Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভাইরে আমি সহজ সরল মানুষ!-খুরশীদ আলম

আনন্দ আলো: আপনি কী খুরশীদ আলম

খুরশীদ আলম: হ্যাঁ। আমি মো: খুরশীদ আলম

আনন্দ আলো: গানে এলেন কীভাবে?

খুরশীদ আলম: ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আমার সখ্যতা গড়ে উঠে। ঢাকা শিল্পী সংঘ গোষ্ঠীর রিহার্সেল যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বয় হাউসে হতো তখন থেকেই আমি গুন গুন করে গান গাইতাম। চাচা ডা: আবু হায়দার সাজেদুর রহমানের কাছে আমার প্রথম গান শেখা।

আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে গানটি।

খুরশীদ আলম: ১৯৬৯ সালে আমি প্রথম সিনেমায় গান করি। ছবির নাম ছিল ‘আগন্তুক’। পরিচালক ছিলেন বাবুল চৌধুরী। ছবিতে আমার গাওয়া ‘বন্দি পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে’ শিরোনামে একটি গান ছিল। গানটি লিখেছিলেন ডা: আবু হায়দার সাজেদুর রহমান। সুরকার ছিলেন আজাদ রহমান। সেই সময় এ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ছবিতে লিপসিং করেন নায়করাজ রাজ্জাক। এই গানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আনন্দ আলো: দেশের টিভি দেখেন?

খুরশীদ আলম: দেখব না কেন? আমাদের এতগুলো টিভি চ্যানেল। অবশ্যই দেশের টিভি চ্যানেল দেখি। আমাদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো দেখি। সংবাদ দেখি, নাটক দেখি, সিনেমা দেখি, কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখি। ভালো কিছু হলে ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: স্টুডিওতে প্রথম দিন….

খুরশীদ আলম: ১৯৬৫ সালে রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে আমার গায়ক জীবনের যাত্রা শুরু। নাজিম উদ্দিন রোডের শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে আমি রবীন্দ্র সংগীত গাই। ’৬৫ তে আইয়ুব খান রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া বন্ধ করে দিলেন। আমাকে জানানো হলো আধুনিক, পল্লীগীতি এবং নজরুল সংগীত যে কোনো একটি বিষয়ে অডিশন দিতে হবে। তখন আমি আধুনিক গানে অডিশন দেই। অডিশন দেয়ার পরে কমার্শিয়াল সার্ভিসে আমার দুটি গান প্রচার হয়েছিল গান দুটি হলোÑ ‘তোমার দু হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ ও ‘চঞ্চল দু নয়নে’।

আনন্দ আলো: গান গেয়ে প্রথম পারিশ্রমিক

খুরশীদ আলম: আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। জীবনের প্রথম প্লেব্যাকের জন্য তিন দিন গানের রিহার্সেল করেছিলাম। প্রথম যেদিন গানটির রেকর্ডিং করতে যাই সেদিন রেকর্ডিং হলো না। কারণ গানটি নায়করাজ রাজ্জাকের লিপে যাবে। ছয়দিনপর রাজ্জাক ভাই উনার বাসায় আমাকে নিয়ে গেলেন উনি কীভাবে স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন সেগুলো দেখার জন্য। তিনদিন পর গানটির রেকর্ডিং হলো। ‘আগন্তুক’ ছবির গানটি করে আমি ১০০ টাকা পেয়েছিলাম। সেই সময়কার ১০০ টাকা বিরাট ব্যাপার।

আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোনো গানটি এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?

খুরশীদ আলম: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে ও দুটি নয়নে, আলতো পায়ে, বাপের চোখের মনি, চুরি করেছো আমার মনটা, ধীরে ধীরে চল ঘোড়া, চুমকি চলেছে একা পথে, বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাব, আজকে না হয় ভালোবাস আর কোনোদিন নয়, এই আকাশকে সাক্ষী রেখে, পাখির বাসার মতো দুটি চোখ তোমার, বন্দি পাখির মতো, গানগুলো মাঝে মাঝে হৃদয়ে নাড়া দেয়।

আনন্দ আলো: জীবনের সেরা গান কোনটি?

খুরশীদ আলম: ‘সমাধান’ ছবির ‘মাগো মা ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা’ গানটি আমার জীবনের সেরা একটি গান। গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সুরকার ছিলেন সত্য সাহা। এই গানটা এখনো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। স্টেজে যখনই আমি গান গাইতে যাই তখনই এই গানটার প্রচুর অনুরোধ আসে।

আনন্দ আলো: আমার ভালোবাসার গান…

খুরশীদ আলম: নায়করাজ রাজ্জাক ভাইয়ের পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘অনন্ত প্রেম’ এ খুব সুন্দর একটি গান গেয়েছিলাম। গানের কথাছিল ‘ও চোখে চোখে পড়েছে যখনি’। গানের কথা লিখেছিলেন আহমেদ জামান চৌধুরী। সুর করেছিলেন আজাদ রহমান। আমি আর সাবিনা ইয়াসমিন গানটি গেয়েছিলাম। আজাদ ভাইয়ের ইস্কাটনে গার্ডেন রোডের বাড়িতে এ গানের সৃষ্টি হয়েছিল।

