সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
রেজানুর রহমান: একটি মোমবাতি। তার ওপরই সবার নজর। যেই আসে সেই মোমবাতিটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মোমবাতির একটা কারিশমা আছে। সে মিটিমিটি আলো দেয়। কিন্তু কাউকে পোড়ায় না। এ জন্যই সবার নজর মোমবাতিটির প্রতি। মোমবাতিটি জ্বলছে। বাতাসে দুলছে মোমবাতির আলো। সে আলোয় আঙ্গুল ছোঁয়ালেই তো পুড়ে যাবার কথা। কিন্তু কারো আঙ্গুলই পোড়ে না। এই চমকটাই সবার আগ্রহের বিষয়। কারও আগ্রহ মোমবাতিটা কিভাবে সরানো যায়। অর্থাৎ নিজের করে নেয়া যায়।
অস্বীকার করবো না চ্যানেল আইতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের টেবিলের ওপর আমি প্রথম যেদিন মোমবাতিটি দেখি সেদিন এর কারিশমা আমাকেও মুগ্ধ করে। মনের ভেতর একটা গোপন ইচ্ছে জাগে মোমবাতিটি যদি আমার হতো!
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। আমাদের অভিভাবক। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে তাঁকে আমাদের উচিৎ ‘স্যার’ সম্মোধন করা। কিন্তু আমরা অনেকে তাকে ‘ভাই’ বলে সম্মোধন করি। এই সম্মোধনটা অনেক ক্ষেত্রে বাবাকে শ্রদ্ধা করার মতোই। কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্য তিনি আমাদের বন্ধু। আর সে জন্যই তাঁর কাছে আমরা অনেক নিরাপদ।
যারা সাগর ভাইয়ের অফিস কক্ষে যাতায়াত করেন তারা প্রায় সবাই কোনো না কোনো একটি দিন হঠাৎ একটা চমকের মুখোমুখি হয়েছেন। এইতো সেদিন আনন্দ আলোর জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই-এর সিটিসেল তারকাকথন অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বিশ্বনন্দিত যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ও প্রিয় অভিনেত্রী নির্মাতা আফসানা মিমি। অনুষ্ঠান শেষে সাগর ভাইয়ের অফিস কক্ষে কুশল বিনিময় করতে ঢুকলেন জুয়েল আইচ ও আফসানা মিমি। অতিথিদের জন্য চকলেট আর কিসমিস, বাদামসহ অন্যান্য লোভনীয় খাবার টেবিলের ওপরই রাখা থাকে। প্রাণ-এর সৌজন্যে ছোটকাকু নামের চকলেট বেরিয়েছে। সেটা হাতে নিয়ে প্রথম অভিভূত হলেন জুয়েল আইচ। পরক্ষণেই সামনে একটি পুতুল দেখে জুয়েল আইচ ও আফসানা মিমি দুজনই বিস্মিত। জুয়েল আইচ যা বলছেন পুতুলটিও তাই বলছে। জুয়েল আইচ হাসছেন। পুতুলটিও হাসছে। জুয়েল আইচ মৃদু ধমক দিচ্ছেন। পুতুলটিও তাই করছে। কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। জুয়েল আইচকে দেখে মনে হচ্ছিলো রহস্যের কুলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি। এক সময় পুতুলটির দিকে তাকিয়ে বললেন, এইটা কোথায় পাওয়া যায়? আমার মেয়ের জন্য কিনব। পুতুলের পর এলো আরো এক বিস্ময়। সেই মোমবাতি। সাগর ভাই মোমবাতি উচিয়ে ধরেছেন জুয়েল আইচ ও আফসানা মিমির দিকে। দুজনই ভয় ভয় চোখে মোমবাতির আলোক শিখার দিকে তাকিয়ে আছেন। জুয়েল আইচ সাহস করলেও আফসানা মিমি আলোক শিখায় আঙ্গুল ছোঁয়ানোর দিকে গেলেনই না। এক সময় জুয়েল আইচ আলোক শিখায় আঙ্গুল ছোয়ালেন। না, আঙ্গুল পোড়েনি। আরো বেশি বিস্মিত জুয়েল আইচ। সাগর ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলেন, এই জিনিস কোথায় পাওয়া যায়।
উত্তরে সাগর ভাই শুধুই হাসলেন।
আনন্দ আলোর এক যুগ শুরু অনুষ্ঠানে অনেক মোমবাতি লাগবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের হাতে মোমবাতি ধরিয়ে দেয়া হবে। সবাই এক সাথে মোমবাতি জ্বালাবেন। সাথে বাজবে বাঁশি। পুরনো ঢাকার চকবাজার থেকে কয়েকশ মোমবাতি কিনে আনা হয়েছে। অতিথিদের হাতে হাতে সেই মোমবাতি পৌছে দেয়া হলো। দিয়াশলাই হাতে নিয়ে আনন্দ আলোর কর্মীরা দাঁড়িয়ে আছেন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মৌসুমী বড় ুয়া ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে অতিথিরা মোমবাতি জ্বালাতে থাকলেন। এ যেন আরেক স্বপ্ন ছড়িয়ে দেয়ার দুর্লভ মুহূর্ত। মোমের আলো জ্বালিয়ে দেশের গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে মেধা ও মননে আলোকময় করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা সবার মনে। হঠাৎ দেখি সবার মাঝে সাগর ভাই সেই মোমবাতিটিই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মোমের আলো জ্বলছে মিটিমিটি। অন্য মোমের চেয়ে এই মোমবাতির আলো যেন একটু অন্যরকম। নরম, মায়াময় এবং অবশ্যই মেধাদীপ্ত আলো ছড়াচ্ছিল। ঠিক যেন আনন্দ আলোর চেতনার সাথে মিলে যাচ্ছে…
মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে আনন্দ আলোর জন্মদিনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠান চলছে। একটার পর একটা আইটেম শেষ হচ্ছে। তারকার ভীড়ে মুখরিত চারপাশ। শেষ দিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির হলেন আমাদের প্রিয় অভিভাবক ফরিদুর রেজা সাগর। তাঁর হাতে সেই মোমবাতি জ্বলছে। আমি তখনও মনে মনে চাইছি-ইস, মোমবাতিটা যদি আমার হতো।
সত্যি সত্যি মোমবাতিটা আমারই হলো। ঠিক আমার নয়, আনন্দ আলোর হলো।
সাগর ভাই মোমবাতিটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, আজ আনন্দ আলো এক যুগে পা দিল। আনন্দ আলো গত ১১ বছরে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক আলো ছড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি আলো দরকার। তারই প্রতীক এই মোমশিখা রেজানুরের জন্য আনন্দ আলোর জন্য…
আনন্দ আলোয় আমার অফিস কক্ষে টেবিলের ওপর মোমবাতিটা রাখা আছে। আমি প্রতিদিন অফিসে ঢোকার আগেই মোমবাতিটা জ্বালিয়ে রাখা হয়। আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোমবাতিটার দিকে তাকাই। কখনো কখনো মোমবাতির আলোক শিখার সাথে আমার কথাও চলে। সবই আনন্দ আলোকে ঘিরে।
কথা বলার কিছু নমুনা সামনের কোন সংখ্যায় প্রকাশের ইচ্ছে আছে। প্রিয় পাঠক ভালো থাকবেন সবাই।