Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অল্পদিনেই রহস্যের মায়াজালে আটকে গেলাম : শ্যামল মাওলা

শ্যামল মাওলা আমাদের টিভি পর্দার পরিচিত মুখ।  নিয়মিত অভিনয় করছেন ধারাবাহিক ও খণ্ড নাটকে।  চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন।  নির্মাতারা শ্যামলকে নিয়ে কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।  সে কারণে দিনে দিনে বাড়ছে তার অভিনয়ের পরিধি।  শ্যামল ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে যেতেন থিয়েটার পাড়ায়।  নাটকের মহড়া দেখতেন।  পর্যবেক্ষণ করতেন একেকজন পরিচিত মানুষ মঞ্চে উঠলে কিভাবে হঠাৎ অপরিচিত হয়ে যায়! চরিত্রের গভীরে হারিয়ে ফেলে নিজেকে।  অল্পদিনেই এ রহস্যের মায়াজালে আটকা পড়লেন শ্যামলও।  এক্ষেত্রে বাবারও অনুপ্রেরণা ছিল।  বাবা সব সময় চাইতেন, ছেলে নিবেদিতপ্রাণ মঞ্চকর্মী হোক।  আর তাই তো শ্যামল থিয়েটারের সাথেও যুক্ত রয়েছেন।  দেশ নাটক-এ তিনি বেশকিছু দিন কাজ করেছেন।  দলটির নিয়মিত মহড়া, প্রযোজনা- সব কিছুতে তার উপস্হিতি এখনো আগের মতোই প্রাণবন্ত।  সমসাময়িক ব্যস্ততা ও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শ্যামল কথা বলেছেন আনন্দ আলো’র সঙ্গে।  লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।

আনন্দ আলো: অভিনেতা হবেন এই চিন্তাটা কী আগে থেকেই ছিলো?

শ্যামল: অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই ছিলো।  তবে এ পথে হাঁটা আমার বাবার হাত ধরেই।  বাবা গোলাম মোস্তফা পিজি হাসপাতালের অ্যাডমিন বিভাগে চাকরি করতেন।  প্রত্যেক বছর সেখানে মঞ্চ নাটক হতো।  তখন থেকেই বাবার সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় শুরু।  ১৯৯২ সালে বাবার সঙ্গে মঞ্চে কাজ করার পর মঞ্চের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।  এরপর দেশ নাটক-এ ২০০৪ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করি।  দলের হয়ে ‘জনমে জন্মান্তর’, ‘চান্দু’, ‘বিরসাকাব্য’, ‘শিবন ও ঢোলক’ নাটকগুলোতে অভিনয় করেছি।  এ ছাড়াও মঞ্চে ‘প্রকৃত পুরাণ’ নাটকে মিউজিকের কাজও করেছি।  মঞ্চ থেকে আমি শুধু অভিনয়ের শিক্ষা নয়, জীবনেরও অনেক কিছু শিখেছি।

আনন্দ আলো: টিভি নাটকে কাজ শুরু করলেন কখন থেকে?

Iccheghuriশ্যামল: ২০০৭ সালে সুমন আনোয়ার পরিচালিত ‘রোদ-বৃষ্টির শহরে’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হই।  আমাদের দলের সিনিয়র কর্মী ছিলেন সুমন ভাই।  তিনি হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে আমাকে এই নাটকে অভিনয়ের কথা বলেন।  একই সময় ‘সিসিমপুর’-এ পাপেটিয়ার হিসেবে কাজ করি।  এরই মধ্যে হঠাৎ বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল।  বিয়ের পর জীবনে সফলতা পেতে শুরু করি।  আমার স্ত্রী নন্দিনীই আমাকে অভিনয়ের পথে হাঁটতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ জোগায়।  বিয়ের পর সংসারে সবার কী হয় জানি না, কিন্তু আমার জীবনে বিয়ের পরই সব উন্নতি ঘটেছে।  আমি অনেক এলোমেলো ছিলাম।  অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেয়ার চিন্তাটা বিয়ের পরই আসে এবং সেটা অবশ্যই আমার স্ত্রীর জন্যই সম্ভব হয়েছে।  বিয়ের পর ফটোসেশন করে বিভিন্ন অ্যাড এজেন্সিতে ছবি জমা দিতে বলে সে।  তার পরামর্শে ছবি জমা দিয়েছিলাম বিশিষ্ট নির্মাতা আফজাল হোসেনের অ্যাড এজেন্সি মাত্রায়।  একসময় সেই এড এজেন্সি থেকে ডাক আসে।  ‘এইডস’-এর দুটি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার সুযোগ পাই।  এরপর প্রাণ জুস ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বিজ্ঞাপনেও কাজ করি।  এই কাজগুলো করতে করতে আমি তিতুমীর কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ে অনার্স পাস করি।  এ পর্যন্ত আমার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাম সোহরাব দোদুলের ধারাবাহিক ‘সবুজ নক্ষত্র’, ‘সাতকাহন’, ফেরদৌস হাসানের ‘কাজরী’, ‘পা রেখেছি যৌবনে’, রিপন নবীর ‘ঝিনুক ফোটা সাগর বেলা’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘মুনসুন রেইন’ ও আশরাফুল আলম রিপনের ‘পোস্টার’সহ আরো অনেক নাটক।  আর বর্তমানে আমার অভিনীত বেশকিছু ধারাবাহিক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।  এরমধ্যে রয়েছে এনটিভিতে ‘সবুজ নক্ষত্র’, ‘দূর পাহাড়ের বাতাসে’, ‘বন্ধু আমার’, বাংলাভিশনে ‘লেডিস ফার্স্ট’সহ আরো অনেক নাটক।

আনন্দ আলো: টিভি নাটকে অভিনয় করেন।  টিভিতে নাটক দেখেন?

