দুটিতে অভিনয় করেছি। এটাকে অভিনয় বলা যায় না। আর মডেলিং করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো পণ্যের বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করতে। আজেবাজে পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে ভক্তদের প্রতারণা করতে চাই না। আমি গানের মানুষ। গান নিয়ে থাকতে পছন্দ করি।

আনন্দ আলো: যে প্রশ্ন শুনতে শুনতে ক্লান্ত…

আঁখি আলমগীর: আপু আপনার সঙ্গে একটা সেলফি প্লিজ…।

আনন্দ আলো: যে পোশাকে আমাকে বেশি মানায়…

আঁখি আলমগীর: জিন্স ও ফতুয়া। তবে শাড়িতে আমাকে মানায় খুব।

আনন্দ আলো: আপনি নাকি মোম জ্বালিয়ে বাথরুমে গিয়ে বই পড়তেন। কথাটি কী সত্যি?

আঁখি আলমগীর: গান ছাড়া বই পড়তে আমার খুবই পছন্দ। ক্লাস সিক্স থেকে চশমা দরকার হলো বই পড়ার জন্য। আব্বু আম্মু রাত ৯/১০টার দিকে আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। সেই সুযোগে আমি মোম জ্বালিয়ে বাথরুমে গিয়ে বই পড়তাম। আমার বই পড়ার প্রচÐ নেশা ছিল। বিছানার পাশেও বিভিন্ন ধরনের অনেক বই থাকত।

আনন্দ আলো: নিজেকে কীভাবে দেখতে আপনার ভালো লাগে?

আঁখি আলমগীর: নিজেকে বাহ্যিকভাবে যদি বলি তাহলে আমার সব সময় সুন্দর পোশাক পরতে ভালো লাগে। নিজে সুন্দর থাকতে পছন্দ করি। গান এবং শপিং করা আমার একমাত্র নেশা। নিজেকে একজন পরিপূর্ণ শিল্পী এবং ভালো মানুষ হিসেবে গড়ার স্বপ্ন দেখি।

আনন্দ আলো: আপনার জীবনে কোনো অপূর্ণতা।

আঁখি আলমগীর: আমি কখনোই অপূর্ণতা নিয়ে ভাবি না। আমার পাওয়ার পাল্লাটা এত বেশি যে অপূর্ণতা নিয়ে ভাবলে আল্লাহকে নারাজ করা হবে।

আনন্দ আলো: অবসরে যা করি…

আঁখি আলমগীর: অবসরে বই পড়ি নয়তোবা সিনেমা দেখি। হুমায়ূন আহমেদের লেখা ভীষণ মিস করি। এছাড়া হরর ও থ্রিলার টাইপের সিনেমা দেখি। তবে গান শুনি প্রচুর। রান্নাবান্না করতে খুব পছন্দ করি। প্রিয়জনদেরকে রান্না করে খাওয়াতে আমার খুব ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: বাবার যে কথাটা সব সময় মেনে চলেন?

আঁখি আলমগীর: বাবা সব সময় একটা কথা বলেন, যা করবে, যতটুকু করবে মন দিয়ে করবে। বাবার কথামতো আমি ছোটবেলা থেকে সেটাই করছি। বোধকরি তাই এখন সংগীত শিল্পী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারছি।