Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শায়লার স্থাপত্য ভুবন!

শায়লা জোয়ার্দ্দার। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর উপর এমবিই করেন সিডনীর ইউএনএসডবিøউ থেকে। ১৯৯৬ সালে তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘নৈখৃত আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার বিল্ডিং ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমানে এই স্থপতি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সেঝ আর্কিটেক্ট শায়লা জোয়ার্দ্দার। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়, কিন্তু জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার বাবার নাম আবুল হাসেম জোয়ার্দ্দ ।তিনি সরকারি কর্মকর্তা আর মা সামসুন্নাহার গৃহিণী। স্কুল জবীন থেকেই শায়লা সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গিটার বাজানোর প্রতি ছিল তার প্রচÐ নেশা। জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গিটারে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন। ডিবেট এ পারদর্শী ছিলেন। বইপড়া, রান্না করা ছিল তার পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই আর্কিটেকচারের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি।
আইডিয়াল স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ১৯৯৬ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই শায়লা যোগ দেন ‘ডিজাইন প্লাস লিমিটেড’এ। সেখানে ১০ মাস চাকরি করার পর দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘নৈখৃত আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি মো: রুহুল আমিন এবং স্থপতি আতিকুর রহমান। ১৯৯৮ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর স্থাপত্য বিভাগে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১১ বছর শিক্ষকতা করার পর যোগ দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। বর্তমানে তিনি এই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই বন্ধু স্থপতি রুহল আমিন ও স্থপতি আতিকুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নিজের গড়ে তোলা ‘নৈখৃত আর্কিটেক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠানটির দেখাশোনা করছেন।
ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, হোস্টেল বিল্ডিং, কমার্শিয়াল বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ ভালুকায় সুনিভার্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের বাংলাদেশের প্রথম লীড গোল্ড সার্টিফাইড সু ফ্যাক্টরি কমপ্লেক্স, বরিশালের সিআরপি সেন্টার, সাভারের সিআরপির নার্সিং একাডেমী বিল্ডিং, স্টুডেন্ট হোস্টেল, আশুলিয়ার নরসিংহপুরে আকিজ লেদার ইন্ডাস্ট্রির সু ফ্যাক্টরি, আজিমপুরের ইডেন কলেজের হোস্টেল বিল্ডিং, এবিসি ফুটওয়্যার লিমিটেড এর বিবিজে ফুটওয়্যার ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, বসুন্ধরার প্যারাডাইস আবাসিক ভবন, যশোর নয়াপাড়ার আকিজ গ্রæপের এসএএফ লেদার প্রসেসিং ইউনিট, গাজীপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা ভবন ও প্রধান ফটক, উত্তরার প্যারাডাইস হোল্ডিংস এর প্যারাডাইস টাওয়ার, Project-1নিঙ্কুঞ্জের হাসান মোব্বাসের এর আবাসিক ভবন, বনানীর এবিসি রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবিসি অপরাজিতা, বসুন্ধরার গিয়াস উদ্দীনের আবাসিক ভবন, গ্রীন রোডের কম্প্রিহেন্সিভ হোল্ডিংস লিমিটেড এর ফ্লোরাল জেসমীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ভালুকায় এবিএ গ্রæপের অ্যাপারেল ওয়েট প্রসেসিং ইউনিট, উত্তরার ফ্যামিলি টাইস হোল্ডিংস লিমিটেড এর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, সাভারের অ্যাপেক্স গ্রæপের ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাক্টরি অ্যাপেক্স ফার্মা, নোয়াখালি মাইজদীর আল আমীন গ্রæপের আল আমীন বিস্কুট ফ্যাক্টরি, সিলভা ফার্মা, মিরপুর-১ এর প্যারাডাইস ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড এর কমার্শিয়াল বিল্ডিং প্যারাডাইস প্লাজা, উত্তরার ক্যাপ্টেন আজিম এর আবাসিক ভবন, রাজেন্দ্রপুরের মিসেস সালেহ এর ভ্যাকেশন হাউজ, জাফরাবাদের ভিশ্তি ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড এর ভিশ্তি বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, পল্লবীর ইস্টার্ণ হাউজিং এ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, উত্তরার ভিশ্তি ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ডা: নাসিম উদ্দীন এর আবাসিক ভবন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।
এছাড়া বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে। স্থাপনার কাজের বাইরে নৈখৃত আর্কিটেকটস পেয়েছে কাষ্টমার অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডস। যেমন- বেষ্ট অ্যাওয়ার্ড হেলথ সেফটি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সেভরন বাংলাদেশ, রবি ভেন্ডর অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৮ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্বামীর নাম রুহুল আমিন। তিনি একজন স্বনামধন্য স্থপতি। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী, ছেলে ফাইয়্যাজ আমিন, আর মেয়ে পারিশ্যা স্তুতি আমিন।
স্থপতি শায়লা জোয়ার্দ্দার বলেন, যে কোনো ভবনের ডিজাইন হওয়া প্রয়োজন সহজ এবং সাবলীল। কাজের ব্যবহার যোগ্যতা থাকতেই হবে। যে উদ্দেশ্যে বিল্ডিং ডিজাইন করা, ডিজাইন শৈলীতে তার সাথে কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। একই সাথে অনেক রকম নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ডিজাইনের ইন্টেগ্রিটি নষ্ট করে। স্পেস এর বোধটা ডিজাইনের প্রধান উপজীব্য হওয়া উচিত। শুধুমাত্র দর্শনধারী নয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন শায়লা। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।