সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
একসময় ঘরোয়াভাবে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে বেবী নাজনীন, রিজিয়া পারভীন, বাদশা বুলবুল, পলাশ, অাঁখি আলমগীর, রূপক, আরিফ, সঙ্গীতা, সুস্মিতাসহ বাংলাদেশের অনেক বড় বড় শিল্পী গান গাইতেন। এছাড়া অনেক জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো পারফর্ম করতো। বর্তমান সময়ে এসব অনুষ্ঠানে তারকা শিল্পী বা ব্যান্ডগুলো সেভাবে পারফর্ম করেন না। তবে এসময়ে যারা গান করেন তাদের মধ্যে কাজী শুভ্র, রিংকু, কনা, রন্টি দাস, বেলাল খান, পড়শি, কর্নিয়া, ঐশিরা খুবই আলোচিত। এছাড়া বিভিন্ন ছোট ব্যান্ডগুলোও এখানে পারফর্ম করে থাকে।
বিয়ের জনপ্রিয় গান
গাজীপুরের বিলাশপুর গ্রাম। গ্রামের সবুজ শ্যামল মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি সুর কানে বাজতে লাগল ‘আইজ আমরার কুসুম রানীর বিবাহ হইবো’। গানটা শুনেই একটু থমকে দাড়াতে হলো। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখা গেল একটি বাড়ি থেকে এই সুর ভেসে আসছে। সেই বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই বোঝা গেল বাড়িতে বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে। মেয়েটিকে ঘিরে আশেপাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা বসেছে। সবাই মিলে গান গাইছে। কখনো তারা গাইছে ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ’, আবার কখনো তারা গাইছে ‘লাজে রাঙা হলো কনে বউ গো’, ‘লীলাবালি লীলাবালি পর যৈবতী সইগো’, ‘দেও গায়ে হলুদ’, ‘উঠলো কন্যা’, ‘বাঁধল চুল’, ‘পায়ে আলতা দিয়া’, ‘পিড়িতে বসিলকন্যা লাজে রাঙ্গা হইয়া’, ‘বিয়ের সাজনি সাজো কন্যা’, ‘আজ দিদির বিয়ে’ ইত্যাদি গান। বাঙালির অন্যতম সেরা উৎসব হচ্ছে বিয়ে। আর প্রতিটি ঘরেই বিয়ে মানে আনন্দ। আর আনন্দ শুরু হয় পানচিনি, গায়ে হলুদ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। এসব আনন্দ উৎসবকে আরো জমজমাট করে তোলে গানবাজনা। গ্রামাঞ্চলে হাছন রাজা, লালন, ভাওয়াইয়া ইত্যাদি গানগুলো প্রচলিত রয়েছে। বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গান হয়ে থাকে। বাড়ির উঠানে কনে বা বরকে ঘিরে গানবাজনা হয়ে থাকে। কিন্তু শহরের প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণই অন্যরকম। এখানেও বিয়ে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গানবাজনা হয়ে থাকে। তবে লোকগানের খুব একটা প্রচারণা এখানে হয় না। সাধারণত এলাকাভিত্তিক ব্যান্ড বা বড় ব্যান্ড অথবা জনপ্রিয় শিল্পীরা একক ও দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন। আবার ডিজে পার্টির আয়োজনও হয়ে থাকে।
বিয়েতে ব্যান্ডের গান
