Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শীতের সুরক্ষা এবং এক কাপ নারিকেলের দুধ…

শীত তো চলেই এলো। গরম গরম পিঠা পুলির আমেজ, নতুন নতুন সবজি, খেজুরের রস কিংবা কুসুম গরম রোদে তাপ লাগানোর সুযোগ আর কোন ঋতুতেই বা পাওয়া যায়? ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, ব্যান্ড ফেস্ট বা লোকগানের সুরে বিভোর হবার সুযোগও তো আসে এ শীতেই। কিন্তু এত কিছুর মাঝে যদি আপনার সুস্থ-সুন্দর ত্বক বা চুলটি শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে নমনীয়তা ও কোমলতা হারিয়ে ফেলে তাহলে কি ভালো লাগবে? বোধকরি না। খুব বেশি পরিবর্তন নয়, ধুলাবালি ও আর্দ্রতাহীন আবহাওয়া থেকে ত্বককে সুস্থ-সুন্দর রাখতে অল্প কিছু প্রচেষ্টাতেই আপনি পেয়ে যাবেন তারুণ্যদীপ্ত স্বাস্থোজ্জ্বল ত্বক।

অজস্র গুণ ও পুষ্টিতে ভরপুর নারিকেল, নারিকেলের এই নানাবিধ পুষ্টি উপকারিতাই একে করে তুলেছে ত্বকের যত্নের জন্য অপরিহার্য দরকারি একটি উপাদানে। নারিকেল দুধের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো- এটি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তোলে। এমনকি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে নারিকেলের দুধের কোনো জুড়িই নেই।

এই শীতে নরম কোমল ত্বক ধরে রাখতে তিনটি প্রয়োজনীয় ধাপ অনুসরণই নিজেকে করে তুলবে আকর্ষণীয় ও সুন্দর।

ঋসতমফধর্টণ: নারিকেল দুধে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড ত্বকের মৃত কোষকে ধ্বংস করে। নারিকেল দুধ থেকে খুবই কার্যকর দুটি বডি স্ক্রাব তৈরি করা যায়। সমপরিমাণ নারিকেলের দুধ ও চিনি মিশিয়ে অথবা মধু দিয়ে আলমন্ড বাদাম কুচি করে মুখে, গলায় মেখে নিন। শুকিয়ে যাবার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন এই শীতে আপনি পাবেন কোমল, স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল ত্বক।

উফণটভ্রণ: নারিকেল দুধের বিদ্যমান ফ্যাট এসিডই ত্বক পরিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া মেকআপ তোলার জন্য লোশন বেশ জনপ্রিয়। সেক্ষেত্রে নারিকেল দুধ সমৃদ্ধ লোশন আপনাকে এই শীতে দেবে পরিচ্ছন্ন আকর্ষণীয় ত্বক।

মর্ধ্রটরধডণ: প্রতিদিনের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসলের কুসুম গরম পানিতে এক কাপ গোলাপের পাপড়ি, আধা কাপ গোলাপের জল এবং এক কাপ নারিকেলের দুধ মেশান। এই মিশ্রণ আনুমানিক ১৫ মিনিট শরীর ভিজিয়ে রাখলে তা আপনার শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ত্বকে সরাসরি নারিকেলের দুধের লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এটা করতে পারলে এই শীতে আপনার ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা পাবে আর হয়ে আপনি উঠবেন আরো মসৃণ, সজীব ও উজ্জ্বল। তো, আপনি জেনে গেলেন এই শীতে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে রাখবেন তার একটা নির্দেশনা। তাই শীতকে ভয় নয়, বরং উপভোগ করুন।

শীতের সুরক্ষা

প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীত আসতে শুরু করেছে। ঋতুর পরিবর্তনে তাই শুরু হয়েছে ত্বকের নানা সমস্যা। এ সময় ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়ায় দরকার একটু বাড়তি যত্নের। নিয়মিত যত্নে শীতেও ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

ত্বক পরিষ্কার রাখুন

শীতকালে আমরা পানি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি। অনেকে এই সময়ে শীতের ভয়ে নিয়মিত গোসল করতে চান না। কিন্তু শীতের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো- নিয়মিত কোমল পানি দিয়ে আপনার মুখ-হাত ধুয়ে ফেলা। খেয়াল রাখবেন পানি যাতে কখনোই অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা না হয়। অতিরিক্ত গরম অথবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য ত্বক স্বাভাবিক আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে ফেলে। তাই শীতকালে গোসল করার সময় সাবান কম ব্যবহার করুন। আর করলেও ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে খসখসে ভাব কমে আসবে। রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ফলে চুলকানিও হবে না এবং ত্বকও ফাটবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে রোজ গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা লিকুইড প্যারাফিন মাখতে পারেন।

নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিন

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে অনেকেরই ঠোঁট ফাটে। ঠোঁটের যত্ন তাই সঠিকভাবে না নিলেই নয়। ঠোঁটকে ফাটার হাত থেকে রক্ষা করতে ময়েশ্চার সমৃদ্ধ বিভিন্ন জেল ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের লিপজেল কিংবা লিপবাম পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে পকেটে রাখবেন এবং তা ঠোঁট শুষ্ক হলেই ব্যবহার করবেন। ঠাণ্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে, চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর লিপজেল বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন

আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বকের আর্দ্রভাব দীর্ঘক্ষণ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে এক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম দেখে কিনবেন।

হাত ও পায়ের যত্ন

ruhiহাত এবং পায়ের আর্দ্রতা ধরে রাখতে যতবার প্রয়োজন ততবার লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শীতকালে পায়ের গোড়ালি ফাটা একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা। অনেকের এমনও হয় যে, গোড়ালি ফেটেছে কিন্তু কিছুতেই তা সারিয়ে তুলতে পারছেন না। অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করেও হয়তো গোড়ালি ফাটা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। এজন্য হাত ও পায়ের যত্ন নিন। ময়েশ্চার সমৃদ্ধ লোশন ব্যবহার করুন। শীতে পা বেশি ফাটলে গ্লিসারিন, লেবুর রস ও গোলাপ জল এক চামচ করে নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে গোড়ালিতে ভালো করে মাখুন। পা শুকানোর পর এক জোড়া মোজা পরে নিন ও ঘুমিয়ে পরুন। এরপর সকালে হালকা গরম পানি দিয়ে পা ধুনে নিন। তারপর ময়েশচারাইজার বা গ্লিসারিন মেখে নিন। এমনি করে একদিন পরপর এভাবে পায়ের পরিচর্যা করুন যতদিন না পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠে। অন্যদিকে হাতের কনুইয়ের দিকেও এই সময়ে বাড়তি যত্ন রাখতে হবে। চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতেও এর যত্ন নিতে পারেন। এক টুকরো লেবুর সঙ্গে চিনি লাগিয়ে কিছুক্ষণ কনুইতে ঘষুণ। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।

বেশি করে পানি পান করুন

ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হলো- বেশি করে পানি পান করা। মনে রাখবেন, আপনি যতবারই আপনার ত্বক পরিষ্কার করুন এবং ময়েশ্চারাইজার ক্রিম মাখুন না কেন আপনার ত্বকের যথাযথ সুরক্ষায় পানি পান করাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ত্বকের সুরক্ষায় শাক-সবজি এবং ফলমূল অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। শীতকালে আঙ্গুর, কমলা, আপেলসহ আরও অনেক উপকারী ফল পাওয়া যায়, যা খেলে আপনার ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে পারে।

বিশেষ টিপস

সকালে উঠে ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ বা কোমল ময়েশ্চারযুক্ত সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন। এ সময় নিয়মিত বা এক দিন অন্তর স্ক্রাব করা ভালো। অনেকের ধারণা, নিয়মিত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলে বা স্ক্রাব করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। কিন্তু ত্বক পরিষ্কার করতে ও মৃত কোষ সরিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে এর বিকল্পও নেই। মাঝে মাঝে স্ক্রাবিংয়ের পর দুধের সর ও মধু মেখে একটু পর ধুয়ে ফেলবেন। অথবা গাজরের রস মুখে মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলবেন। ত্বকের পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন।

শীতে মেকআপ করতে চাইলে ত্বক কোমল রাখতে হবে। এ সময়টায় রোদ কড়া হয় না বলে অনেকে রোদ থেকে কোনো সুরক্ষা নেন না। কিন্তু রোদ গায়ে না লাগলেও সানবার্ন কিন্তু ঠিকই হয়। তাই সাধারণ ক্রিম না মেখে অবশ্যই সানব্লকযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন। খেয়াল রাখবেন, এতে যেন এসপিএফ অন্তত ১৫ হয়। তারপর স্বাভাবিক নিয়ম মেনে মেকআপ করুন। তবে ঘরে ফিরে অবশ্যই গভীরভাবে মেকআপ তুলতে হবে এবং ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম মাখতে হবে। শীতে ত্বকের আসল যত্ন কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। শীতের সব রকম শাক-সবজি ও ফল খাবেন এবং প্রচুর পানি পান করবেন। এইটুকু সতর্ক অভ্যাসই আপনাকে পুরো শীতকালের জন্য সুন্দর ও পরিপাটি করে তুলবে।

মডেল: কেয়া ও রুহী