Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

৫০ বছর পর চ্যানেল আইতে ময়নামতি

অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়, মিছে তারে শিকল দিলাম রাঙা দুটি পায়… অনেক সাধের ময়না আমার… এই একটি গানই যেন একটি কালজয়ী বাংলা সিনেমার হাতিহাস। বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েদের কাছে এই গানটির হয়তো কোনো আবেদন নাই। কিন্তু যারা একটু বয়স্ক। সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বয়সের ভারে ন্যুজ্ব হয়েছেন তাদের কাছে এই গানের আবেদন অনেক। কারণ এই একটি গান একটি বাংলা ছবিকে বিশেষ ভাবে পরিচিতি দিয়েছে। ছবির নাম ময়নামতি। পরিচালক ছিলেন কাজী জহির। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমাদের বাংলা সিনেমার মহানায়ক নায়করাজ রাজ্জাক ও বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে কবরী। দেশ স্বাধীনের আগে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। কাহিনীর সৌকর্য ও পাত্র-পাত্রীদের অভিনয় মাধূর্য্যে ছবিটি তখনকার দিনে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে সারাদেশে অগ্রসরমান পরিবারের প্রায় সকল সদস্যই হলে গিয়ে ছবিটি দেখেছেন। তখনকার দিনে আজকের মতো তো আর ফেসবুক ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে ছিল প্রেসে ছাপা পত্রিকা আর রেডিওর বিজ্ঞাপন। ব্যস, এই দুই মাধ্যমেই ছবিটির প্রচার চলে। তবে মুখে মুখে বাতাসের বেগে ‘ময়নামতি’র খবর সারাদেশে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তারপর শহরের মানুষের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও সিনেমা পাগল নারী পুরুষ ছুটে আসতে থাকে সিনেমা হলের দিকে। সত্যি এক জাগরনের ডাক দিয়েছিল কাজী জহিরের অনবদ্য ছবি ‘ময়নামতি’। ছবির গান ও কাহিনীর টানে অনেকে একাধিকবার হলে বসে ছবিটি দেখেছেন। বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে সত্যি এক বিস্ময়কর ইতিহাস।
আনন্দের খবর। দীর্ঘ ৫০ বছর পর বহুল আলোচিত সেই সিনেমা ‘ময়নামতি’ আবার দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দেশের সিনেমা প্রেমী মানুষেরা। ঈদ অনুষ্ঠানমালার আওতায় চ্যানেল আইতে ছবিটি প্রদর্শন করা হবে। অনেকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন ৫০ বছর অর্থাৎ অর্ধশতক বছর পর কিভাবে আবির্ভাব ঘটলো ময়নামতির? উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা বিস্ময়কর তথ্য জানতে পেরেছি। রাজ্জাক-কবরী জুটির বহুল আলোচিত সিনেমা ময়নামতি’র কোনো প্রিন্ট, পোস্টারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। গবেষনার প্রয়োজনেও ছবিটি সম্পর্কে পাওয়া যাচ্ছিলো না কোনো তথ্য। বলা যায় ইতিহাসের অন্তরালেই হারিয়ে যেতে বসে ছিল এক সময়ের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘ময়নামতি’। কিন্তু হঠাৎ সন্ধান পাওয়া গেল ময়নামতির। ইতিহাসের অন্ধকার গুহা থেকে ময়নামতিকে আলোর রাজ্যে বের করে এনেছেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। চিত্রা ফিল্মস এর ব্যানারে নির্মিত হয়েছিল ‘ময়নামতি’। চিত্রা ফিল্মস এর ১৩টি ছবির যাবতীয় স্বত্ব কিনতে গিয়ে প্রয়াত কাজী জহিরের স্ত্রী চিত্রা জহির ও তার পুত্রের কাছে ময়নামতির একটি প্রিন্টের সন্ধান পান ফরিদুর রেজা সাগর। সাথে সাথে ময়নামতির স্বত্বও কিনে নেন। ময়নামতির পুরনো রিল বস্তাবন্দী অবস্থায় কাজী জহিরের বাসায় পড়েছিল। সেখান থেকে পরম মমতায় ময়নামতির রিলগুলো উদ্ধার করে সাথে সাথে ভারতের মাদ্রাজে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন ফরিদুর রেজা সাগর। মাদ্রাজের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থায় এখন চলছে ছবিটির শব্দ ও কালার কারেকশনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঘষামাজার বিভিন্ন পর্ব। আশা করা যায় ঈদের অনুষ্ঠান মালার আওতায় আড়ম্বরের সাথে চ্যানেল আই-এর পর্দায় কালজয়ী সিনেমা ‘ময়নামতি’ প্রদর্শিত হবে।
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কাহিনী অবলম্বনে ‘ময়নামতি’ নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহির। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাক এবং চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে কবরী। ছবির অসাধারন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রয়াত কণ্ঠ শিল্পী বশির আহমেদ। ছবির গায়ক, নায়ক ও পরিচালকদের মধ্যে কেউই বেঁচে নেই। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন সবার প্রিয় চিত্র নায়িকা কবরী। দীর্ঘ ৫০ বছর পর ‘ময়নামতি’ আবার পর্দায় উপস্থাপন করা হবে, একথা শুনে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে বললেন, এটি বড়ই আনন্দের খবর। ‘ময়নামতি’ শুধু একটি সিনেমা নয় এটি ইতিহাসেরও একটি অংশ। সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যেও কি করে একটি ভালো ছবি বানানো যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’। বহু বছর পর ছবিটিকে আলোর রাজ্যে আবার আনার জন্য আমি চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ময়নামতির আগমনের আগাম খবর শুনে সিনেমা প্রেমীদের মনেও ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। জিয়াউল হাসান নামে একজন ব্যাংকার বললেন, ‘ময়নামতি’ আমার দেখা সিনেমা গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সিনেমায় রাজ্জাক-কবরী জুটি এতোটাই হিট হয়েছিল যে শুধু তাদেরকে দেখার জন্য আমি তরুণ বয়সে পর পর পাঁচবার সিনেমাটি দেখেছি। ধানমন্ডি থেকে লুৎফুন্নাহার নামে একজন গৃহিণী বললেন, ‘ময়নামতি’ আমাদের সময়ের সবচেয়ে হিট সিনেমা। রাজ্জাক-কবরীর অভিনয় তো আছেই, বশির আহমেদের ‘অনেক সাধের ময়না আমার… গানটি ওই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছবিটি দেখাবে চ্যানেল আই। এজন্য চ্যানেল আইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।