বর্তমান সময়ে বিয়ে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানগুলোতে ব্যান্ডের গানের পাশাপাশি হিন্দি গানও হয়ে থাকে। হিন্দি গানের আইটেম গানগুলো বেশি চলে। গানবাজনার শুরুটা হয় সাধারণত বাংলা গান দিয়ে। যেমন সেই তুমি, এক আকাশের তারা, পাগলা হাওয়া, জোরকা জাটকা, মৌসুমী, শ্যামপিরিতি, নয়নে বুঝে না, তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, মন কিযে চায় বল, উদাসী এই মনে, তুমি আছো বলে, যাদুর শহর, কানামাছি, üদয়ে লিখেছি তোমার নাম, লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প, মনচুরি, দৃষ্টি প্রদীপ জ্বেলে, তুমি আমার প্রথম সকাল, চাঁদ তারা সূর্য নও, আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, একপায়ে নুপুর তোমার, হবো দুজন সাথী, মন শুধু মন ছুঁয়েছে, সরলতা প্রতিমা, ফেরারী মন, তারা ভরা রাতে, চাঁদ সাজলো, প্রেমের মানুষ ইত্যাদি গান গাওয়া হয়। এই ধরনের গানের পর শুরু হয় হালকাত জোওয়ানি, শীলা কি জোওয়ানি, মুন্নী, চিকনী চামেলী, ডান্স বাসন্তী, ধুম মাচালে, কাজরারে, ইয়ালি, আশিক বানাইয়া তুনে, দিলওয়ালী গার্লফ্রেন্ড, প্রেম রতন ধনপাও, আবিতো পার্টি শুরু হয়েই, মেরা নাম মেরী, চিটাইয়ান কালাইয়ান টাইপের হিন্দি গান।
এরপর সবশেষে এসো তোমার এই মনটাকে, পরী, নিঃসঙ্গতা, দিন গেল, শ্রাবণের মেঘগুলো, যেখানে সীমান্ত তোমার, আমার তুমি ছাড়া কেউ নাই, যায় দিন, স্বপ্ন ছোয়া ভালোবাসা, তুমি যদি বল পদ্মা মেঘনা, মাঝ রাতে চাঁদ আলো না বিলায়, তারা ভরা রাতে, পাগল তোর জন্য রে, সোনা বউ শুনছোনি, এই রাত তোমার আমার ইত্যাদি গানগুলোর মধ্যদিয়ে বিয়ের গানবাজনা সমাপ্তি ঘটে।
ডিজে পার্টি
ডিজে পার্টি বিয়ের অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও বেশি জাকজমক ও আনন্দময়। ডিজেরা তাদের অত্যাধুনিক ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে হলুদ ও বিয়েতে গানের পার্টিকে করছে আকর্ষণীয়। ডিজেরা হিন্দি, বাংলা, ইংরেজিসহ সব গানে বিভিন্ন রকমের সাউন্ড ও সুর সংযোজন করে সময়ের সঙ্গে গানের রিমিক্স করে। এ সব কারণেই বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই মিলে প্রাণ খুলে আনন্দ করার বড় একটা অনুষ্ঠান হতে পারে ডিজে পার্টি। আলোচনা করে ডিজে পার্টির সম্মানী নির্ধারণ করা হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যান্ড পার্টি
বিয়ে, গায়ে হলুদ বা বউভাতের অনুষ্ঠানে গানবাজনা ছাড়াও অনেকে ব্যান্ড পার্টির আয়োজন করে থাকেন। পুরান ঢাকার বিয়েতে ব্যান্ড পার্টির অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। ব্যান্ড পার্টি, ঢুলি এবং সানাই বাদকদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে জনসাধারণের কাছে। পুরান ঢাকার আলু বাজারে গেলেই এই ব্যান্ড পার্টি বা অর্কেস্ট্রা দলের খোঁজ পাওয়া যাবে। সেখানে ঢাকা ব্যান্ড পার্টি, ন্যাশনাল ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি ব্যান্ড দল রয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে এই অর্কেস্ট্রা বা ব্যান্ড পার্টিগুলোর জন্য খরচ পড়বে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।
গানবাজনা দলের সম্মানী
বিয়েতে গানবাজনা যারা করেন তাদেরকে সর্বনিম্ন সম্মানী দেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ দেয়া হয় ৩ লাখ টাকা। সম্মানীর হেরফের ঘটে কোথায় হবে, কখন হবে, কতজন শিল্পী থাকবে, কারা থাকবে মিউজিক সিস্টেম কী ধরনের হবে অর্থাৎ ্রয৪, ্রয৬, ্ র্ঢ্র কোনটি ব্যবহার করা হবে তার ওপর নির্ভর করে সম্মানী।