শ্যামল: অবশ্যই টিভিতে নাটক দেখি।  যে নাটকটি অন এয়ার হয়ে যায় তা শুটিংয়ের ব্যস্ততার জন্য দেখা না হলেও পরে ইউটিউবে দেখে নেই।  নিজের কাজ দেখলে অনেক ভুল ত্রুটি বের করতে পারি।  আমি শুধু আমার নিজের কাজই দেখি না, অন্যদের কাজও দেখি।  এতে করে অন্যের অভিনয় সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।  শুধু নাটক নয়, আমি প্রচুর মুভিও দেখি।

আনন্দ আলো: ‘গেরিলা’ ছবিতে আপনি আলম নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।  পরবতর্ীতে আপনাকে চলচ্চিত্রে আর দেখা যায়নি…

Aporajitaশ্যামল: যেকোনো কিছুর শুরুটা যখন খুব ভালো কিছু দিয়ে হয়ে যায় তখন পরবতর্ী সময়ে কিছু করার জন্য অনেককিছু চিন্তা-ভাবনা করতে হয়।  আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমন।  ‘গেরিলা’য় আমার চরিত্রটি ছিলো অসাধারণ।  দর্শক গ্রহণ করেছিল দারুণভাবে।  তাই তো পরবতর্ীতে একাধিক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসার পরও জনপ্রিয়তার মোহে গা ভাসিয়ে দেইনি।  যদিও ‘গেরিলা’ ছবিতে অভিনয়ের আগে প্রশান্ত অধিকারীর ‘সিবালোভা কেমাতো’ ও তাজু কামরুলের ‘সংকল্প’ ছবিতে কাজ করেছি।  ছবি দুটির মুক্তি পাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

যা বলছিলাম।  বিবিসির বিশ্বাস নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে বিশিষ্ট পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফের মেয়ে এশা ইউসুফের সঙ্গে পরিচয় হয়।  তিনিই গেরিলায় অভিনয়ের কথা বলেন এবং আমি রাজি হয়ে যাই।  আমি অবশ্যই এমন চলচ্চিত্র অভিনয় করতে চাই যা মুক্তি পাওয়ার পর অনেক আলোচনা হবে, সমালোচনাও থাকবে।  ঠিক যেমনটি ছিলো গেরিলা মুক্তি পাওয়ার পর।  আমার অভিনীত চরিত্র খুব অল্প সময়ের জন্যই থাকুক সেটা সমস্যা নয়।  কিন্তু চরিত্রটিকে অর্থপূর্ণ হতে হবে।

আনন্দ আলো: এক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতিটা কেমন?

শ্যামল: টিভি নাটক অনেক করেছি।  এখন আমার মূল টার্গেট চলচ্চিত্র।  আমি এখন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই।  এ ব্যাপারে প্রস্তুতিতে যেন ঘাটতি না থাকে সেজন্য সচেতনভাবেই এগুচ্ছি।  চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি আমি টিভি নাটক থেকেই নিচ্ছি।  চলচ্চিত্র যে ধারার হোক না কেন, আমি অভিনয় করতে রাজি।  সেক্ষেত্রে গল্প ও চরিত্র বিবেচনায় আমার অভিনয়ের সুযোগ কতটুকু আছে, তা প্রথমে বিবেচনা করব।  বাণিজ্যিক সিনেমার জন্য যে ধরনের নাচ-গান শেখা দরকার, তার চর্চা কিন্তু আমি করছি।  ছোটবেলা থেকে আমি কোনো অভিনেতার অভিনয় বা নাচ ভালো লাগলে তা তুলে ফেলতাম।  তার মতো করে চর্চা করতাম।  সেই চর্চাটা এখন কাজে দিচ্ছে।

আনন্দ আলো: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

শ্যামল: অভিনয় করে সারাজীবন দর্শকের üদয়ে ঠাঁই করে নিতে চাই।  এমন সব চরিত্রে অভিনয় করতে চাই যা দেখে দর্শক আজীবন মনে রাখবেন।  বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী বেশকিছু চরিত্র রয়েছে সেসব চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।  যেমন রবীন্দ্রনাথের অমিত রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস, শ্রীকান্তসহ এমন আরো চরিত্র।  আর একটি অভিনয়ের স্কুল করার ইচ্ছা আছে।

আনন্দ আলো: অভিনয়ের বাইরে আপনার নিজের বিনোদন কী?

শ্যামল: যেদিন শুটিং থাকে না সেদিন বাসায় থাকি।  আমার স্ত্রী নন্দিনী ও ছেলে শ্রেয়নের সঙ্গে সময় কাটাই।  এটা আমার কাছে অনেক বড় বিনোদন।  বই পড়ি, মুভি দেখি এটাও আমার বিনোদন।  একটু সময় পেলে আমি আর আমার স্ত্রী একসময় খুব ঘুরতাম।  সেটাও একপ্রকার বিনোদন ছিলো।  বর্তমানে ছেলের বয়স দেড় বছর।  ছেলে আরেকটু বড় হলে আবার এমন ঘুরাঘুরি শুরু হবে।