Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

হুমায়ূন আহমেদের  কৃষ্ণপক্ষ সিনেমা নির্মাণে একটি আন্তরিক চ্যালেঞ্জ

রেজানুর রহমান, সৈয়দ ইকবাল: অভূতপূর্ব। অর্থাৎ যা ইতিপূর্বে ঘটে নাই। সে রকমেরই কিছু ঘটতে চলেছে আমাদের বাংলা সিনেমায়। একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা নির্মাণের আগে প্রস্তুতির জন্য যেখানে সময় লাগে মাসের পর মাস। সেখানে মাত্র ৪৫ দিন অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা নির্মাণ করে তা রিলিজ দেয়ার আন্তরিক চ্যালেঞ্জ নিয়েছে দেশের অন্যতম সিনেমা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস। ছবির নাম ‘কৃষ্ণপক্ষ’। বাংলা সাহিত্যের জাদুকর, নির্মাণের মহান কারিগর হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে ছবি বানানোর এই চ্যালেঞ্জে যুক্ত হয়েছেন সুঅভিনেত্রী, গায়িকা, নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।  ইমপ্রেস মানেই নতুন কিছু আবিষ্কার করা। এজন্য শুরু থেকেই নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সফলতার সাথে সব চ্যালেঞ্জে জয়ীও হয়েছে। ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এ উপলক্ষে চমক দেয়ার মতো কিছু করার ভাবনা শুরু হয় ইমপ্রেস ও চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের মাঝে। ভাবনাটিকে কার্যকর করতেই একদিন ডেকে নেয়া হয় হুমায়ূন পতœী, সুঅভিনেত্রী, নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনকে। খবর পেয়ে শাওন ভেবেছিলেন সামনে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। বরাবরের মতো হয় নাটক অথবা টেলিফিল্ম নির্মাণের ব্যাপারে কথা বলতেই হয়তো চ্যানেল আই থেকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু আসল ঘটনা জানতে পেরে শাওন প্রথমে একটু অবাক হন। নিজেকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সিনেমা নির্মাণ করবেন এই স্বপ্ন অনেকদিন ধরেই লালন করে আসছেন। কিন্তু স্বপ্নটা যে এতো তাড়াতাড়ি সত্যি হবে তা কখনোই ভাবেননি। চ্যানেল আই থেকে শাওনকে একটি ছবি নির্মাণের প্র¯ত্মাব দেয়া হয়। ছবিটি হতে হবে হুমায়ূন আহমেদের যে কোন উপন্যাস নিয়ে। ১৩ নভেম্বর ছবিটি মুক্তি দিতে হবে। কথা সেপ্টেম্বরের ঈদের আগে। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ১৩ নভেম্বর। অর্থাৎ সময় পাওয়া যাবে বড় জোর দেড় মাস। এতো কম সময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা বানানো সম্ভব? নেগেটিভ, পজিটিভ অনেক ভাবনাই শাওনের মাথায় কাজ করতে থাকলো। একপর্যায়ে তিনি পজিটিভ ভাবনাকেই গুরুত্ব দিলেন এবং ইমপ্রেস অর্থাৎ চ্যানেল আই-এর আšত্মরিক চ্যালেঞ্জের সাথে যুক্ত হলেন। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল একটি সিনেমা নির্মাণের আšত্মরিক কার্যক্রম। আনন্দের খবর হলো আমরা ১৩ অক্টোবর আনন্দ আলোর জন্য কৃষ্ণপক্ষকে নিয়ে যখন এই রিপোর্ট লিখছি তখন ছবির শুটিং পর্ব প্রায় শেষের পথে। রাতদিন ২৪ ঘন্টা একনাগারে চলছে ছবির নির্মাণ কাজ। চ্যানেল আই-এর একদল দক্ষ কর্মী বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে নুহাশ চলচ্চিত্রের আরেকদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ছবিটি মুক্তি দিতে হবে। এটা যেন সবার জন্যই হবে একটি স্মরণীয় ঘটনা। আর তাই চ্যালেঞ্জটাই আšত্মরিকভাবেই গ্রহণ করেছে সবাই। রাত তিনটা, চারটায় শুটিং শেষ করেও পরের দিন ১০টা ১১টার মধ্যে শুটিং স্পটে হাজির হতে কর্মীদের এতোটুকু ক্লাšিত্ম নাই। শিল্পীরাও ছবিটির ব্যাপারে বেশ আšত্মরিক। মূলধারার জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজের পাশাপাশি এই ছবিতে যুক্ত হয়েছেন সময়ের ব্য¯ত্ম তারকা মাহী। বাণিজ্যিক ছবির ধারায় যার উপস্থিতি বেশ সরব। তিনিও কৃষ্ণপক্ষে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেক আšত্মরিক ও যতœবান। তার ব্যাপারে পরিচালক শাওনের মšত্মব্যÐ মাহীকে নিয়ে প্রথমদিকে একটু সংশয়ে ছিলাম। বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে অভিনয় করে। কৃষ্ণপক্ষে তাকে কি মানাবে? কিন্তু মাহী আমাকে চমকে দিয়েছে। দারুণ অভিনয় করেছে সে। আমি তার ব্যাপারে বেশ হ্যাপী। রিয়াজ ভাই, ফেরদৌস, তানিয়ার কাছেও আমি ঋণী। আর চ্যানেল আই? আমিতো এই পরিবারেরই সদস্য। কাজেই আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না।  কৃষ্ণপক্ষ, হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত একটি উপন্যাস। গল্পের শুরুটা এরকমÐ নোটটা বদলাইয়া দেন আফা, ছিঁড়া নোট। অরুর গা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। কুড়ি টাকার একটা নোটই তার কাছে আছে। ছেঁড়া নোট বদলাবে কোত্থেকে? অরু গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে বলল, কই দেখি নোটটা? রিকশাওয়ালার মুখে অহংকার মেশানো বিজয়ীর হাসি। ছেঁড়া নোট আবিষ্কার করে সে খুব খুশি। যেন সে ক্রিস্টোফার কলম্বাস। আমেরিকা আবিষ্কার করে ফেলেছে। অরু বলল, কই আমি তো ছেঁড়া দেখছি না। রিকশাওয়ালা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করে বলল, নজর দিয়া দেহেন। অরু ‘নজর’ দিয়ে দেখল। হ্যাঁ ছেঁড়া। ছিঁড়ে দু’খÐ করা। স্কচ টেপ দিয়ে এতো সাবধানে জোড়া লাগানো যে রিকশাওয়ালা ছাড়া অন্য কারো বোঝার উপায় নেই।  কি আফা, বিশ্বাস হইল? অরু ক্ষীণ গলায় বলল, শোন আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই। এই একটাই নোট। তুমি এক কাজ করÐ পুরোটাই নিয়ে যাও। ছিঁড়া নোট নিয়া ফায়দা কী? ফায়দা আছে। গুলি¯ত্মানে ছেঁড়া নোট বদলে দেয়। দু’টাকা বাট্টা রাখবে। কুড়ি টাকার বদলে তুমি পাবে আঠারো টাকা। দশ টাকা লাভ। আমার লাভের দরকার নেই। এখন আমি টাকা পাব কোথায়? বলেছি না আমার কাছে একটাই নোট! টাকা-পয়সা না নিয়া রিকশাতে উঠেন ক্যান? ভুল করে উঠি। তুমি ভুল কর না? মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিনে প্লাস্টিকের পর্দা ছাড়া চলে আস না? যুক্তি রিকশাওয়ালাকে কাবু করল না। সে ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। অরু বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি মিনিট দশেক অপেক্ষা কর। তোমাকে ভালো নোট দেব। রিকশার সিটে বসে আরাম করে চা খাও। ফ্লাস্কে করে এক ছেলে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছে। অরু তাকে ডেকে বলল, তুমি এই রিকশাওয়ালাকে এক কাপ চা দাও। রিকশাওয়ালা খানিকটা হকচকিয়ে গেল। এই জাতীয় 5পরিস্থিতির মুখোমুখি সে এর আগে হয়নি। অরু ঘড়ি দেখলÐ চারটা সাত। কাঁটায় কাঁটায় চারটার সময় তার আসার কথা, সে তাই এসেছে। মুহিবের খোঁজ নেই। সে মনে হয় আজও দেরি করবে। আজকের দিনটিতেও সে কি সময়মতো আসবে না? কুড়ি একুশ বছরের একটি মেয়ের পক্ষে একা একা অপেক্ষা করা যে কী যন্ত্রণা তা ক’জন জানে? সেজেগুজে একা দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের দিকে সবাই খানিকটা কৌত‚হল, খানিকটা করুণা এবং খানিকটা তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকায়। বড়রা এমন ভঙ্গি করে যেন দেশ রসাতলে যাচ্ছে। সংসদ ভবনের এই রা¯ত্মাটা এখন বলতে গেলে বুড়োদের দখলে। সকাল বিকাল এদের দেখা যায় হাঁটাহাঁটি করছে। স্বাস্থ্য রক্ষা। যে করেই হোক আরো কিছুদিন বাঁচতে হবে। সমাজের অনাচার দেখে নাক সিঁটকাতে হবে। কিছুতেই মরা চলবে না। রিকশাওয়ালা চা খেতে খেতে তীক্ষè দৃষ্টিতে অরুকে দেখছে। এও এক যন্ত্রণা! একজন কেউ তাকিয়ে থাকলে কিছুতেই স্বাভাবিক হওয়া যায় না। অরু আবার ঘড়ি দেখলÐ মাত্র পাঁচ মিনিট পার হয়েছে। সময় কি পুরোপুরি থেমে আছে? না ঘড়ি বন্ধ? মুহিবকে এতোক্ষণে দেখা গেল। লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটতে ছুটতে আসছে। কোনোদিকে তাকাচ্ছে না। অরু ডাকল, অ্যাই! মুহিব থমকে দাঁড়াল। যেদিক থেকে শব্দ এসেছে সেদিকে না তাকিয়ে সে অন্য দিকে তাকাচ্ছে। কী যে অদ্ভুত কান্ডকারখানা! রাগে অরুর গা জ্বলে যাচ্ছে। আজকের দিনে সে এমন বিশ্রী পোশাক পরে এলো কী করে? কে বলেছে তাকে পাঞ্জাবি পরতে? কটকটে হলুদ রঙের সিল্কের পাঞ্জাবিতে তাকে যে কী বিশ্রী দেখাচ্ছে তা বোধহয় সে নিজেও জানে না। আয়না দিয়ে নিশ্চয়ই নিজেকে দেখেনি। অরু গলা উঁচিয়ে ডাকল, অ্যাই! অ্যাই! মুহিব তাকাল। এবং হেসে ফেলল। সেই হাসি এতোই সুন্দর যে অরু তার দেরি করে উপস্থিত হবার অপরাধ অর্ধেক ক্ষমা করে দিল।  উপন্যাসটিতে এরকমই মায়াময় শব্দের জাল বিছিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এই মায়াকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন শাওন। উত্তরায় মন্দিরা শুটিং হাউজে শুটিং চলছে। শাওন বসে আছেন মনিটরের সামনে। দৃশ্য ধারণের আগে লাইট বসানোর কাজ চলছে। ঘরের ভেতর খাটে বসে আছে একটি ছোট্ট শিশু। জানা গেল শিশুটি রিয়াজ অর্থাৎ মুহিবের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করছে। রাতে কী এক কারণে ভয় পেয়েছে মুহিব। ভয় কাটানোর জন্য এদিক ওদিক তাকাবে এবং দ্রæত চাদর মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরবে। এই পর্যšত্ম দৃশ্য ধারণ করা হবে। লাইট রেডি। দৃশ্য ধারণের আগে শাওনের কণ্ঠে ভেসে এলো এক মায়াময় সম্বোধন। ছোট্ট অভিনেতাকে অভিনয় বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ডাক দিলেনÐ কোথায় আমাদের তামিম ইকবাল। বাবু সোনা, বিছানায় ভালো করে বসো। উপরে বাম দিকে একটু তাকাও। ভয় থাকবে চোখে মুখে। হ্যাঁ, হ্যাঁ… এইতো… গুড ভেরি গুড। থ্যাংকস বাবা সোনা… এমনই আšত্মরিক পরিবেশে কৃষ্ণপক্ষের শুটিং করছেন শাওন। কথায় কথায় বললেন, জানেন কৃষ্ণপক্ষ আমার অনেক পছন্দের উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসটি যখন প্রথম পড়ি তখনই সিদ্ধাšত্ম নিয়েছিলাম সুযোগ পেলে উপন্যাসটির অরু চরিত্রে অভিনয় করব। সময়ের স্রোতে অনেক স্বপ্নও বদলে যায়। আমার স্বপ্নও বদলে গেছে। যে চরিত্রে আমি নিজে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই চরিত্রে পরিচালক হিসেবে অন্যকে অভিনয় করাচ্ছি। সত্যি আমার জন্য এ এক অনন্য ঘটনা।  শেষ খবর। কৃষ্ণপক্ষ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ছবিটি মুক্তি পাবে। এটি হবে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই-এর পক্ষ থেকে দর্শকদের জন্য বিশেষ উপহার।

কৃষ্ণপক্ষ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ভক্তদের জন্য আমাদের উপহার

মেহের আফরোজ শাওন, পরিচালক

03_1আনন্দ আলো: আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আপনি একদিন সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসবেন। হঠাৎ করেই সিনেমা নির্মাণ শুরু করলেন। আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।

মেহের আফরোজ শাওন: একেক মুহ‚র্তে আমার একেক ধরনের অনুভ‚তি হয়। আপনারা যেমন ভেবেছিলেন আমারও তেমনি স্বপ্ন ছিল সিনেমা নির্মাণের। আমাকে ইদানিং অনেকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কেন অভিনয় করেন না? তখন তাদের বলি আমি অভিনয়টাকে এখন ঠিক এনজয় করছি না। অভিনয় করে আনন্দ পাই না। কিন্তু কেন যেন নাটক বানানোর ব্যাপারটা আমি বেশ এনজয় করি। ঠিক তেমনিভাবে সিনেমা বানানোর স্বপ্নটা অনেক দিন থেকেই লালন করে আসছিলাম। প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ২০০৮ সাল থেকে। হুমায়ূন আহমেদের গৌরিপুর জংশন নিয়ে সিনেমা বানাব বলে প্রস্তুতি শুরু হয়। পান্ডুলিপিও চূড়াšত্ম হয়। নির্বাসনের পান্ডুলিপিও আমার হাতে আসে। তবে কৃষ্ণপক্ষ নিয়ে আমার চিšত্মা কখনো এতো ডিটেইল-এ ছিল না। হালকাভাবে চিšত্মা শুরু হয় গত রোজার সময়। খুব সুইট একটা গল্প। এটা নিয়েও তো সিনেমা বানানো যায়। কিন্তু কবে কখন বানাব এ ধরনের কোন চিšত্মা মাথায় আসে নাই। এরকম একটা মুহ‚র্তে চ্যানেল আই থেকে আমার কাছে খবর পাঠানো হয়Ð আপনার সাথে কথা বলতে চাই। একটু আসবেন প্লিজ… চ্যানেল আইতো আমার পরিবারেরই অংশ। আমার মনে হলো সামনে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এ উপলক্ষে হয় টেলিফিল্ম না হয় একটা নাটক নির্মাণের জন্য চ্যানেল আই থেকে ডেকেছে। কিন্তু আমার জন্য যে একটা বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে এটা কোনোভাবেই মাথায় আসে নাই। বিশেষ করে আমাকে সিনেমা নির্মাণের জন্য বলা হবে এটা আমি ভাবি নাই। আমার সাথে ইমপ্রেস ও চ্যানেল আই-এর এমন মধুর সম্পর্ক যে আমি যদি সিনেমা বানাতে চাই তাহলে কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ বলবেÐ মোস্ট ওয়েলকাম। আবার চ্যানেল আই যদি বলে শাওন আপনি একটা ছবি বানান আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে যাব। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি একটা সিনেমা বানানোর অফার পাব তাও আবার মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে বানাতে হবে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে ভাবলাম চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। সাহসের দিক থেকে আমার বুকের পাটা আসলে অনেক বড়। প্র¯ত্মাব পেয়ে ধুম করে রাজি হয়ে গেলাম। মাত্র ৪৫ দিনে সিনেমা শুধু বানান নয় মুক্তিও দিতে হবে। শুটিং এর জন্য কতোদিন পাব? ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রথমে ভাবলাম হুমায়ুন আহমেদের একটা স্ক্রীপ্ট করা আছে। নাম হিমু মামা। সেটা দিয়েই কাজ শুরু করি। চ্যানেল আইকে সেটা বললামও। কিন্তু বাসায় ফিরে রাতে মনের ভেতর শুরু হলো নানা রকমের প্রশ্ন। আমি কি শিশুতোষ সিনেমা দিয়েই সিনেমা নির্মাণের ক্যারিয়ার শুরু করব? আমি যতবারই এর উত্তর খুঁজতে চাইলাম ততবারই উত্তর পেলামÐ না। তাই বলে এটা ভাবা ঠিক হবে না আমি শিশুতোষ সিনেমাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমি আসলে আমার সিনেমা নির্মাণের জার্নিটা হিমু মামাকে দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছিলাম না। শুরু করতে চাচ্ছিলাম একটা মন খারাপ করা ছবি দিয়ে। আমার আইকন হচ্ছে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। আগুনের পরশমনি না। নির্মাতা হিসেবে চাইছিলাম আমার প্রথম সিনেমায় একটা মন খারাপ করা ভাব থাকুক। যেটা গোরীপুর জংশনে আছে যেটা নির্বাসনে আছে। রাতে নানা কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কৃষ্ণপক্ষের কথা আমার মাথায় এলো। পরের দিন চ্যানেল আইতে গিয়ে বললামÐ হিমু মামা নয় আমি কৃষ্ণপক্ষ নিয়ে ছবি বানাব। আমি চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস এর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। যখন যা বলেছি তারা আমাকে কখনো না বলেননি। বরং আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। কৃষ্ণপক্ষের বেলায়ও তাই হলো। চ্যানেল আই থেকে বলা হলোÐ আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী ছবি বানান। কিন্তু সময় কম। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ১৩ নভেম্বরে আমরা ছবিটি মুক্তি দিতে চাই। আপনি কি এই সময়ের মধ্যে ছবি বানাতে পারবেন? উত্তরে আমি তাৎক্ষণিকভাবে বললামÐ হ্যাঁ পারব। তখন কিন্তু আমার মাথায় একবারও আসে নাই এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে আদৌ কি ছবি নির্মাণ সম্ভব। আমরা হুমায়ূন আহমেদের সাথে কাজ করে অভ্য¯ত্ম। তাঁর ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক সময় লাগত। প্রস্তুতি পর্ব সারতেই লেগে যেত অনেক সময়। সেখানে ৪৫ দিনে একটি ছবি নির্মাণের সাহস দেখাচ্ছি। এটা কী আদৌ সম্ভব? ইমপ্রেস আমাকে সাহস যোগাল। বললÐ আপনার লোকজন যদি দিনরাত খাটে। আমাদের লোকজনও দিনরাত খাটবে। আমি সত্যি সত্যি বুকে সাহস পেলাম। আমি যে টীম নিয়ে কাজ করি তার প্রতিটি সদস্য অত্যšত্ম ডেডিকেটেড। চ্যানেল আই-এর লোকজন যদি ২৪ ঘন্টা খাটে তাহলে আমার টীমের লোকজন ৪৮ ঘন্টা খাটবে এই বিশ্বাস আছে। অবশেষে সিদ্ধাšত্ম হলো আমরা ছবি বানাচ্ছি। আমি খুব একটা এক্সসাইডেড না। খুব একটা টেনশনও হচ্ছে না। কিন্তু ছবির মহরতের দিন হঠাৎ আমার টেনশন শুরু হয়ে গেল। যা করতে যাচ্ছি তা কি আদৌ সম্ভব? এখনো ছবির পাত্রপাত্রী চূড়াšত্ম হয় নাই। শুধুমাত্র রিয়াজ ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। চ্যানেল আই থেকে হাসান ভাই কথা বলেছেন। সব কিছু শুনে রিয়াজ ভাই উচ্ছ¦সিত কণ্ঠে বলেছেনÐ হুমায়ূন স্যারের কাহিনী নিয়ে সিনেমা করব না মানে? তানিয়া আহমেদকে ফোন করে বললাম, তুমি কি আমাদের সাথে আছো? সেও উচ্ছ¦সিত। বলল, থাকব না মানে? দুজন শিল্পীকে সাথে নিয়ে ছবির মহরত করলাম। সবাই জিজ্ঞেস করছে ছবির নায়িকা কে? কিন্তু আমরা তখনও এ ব্যাপারে স্থির সিদ্ধাšেত্ম আসতে পারিনি। নিজেরাও জানি না আসলে ছবির নায়িকা কে? মহরতের পর আমরা চ্যানেল আইতে হাসান ভাইয়ের নেতৃত্বে তার রুমে বসে ছবির পাত্রপাত্রী চূড়াšত্ম করার কাজ শুরু করলাম। আমি নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করছি এজন্য যে পাত্রপাত্রীর তালিকায় যাকেই প্রথম চয়েজ করেছি তাকেই পেয়েছি। কোনটাতেই আমাদেরকে সেকেন্ড চয়েজে যেতে হয়নি। রিয়াজ ভাইকে মূল চরিত্রে ভেবেছি তাকেই পেয়েছি। তানিয়াকে ভেবেছি জেবা চরিত্রে তাকেও পেয়েছি। আজাদ আবুল কালামকে যে চরিত্রে ভেবেছি সেই চরিত্রেই পেয়েছি। একটি বিশেষ চরিত্রে ফেরদৌস ভাইয়ের কথা ভেবেছি। তাকেও পেয়েছি। নায়িকা চরিত্রে অভিনেত্রী কে হতে পারে? একথা ভাবার সময় অনেক কিছুই মাথায় এসেছে। একটি শাšত্ম সুন্দর মেয়ে দরকার। যে শিডিউল নিয়ে ঝামেলা করবে না। চরিত্রের প্রতি তার মমত্ববোধ জরুরি। হঠাৎই কেন যেন মাহীর কথা মাথায় এলো। ভাবনাটি আমার মাথা থেকেই এলো। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইমপ্রেসও মাহীকে বেশ পছন্দ করে। কিন্তু আমরা ঠিক স্থির হতে পারছিলাম না। মাহী কি পারবে? ওকে কি কৃষ্ণপক্ষের নায়িকা চরিত্রে মানাবে? কনফিউজড থাকার পরও ওকে ডাকলাম। ঈদের আগের দিন মাহী এলো। ওকে আসার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কেন আসবে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এর ফলে সিদ্ধাšত্ম নিতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। মাহী আমাদের চলচ্চিত্রের ব্য¯ত্ম তারকা। কিন্তু ও এসেছে স্বাভাবিক সাজে। সেজন্য ওকে দেখেই আমি সিদ্ধাšত্ম নিয়ে ফেললাম। আমার দরকার কোমল মায়াবতী একটি মেয়ের। ও যখন দরজা দিয়ে ঢুকছিলো তখনই মনে হলো এই মেয়েই পারফেক্ট। ওকে সবকিছু খুলে বলা হলো। আমরা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস নিয়ে একটা ছবি বানাতে চাচ্ছি। ছবির নাম কৃষ্ণপক্ষ। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ছবিটি মুক্তি পাবে। ছবির নায়িকা চরিত্রে তোমাকে চাই। তুমি কি বল? সবকিছু শুনে আনন্দ উত্তেজনায় মাহী রীতিমতো কাপতে শুরু করলÐ আমি… হুমায়ূন স্যারের ছবিতে অভিনয় করব। আমার অনেক দিনের শখ তার ছবিতে অভিনয় করার। আমি রাজি…। মাহীর কথা শুনে আমি সত্যি সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ছবির বাণিজ্যিক ধারার তারকাদের ব্যাপারে কত কিছুই না ভাবি। তারা সিডিউল নিয়ে ঘাপলা করে। অনেক পারিশ্রমিক চায়। আরো কত কী? কিন্তু মাহী আমাকে কোন প্রশ্নই করল না। বরং সে অতিমাত্রায় উচ্ছ¦সিত। হুমায়ূন আহমেদের ছবিতে অভিনয় করবে এটাই তার কাছে বড় কথা। আর কিছু জানার প্রয়োজন নাই। ওর উচ্ছ¦াস দেখে আমাদের সবার মনে হলো ও পারবে। কিন্তু কতকটা পারবে তা নিয়ে কিছুটা হলেও দ্বিধা ছিল। কিন্তু আনন্দের সাথে বলতে চাই কৃষ্ণপক্ষে মাহী খুব ভালো অভিনয় করেছে। আমরা ওকে নিয়ে বেশ হ্যাপী। অভিনয়ের ব্যাপারে সে বেশ আšত্মরিক। যখন যা বলেছি তাই শুনেছে। এবং শুনেছে বলেই সে ছবিতে অভিনয় ভালো করেছে।

krisnopokkho-picআনন্দ আলো: নির্মাতা হিসেবে এটি আপনার প্রথম ছবি। যেদিন প্রথম শুটিং শুরু করেন কার কথা মনে হয়েছিল।

মেহের আফরোজ শাওন: (একটু ভেবে নিয়ে) সরাসরি একটা কথা বলি। আপনি যা আশা করছেন সেটা না। শুটিং শুরুর সময় কারো কথাই আমার মনে পড়ে নাই। আপনি হয়তো হুমায়ূন আহমেদের কথা বলবেন। উত্তরে বলবÐ হুমায়ূন আহমেদ তো আমাদের সাথেই আছেন। তার দেখানো পথ ধরেই তো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আনন্দ আলো: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনার দুই পুত্রের খবর কী। ওদের মাতো সিনেমা নিয়ে ব্য¯ত্ম… ওরা কি বলে?

মেহের আফরোজ শাওন: (হাসতে হাসতে) হায় আল্লাহ! আমার যে দুটি ছেলে আছে, দুই রাজপুত্র… ওদের কথাতো ভুলেই গেছি (এরপর একটু থেমে বললেন) ঈদের আগের দিন ওদেরকে নিয়ে আমার মায়ের বাড়িতে যাই। সেখানেই ছবির চিত্রনাট্য লেখা শুরু করি। তারপর থেকে কৃষ্ণপক্ষ নিয়েই আমি ব্য¯ত্ম। ছেলেরা তার নানীর কাছে আছে। সেখান থেকেই স্কুলে যাওয়া আসা করছে। ওরা বেশ আনন্দেই আছে। ঈদ শেষ হলেও ওদের ঈদ শেষ হয় নাই। ফোনে আমার সাথে ওদের যোগাযোগ হয়। ওরা (বিশেষ করে বড় ছেলে) বুঝে গেছে বাবা সিনেমা বানানোর সময় যেমন পাগল হয়ে যেতো মাও তেমনি এখন পাগল হয়ে আছে। কাজেই তাকে বিরক্ত করা যাবে না। আর তাই ওদের যা কিছু আবদার, যা প্রয়োজন সবকিছুই হয় নানী না হয় মহারাজকে বলে। মহারাজ মানে ওদের নানা। আমার বাবাকে ওরা মহারাজ বলে ডাকে।

আনন্দ আলো: আপনি একটু আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রসঙ্গ টেনে বলছিলেন একটি সিনেমা বানানোর জন্য তিনি অনেক সময় দিতেন। আর আপনি মাত্র ৪৫ দিনে একটি সিনেমা বানাচ্ছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে কী সব কিছু?

মেহের আফরোজ শাওন: (একটু ভেবে নিয়ে)Ð এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি… কিন্তু প্রশ্নটা নিব না। ছেলেদের প্রসঙ্গে আরেকটু বলি। শুটিং-এর কাজে অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। কখনো ধানমন্ডিতে নিজের বাসা দক্ষিণ হাওয়ায় গিয়ে ঘুমাই। দুইদিন উত্তরায় তানিয়ার বাসায় থেকেছি। কারণ উত্তরা থেকে ধানমন্ডি যাওয়া আসা করা খুবই কঠিন। আবার মায়ের বাসায়ও থেকেছি দুই রাত। একরাতে মায়ের বাসায় গেছি। রাতে সেখানেই থাকব। আমার চেহারা, ব্য¯ত্মতা দেখে ছোট ছেলে ধীর পায়ে এসে বলল, মা আমি কী আজ তোমার সাথে ঘুমাব? নাকি তোমার মাথা এখনো পাগল। শোন… আমি কিন্তু তোমাকে বিরক্ত করব না। এমনি এমনি তোমার পাশে শুয়ে থাকব (বলেই প্রাণখুলে হেঁসে উঠলেন শাওন)।

আনন্দ আলো: তখন আপনি কি করলেন?

4মেহের আফরোজ শাওন: এক্ষেত্রে সব মায়েরাই যা করে আমিও তাই করলাম। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম, হ্যাঁ বাবা তুমি আজ আমার সাথে ঘুমাবে… ল²ী বাবা আমার…।  হ্যাঁ এবার প্রত্যাশার জায়গাটায় আসি। প্রথমে ভেবেছিলাম উত্তরটা দিব না। কিন্তু এবার ভাবছি উত্তরটা দেওয়া দরকার। প্রত্যাশা এই শব্দটার ব্যাপ্তি অনেক বড়। সময় হিসেবে যদি ধরি তাহলে আমরা সেটা পাইনি। আমরা পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারিনি। যেমন আজ সেখানে শুটিং করছি (উত্তরার মন্দিরা) এটা আমার পছন্দমতো হয়নি। আমি যে ধরনের বাড়ি চেয়েছি এটা তা নয়। ঐ যে দেখেন এখনো রঙের কাজ চলছে (মিস্ত্রি তখনো রেলিং-এ রঙ লাগাচ্ছিলেন) আমি যদি একটু সময় পেতাম শুধু বাড়ির রেলিং নয় বাড়িটাকেই আরো বদলে ফেলতাম। আমরা কিন্তু শুটিং হাউসের তেমন কিছুই ব্যবহার করছি না। জানালার পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশ, ঘরের খুটিনাটি জিনিসপত্র যেমন ড্রেসিং টেবিল, দেয়ালের পেইন্টিংসহ প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি প্রপস নিজেরাই যোগাড় করেছি। এবার প্রত্যাশার কথা বলি। ধরা যাক ৬ মাস পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য সময় পাওয়া গেল। তাতেও কি প্রত্যাশা পূরণ হবে? সবকিছু নির্ভর করে ডেডিকেশনের ওপর। আমি মনে করি একবছর কাজ করেও প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। আর যদি প্রত্যাশা পূরণই হয়ে যায় তাহলে তার তো আর স্বপ্নই থাকে না। ঐ যে বললাম ডেডিকেশন। ওটাই আসল কথা। সেটা শতভাগ দিয়েই আমরা সিনেমাটি বানাচ্ছি।

আনন্দ আলো: এই যে একনাগাড়ে রাতদিন শুটিং করে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই স্মরণীয় কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন? অথবা হতে পারে রুদ্ধশ্বাসপূর্ণ কোন ঘটনা… এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

মেহের আফরোজ শাওন: জীবনের প্রতিটি ঘটনাই স্মরণীয়, রুদ্ধশ্বাসপূর্ণ… এই যে একটা সিনেমা মাত্র ৪৫ দিনে বানানো হচ্ছে তাও আবার প্রি-প্রোডাকশনসহ। এটাই তো সবচেয়ে বড় স্মরণীয় ঘটনা। এক অর্থে রুদ্ধশ্বাসপূর্ণও বটে।

আনন্দ আলো: শুটিং চলাকালে উল্লেখ করার মতো কোন ঘটনা…?

3মেহের আফরোজ শাওন: (ভেবে নিয়ে) হ্যাঁ একটা ঘটনার কথা বলি। বেশ ইন্টারেস্টিং। শুটিং যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে হয় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হয় লাইট না হয় ক্যামেরার মাথা গরম হয়ে যায়। ক্যামেরা তখন কাজ করে না। এ নিয়ে আমরা বেশ হাসাহাসি করি। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় কি এমন হয় যে লাইট বন্ধ হবেই। ক্যামেরার মাথা বিগড়াবেই। কোন জ্বীনের আছর পরে আমাদের উপর… অবশ্য এটাকে আমরা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নিয়েছি। সেভাবেই কাজ করছি।

আনন্দ আলো: এবার দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

মেহের আফরোজ শাওন: (একটু ভেবে নিয়ে) দর্শকদের উদ্দেশ্যে কি বলব? আমার কিছু বলার নাই। প্রশ্নটাই আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে… (পরক্ষণেই ভেবে নিয়ে বললেন) প্রশ্নটা যখন করলেন তখন বলি এই যে ছবিটা বানাচ্ছি, কেন বানাচ্ছি…? এই ছবি চারদিকে হৈচৈ ফেলে দিবে, বিরাট কিছু করে ফেলবে, এই ছবি দিয়ে শাওনের একটা নতুন পরিচয় ঘটবে… শাওনের ছবি মানেই এরকম… আমি এতো কিছু ভেবে বানাচ্ছি না। ছবিটা বানাচ্ছি হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত পাঠক ও ভক্ত দর্শকদের জন্য। শুধুমাত্র তারা ছবিটা দেখে যদি সন্তুষ্ট হয়।, আনন্দ পায় তাহলেই আমরা খুশী হবো। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তাঁর ভক্ত পাঠক ও দর্শকদেরকে উপহার দেয়ার জন্য আমরা ছবিটি বানাচ্ছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

শাওনের চোখে স্যারকেই দেখছি!

তানিয়া আহমেদ

TANIA-AHMED-(3)টিভি নাটকে দীর্ঘদিন ধরেই পথ চলছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। পাশাপাশি রয়েছে চলচ্চিত্রেও তার বিচরণ। গেল বছর থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতার খাতায়ও নাম লিখিয়েছেন তিনি। তবে লম্বা সময় পর আবারও চলচ্চিত্রের অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি। ছবিটিতে অভিনয় করছেন তানিয়া আহমেদ। এতে অভিনয় করতে গিয়ে নির্মাতা শাওনের মাঝে হুমায়ূন আহমেদের ছায়া দেখতে পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, শাওনকে নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের উপযুক্ত উত্তরসূরি বলেও আখ্যা দিয়েছেন তানিয়া। তিনি বলেন, ‘স্যার (হুমায়ূন আহমেদ) বেঁচে থাকলে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবেন ভেবেছিলেন। চলচ্চিত্রটির প্রতিটি চরিত্র এবং দৃষ্টিভঙ্গি তিনি শাওনের সাথে শেয়ার করেছেন। স্যার আমাদের যেভাবে ক্যারেক্টার বুঝিয়ে দিতেন ঠিক তেমনি শাওন আমাদের বুঝিয়ে দিলো। মনে হল স্যার তার যোগ্য উত্তরসূরি রেখে গেছেন।’ তানিয়া জানান, শাওন তাদের বুঝিয়েছেন হুমায়ূন কোন চরিত্রটি সম্পর্কে কি ভেবেছিলেন তার আবেগের জায়গাগুলো কি ছিলো সব। শাওনের চোখে হুমায়ূনকে দেখেছেন তানিয়া। তিনি বলেন, ওর চোখে আমি স্যারের জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি, প্রতিনিয়ত অবাক হচ্ছি, এক জীবনে একটা মানুষ এতো ভালোবাসা এতো শ্রদ্ধা ধারণ করে কি করে? হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে অভিনয়শিল্পীদের স্নেহ ভরে নিতেন খোঁজ ঠিক তেমন করেই শাওন যতœ নিচ্ছেন পুরো ইউনিটের।

ছবিটি অনেক ভালো হবে এই বিশ্বাস আছে

রিয়াজ

RIAZ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে মুহিব চরিত্রে অভিনয় করছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘এই মুহ‚র্তে নিজের মধ্যে অসাধারণ এক অনুভূতি কাজ করছে। কারণ দীর্ঘদিন আমি এ রকম একটি ছবির অপেক্ষায় ছিলাম। শুধু তাই নয় স্যার বেঁচে থাকতে (হুমায়ূন আহমেদ) কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করার ফলে তিনি চলে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল হয়তো আর কখনোই এই গুণী সাহিত্যিকের গল্পে কাজ করা হবে না। কিন্তু সেই আক্ষেপ একেবারেই আর থাকলো না। সবচেয়ে ভালো লাগছে ছবিটি স্যারের জন্মদিনে মুক্তি দেয়া হবে শুনে। এটা একজন অভিনেতা হিসেবে সত্যিই অন্যরকম এক ভালো লাগা। আর এই ভালো লাগার জন্যই আমি প্রায় প্রতিদিন ছবির শুটিং সেটে এসেছি। আমার সিক্যুয়েন্সের শুটিং না থাকার সময়ও আমি সেটে গিয়েছি। শাওনের (মেহের আফরোজ শাওন) সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। শট নিয়ে আলাপ হয়েছে। ছবিতে আমাকে দেখা যাবে বারবার নিয়তির কাছে পরা¯ত্ম এক তরুণের চরিত্রে। আমার চরিত্রের নাম মুহিব। যার করুণ পরিণতিতে দর্শক চোখের জল ফেলবেন বলে আমার ধারণা। কেননা, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাসে চরিত্র সৃষ্টির প্রতিভা ঐশ্বরিক। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো দর্শক খুব সহজে আপন করে নেয়। অন্যদিকে নির্মাতা হিসেবে শাওনের কাজের আলাদা একটা ছাপ আছে। সে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে অনবদ্যভাবে উপস্থাপন করছেন বলেই আমার বিশ্বাস।  প্রায় পাঁচ বছর পর ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে নতুন ছবিতে অভিনয় করছেন রিয়াজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করব কি-না তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ভালো চিত্রনাট্যের অভাবে এত দিন বড়পর্দা থেকে দূরে সরে ছিলাম। কিন্তু কখনও বলিনি, চলচ্চিত্রে অভিনয় করব না। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর যখন ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ডাক পেলাম, তখনই মনে হয়েছে, এবার আমার দীর্ঘ বিরতির অবসান ঘটাবে ‘কৃষ্ণপক্ষ’।

মনে হচ্ছে ইন্টারেস্টিং কিছু একটা হবে

ফেরদৌস

প্রবাসী আবরার (ফেরদৌস)। পারিবারিকভাবেই আবরারের সঙ্গে মাহির (অরু) বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু মাহি পালিয়ে গিয়ে রিয়াজকে বিয়ে করে। বিষয়টি পরিবারের কেউই জানেন না। এদিকে আবরার বিদেশ থেকে এসে মাহিদের বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু মাহি তো রিয়াজকে বিয়ে করেই ফেলেছেন। এমনি চরিত্রে ফেরদৌসকে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে দেখা যাবে। এ ছবিতে তাঁর উপস্থিতি খুব অল্প সময়ের হলেও ফেরদৌস তার চরিত্রটি নিয়ে বেশ উচ্ছ¦সিত। ফেরদৌস বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় লেখকদের একজন। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ আমার প্রিয় উপন্যাস। আমাকে যখন ছবির নির্মাতা শাওন (মেহের আফরোজ শাওন) এবং এ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চ্যানেল আই থেকে কাজ করার কথা বলা হলো, আমি অন্য কোনো কিছুই চিšত্মা করিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এটা করতে আমার ভালো লাগবে। এর আগে হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’ ছবির গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন শাওন। ‘আমার আছে জল’ ছবিতে একই কাজ করেছেন তিনি। সে অর্থে তাঁর নির্মাণের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমার কাছে মনে হয়, সে খুব ভালো করবে। সে খুবই ট্যালেন্টেড। তা ছাড়া এ ছবির মাধ্যমে মাহীর সঙ্গেও কাজ করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে, ইন্টারেস্টিং কিছু একটা হবে।’

আমি খুব এক্সসাইটেড!

মাহি

6ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ঢাকাই ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহিকে দেখা গেছে অ্যাকশন ও গø্যামার সব চরিত্রে অভিনয় করতে। তবে এই প্রথম মাহিকে একদম সাদাসিধে বাঙালীর আপন সাজে তার ভক্তরা দেখতে পাবেন। বাঙালির চিরচেনা নারীর একটা গেটাপ নিলেন মাহি। পরনে সুতি শাড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। সাধারণ একটা চেয়ারে বসে আকাশের পানে মুখ তুলে আছেন তিনি।  হুমায়ূন আহমেদ-এর গল্পের নায়িকা তো এমনই হবার কথা! ঠিক মাহি যেমনটি সেজেছেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মেহের আফরোজ শাওন পরিচালিত এই ছবিটির ‘অরু’ চরিত্রে মাহিকে এমন গেটাপে দেখা যাবে। ছবিতে তার বিপরীতে রয়েছেন রিয়াজ ও ফেরদৌস। মাহি বলেন, ‘যেদিন আমার সঙ্গে ছবিটি নিয়ে কথা হয়, ওই দিনই সকালে ওই ছবির মহরত ছিল। বিষয়টি আমি জানতাম না। হঠাৎ করেই চ্যানেল আই থেকে আমাকে ডাকা হলো। সন্ধ্যার পর চ্যানেল আইয়ে গিয়ে দেখি শাওন আপা, তানিয়া আপা ও এস আই টুটুল ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। শাওন আপা আমার কাছে জানতে চাইলেন, এই ছবিতে আমি অভিনয় করব কি না। তারপর তিনি গল্পটি শোনালেন। গল্প ভালো লেগে গেল। মনে হলো, অšত্মত একবারের জন্য হলেও দেশসেরা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের গল্পের ছবিতে কাজ করা উচিত। তাই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম।’ মাহি আরো বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের অনেক বই আগে পড়া হলেও ‘কৃষ্ণপক্ষ’ পড়া ছিল না। তবে এরই মধ্যে বইটি পড়ে ফেলেছি।’  মাহিকে সচরাচর যেমন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তার থেকে এই ছবিতে অনেক ভিন্ন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন মাহি। এ প্রসঙ্গে মাহি বলেন, ‘চেষ্টা করলে সব ধরনের কাজ করা সম্ভব। আমি সেই চেষ্টাই করছি। হুমায়ূন আহমেদের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র দেখেছি। তাঁর এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে নিজের ধারণা আরও সমৃদ্ধ করেছি। সেই ধারণা মাথায় নিয়ে নিজের মতো করে ‘অরু’ চরিত্রটি করতে চাই। বলা যায় এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করার জন্য এই ছবিটি আমার জন্য একটি পরীক্ষামূলক কাজ হবে।’