সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
রেজানুর রহমান
এলো কি সিনেমার নতুন দিন? পরিবেশ, পরিস্থিতি দেখে তো সেরকমই মনে হচ্ছে। বোধকরি অন্ধকার কেটে গেছে। আলোর ঝলক দেখা যাচ্ছে আমাদের সিনেমা জগতে। সিনেমা হলের দিকে যেতে শুরু করেছে মধ্যবিত্ত পরিবার। যারাই মূলত আমাদের সিনেমার দর্শক। বিশেষ করে গত এক মাসে মুক্তি পাওয়া কমপক্ষে ৩টি নতুন সিনেমাকে ঘিরে আমাদের সিনেমা জগতে একটা আলোড়ন দেখা দিয়েছে। সিনেমা ৩টি হলোÑ যথাক্রমে আলোচিত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ মহানায়ক, পরিচালক আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছোটপর্দার আলোচিত নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর ‘আলতাবানু’। ৩টি ছবির ব্যাপারেই দর্শক ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। মনপুরাখ্যাত গিয়াস উদ্দিন সেলিম এবার নির্মাণ করেছেন ‘স্বপ্নজাল’ নামে নতুন ছবি। মুক্তির আগেই ছবিটিকে ঘিরে দর্শকের প্রত্যাশার অনেক ডালপালা ছড়িয়ে যায়। অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন মনপুরা আর স্বপ্নজাল-এর মধ্যে পার্থক্য খোঁজার জন্য। কারণ মনপুরার মাধ্যমে গিয়াস উদ্দিন সেলিম দর্শকের কাছে একটা ভরসার জায়গা তৈরি করেছিলেন। সে কারণে ‘স্বপ্নজাল’ মনপুরাকে অতিক্রম করতে পারল কিনা এটা দেখার জন্যও অনেক দর্শক ইতোমধ্যে হলে গিয়েছেন। স্বপ্নজাল দেখার পর অনেকেই বলেছেন হ্যাঁ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম মনপুরাকে অতিক্রম করতে পেরেছেন। ‘প্রেম’ ছিল তার প্রথম ছবি মনপুরার মূল উপজীব্য। স্বপ্নজাল-এও প্রেমই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই ছবির কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র পরিমনি ও ইয়াশ রোহান দর্শকের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়েছেন বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পরিমনি আমাদের বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। সেই তুলনায় ইয়াশ রোহান একেবারেই নতুন। কিন্তু পর্দায় তাদের প্রেমের রসায়ন বেশ জমেছে। দর্শক পছন্দ করেছে দু’জনকেই।
মহানায়ক আলমগীর। সিনেমার মধ্যেই যার বসবাস। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি নির্মাণ করেছেন নতুন ছবি ‘একটি সিনেমার গল্প’। আলমগীরের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন চম্পা, আরেফিন শুভ ও কলকাতার বিশিষ্ট অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা। আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ছবিটি দেখার পর অনেক দর্শক বলেছেন, দীর্ঘ বিরতির পর একটি চমৎকার সিনেমা দেখলাম। দর্শকের প্রত্যাশা মহানায়ক আলমগীর আবার যেন দীর্ঘ বিরতিতে না যান। তিনি যেন সহসাই নতুন সিনেমা নির্মাণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধু দর্শক নয়, উপমহাদেশের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লাও এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন। ‘একটি সিনেমার গল্প’ মুক্তির আগে ঢাকা ক্লাবে এক প্রিমিয়ার শোতে রুনা লায়লা বলেছেন, আলমগীর সিনেমার মানুষ। ও সিনেমা বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকলে খুব আনন্দে থাকে। আমি চাই আলমগীর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন সিনেমা বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। মহানায়ক আলমগীর অবশ্য নতুন সিনেমা নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো ঘোষণা এখনও দেননি। তবে আশা করা যাচ্ছে তিনি অচিরেই এ ব্যাপারে প্রচার মাধ্যমে কথা বলবেন। নতুন ছবি নির্মাণের ঘোষনা দিবেন।
ছবির নাম ‘আলতাবানু’। গুণী নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর প্রথম সিনেমা। ইমপ্রেস-এর এই ছবিটি ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে এবং ইতোমধ্যে দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আলতাবানু দেখার পর অনেক দর্শক মন্তব্য করেছেন, গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত এমন সুন্দর সিনেমা যত বেশি নির্মিত হবে সিনেমা দেখার ব্যাপারে দর্শকের আগ্রহও তত বেশি বাড়বে। ‘আলতাবানু’ একটি সুন্দর সিনেমা হিসেবে নানা কারণে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। ছবির কাহিনী লিখেছেন, বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। সংলাপ লিখেছেন এসময়ের আলোচিত নাট্যকার বৃন্দাবন দাস। অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা মামুনুর রশীদ, দিলারা জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জাকিয়া বারী মম ও আনিসুর রহমান মিলনসহ অনেকে। ছবিতে রয়েছে শ্রæতি মধুর বেশ কয়েকটি গান। ছবিটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
পরপর ৩টি ভালো সিনেমা মুক্তি পাবার পর আমাদের সিনেমা দর্শকের মাঝে একটা পজিটিভ সাড়া পড়েছে। পারিবারিক ভাবে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সেই পুরনো ঐতিহ্য যেন ফিরে এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি ভালো সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ইমপ্রেস প্রযোজিত রবীন খানের প্রথম সিনেমা ‘মন দেব মন নেব’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
যে মুহূর্তে দেশে ভালো সিনেমা নির্মাণের একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেই মুহূর্তে সারাদেশে হল সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এক সময় ১৩শ সিনেমা হল ছিল। হল সংখ্যা কমতে কমতে ২শ’র নীচে নেমে এসেছে। ফলে ব্যাপক পরিসরে নতুন ছবি মুক্তি দেয়া যাচ্ছে না। একটা সময় ছিল যখন নতুন ছবি সারাদেশে একযোগে মুক্তি পেতো, আড়াইশ থেকে তিনশ সিনেমা হলে এক যোগে চলত একটি নতুন সিনেমা। বর্তমান সময়ে যা কল্পনাই করা যায় না। তাছাড়া প্রতিক‚ল পরিবেশকে উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে সিনেমা হল গুলো টিকে আছে তার অধিকাংশই সিনেমা প্রদর্শনের উপযোগী নয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, দেশে ভালো সিনেমা নির্মাণের একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দরকার সিনেমা প্রদর্শনের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনা। কারণ ভালো সিনেমার জন্য ভালো সিনেমা হলেরও দরকার।