Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভুল যত ভুল

জীবন এমনই, একবার ভুল করলে তা শোধরানোর আর সময় পাওয়া যায় না। ছোট্ট একটি ভুলের কারণে জীবনের যে ক্ষতি হয় তার রেশ চিরজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। কোনো কোনো ভুলের কারণে জীবন পর্যšত্ম বিপন্ন হয়। সেলিব্রেটিদের কথাই ধরা যাক। ক্রিকেট ফুটবল বা শোবিজ তারকাদের অনেকের জীবনে সামান্য ভুলের কারণে নেমেছে ঘোর অমানিষা। পাল্টে গেছে জীবন চরিত্র। লিখেছেন জাকীর হাসান

 শাহাদত এখন জেলে

Tarokar-Vul-1-2সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা পেসার শাহাদত হোসেনকে ঘিরে। এই তারকা ক্রিকেটারের স্ত্রী জেসমিন নিজের বাসার কিশোরী গৃহকর্মীকে নির্যাতন করার অপরাধে গ্রেফতার হন। এই ঘৃণ কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করার অপরাধে গ্রেফতার হন ক্রিকেটার শাহাদত হোসেন। এই খবর মুর্হুতের মধ্যে ছড়িয়ে যায় পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। যে শাহাদত হোসেনের দীর্ঘদিন ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরার কথা ছিল ছোট্ট একটি ভুলের জন্য তাকেই কিনা যেতে হলো জেলে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পেসার শাহাদত হোসেনকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। কবে নাগাদ জেল থেকে তিনি ছাড়া পাবেন আবার কবে ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসবেন তা কেউ বলতে পারবেন না। অথচ একসময় জাতীয় ও আšত্মর্জাতিক ক্রিকেটে শাহাদতের কী দাপট ছিল। সুনাম জস খ্যাতি ছিল। এখন সবই ফিকে হয়ে গেছে।

বেঁচে গেলেন রুবেল

Rubel-এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ অসাধারণ পারফর্ম করে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় মূলত রুবেল হোসনের কৃতিত্বের উপর ভর করে। গ্রæপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে রুবেল হোসেনের শেষ স্পেলের বলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা। অথচ একটি ভুলের কারণে এই রুবেল হোসেন বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে প্রায় বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে সব ভুল ক্ষমা করে ফিরিয়ে আনে ক্রিকেট মাঠে নইলে হয়তো শাহাদতের মতো জেল জীবন বরণ করে নিতে হতো তাকেও। রুবেল হাসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথমে পরিচয় হয় অভিনয় শিল্পী হ্যাপীর। ক্রিকেট সমঝদার হ্যাপী একসময় ফেসবুক ও টেলিফোনে কথা বলতে বলতে প্রেমে মজে যান রুবেলের। মন দেয়া নেয়া করার পর রুবেলের বাসায় অবাধে যাওয়া আসা করেন হ্যাপী। এক পর্যায়ে রুবেল হোসনকে বিয়ের জন্য হ্যাপী চাপ দিলে এই তারকা পেসার বেকে বসেন। সরাসরি হ্যাপীকে বলেন আমরা শুধুই বন্ধু এর বেশি কিছু নয়। আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। একথায় ক্ষিপ্ত হয়ে চিত্রনায়িকা হ্যাপী নারী নির্যাতনের মামলা করেন রুবেলের বিরুদ্ধে। শুরু হয় রুবেল ও হ্যাপীর টাগ অব ওয়্যার। এখবরে ঝড় তুলে মিডিয়ায়। রুবেলের ক্যারিয়ার হয়ে পড়ে নড়বড়ে। অখ্যাত অভিনেত্রী হ্যাপী চলে অসেন লাইম লাইটে। বিশ্বব্যাপী মিডিয়ায় এখবর গুরুত্ব পায়। ফলাও ভাবে প্রচার হতে থাকে ক্রিকেট দুনিয়ায়। মাত্র দু’দিন জেল জীবন যাপনের পর ইনজুরিতে পড়া পেসার শফিউলের জায়গায় সুযোগ পেয়ে বেঁচে যান রুবেল। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরমেন্স করার সুবাদে ঢাকা পড়ে যায় রুবেল হ্যাপীর মামলা ঝামেলা কিসসা কাহিনী। বিশ্বকাপ শেষে বীর বেশে যখন রুবেল দেশে ফেরেন তখন হ্যাপীও তাকে অভিনন্দন জানান। অথচ তারুণ্যের উচ্ছল সময়ের আবেগী প্রেমের ছোট্ট ভুল দু’জনকেই শেষ করে দিচ্ছিল। যদি কোনো কারনে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রুবেল জায়গা না পেতেন অথবা বিশ্বকাপে ভালো খেলা না খেলতে পারতেন তাহলে ওই ছোট্ট ভুলটি রুবেল হোসেনকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করতো সেটা কেউ বলতে পারবে না।

আশরাফুল এক ভুলে সব ভন্ডুল

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়কার আশার ফুল ছিলেন ক্রিকেট তারকা আশরাফুল। ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার তাকে ডাকতেন জিনিয়াস বলে। শচিনের ঘনিষ্ট বন্ধুদের তালিকায় আছেন আশরাফুল। অনেকটা পছন্দ করেই শচিন আই পি এল-এ তার মুম্বাই ইন্ডিয়ান দলে খেলতে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই আশরাফুল দেশের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে পাতানো খেলায় ঘুষ গ্রহনের দায়ে আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছেন। এক সময় মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেট ম্যাচে প্রশংসিত অবদান রেখেছেন। একের পর এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ তার অবদানেই। মাত্র সতের বছর বয়েসে শ্রীলংকার মাটিতে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরী করে রের্কড বইয়ে নাম লিখেছিলেন। সেই খ্যাতিমান ক্রিকেটার আশরাফুল ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গø্যাডিয়েটর দলের হয়ে একটি ম্যাচে ফিক্সিং এর দায়ে অভিযুক্ত হন। অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে ৮ বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে আশরাফুলের গুড উইল ও ব্যবহারের জন্য সাজা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়। ২০১৩ থেকে ৫ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকে আশরাফুল সব ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন।

ইতি একজন দিতি!

DITY-(2)চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল তারকা বিশিষ্ট অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি আক্ষেপ করে বলেছেন চলচ্চিত্র আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু আমি চলচ্চিত্রকে কিছু দিতে পারিনি। চলচ্চিত্রে আসার পর দাপটের সঙ্গে কাজ করে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে করার পর সংসার টিকিয়ে রাখতে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেই। আবার সংসার স্বচ্ছল করতে চলচ্চিত্রে ফিরে আসি। এই আসা যাওয়া করতে করতে আমার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্র¯ত্ম হয়। চলচ্চিত্র থেকে বার বার বিদায় নেয়া ও ফিরে আসা আমার জন্য একটি বড় ভুল ছিল। এই ভুলটি যদি আমি না করতাম তাহলে নিজে যেমন সমৃদ্ধ হতাম তেমনি চলচ্চিত্রকে অনেক কিছু দিতে পারতাম। আসলে মানুষ যখন ভুল করে তখন বুঝতে পারে না। আমি নিজের ভুল বুঝতে পারিনি। বার বার মনে হয় আমার এই ভুল ক্ষমার অযোগ্য। এখন সব ভুল সুধরিয়ে চলচ্চিত্র ও টিভি মিডিয়ায় কাজ করছি কিন্তু ফেলে আসা দিনের ভুলের মাসুল এখনো দিতে হচ্ছে।

ভুলের কারণে সংসার শেষ

SHOWKOT-ALI-EMON-(1)সুখের একটি সংসার ছিল সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন ও বিজরী বরকত উল্লাহর। কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ে ভেঙ্গে যায় এই দুই তারকার সংসার। কাজ করতে গিয়েই শওকত আলী ইমনের সঙ্গে পরিচয় হয় জিনাত করিম ওরফে তিথির সাথে। একসময় দু’জনে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। রে¯েত্মারাঁয় খাওয়া দাওয়া বা দূরে কোথাও বেড়াতে যেতেন তারা মাঝেমধ্যে। এমনিভাবে একজন আরেকজনের খুব কাছে চলে আসেন। এই কাছে আসাটাই একসময় কাল হয়ে দাড়ায়। দুজনের এই ঘনিষ্ঠতা ও অšত্মরঙ্গতা মিডিয়ায় চাউর হলে ইমনের অভিনেত্রী স্ত্রী বিজরী সংসার ছেড়ে চলে যান। এদিকে জিনাতকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর জিনাত একসময় নারী নির্যাতনের মামলা টুকে দেন ইমনের বিরুদ্ধে। পরে বেশ কিছুদিন জেল খাটতে হয় ইমনকে। একসময় মামলার ঝামেলা শেষ হয়। বিজরী রাগে দুখে ইমনকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন অভিনেতা দিনারকে। এখন একাকী জীবন যাপন করছেন শওকত আলী ইমন। শুধুমাত্র ঠুনকো ভালো লাগা ও অসৎ বন্ধুত্বের ভুলটি করে ইমন তার সংসার ও ক্যারিয়ার দুটোই ধ্বংস করেছেন।

আরও যতো ভুল গল্প!

সামান্য একটি ভুলের কারনে অনেক তারকারই ক্যারিয়ার ও ব্যক্তি জীবন ক্ষতিগ্র¯ত্ম হয়েছে। টিভি অভিনেত্রী প্রভা তার প্রথম প্রেমিক ও হবু বর রাজিবের সঙ্গে অনৈতিক একটি ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর তার জীবনে নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার। তিনি এই ভুলের কারনে যেমন সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন তেমনি ক্ষতিগ্র¯ত্ম হয়েছে তার ক্যারিয়ার। অভিনেত্রী তিন্নি তার ব্যতিক্রমী অভিনয়ের জন্য বরাবরই প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু তার এক ঘেয়েমী আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সবাইকে। নাটক, সিনেমায় শিডিউল দিয়ে তা রক্ষা করেন না। যদিওবা স্পটে হাজির হন কিন্তু অস্থির থাকেন সব সময়। শুটিং শেষে বাড়ি ফেরার পর পরদিন আর কাজ করার কথা মনে রাখেন না। এই ভুলগুলো তিন্নি বার বার করছেন। অথচ তিন্নি অসম্ভব একজন ভালো অভিনেত্রী। যতক্ষণ কাজ করেন মনোযোগ দিয়ে করেন। হালের চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমনিও তিন্নির পথ ধরে এগুচ্ছেন। শুটিং স্পটে আসার পর পরী প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে সহকারী পরিচালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ইচ্ছা হলে শুটিং স্পট থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে যান। এজন্য মাঝেমধ্যে অনুতপ্ত হয়েছেন তিনি আবার সেই ভুল করতে থাকেন তিনি।