Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শ্রীদেবীর চলে যাওয়া এবং নায়িকাদের সৌন্দর্য্যকথা

তানভীর তারেক:

Tanvir-Tareqমাত্র ৫৪ বছর বয়সে মারা গেলেন মোহনীয়া নায়িকা শ্রীদেবী কাপুর। গণমাধ্যমের হাজার কৌতুহল নিয়ে যখন শ্রীদেবীর মৃত্যুর কারণ খোঁজা হচ্ছে। তখন দুবাই পুলিশ জানিয়েছেন ‘অতিরিক্ত মাদকের প্রভাবের কারনে বাথটাবে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে  [ সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান ]।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে এই রিপোর্ট লেখা থেকেও আরো দুই তিনদিন লাগবে।

[ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া ]

শ্রীদেবীর এই আলোচিত তদন্ত একসময় নিশ্চয়ই সুরাহা হবে। কিংবা ডায়নার মতো কোনো রহস্যজাল নিয়েও এটি একটি মিথ হিসেবে রয়ে যেতে পারে।

আজ আমার লেখার বিষয় সেই তদন্তের কার্যকারণ নয়। তবে সুপারস্টাররা সবসময় যে কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন সেটিই সবচেয়ে বড় বিষয়। দুবাইয়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় দৈনিক খালিজ টাইমস টানা দুদিন ধরেই শ্রীদেবীর এই ঘটনাটিকে শীর্ষ খবরে রেখেছেন। যেখানে রিপোর্টার নিজেই নানান রহস্যের উপাত্ত খুঁজছেন। সেখানে শ্রীদেবীর ক্যারিয়ার নিয়ে দুবাই গনমাধ্যম বলছে বারবার, শ্রীদেবী সর্বশেষ যে দুটি সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন তার কথা। এটা কিন্তু পর্যবেক্ষণের বিষয়। কারণ শ্রীদেবী তার নতুন মার্জিত লুকে নতুন ছবি দুটি দিয়ে এ সময়ের জেনারেশনের ভালোবাসা জুগিয়েছিলেন নতুন করে। এ কারনে দীর্ঘ বিরতি নেবার পরও নতুন করে এই জেনারেশণের দর্শকদের কাছে দূরের শ্রীদেবী মনে হয়নি।

শ্রীদেবী উপাখ্যান হয়ত বলিউডে এখন স্মৃতিকাতর গল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবে ক্রমশ। কিন্তু শ্রীদেবীর  ১৩ বছর অবসর নেবার পর তিনি যেভাবে কামব্যাক করেছিলেন, তা কিন্তু এ সময়ের যে কোনো অস্থির নায়িকার জন্য শিক্ষনীয়। আমরা যখন বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত দেখি দেশীয় কোনো নায়িকা ৬/৭ মাস অবসর নিলেই অস্থির হয়ে যান। মনে মনে হাতড়ে বেড়ান এই বলে ‘হায় হায় আমি তো হারিয়ে গেলাম !’

কিংবা কেউ কেউ মাঝে সাংসারিক বিরতি নিয়ে পরবর্তীতে কামব্যাক করার জন্য খোলামেলা ফটোশুটে অংশ নেন। এতে তারা কি প্রমান করার চেষ্টা করেন এটা অবশ্য বোধগম্য নয়। তারা ভুলেই যান প্রত্যেক বয়সেরই একটা নির্দিষ্ট সৌন্দর্য আছে।

আমার এই কথার সাথে শ্রীদেবীর প্রাসঙ্গিকতা এখানেই যে, শ্রীদেবীর কামব্যাক নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখন, কিন্তু তরুনী নির্মাতা গৌরি সিন্দের সাথে যখন ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ নামের চলচ্চিত্রের আলাপে বসেছিলেন। তখন নির্মাতা শ্রীদেবীকে খুশী বা প্রলুব্ধ করতে ফ্ল্যাশব্যাকে শ্রীদেবীর তারুন্য দেখানোর প্রস্তাব দিলেন ছবিতে। শ্রীদেবী তখনই না করে দিয়ে বলেছিলেন,

‘আমি এখনকার বয়সের বিউটি নিয়েই দর্শকদের সামনে আসতে চাই।’ একথা সব নায়িকারা কিন্তু বলার মনোবল রাখেন না!

এখানেই আলাদা থেকেছিলেন শ্রীদেবী। আর এই আলাদা থেকেছিলেন বলেই ৫৪ বছর বয়সী ভারতের প্রথম সুপারস্টারের প্রতি এই জেনারেশনের কাছেও সমান কৌতুহল বর্তমান। সম্প্রতি শ্রীদেবীর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী মাধুরী দিক্ষিতকে এক ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক।

প্রশ্নটি এমন ছিল-

শ্রীদেবী-মাধুরী, আপনারা দুজনাই কিছু সময় বিরতি নিয়ে কামব্যাক করলেন। অথচ সাফল্যের পাল্লাটা শ্রীদেবীই বেশী পেলো? এটা কী স্বীকার করেন আপনি?

মাধুরী সেই বাস্তবতা স্বীকার করেই বলেছিলেন, ‘চরিত্র আর লুকের ব্যাপারে বরাবরই শ্রীদেবী অনেক সচেতন। সেদিক দিয়ে আমি ওকে এগিয়েই রাখবো।’

জীবিত অবস্থায় সাংবাদিকদের খুব অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলেই ক্ষেপে যেতেন শ্রীদেবী। তার ২০১৭ তে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মম’ ছবির ক্যাম্পেইনের এক ইন্টারভিউতে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন।

মাত্র ৪ বছর আগে বলিউডে শ্রীদেবীর প্রত্যাবর্তন ও অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক ভারতীয় তরুন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ম্যাম সবাইতো আপনার বয়স নিয়ে কনফিউজ হয়ে যাবে। কেউ তো হিসেব করবে না যে আপনি ৪ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেছিলেন।’

শুনে বেশ রেগে গিয়েছিলেন। কপোট রাগ নিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, আমি তো এসব করতে চাইনি। সব বনী’র বুদ্ধি। আমি আজীবন একই রকম থাকতে চাই। কত বছরের হিসেব করলেই তো দর্শক বয়স মেপে দেখতে শুরু করবে!’

সত্যিই তাই। বয়সকে যেন আটকে ফেলেছিলেন শ্রীদেবী। তবুও মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হলো বলিউডের প্রথম সুপারস্টার নায়িকা। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি  রাত সাড়ে ১১টায় দুবাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর। ননদের ছেলে মোহতি মারওয়ারের বিয়েতে অংশ নেবার জন পরিবার নিয়ে শ্রীদেবী পাড়ি দিয়েছিলেন দুবাইতে। কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল না। বেশ খোশমেজাজইে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন, স্বামী বনি কাপুর ও কন্যাকে সাথে নিয়ে। কিন্তু সেই আনন্দক্ষণ শেষ না হতেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কেড়ে নিলো শ্রীদেবীর প্রাণ। হতবাক তাই গোটা বলিউড ইন্ডাষ্ট্রি। কৌতুহলী গোটা বিশ্ব।

এটাকে মনে রাখা উচিত আজকের বাঁধন, পপি বা সমসাময়িক তারকাদের। কারণ তারকাজীবনে ‘আবেদনময়ী’ শব্দটা যে সব বয়সের জন্য উৎকর্ষের ক্যানভাস নয় এটা বুঝতে হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পঞ্চাশোর্ধ এক নায়িকাকে কড়া মেকআপে দেখে খানিক উৎকন্ঠিত অস্বস্তি নিয়ে বললাম,‘এখনও কী কলেজ ছাত্রীর মতো করে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে করবেন?’

তিনি আমার কথার মর্মার্থ বুঝলেন,‘ বললেন, ‘দেখুন, আমাদের জন্য চরিত্র কে লিখবে? বলিউডে বিদ্যা বালানের মতো চরিত্র নিয়ে ছবি করলে আমরাও তো ফাটাইয়ে দিতে পারবো। শ্রীদেবীর মম’ এর মতো ছবি করার কথা এদেশে কে ভাবে ?

সত্যিই তাই ! নায়িকাদের এই যে বিভিন্ন বয়সের সৌন্দর্য্যকে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব যেমন পরিচালকের। তেমনি চল্লিশ ছুই ছুই নায়িকারাও যখন বুদ্ধিবিবর্জিত হয়ে ষোড়ষীদের মতো করে ফটোগ্রাফারের গ্রাফিক্স-এর কেরামতির মাধ্যমে হটেস্ট হবার জন্য প্রানান্ত প্রচেষ্টা করতে থাকেন, তখন আর কিছু বলার থাকে না। সেক্ষেত্রে আবারও আমরা শ্রীদেবীতে ফিরি। কারণ বয়সের ভিন্নমাত্রিক সৌন্দর্যে আপনি প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলে শেষ বয়সে বড় কৌতুহলের আসনে থাকতে পারবেন না সব জেনারেশনের দর্শকদের কাছে। তখন বারবার স্মৃতি হাতড়ে খুঁজতে হবে হারানো সুখস্মৃতি বেদনার্ত কল্পনায়! সেটা অনেক কষ্টের, হাহাকারের!

লেখক : কথাসাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক, উপস্থাপক, সংবাদকর্মী