Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সবার আগে দরকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাথরুম

অনেকে ঘরের বাথরুমের দিকে মোটেই নজর দেন না। তাদের ভাবনাটা এমনÑ বাথরুম তো গোপন একটা কক্ষ। তার আবার যতেœর প্রয়োজন কি? অথচ এটি ভুল ধারণা। কারণ একদিকে ড্রয়িংরুম অন্যদিকে বাথরুমের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ওপর পরিবারের সৌন্দর্যও অনেকাংশে নির্ভর করে। একটা উদাহরণ দেই তাহলে বিষয়টা বোঝা সহজ হবে। অপরিচিত কারও বাসায় গেছেন। ড্রয়িংরুমে আপনাকে বসতে দেয়া হলো। ড্রয়িংরুমের পরিবেশ দেখে আপনি খুব খুশি। বেশ সাজানো গোছানো। মনে মনে ভাবলেনÑ এদের বেশ রুচি আছে। হঠাৎ আপনার পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বাথরুমে যাওয়া দরকার। বাসার লোকজন আপনাকে বাথরুম দেখিয়ে দিলো। আপনি হাসি মুখে বাথরুমে ঢুকলেন। খানিকবাদে মন খারাপ করে বেড়িয়ে এলেন। একটু আগে পরিবারটির রুচিবোধ নিয়ে প্রশংসা করছিলেন। এবার মনে মনে বিরূপ মন্তব্য করলেনÑ এদের থেকে ‘ছোটলোক’ জীবনে আর দেখেননি। ঘরের বাথরুম কেউ এভাবে নোংরা করে রাখে। মেঝে স্যাঁত স্যাঁতে, অপরিষ্কার। কমোডে হলুদ দাগ পড়ে আছে। ফ্লাশ ঠিকমতো কাজ করে না।
অথচ সবার আগে চাই পরিষ্কার বাথরুম। একথা মানতেই হবে বাসার অন্যান্য ঘরের চেয়ে বাথরুম অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। তাই সবার আগে জরুরি সব সময় ঘরের বাথরুম পরিষ্কার রাখা। বাথরুম নিয়মিত ব্যবহারের পর প্যান বা কমোডে হলুদ দাগ পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত লিকুইড ক্লিনার দিয়ে বাথরুমের প্যান বা কমোড পরিষ্কার করা উচিত। বাথরুমের কমোড অথবা প্যানে সব সময় এন্টিসেফটিক লিকুইড ব্যবহার করা ভালো। তানাহলে কমোড অথবা প্যানে এমনকি ফ্লোরেও জীবানু বাসাবাঁধে। আর বাথরুমে জীবাণু থাকা মানেই আপনি যে কোনো সময়ই অসুস্থ হতে পারেন। ভাবছেন কীভাবে বাথরুম ব্যবহার করবেন? ব্যাপারটা খুবই সহজ। আসুন জেনে নেই বাথরুম পরিস্কারের পদ্ধতি।
বাথরুম পরিস্কারের আগে কমোডের ভেতরে ও বাইরের অংশে লিকুইড ছিটিয়ে দিন। কমোড পরিষ্কার করার সময় গোলাকৃতির ব্রাশ এবং প্যান এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন লম্বাকৃতির ব্রাশ। ব্রাশ গোল করে ঘুরালে কমোড পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। আর ব্রাশ যতটা গভীরে নিয়ে যেতে পারেন ততই ভালো। কমোড অথবা প্যানে লিকুইড ঢালার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর পানি ঢেলে পরিষ্কার করুন। কমোডে লিকুইড দেয়ার পর কমপক্ষে ১৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করা ভালো। কমোডের হলুদ দাগ অতিমাত্রায় হলে সারারাত লিকুইড ঢেলে রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে ফ্লাশ করলেই দেখবেন দাগ অনেকটা দূর হয়ে গেছে। বাথরুম দেখতে ঝকঝকে দেখাচ্ছে।
চাইলে আপনি আরও আরেকটি কাজ করতে পারেন। কমোড পরিস্কারের জন্য প্রথমে কমোডের কিনার বরাবর উপরের দিক থেকে লিকুইড ঢালুন যেন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব দিকে ছড়িয়ে যায়। এভাবে অন্তত এক ঘণ্টা রেখে দিন। এতে খুব ভালো ফল পেতে হলে সারারাত কমোডে লিকুইড রেখে দিন। সকালে ফ্ল্যাশ করার আগে কমোডের ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে সব দিকে ঘষে নিন। কমোড ফ্ল্যাশ করে ধুয়ে দিন। একবারে পরিষ্কার না হলে একাধিক বার ফ্ল্যাশ করুন। অতিরিক্ত ফসফরিক এসিড টয়লেটের জীবাণু, নোংরা ও কুৎসিত দাগগুলো দূর করে দেবে এবং ফসফরিক এসিডের কারণে কমোডের লাল দাগ অনেকটাই কমে যাবে এবং কমোড ঝকঝকে তকতকে দেখাবে।

কমোড পরিস্কারের কিছু টিপস

Toilet বাথরুমের যে র্যাকে সাবান, টুথপেস্ট, শেভিং ক্রিম, ব্রাশ ইত্যাদি রাখেন পরিস্কারের সময় সে অংশটির কথা ভুলে যাবেন না। বেসিন বা বাথরুম পরিস্কারের সময় সেটাও পরিষ্কার করবেন। ফ্ল্যাশ ট্যাংকে বেশি পানি ভরে রাখবেন না।
 বাথরুমের জানালায় কাচ থাকলে ভালো, বাইরে থেকে আলো ঢুকতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাচ যাতে নিয়মিত পরিষ্কার হয় সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।
 বাথরুমের আলো বাতাস সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকুন। বাথরুমের টিউব বা ইলেকট্রিক বাল্ব খুলে পরিষ্কার করে তাতে কয়েক ফোঁটা পারফিউম লাগিয়ে দিন। বাথরুমে উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়বে তো বটেই, সুগন্ধও ছড়াবে। বাথরুমের ভেতরে সাদা রং করা থাকলে অনেক পরিচ্ছন্ন দেখায়। ফ্লোর থেকে অন্তত সাত ফুট উঁচু পর্যন্ত টাইলস বা পাথর থাকলে তা পরিষ্কার করা সহজ হয়।
 বাথরুমে বেসিন পরিষ্কার করার সময় কলের নিচ, কোণ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করা উচিত।
 বাথরুম যদি আয়তনে ছোট হয় তাহলে হয়তো সম্ভব নয়, না হলে গোসলের জায়গাটা টয়লেট থেকে সামান্য দূরে করা হলে ভালো। তাতে টয়লেটের ব্যবহার করা পানির ছিটে পড়বে না।
পরিষ্কার বাথরুমের পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাথরুমের প্যান বা কমোডের চারপাশের ফ্লোরে লিকুইড টয়লেট ক্লিনার ছিটিয়ে কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
 বাথরুমের ভেতরে দেয়ালের কোণে কিংবা বেসিনের নিচে জমে থাকা ঝুল সম্পর্কে অনেকে উদাসীন থাকেন। বাড়ির অন্যান্য ঘরে ঝুল পরিস্কারে যতটা মনোযোগী বাথরুমের ভেতরে জমে ওঠা ঝুল পরিস্কারে আপনাকে ততটা সিরিয়াস হওয়া উচিত।
 কমোডের লাল দাগ দূর করার জন্য কিছুটা লিকুইড টয়লেট ক্লিনার কমোডের প্যানে ফেলে সারা রাত রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে ফ্ল্যাশ করলেই দেখবেন দাগ দূর হয়ে গেছে।
নিয়মিতভাবে কমোড লিকুইড টয়লেট ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার। কতবার পরিষ্কার করতে হবে তা নির্ভর করছে বাথরুম কতজন ব্যবহার করছেন তার ওপর। যদি বাথরুম বেশি লোকজন ব্যবহার করে তাহলে লিকুইড ক্লিনার দিয়ে কমোড ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহারের পর ধুয়ে-মুছে বাথরুম শুকনো করে নিন, অন্যান্য ঘর যেভাবে পরিষ্কার করেন। টয়লেটের শুধু ভেতরে পরিষ্কার করলে চলবে না। তার বাইরের অংশও পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখা জরুরি।
বাথরুমে অবশ্যই সুগন্ধি রাখবেন। এতে দুর্গন্ধ দূর হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ও শুকনো ফুল পাওয়া যায়। একটি পাত্রে ফুল সাজিয়ে বাথরুমের শুকনো স্থানে রেখে দিন। দেখবেন বাথরুমের গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
কারণ সারা সপ্তাহ ব্যবহারে গোসলের পানি, কাপড় ধোয়া পানি ছিটে টাইলস অপরিষ্কার হয়ে থাকে। বাজারে অনেক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল লিকুইড পাওয়া যায়। তা দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন মেঝে ও দেয়াল।
ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বাথরুম থেকে শুরু করে রান্নাঘরসহ সব রুমেই মোজাইক ও টাইলস শোভা পায়। মেঝের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে তখনই যখন এর সঠিক যতœ নেয়া হয়। মেঝে পরিষ্কার ও ঝকঝকে রাখতে লিকুইড ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
মোজাইক করা মেঝে প্রতি ৬ মাস অন্তর এসিড ওয়ার্ম করা জরুরি। এতে মেঝের ফ্যাকাশে ভাব দূর হবে। মেঝে ঝকঝক করবে।
বাথরুমে বালতি, মগ, ঝাড় স্যান্ডেল দিয়ে ভরিয়ে রাখবেন না। এসব জিনিস ব্যবহারের পর বাথরুমের বাইরে রাখুন। এতে বাথরুম পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে, পরিবেশও সুন্দর থাকবে।
দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বেসিনের ওপর পানি পড়ে হলুদ দাগ হয়ে যায়। গুঁড়া সাবানের সঙ্গে লিকুইড মিশিয়ে বেসিন পরিষ্কার করতে পারেন।
বাথরুমের চারপাশ প্রতিদিন পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিন চারপাশের টাইলস ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে মুছে নিন।
সাধারণত মেঝের নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে হাঁটাচলা বেশি হয় সেখানে ময়লা বেশি হয়, তাই সে সব স্থানে প্রতিদিন পানি আর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
বর্ষা মৌসুমে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন পানিতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল লিকুইড ক্লিনার মিশিয়ে সিনথেটিক ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে মেঝে পরিষ্কার করা ভালো। মোজাইক সাধারণত সিরামিক বা পোরসেলিনে তৈরি হয়। তাই মোজাইকের ঘর পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে সব সময় প্লাস্টিকের ব্রাশ ব্যবহার করুন। স্টিলের ব্রাশ বা মাজুনি ব্যবহার করলে তাতে ঘরের মেঝেতে দাগ পড়ে যেতে পারে।
অনেকে কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করেন, এটা উচিত নয়। বরং বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্লোর ক্লিনার পাওয়া যায় তা দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করাই উত্তম।
মেঝে পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখুন মেঝের কোণা যেন বাদ না যায়। কোণাগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। কারন এতে প্রচুর ময়লা জমে থাকে।
মোজাইক মেঝেতে বেশি ময়লা জমে গেলে মেঝে পরিষ্কারের জন্য কিছু ডিটারজেন্ট হাল্কা গরম পানিতে মিশিয়ে সিনথেটিক ব্রাশ ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
তো, কি মনে হলো? বাথরুম পরিষ্কার রাখা কি খুবই কঠিন? আসলে বিষয়টি মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। এক ভদ্রলোকের কথা বলে লেখাটি শেষ করি। একটি বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা। অথচ হাঁটাচলা, ব্যবহারে খুবই সাধারণ। প্রায় প্রতিদিনই গোসলের আগে তিনি অনেকটা আনন্দ-ফুর্তির স্টাইলে বাথরুম পরিষ্কার করেন। যার ফলে পরিবারের অন্যরাও এ ব্যাপারে বেশ সচেতন। একটি তথ্য জানিয়ে রাখি এই পরিবারটিতে সাধারণত রোগ বালাইয়ের ঝামেলা কম। কেন? ঐ যে ওরা সব সময় বাথরুম পরিষ্কার রাখে। জীবানুকে ঢুকতেই দেয় না।