Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সুন্দর প্রকৃতি সুস্থ জীবন -মুকিত মজুমদার বাবু

বাংলার প্রকৃতিতে কোনো অপূর্ণতা নেই নেই কোনো অপ্রাপ্তি বাংলা সত্যিই সোনার বাংলা এদেশে আছে ছন্দ তুলে চপলা পায়ে ছুটে চলা পাহাড়ি ঝরনা, আছে সাগর পানে ধেয়ে চলা বহতা নদী, আছে সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, আছে জলাভূমির বন রাতারগুল, আছে সাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা প্রায় শতাধিক দ্বীপ চরাঞ্চল আছে পাহাড়, আছে পাহাড়ের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য বনাঞ্চল আছে, বন্যপ্রাণী আছে, আরো আছে পৃথিবীখ্যাত বেঙ্গল টাইগার আছে শিল্পীর তুলিতে আঁকার চেয়েও সুন্দর আমাদের গ্রাম গ্রামের কথা মনে হতেই গ্রাম ছেড়ে অনেক দূরে থাকা মানুষদের বুকের ভেতর কেমন টনটন করে ওঠে কর্মসূত্রে আপন গ্রাম ছেড়ে, গ্রামের সৌন্দর্য ছেড়ে, মায়ের স্নেহ ছেড়ে, গ্রামের মানুষদের ভালোবাসা ছেড়ে দূরে আছে অনেকেই ইচ্ছে করলে ছুটে যাওয়া যায় না শেকড়ের টানে পথ রুখে নানা বাধা কিন্তু সকল বাধাবিপত্তি পার হয়ে ঈদের সময় মানুষ কিন্তু ঠিকই ফিরে যায় প্রকৃতির কাছে, ফিরে যায় মায়ের কাছে, গ্রামের মানুষের স্নেহমায়ার বন্ধনের কাছে কোনো বাধাই সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না কর্মক্লান্ত প্রাণ হাঁসফাঁস করে কর্ম থেকে কদিনের জন্য অবসর নিতে মাথা ফাঁকা করে ঈদের আনন্দকে জমিয়ে উপভোগ করতে অধিকাংশ মানুষ গ্রামে ফিরলেও কোনো কোনো পরিবার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে হৃদয়ে ধারণ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায় ঈদের আনন্দের পাশাপাশি তারা চিত্তাকর্ষক স্থানগুলো দেখে মুগ্ধ হয় প্রকৃতির কাছে গেলে মানুষ শান্তি পায়, শান্ত হয় প্রকৃতি সবার পালক আমাদেরকে প্রকৃতি যেমন ঠাঁই দিয়েছে, তেমনি সবাইকেই প্রকৃতি ঠাঁই দিয়েছে তার বুকে মানুষ, পশুপাখি, গাছগাছালি, ফুল, লতাপাতা, নদী, সাগর সবই প্রকৃতির অংশ প্রকৃতিতে থেকে আনন্দ নিতে গিয়ে অনেক সময় আমরাই প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করছি বিভিন্ন সংরক্ষিত স্থান দর্শনের সময় স্থান সম্পর্কে টাঙিয়ে রাখা কিছু সাবধানতা মেনে চলা প্রত্যেক পর্যটকেরই কর্তব্য ভ্রমণ যদি পরিবেশবান্ধব না হয় তাহলে ওই স্থানের সৌন্দর্য দিনে দিনে হারিয়ে যাবে এমন একদিন আসবে যেদিন ওই স্থানের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে আমরা যদি সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন কিংবা কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের কথা উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করি তাহলে বলতে হয়অসচেতনতা, অজ্ঞতা, হেঁয়ালীপনাসহ নানা কারণে অনেক পর্যটক প্রতিনিয়তই আমাদের এই অমূল্য সম্পদের ক্ষতি করে চলছে দর্শনীয় স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন আনন্দের সংবাদের না হয়ে উঠছে দুঃসংবাদ যেমন দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক প্রতিদিন জাহাজে করে যাতায়াত করছে অবাধে গড়ে উঠছে হোটেলমোটেলসহ দোকানপাট সেন্টমার্টিন প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ হওয়ার কারণে ইটপাথরের বহুতল ভবন নির্মাণ দ্বীপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রবাল তোলা বিক্রি নিষেধ থাকলেও অবাধে তা বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার নৌকার নোঙর প্রবালের ওপরে ফেলার কারণে ভেঙে যাচ্ছে প্রবাল কলোনী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো পরিবেশ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য দ্বীপের সৌন্দর্য এবং স্বকীয়তা দুটোই ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত আবার অসচেতন পর্যটক চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, কোমলপানীর ক্যান ইত্যাদি যথেচ্ছ ফেলে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করছে সৈকত সাগরের পানি রাতে উইচ্চঃস্বরে গানবাজনা আর হৈহুল্লোড়ের কারণে ভয়ে অনেক প্রাণী দ্বীপের কাছ ঘেঁষছে না বিশেষ করে বিশ্বের দুর্লভ প্রজাতির অলিভ রিডলে টার্টল (জলপাইরঙা কচ্ছপ) ভয়ে ডিম না পেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে ব্যাহত হচ্ছে তাদের বংশবিস্তার

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত। উত্তাল ঢেউ আর স্নেহময় বাতাসের পরশ ছুঁয়ে যায় দেহমন। পায়ে এসে মাথা নত করা ঢেউগুলো অন্য রকম এক ভালোবাসার শিহরণ জাগায়। দৃষ্টিনন্দন সেই সমুদ্রসৈকতও পিছিয়ে নেই দূষণের কবল থেকে। সেখানেও একই চিত্র। প্রতিদিন হাজার হাজার সমুদ্রসুধা পান করতে আসা পর্যটক নানাভাবে সমুদ্রসৈকত সমুদ্রের পানিকে দূষিত করছে। সাগরে মাছ ধরা জেলেদের অসচেতনতা কুসংস্কারের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মা কচ্ছপ। তারা কচ্ছপকে অপয়া মনে করে জালে আটকে গেলে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আবার মা কচ্ছপ ডাঙায় ডিম পাড়তে এলে অনেক সময় বেওয়ারিশ শিয়ালকুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়া সমুদ্রসৈকতে চলাচলকারী মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ির চাকার নীচে পিষ্ট হয়ে কাঁকড়া, কচ্ছপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী মারা যায়। পর্যটকরা হাতে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে সমুদ্রসৈকতে। তবে মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌকা এবং মালবাহী জাহাজ থেকে ফেলা বর্জ্যের কারণে সাগর দূষিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি দূষণে পিছিয়ে নেই সুন্দরবন, কুয়াকাটা, মনপুরাসহ বিভিন্ন দ্বীপ, চট্টগ্রামের পাহাড়, রাতারগুলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান

মানুষ নিজেকে বারবার আবিষ্কার করে প্রকৃতির কাছে গিয়ে। প্রকৃতি পালনকর্তা। সেই পালনকর্তা যদি অসুস্থ হয় তাহলে তার প্রভাব পড়ে সমগ্র মানব জাতির ওপর। আর তার পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ

                লেখক: চেয়ারম্যান, প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন