Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মাশরাফি মন্ত্রে বদলে গেল সব

স্পোর্টস রিপোর্টার: চোখ রাঙাচ্ছিল টেস্টের বাজে পারফরম্যান্স। সর্বনিম্ন ৪৩ রানের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। ক্যারিবীয় সফরে একটা ঝাঁকুনি দরকার ছিল দলের মধ্যে। ওয়ানডে সিরিজের শুরুতে তা হয়ে গেল। সাদা জার্সির বদলে রঙিন পোশাক, সঙ্গে যোগ দিলেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেস দলে থাকা মানেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস, উত্তুঙ্গ প্রেরণা। গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে তা চাক্ষুষ করল কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। এক ঝটকায় দলের আত্মবিশ্বাসের পারদ উঁচুতে নিয়ে আসলেন মাশরাফি। হতাশা কাটিয়ে আসল দাপট দেখানো দারুণ এক জয়।

গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তামিম অপরাজিত ১৩০ রানে। তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি সাকিব (৯৭)। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২০৭ রান ভেঙে দিল আগের রেকর্ড। ১১ বলে মুশফিকের ৩০ রানের খণ্ড টর্নেডো ইনিংস। ৪ উইকেটে টাইগারদের সংগ্রহ ২৭৯ রান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পারল ৯ উইকেটে ২৩১ রান। বল হাতে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিলেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। মুস্তাফিজ দুটি, মিরাজ ও রুবেল নিলেন একটি করে উইকেট। ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল। তবে দলকে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে আনার জন্য ম্যাচের আসল নায়ক তো মাশরাফি বিন মুর্তজাই।

যার এক কথায় দল উজ্জীবিত হয়েছিল পুরোদমে। কী সেই মাশরাফির মন্ত্র, যাতে বদলে গেল সব চিত্র? মাঠে নামার আগে সতীর্থদের মাশরাফি স্রেফ বলেছিলেন, ‘হূদয় উজাড় করে খেল দেশের জন্য।’ ব্যাস, তাতেই যেন ভোজবাজির মতো সব পাল্টে যায় চিত্র। ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা হয় মনের মতো।

ম্যাচ শেষে ড্যানি মরিসন মাশরাফির কাছে জানতে চান দলকে উজ্জীবিত করার রহস্য। তবে মাশরাফি এটিকে বিশেষ কিছু বলতে চাইলেন না। তারপরও যা বললেন, তা হলো- ‘বিশেষ কিছু বলিনি। স্রেফ বলেছি হূদয় উজাড় করে খেলতে, দেশের জন্য খেলতে। যা হয়েছে, তা তো হয়েই গেছে (টেস্ট সিরিজে)। এটা নতুন সিরিজ। শুরুটা ভালো করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ (রোববার) ঠিক সেটাই হয়েছে। আশা করি এই পারফরম্যান্স আমরা ধরে রাখতে পারব।’

২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সুপার এইটের লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি রোমন্থন করলেন মাশরাফি, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এখনো মনে আছে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছি। এখানকার উইকেট আমাদের ধরনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। ব্যাটিং শুরুতে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তামিম ও সাকিব দারুণ ব্যাট করেছে। সুরটা বেঁধে দিয়েছে। শেষে মুশির ছোট্ট ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানতাম, শুরুতে ভালো বোলিং করলে এখানে ২৮০ রান তাড়া করা কঠিন। আমাদের চাওয়া ছিল গেইল ও লুইসকে দ্রুত ফেরানো। সেটি হয়েছে। এরপর আমরা চাপটা ধরে রেখেছি।’

১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৩৭। মেডেন একটি। উইকেট সর্বোচ্চ ৪টি। উইকেটগুলোও গুরুত্বপূর্ণ- লুইস, হোল্ডার, রাসেল ও নার্স। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে অনুশীলনটা ভালো মতো হয়নি তার। তার পেছনে কারণ ছিল স্ত্রীর অসুস্থতা। অনুশীলনের ঘাটতি ছিল বলেই হয়তো পরের স্পেলে বল করেছেন শর্ট রান আপে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে শর্ট রান আপে অনেকবার বোলিং করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেননি খুব একটা। এবার সেখানেও সফল। নিজের পারফরম্যান্সও স্বস্তি দিয়েছে অধিনায়ককে, ‘গত ২-৩ মাসে সেভাবে বোলিং করতে পারিনি। লম্বা রান আপে অনুশীলনও সেভাবে করতে পারিনি। এমন সময় আসতেই পারে। ম্যাচে কাজটা এমনিতেও সব সময় কঠিন। তবে আমি মাঠে উপভোগ করেছি।’

আগামী ২৬ জুলাই একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ। ২৮ জুলাই তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। প্রথম ম্যাচের জয় তাতিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। টাইগারদের লক্ষ্য এখন সিরিজ জয়। সে জন্য বাকি দুই ম্যাচের মধ্যে জিততে হবে মাত্র একটিতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৯/৪ (তামিম ১৩০*, এনামুল ০, সাকিব ৯৭, সাব্বির ৩, মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ৪*; রাসেল ১/৬২, হোল্ডার ১/৪৭, জোসেফ ০/৫৭, নার্স ০/৩৯, বিশু ২/৫২, জেসন ০/১৫)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৩১/৯ (গেইল ৪০, লুইস ১৭, হোপ ৬, হেটমায়ার ৫২, জেসন ১০, হোল্ডার ১৭, পাওয়েল ০, রাসেল ১৩, নার্স ৭, বিশু ২৯*, জোসেফ ২৯*; মাশরাফি ৪/৩৭, মিরাজ ১/৩৭, রুবেল ১/৫২, মোসাদ্দেক ০/২২, মুস্তাফিজ ২/৩৫, সাকিব ০/৪৩)

ফল: বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল