Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বাংলাদেশের তরুণ তরুণীরা যথেষ্ট সম্ভাবনাময় : তাসলিম আহমেদ

টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যানেল আইতে শুরু হয়েছে ফিউচার লিডার্স প্রোগ্রাম (এফএলপি)। গত দুই আসরের চাইতে এবারের আসর আরও বেশী উজ্জ্বল। এবারও বিচারকের আসনে বসেছেন কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তসলিম আহমেদ। ব্যক্তিজীবনে তিনি মোবাইল অপারেট কোম্পানি সিটিসেল এ হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস এন্ড পাবলিক রিলেশনস পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারে এফএলপি আয়োজনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা, নুতনত্ব কিংবা নির্বাচিতদের বিশ্বের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ দেওয়া হবে, কর্মজীবনের দ্বারপ্রান্তে তাদের জন্য কী কী সুযোগ অপেক্ষা করছে এমন সব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আনন্দ আলো’র সঙ্গে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।
আনন্দ আলো: এফএলপি’র তৃতীয় আসর চলছে। গত দুটি আসর থেকে এবারের আয়োজন কেমন মনে হচ্ছে?
তসলিম আহমেদ: এবারের আয়োজন গত দু’বছরের চাইতে অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন। আমরা প্রথম বছর শুধুমাত্র বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপ থেকে ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন করি। পরের বছর আমরা সায়েন্স এবং আইসিটি টেকনোলজি নিয়ে যারা পড়াশুনা করছে তাদেরকে প্রতিযোগিতায় নেই। ঐ আসরে ফিউচার লিডার্স প্রোগ্রাম বিজনেস এবং সায়েন্স এর স্টুডেন্টদের নিয়ে হয়েছে। এবছর আয়োজনটাকে আরো বড় করা হয়েছে। এবছর যেকোনো সাবজেক্টে পড়াশুনা করা স্টুডেন্টই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছে। সেটা হতে পারে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিটিক্যাল সায়েন্স, হিসাব বিজ্ঞান, ইতিহাস কিংবা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট। তাই এবারের আয়োজনটি অনেক বড় পরিসরে হচ্ছে। এটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য একটা পরিবর্তন। দ্বিতীয় যে পরিবর্তন এবছর লক্ষ করছি তা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণ। গত দু’বছর আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীই সবচেয়ে বেশি পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ সেভাবে পাইনি। যেটা এবছর পেয়েছি। আরেকটি পরিবর্তনের কথা না বললেই নয় তা হলো এ বছর আমাদের সাথে আরো বেশি ইউনিভার্সিটি যুক্ত হয়েছে। আমাদের আগে ছিলো ইতালির ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব মিলান এবং ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স-এর স্কলারশীপ। ইংল্যান্ডের সোয়াস-এর স্কলারশীপও ছিল। এবছর জার্মানী এবং রাশিয়ার বেশকিছু ইউনিভার্সিটি এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এ বছর সায়েন্স শাখা থেকে কেউ যদি বিজয়ী হন তাকে আমরা তার যোগ্যতা অনুযায়ী রাশিয়া বা জার্মানীতে পাঠাতে পারবো। এবারের আসরে ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হচ্ছে কম। অর্থাৎ গত দুই আসরের ছেলেমেয়েদের যে যে বিষয়গুলো নিয়ে বোঝাতে হয়েছে এবারের আসরের ছেলে-মেয়েদের তা বোঝাতে হচ্ছে না। এরা এবার অনেক কিছু জেনে শুনে বুঝেই এসেছে। তারমানে এরা গত দুই আসরের প্রোগ্রাম দেখেছে। এটা অবশ্যই পজিটিভ একটা দিক।
আনন্দ আলো: এই অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ কী?