আনন্দ আলো: সংগীত জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া…

খুরশীদ আলম: আমার একাধিক হিট গান লিপসিং করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। শুধু রাজ্জাক কেন ওয়াসিম, জাফর ইকবাল, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চসসহ বিভিন্ন নায়কের প্লেব্যাকে কাজ করেছি। প্রায়াত অভিনেতা রহমান ছাড়া আশির দশকের জনপ্রিয় গানের গায়েক ছিলাম আমি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা পাওয়া।

আনন্দ আলো: সহশিল্পীর সঙ্গে গান করতে গিয়ে একবার নাকি অসুবিধায় পড়েছিলেন?

খুরশীদ আলম: অর্কেস্ট্র, সুরকার, গীতিকার সবাই মিলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আমরা গানের রিহার্সেল করতাম। কখনো সারারাত ধরে রিহার্সেল চলতো। তারপর ভোরবেলায় হতো রেকর্ডিং। একবারে গান টেব না হলে আবার পুরোটা গান গাইতে হতো। একবার ফেরদৌসী রহমানের ডুয়েট প্লেব্যাক করতে গিয়ে কিছুতেই তাল মিলাতে পারছিলাম না। গানের কথা ছিল ‘তুমি যে আমার গোলাপি ডালিং, তুমি যে আমার হার্ট’। ফেরদৌসী রহমানের সঙ্গে এমন কথার গানে কিছুতেই কণ্ঠ মেলাতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত আমাকে হার মানতে হয়। এটাকে আমার জীবনের বড় ব্যর্থতা বলে মনে করি।

আনন্দ আলো: আপনাদের সময়টাকে স্বর্ণযুগ বলা হতো কেন?

খুরশীদ আলম: আসলেই আমাদের সে সময়টা স্বর্ণযুগ ছিল। ’৬০ ও ’৭০ এর দশকে যে গান গুলো হয়েছিল সেগুলো ছিল অসাধারণ। কারণ সে সময় সবার মাঝে কমিটমেন্ট ছিল, মূল্যবোধ ছিল। তখন বাণিজ্যিকী করণের চর্চা শুরু হয়নি। পরবর্তীতে ’৮০ এর দশকে এ প্রক্রিয়াটা শুরু হলো। তখনও ভালো সবাই চাকচিক্যকে গুরুত্ব না দিয়ে সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দিত। এছাড়া প্রয়াত খান আতাউর রহমান সত্য সাহা, আনোয়ার পারভেজ এবং আলাউদ্দিন আলী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলম খানের মতো গুণী মানুষ ছিলেন যারা সারাক্ষণই চিন্তা ভাবনা করতেন কীভাবে ভালো গান করা যায়। যার ফলে সে সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল অসাধারণ কিছু গান।

আনন্দ আলো: গান ছাড়া আর যা ভালো করতে পারেন?

খুরশীদ আলম: মানুষের উপকার করতে চেষ্টা করি।

আনন্দ আলো: আপনার কাছে গান কী?

খুরশীদ আলম: আমার কাছে সংগীত অর্থাৎ গান হচ্ছে আমার প্রাণ। আমার জীবন। ঠিক যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া মানুষ বাঁচে না ঠিক তেমনি সংগীত আমার কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সেই অক্সিজেনের মতো।

আনন্দ আলো: ব্যক্তি খুরশীদ আলম এবং শিল্পী খুরশীদ আলম। কাকে আপনি সফল মনে করেন?

খুরশীদ আলম: শিল্পী খুরশীদ আলম অবশ্যই সফল। আর ব্যক্তি খুরশীদ আলম একজন সাদাসিধে মানুষ। আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো সুখ-দুঃখ নিয়েই ব্যক্তি খুরশীদ আলমের জীবন ধারা।

আনন্দ আলো: আবার যদি তরুণ বয়স ফিরে পান তখন কী করবেন?

খুরশীদ আলম: আবার গায়ক হওয়ার চেষ্টা করব।

আনন্দ আলো: আপনি গান দিয়ে সবাইকে বিনোদিত করেন। আপনার নিজের বিনোদ কী?

খুরশীদ আলম: বিনোদন আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমি বিনোদিত হই যখন মানুষ আমাকে ভালোবাসে, আমার গান শোনে। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় বিনোদন আমার কাছে নেই।

আনন্দ আলো: যে কাজটা করলে মন ভালো হয়ে যায়?

খুরশীদ আলম: সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটালে মন ভালো হয়ে যায়।

আনন্দ আলো: গোপন কোন কথাটি স্ত্রীর কাছে বলেন না?

খুরশীদ আলম: আমার কোনো গোপন কথা নাই। সব কথাই তো বলা হয়ে গেছে।

আনন্দ আলো: আপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক?

খুরশীদ আলম: আমি সহজ সরল একজন মানুষ। আমি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করি। এটা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক।