Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অস্কার কাব্য!

এটা কি রসিকতা, নাকি চমক? নাকি ভুল? অস্কার এর মতো বিশ^সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এর কোনোটাই মেনে নেয়ার মতো নয়। বিশেষ করে সেরা ছবির নাম ঘোষণার ব্যাপারে রসিকতাই বা হবে কেন? প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে আজহার এবং মাজহার দুজনই। মাজহার প্রতিযোগিতায় জিতেছে। অথচ বিজয়ী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হলো আজহারের। পরক্ষণেই কৌতুকের ভঙ্গিতে নাম সংশোধন করে ঘোষণা করা হলো মাজহারের নাম। এই ধরনের রসিকতা বোধকরি অস্কারের মতো চলচ্চিত্রের বিশ^খ্যাত আসরে শোভন নয়। কাজেই আমরা ধরে নিতে পারি একটা ভুল হয়েছে পুরস্কার ঘোষণার সময়। লা লা ল্যান্ড নয় অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে মুনলাইট। অথচ এবার অস্কার অনুষ্ঠানে সেরা ছবি হিসেবে প্রথমে নাম ঘোষণা করা হয় লা লা ল্যান্ড-এর নাম।

তার ঠিক পরেই উপস্থাপক জানান, সেটি নাকি ছিল ভুল ঘোষণা। আসলে এবারের অস্কার জয়ী ছবি ‘মুনলাইট’। এমন একটি নাটকীয় পরিস্থিতির যে সৃষ্টি হবে, সেটাই বা কে জানতো! খামের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো ‘মুনলাইট’ ছবির নাম। এমনিতেই কমেডিয়ান হিসেবে ভালোই সুনাম আছে অস্কার উপস্থাপক জিমি কিমেলের। নামজাদা এ কমেডিয়ান স্বভাবসুলভ রসিকতার মধ্য দিয়েই শুরু হয় এবারের অস্কারের আনুষ্ঠানিকতা। জিম মাইক হাতে পেয়েই বলতে শুরু করলেন,  ‘আমি আজ গাইতেও আসিনি, নাচতেও আসিনি, হাসতেও আসিনি।’ সেরা ছবির ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি সেই রসিকতারই অংশ কী না, কে জানে! তবে অনুষ্ঠানের প্রযোজক ওয়ারেন বিটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেই ভুলের। গন্ডগোলটা নাকি ছিল পুরস্কারের খাম খোলা নিয়ে।

সম্পর্কিত

এদিকে এমন ঘটনায় বেশ দুঃখই পেয়েছেন ‘মুনলাইট’ ছবির সবাই। কম বাজেটের এ ছবিটি প্রথম থেকেই ছিল সেরার দৌড়ে। সামনে ছিল কেবল ‘লা লা ল্যান্ড’ দুর্গ। সেটাও জয় হলো এবার। অনুষ্ঠান যখন শুরু হয় বাংলাদেশে তখন সবে ভোর হয় হয়। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা শুরু হয়নি সেভাবে। ওদিকে আরেক গোলার্ধের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে তখন সবে রাতের শুরু। ৮৯তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সিনেমা দুনিয়ার সব তারকা-মহা তারকারা। কে ছিলেন না সেই রাতে! সে যাই হোক, ভুল ঘোষণা বা বিভ্রান্তির কারণেই হয়তো মানুষ মনে রাখবে এবারের অস্কারকে।

এক নজরে ৮৯তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বিজয়ীরা

বেস্ট পিকচার: মুনলাইট, বেস্ট ডিরেক্টর: ড্যামিয়েন শ্যাজেল (লা লা ল্যান্ড), বেস্ট অ্যাকট্রেস ইন এ লিডিং রোল: এমা স্টোন (লা লা ল্যান্ড), বেস্ট অ্যাকটর ইন এ লিডিং রোল: কেসি অ্যাফ্লেক (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী), বেস্ট অ্যাকটর ইন সাপোর্টিং রোল: ম্যাহেরশালা আলী (মুনলাইট), বেস্ট অ্যাকট্রেস ইন সাপোর্টিং রোল: ভায়োলা ডেভিস (ফেন্সেস), বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে: ব্যারি জেনকিন্স ও ট্যারেল অ্যালভিন ম্যাকারনে (মুনলাইট), বেস্ট অরিজিন্যাল স্ক্রিনপ্লে: কেনেথ লনেরগ্যান (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী), বেস্ট অরিজিন্যাল সং: ‘সিটি অব স্টারস’ (লা লা ল্যান্ড), বেস্ট অরিজিন্যাল স্কোর: জাস্টিন হুরউইজ (লা লা ল্যান্ড), বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং: হ্যাকশ রিজ, বেস্ট সাউন্ড এডিটিং: সিলভিয়ান বেলমার (অ্যারাইভাল), বেস্ট ডক্যুমেন্টারি ফিচার: এজরা এডেলম্যান ও ক্যারোলিন ওয়াটারলো (ও জে: মেড ইন আমেরিকা), বেস্ট ফিল্ম এডিটিং: জন গিলবার্ট (হ্যাকশ রিজ), বেস্ট ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস: দ্য জাঙ্গল বুক, বেস্ট প্রোডাকশন ডিজাইন: ডেভিড ওয়াসকো ও স্যান্ডি রেনল্ডস ওয়াসকো (লা লা ল্যান্ড), বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার: জুটোপিয়া, বেস্ট অ্যানিমেটেড শর্ট: পাইপার, বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম: দ্য সেলসম্যান (ইরান)।

‘লা লা ল্যান্ডের’ এমা সেরা অভিনেত্রী

এমাই সেরা অভিনেত্রী। ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির সেই উঠতি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করা এমা স্টোনই জিতেছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। ২০১৫ সালের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন এমা এবার আরও জয় করেছেন ‘গোল্ডেন গেøাব’ আর ‘বাফটা অ্যাওয়ার্ড’। এবার অস্কার নিয়েই ঘরে ফিরলেন ২৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।

পুরস্কার পেয়ে দারুণ উচ্ছ¡সিত তিনি। বক্তব্যেও ফুটে উঠলো সেই অভিব্যক্তি। এমনিতেই বেশ বিনয়ী এমা। মনোনীত অন্য সবার প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে পুরস্কার নিতে পারায় গৌরব বোধ করছি।’ আরও বললেন, ‘আমার শেখার এখনো বাকি আছে অনেক। আমি প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছি এবং শিখছি।’ ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির গল্পে এমা একজন উঠতি অভিনেত্রী। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে এসে দেখা পান আরেক উঠতি গায়কের। সেখানেই চলতে থাকে তাদের প্রেম পর্বের দিনগুলো। আর ‘লা লা ল্যান্ড’ তাদের কল্পনার এক নগরী।

সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছেন কেসি অ্যাফ্লেক

বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার অস্কারে এ বছর সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন কেসি অ্যাফ্লেক। ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী’ ছবিতে ‘লি শ্যান্ডলার’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার জেতেন তিনি। ৮৫ লাখ ডলার বাজেটের ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী’ ছবিটি অস্কারে ছয়টি মনোনয়ন পায়। কুইন্সে বসবাসরত বেশ কাঠখোট্টা স্বভাবের একজন মানুষ লি শ্যান্ডলার। ম্যানচেস্টারে হঠাৎ বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে কিশোর ভাতিজা প্যাট্রিকের অভিভাবক হয়ে যান তিনি। এই দায়িত্ব পালনের জন্য ম্যানচেস্টারে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু ম্যানচেস্টার শহরে থাকতে চান না তিনি। এভাবেই গল্প এগিয়ে যায়। সেরা অভিনেতা হিসেবে অন্য যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তারা হলেন ডেনজেল ওয়াশিংটন (ফেন্সেস), রায়ান গসলিং (লা লা ল্যান্ড), ভিগো মর্টেনসেন (ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক), অ্যান্ড্রু গারফিল্ড (হ্যাকশ রিজ)।

মুনলাইট সেরা

এবার অস্কারে সেরা ছবি হয়েছে ‘মুনলাইট’। ‘লা লা ল্যান্ড’ রাজ্যে মুনলাইটের জয় যেন! এটাকে কম বাজেটের ছবির অস্কার জয়ও বলা যেতে পারে। ভেলকিটা বেশ ভালোই দেখা গেল অস্কারের সেরা ছবির ঘোষণায়। প্রথমে সবার কাক্সিক্ষত ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবিকে জয়ী ঘোষণা করেও পরে বলা হয়, সেটি নাকি ভুল ঘোষণা ছিল। সেরা ছবি আসলে ‘মুনলাইট’।

আগে থেকেই বলা হচ্ছিল লা লা ল্যান্ডের সঙ্গে বেশ ভালোই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে মুনলাইট ছবিটি। কেবল প্রতিদ্ব›িদ্বতা নয় সেরা ছবি হিসেবে ‘লা লা ল্যান্ড’কে হারিয়েই দিল ‘মুনলাইট’! ছবিটির গল্প বলার ধরন হলিউডের অন্য সিনেমাগুলো থেকে আলাদা। গতানুগতিক নয় একেবারেই। এতে মূলত উঠে এসেছে একজন কৃষ্ণাঙ্গ বালকের শৈশব থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনের সংগ্রাম। তাই লা লা ল্যান্ডের আধিপত্যের বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্যারি জেনকিন্স পরিচালিত এ ছবিটি।

সেরা পরিচালক ড্যামিয়েন শ্যাজেল

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৮৯তম আসরে সেরা পরিচালক কে হবেন তা নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা-কল্পনা। শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে বিজয়ের হাসি হাসলেন ড্যামিয়েন শ্যাজেল। ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবিটি পরিচালনার জন্য এই পুরস্কারটি পেলেন তিনি। সবচেয়ে কম বয়সে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতার খেতাব পেয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই তারকা।

দুই তরুণ-তরুণীর জীবন সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে তৈরি মিউজিক্যাল ছবি ‘লা লা ল্যান্ড’। ছবিটি সেরা পরিচালক, সেরা গান, সেরা আবহ সংগীতসহ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে। সেরা পরিচালক ক্যাটাগরিতে অন্য যাদের মনোনয়ন ছিল, তারা হলেন নিস ভিলেন্যুভ (অ্যারাইভাল), মেল গিবসন (হ্যাকশ রিজ), কেনেথ লনারগ্যান (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী), ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট)

গানে ‘লা লা ল্যান্ড’ সেরা

‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির ‘সিটি অব স্টারস’ গানটি অস্কারে ‘বেস্ট অরিজিন্যাল সং’ বিভাগে আর ‘বেস্ট অরিজিন্যাল স্কোর’ বিভাগের দুটি পুরস্কার জিতেছে। ‘সিটি অব স্টারস’ গানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন জাস্টিন হুরউইজ, বেঞ্জ পাসেক এবং জাস্টিন পল। আর ‘বেস্ট অরিজিন্যাল স্কোর’ বা আবহ সংগীতের জন্য জাস্টিন হুরউইজ।

‘বেস্ট অরিজিন্যাল স্কোর’ বিভাগের জন্য এ বছর মনোনয়ন পেয়েছে ‘জ্যাকি’, ‘লা লা ল্যান্ড’, ‘লায়ন’, ‘মুনলাইট’ ও ‘প্যাসেঞ্জারস’ ছবি। আর ‘বেস্ট অরিজিন্যাল সং’ বা সেরা গান বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির ‘অডিশন’, ‘ট্রলস’ ছবির ‘কান্ট স্টপ দ্য ফিলিং’, ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির ‘সিটি অব স্টারস’, ‘জিম: দ্য জেমস ফোলে স্টোরি’ ছবির ‘দ্য এম্পটি চেয়ার’ ও ‘মোয়ানা’ ছবির ‘হাউ ফার আই উইল গো’ গানগুলো। এরই মধ্যে ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবিটি সেরা পরিচালকসহ কয়েকটি বিভাগে অস্কার পেয়েছে।

সিরিয়ার উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে তৈরি ছবি পেয়েছে অস্কার

গতকাল রবিবার জানা গেল, নিরাপত্তার অজুহাতে অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’ ছবির সিনেমাটোগ্রাফার খালেদ খাতিবকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এই সিনেমাটোগ্রাফার একজন সিরিয়ান নাগরিক। তার বয়স ২১। কিন্তু এবারের চিত্রটা একেবারেই অন্যরকম, অস্কারে ‘বেস্ট ডক্যুমেন্টারি শর্ট’ বিভাগে পুরস্কার জিতেছে তার ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় সাদা হেলমেট পরা উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে এই তথ্যচিত্র। এছাড়া এবার বেস্ট ডক্যুমেন্টারি ফিচার বিভাগে অস্কার জিতেছে ‘ও. জে: মেড ইন আমেরিকা’। আর ‘বেস্ট লাইভ অ্যাকশন শর্ট’ বিভাগে অস্কার জিতেছে ‘সিং’ ছবিটি।

অস্কারে ২১ বার মনোনয়ন!

অস্কারে ২১ বার মনোনয়ন পেয়েছেন শব্দ প্রকৌশলী কেভিন ও’কনেল। সর্বশেষ মনোনয়ন পান ১০ বছর আগে। তাই তাকে আর ‘বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং’ বিভাগটি নিয়ে সবার আগ্রহ একটু বেশিই ছিল। আর আলোচনায় ছিল কেভিন ও’কনেল, অ্যান্ডি রাইট, রবার্ট ম্যাকেঞ্জি এবং পিটার গ্রেসের ‘হ্যাকশ রিজ’ ছবিটি। শেষ পর্যন্ত কেভিন ও’কনেলের বাধা দূর হয়েছে। এবার ‘বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং’ বিভাগে অস্কার পেয়েছেন তারা। ‘বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং’ মনোনয়ন পাওয়া অন্য ছবিগুলো হলো ‘অ্যারাইভাল’, ‘লা লা ল্যান্ড’, ‘রুঝ ওয়ান: আ স্টার ওয়ারস স্টোরি’ ও ‘থার্টিন আওয়ারস: দ্য সিক্রেট সোলজার অব বেনগাজি’।

অস্কারের মঞ্চে ওম পুরিকে শ্রদ্ধা

বলিউডের তারকা প্রয়াত ওম পুরিকে ভোলেনি হলিউড। মনে রেখেছে এখনো। ৪৫ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে ওম পুরি অনেকগুলো ব্রিটিশ ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো ‘গান্ধি’, ‘মাই সান দ্য ফ্যানেটিক’, ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’, ‘দ্য প্যারোল অফিসার’, ‘সিটি অব জয়’, ‘উলফ’, ‘দ্য গোস্ট অ্যান্ড দ্য ডার্কনেস’, ‘চার্লি উইলসনস ওয়ার’। ১৯৮২ সালে ‘গান্ধি’ ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ওম পুরি। তার অভিনীত শেষ ছবি ‘ভাইসরয়স হাউজ’।

আজ সোমবার অস্কার অনুষ্ঠানে ‘ইন মেমোরিয়াম’ সেশনে শ্রদ্ধা জানানো হয় ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবির প্রয়াত তারকাদের। শ্রদ্ধা জানানো হয় আব্বাস কিয়ারোস্তামি, ক্যারি ফিশার, প্রিন্স, মাইকেল কিমিনো, আন্তন ইয়েলচিন, জন হার্ট প্রমুখকে। আরও ছিলেন ওম পুরি।

অস্কারের মঞ্চে আসগর ফারহাদির বার্তা

অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ইরানী ছবি ‘দ্য সেলসম্যান’। ছবিটির পরিচালক আসগর ফারহাদি। তিনি রাজধানী তেহরানের দুই মধ্যবিত্ত দম্পতিকে নিয়ে তৈরি করেছেন ‘দ্য সেলসম্যান’ ছবিটি। অস্কার আসর বর্জন করেন ছবিটির পরিচালক আসগর ফারহাদি এবং অভিনেত্রী তারানেহ আলীদুস্তি। মূলত কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদেই তারা এই বর্জন করেছেন।

ফারহাদের পক্ষ হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন আনুশেহ আনসারি। তিনি ফারহাদের বার্তা অস্কারের দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেন। ফারহাদ তার বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি দুঃখিত আজ রাতে আপনাদের সঙ্গে থাকতে না পারার কারণে। আমার আজকের অনুষ্ঠানে না আসার পেছনে কারণ আছে। আমার দেশ ইরানসহ আরও যে সাতটি দেশের ইমিগ্রেন্টদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি আজ উপস্থিত হইনি, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বাধা দেয়া একেবারেই অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক। ফিল্ম মেকাররা তাদের ক্যামেরার মাধ্যমে ধর্ম এবং দেশের সব বাধা ভেঙে দিতে পারে।

অস্কার না পেলেও আছে উপহার!

যাঁরা অস্কার ঘরে তুলতে পারলেন না, তাঁদের জন্য ভক্তদের মন খারাপ হয়েছে নিশ্চয়ই? হেরে যাওয়া শিল্পী-কুশলীদের মনের অবস্থা বুঝুন তাহলে। তবে পরাজয়ের বেদনায় ভারাক্রান্ত মনকে একটু হলেও সান্ত¡না দেবে ‘অস্কার গিফট ব্যাগ’। সেই ব্যাগে আছে লাখো ডলার সমমূল্যের উপহার। অস্কার বিজয়ী ও মনোনীত ব্যক্তিরা আজ সেই উপহারের ব্যাগ পাবেন। কী কী থাকছে সেই ব্যাগে, তার কয়েকটির নাম চলুন আজ জেনে নিই।

একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের দেওয়া অফিশিয়াল গিফট ব্যাগে আছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের উপহারসামগ্রী, যা মনোনীত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই উপহারের ব্যাগের কথা একাডেমি কর্তৃপক্ষ না জানালেও সেই ব্যাগে স্থান পাওয়া পণ্যগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে সব বৃত্তান্ত।

উপহারের ব্যাগে আছে ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিলাসবহুল সব হোটেলে বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার কুপন। উন্নত প্রযুক্তির মুঠোফোন, ডিজিটাল ক্যামেরাসহ বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ও পোশাক থাকছে তাতে। আর খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে চকলেট, কুকিজ, কেক থাকা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অস্কার মনোনীত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন উপহার ব্যাগ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিসটিংকটিভ অ্যাসেটসের উপহার ব্যাগের ইতিহাস বেশ পুরোনো। তারা ১৫ বছর ধরে সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সহ-অভিনেতা, সহ-অভিনেত্রী ও পরিচালক বিভাগে বিজয়ী ও মনোনীত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে আসছে মহামূল্যবান উপহারের ব্যাগ। তাতে বিশেষায়িত টয়লেট পেপার থেকে শুরু করে হীরা ও রুবিখচিত ব্রেসলেট সবই থাকছে। থাকছে বিশেষ স্পা, লেজার ট্রিটমেন্ট ও প্লাস্টিক সার্জারি করার জন্য বিশেষ মূল্যছাড়। এ বছর ডিসটিংকটিভ অ্যাসেটস তাদের উপহারের ব্যাগে যোগ করেছে বিনা মূল্যে চোখের ল্যাসিক চিকিৎসা করানোর কুপন এবং বিশেষ নকশার ¯িøপার।

এদিকে ইউএস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ম্যাডিসন অ্যান্ড মালহল্যান্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠানও এ বছর ব্যবস্থা করেছে মনোনীত শিল্পী ও কুশলীদের জন্য অস্কার ‘আন-অফিশিয়াল’ উপহারের ব্যাগ। তাতে তারা যোগ করেছে ১৮টি বিলাসবহুল উপহারসামগ্রী, যার বাজারমূল্য ২৫ হাজার মার্কিন ডলার।