তসলিম আহমেদ: আমাদের অনুষ্ঠানের মূল লক্ষই হচ্ছে ফিউচার লিডার্স তৈরি করা। এখন একটি, দুটি কিংবা তিনটি আসর করেই আমরা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব পেয়ে যাবো এমনটি ভাববার কোনো কারণও নেই। এই অনুষ্ঠানে একজন প্রতিযোগিকে সব কাজই সত্যি সত্যি করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি গ্রুপকে একটা ইভেন্ট সেটা হতে পারে কনসার্ট কিংবা মেলার আয়োজন করার মতো কাজ। এখন ঐ গ্রুপ সত্যিকারের কনসার্ট বা মেলা করতে হলে যা যা করতে হবে যার যার কাছে স্পন্সরশীপ, টিকেট ছাপানো, ভেন্যু ঠিক করা সহ সব কাজ করতে হয় ঠিক তেমনি প্রতিযোগিদেরও করতে হয়। এই বিষয়ে এদের গ্রুমিং করানো হয়, ক্লাস নেয়া হয়। যাতে একটি ছেলে বা মেয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে এগিয়ে যেতে পারে। ফলে একটি ছেলে বা মেয়ে খুব দ্রুত অনেক কিছু শিখতে পারছে এবং বাস্তব কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। যারা পড়াশুনা অবস্থায় থাকে বা পড়াশুনা শেষ করে তখন কিন্তু তাদের স্বপ্নটা অনেক বড় থাকে। ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা থাকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে আসার সাথে সাথে একটা সমুদ্রে পড়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। তাই ফিউচার লিডার্স ছাত্র জীবন এবং কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা সেতু তৈরি করে দেয়। যা একজন ছাত্রের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন মানুষ কর্মজীবনে ইন্টারশীপে এসে যেমনি সাগরে পড়ে যায়, তেমনি ছাত্র-জীবন থেকে কর্মজীবনে এলেও একই দশা হয়। তাই একজন তরুণ অথবা তরুণী আমাদের ফিউচার লিডার্স এ এসে সত্যিকারের কর্মজীবনের স্বাদ পায় এবং নিজেকে তৈরি করার সুযোগও পায়। একজন মানুষকে সত্যিকারের কর্মজীবনে যেমন সিচ্যুয়েশন মোকাবেলা করতে হয়, ঠিক তেমনি এফএলপির প্রতিযোগিকেও মোকাবেলা করতে হয়। সেই দিক থেকে বলতে গেলে এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ হচ্ছে একজন মানুষের ট্রান্সফরমেশন তৈরি হওয়া। আমাদের এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হবে এটা ঠিক। তবে একদিন, দু’দিন কিংবা দু’চারটি আসরেই তা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি এই প্রতিযোগিতায় থাকা অবস্থায় একটি ছেলে বা মেয়ে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য যে টিপস পাচ্ছে, এগিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশনা পাচ্ছে, কাজের মাঝে কী ধরনের সমস্যা হলে কী করা উচিৎ এমন নানান দিক নির্দেশনা পেলে একজন মানুষের ট্রান্সফরমেশন হবে বলে আমরা মনে করি। যেমন আমাদের অনুষ্ঠানে প্রথমদিন যে ছেলে বা মেয়েটি এসে যেমনিভাবে কথা বলেছে, যেভাবে হেটেছে এর কয়েক মাস পরেই তার কনফিডেন্স লেভেল কিন্তু অন্য জায়গায় চলে গেছে। অর্থাৎ কনফিডেন্স গ্রো করেছে। এটাও তো কম নয়। এই কনফিডেন্সটাকে লালন করতে করতে হয়তো সে একদিন দক্ষ একজন নেতা হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য।
আনন্দ আলো: এই লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়েছে অনুষ্ঠানটি?
Taslim-AHmed-1তসলিম আহমেদ: আমি বলবো না যে আমরা খুব বেশি সফল হয়েছে। আরো অনেক পথ আমাদের যেতে হবে। গত দুই আসর এবং এবারের আসর মিলে যতটুকু সাড়া পাওয়ার কথা ছিলো আমার মনে হয় এরচেয়ে বেশিই সাড়া পেয়েছি। যেমন- বিবিসি যখন আমাদের অনুষ্ঠান কাভার করে, সেটা দেখতে সত্যিই অসাধারণ লাগে। একটি ছেলে যখন জার্মানীতে পড়াশুনা করছে কিংবা চাকরি করছে সেটা দেখতেও ভালো লাগে। একটি মেয়েকে যখন দেখি মিলান থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসে উদ্যোক্তা হয়েছে তা অবশ্যই গর্ব করার মতো ঘটনা। তাই গত দুই আসরে চাওয়ার চেয়ে বোধকরি পাওয়ার ভাগটা অনেক বেশিই হয়েছে।
আনন্দ আলো: তরুণদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের তরুণদের সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
তসলিম আহমেদ: বাংলাদেশের তরুণদেরকে আমি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় মনে করি। কিছুদিন আগে আমি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলাম আমরা বিচারকরাও মাঝে মাঝে তরুণদের কাজ দেখে অবাক হয়ে গেছি। একটা কাজ দিলে দেখা গেছে খুব দ্রুতই তারা করে ফেলেছে। যা আমাদের করতে হয়তো আরো বেশি সময় লাগতো এবং বেশি দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হতো। এফএলপির প্রোগ্রামে আমি অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ দেখেছি। এরা সঠিক দিকনিদের্শনা পেলে অনেক দূর যাবে। আমার বিশ্বাস সারাদেশেই এমন হাজারো তরুণ রয়েছে। একটু দিক নির্দেশনা পেলেই এগিয়ে যাবে অনেক দূর। বর্তমান তরুণদের ক্যাপাবিলিটি আছে অনেক। শুধু প্রয়োজন গাইড লাইন। কথায় বলে দক্ষ জনশক্তির জন্য দরকার স্বপ্নময় নেতৃত্বের। তাই বর্তমান তরুণরা সঠিক গাইড লাইন পেলে বিশ্বের যেকোনো তরুণ প্রজন্মের সাথেই আমাদের তরুণরা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে। অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং ধৈর্য থাকলেই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম দক্ষ জন শক্তিতে রূপান্তরিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আনন্দ আলো: এফএলপি’র ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
তসলিম আহমেদ: এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা আছে। তার মধ্যে অনেকগুলো পরিকল্পনা নিয়ে কাজও হচ্ছে। দু’তিনটি  আসরে আমরা সব করতে পারিনি। আমরা যেমন প্রথমদিকে চিন্তা করেছিলাম যে, বিজয়ীদের শুধুমাত্র স্কলারশীপ দেব। যেনো তারা ভালোভাবে পড়াশুনা করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উন্নতি করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নেও কন্ট্রিবিউশন রাখতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় আসরে স্কলারশীপ দেয়ার পাশাপাশি বেশ ক’জনকে চাকরিও দিয়েছি। এবার আরেকটু বড় পরিসরে বিষয়টা চিন্তা করা হচ্ছে। যেমন অনেক প্রতিযোগীই আমাদের কাছে বলেছে- পড়াশুনা শেষ করেছে চাকরির প্রয়োজন। তাই আমরা এই বিষয়টাও এবার দেখছি। নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিযোগীদের জন্য দেশেই চাকরির ব্যবস্থা করার চিন্তা রয়েছে। আরেকটা জিনিস করার চিন্তা রয়েছে তা হলো যে কোম্পানির পার্টিকুলার বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়েছে যেমন- একটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানির প্রোডাক্ট মার্কেটিং করার কাজ করা হয়েছে। আমরা এমনিভাবে কিছু কোম্পানির সাথে যারা যারা প্রতিযোগিতায় থাকার সময় কাজ করেছে বা সমস্যার সমাধান দিয়েছে তাদেরকে সম্পৃক্ত করে দেয়ার চিন্তা করছি। অথবা ঐ রিপোর্টটি যদি ঐ কোম্পানির কাজে লাগে তাও প্রোভাইড করা হবে এবং যে টিম ঐ রিপোর্ট তৈরি বা সমস্যার সমাধান দিয়েছে তাদেরকে পুনরায় নতুন কোনো কাজে নেয়ার বিষয়ে সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি।
আনন্দ আলো: এবারের আসরের বর্তমান অবস্থা বলবেন
তসলিম আহমেদ: বর্তমানে প্রতিযোগিতাটি শেষ পর্যায়ে আছে। প্রতিযোগিতার নানান ধাপ পেরিয়ে বর্তমানে প্রায় ৩০ জন প্রতিযোগী রয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে চ্যানেল আই-এর পর্দায় অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হবে।