Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মাশরাফি কি জাদু জানে?

মামুনুর রহমান:
ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে গিয়ে টেস্টে যেখানে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ সেখানে ওয়ানডেতে একদম বিপরীত চিত্র। তিন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স দেখে অনেকেই বিস্মিত। তাদের বক্তব্য, এই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলই কি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছে? টেস্টে যাদের কাছে দাঁড়াতেই পারল না সেখানে ওয়ানডে টুর্নামেন্টে কি করে তাদেরকেই নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল?
দেশে আফগানিস্তানের মতো ছোট দলের সাথে হারার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। যে খেলায় বাংলাদেশ ছিল ফেভারিট সেই খেলায় আফগানিস্তানের সাথেই হোয়াইট ওয়াশ হলো। এর পরই এলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলার সফরসূচি। সেখানে গিয়ে পর-পর দুটি টেস্টে যাচ্ছে তাই ভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যা কারও কাম্য ছিল না। ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এক ধরনের অস্থিরতার মাঝেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হয় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কি করে এটা সম্ভব হলো? এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের বিশ্লেষণ। নানা জনে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। তবে সকলে একবাক্যে বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের যুবরাজ মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরমেটের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজার অন্তর ছোঁয়া নেতৃত্বই বদলে দিয়েছে পরিবেশ। জয়ের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। যদিও মাশরাফি এই কথার সাথে পুরোপুরি একমত নন। নিজের প্রশংসা শুনে প্রচার মাধ্যমে বিনয়ের সাথে তিনি বলেছেন, ক্রিকেটে জয়টা কারও একক কৃতিত্বে আসে না। পুরোটাই দলীয় খেলা। এককভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। অসাধারন ইনিংস খেলতে হয়। সবাইকে একটা করিডোরে বল করতে হয়। সাজানো ফিল্ডিং অনুযায়ী বোলিং করতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে খেলা শেষে একটা ফল আসে। ওয়ানডেতে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যার ফল পেয়েছি।
“ক্রিকেট হলো দলীয় খেলা এখানে এককভাবে করার কিছু নাই” মাশরাফির এই কথাটি মেনে নিয়েও বলতে হচ্ছে, ক্রিকেট দলীয় খেলা ঠিক আছে। কিন্তু দলের নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিটির ভ‚মিকাও কোনো অংশে কম নয়। যে কোনো খেলায় দলীয় প্রধান অর্থাৎ ক্যাপ্টেনের ভ‚মিকা বেশ গুরুত্বপুর্ণ। কথার কথাÑ টেস্টে যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছে তার নেতৃত্বেই ওয়ানডে খেললে হয়তো খেলার ফলাফল হঠাৎ করেই পজিটিভ হতো না। তার মানে কি দাঁড়াল? টেস্ট অধিনায়ক যোগ্য নন? অবশ্যই তিনি যোগ্য। কিন্তু অধিনায়কের ব্যক্তিগত কিছু কারিশমা থাকে। সে ক্ষেত্রে মাশরাফি অনেকটাই ব্যতিক্রম। আর তাই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে পা রাখার সাথে সাথেই বদলে যায় গোটা ক্রিকেট দলের পরিবেশ। সবাই যেন নুতন করে মানসিক শক্তি ফিরে পায়। এই যে মানসিক শক্তির কথা বলা হলো এটাই আসল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে মাশরাফি যাবার পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ফলে ওয়ানডের প্রথম খেলায়ই জয় পায়। আর তাই মাশরাফি বন্দনা চলছে জোরে শোরে। প্রশ্ন উঠতেই পারে মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজে পৌঁছার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মানসিক পরিবর্তনটা ঘটলো কিভাবে? মাশরাফি কি জাদু জানেন? ছুঁ মন্তর ছুঁ বলেই কি মাশরাফি দলের সদস্যদের মাঝে মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন? হ্যা, এক অর্থে মাশরাফি জাদু জানেন। জাদুটা হলো-ভালোবাসা। ভালোবাসার শক্তি দিয়ে মাশরাফি দলের প্রতিটি সদস্যকে উজ্জীবিত করার কারিশমা দেখান। আর তাই মাশরাফি দলে থাকলে দলের প্রতিটি সদস্যই কম বেশী নির্ভার থাকেন। ভাবটা এমন- ভাই যেহেতু সাথে আছেন, আমরা পারব… এই যে পারব ভাবতে পারা এটাই দলের শক্তি। মাশরাফি দলে থাকলে দলের প্রতিটি সদস্যের মানসিক এই শক্তিটাই প্রেরণা হয়ে ওঠে।
স্ত্রীর অসুস্থতা সত্বেও দলের প্রয়োজনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়ে গেছেন মাশরাফি। তিনি নিজেও যে খুব একটা সুস্থ তা বলা যাবে না। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার টানেই মাশরাফি এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কথার কথা, শোনা যাচ্ছে মাশরাফি আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। যদি তাই হয় তাহলে তো তিনি আর ক্রিকেট খেলবেন না। তখন আমাদের ক্রিকেটের নেতৃত্ব কে দিবে? আমরা কি মাশরাফির বিকল্প খুঁজেছি? একজন নতুন মাশরাফিকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু চেষ্টাতো থাকতে হবে। কিন্তু সেই চেষ্টারও তো কোনো লক্ষণ দেখি না।
জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের।