Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বন্ধুরা বুক ফুলিয়ে গিটার বাজাও-আইয়ুব বাচ্চু

কেমন আছিস তারেক? ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ভালো। রেজানুর ভাই কেমন আছে রে? ভালো আছেন। উনাকে আমার সালাম দিস। আচ্ছা তুই কোথায়? আমি আনন্দ আলোতে। তুই এখনই চলে আয় এবি কিচেনে। দুপুরে এক সঙ্গে খাব। আড্ডা দেব। বাচ্চু ভাইয়ের এ কথা গুলো এখন বার বার কানে বাজে। সেদিন ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। চ্যানেল আই-এর ২০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একেবারে ভিন্ন আয়োজন নিয়ে সাজানো হয়েছিল চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত গানের অনুষ্ঠান। ‘আমার যতো গান’-এর বিশেষ এই পর্বটি। যেখানে গান গেয়েছেন চ্যানেল আই মিউজিক্যাল প্রিমিয়ার লীগ এবং চ্যানেল আই বাংলা গানের সেরা শিল্পীরা। আর তাদের গানের সঙ্গে প্রায় তিনঘণ্টা ইনস্ট্রমেন্ট বাজান এলআরবির দলনেতা ও লিড ভোকাল ও গিটারস্টি আইয়ুব বাচ্চু। সেদিন আনন্দ আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বলেছিলেন। সাক্ষাৎকারটি দেখে গেলেন না তিনি। তার আগেই রুপালি গিটার ফেলে বহু দূরে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। সেদিনের সেই সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

আনন্দ আলো: কোটি প্রাশে মিশে, আমরা এখন বিশে-এই ¯েøাগান নিয়ে ১ অক্টোবর চ্যানেল আই পা রাখে ২০ বছরে। বিশ বছর তাদের জার্নির সাথে আপনিও ছিলেন। চ্যানেল আই এর সাথে আপনার প্রথম দিকের স্মৃতির কথা বলুন?
আইয়ুব বাচ্চু: চ্যানেল আইকে আমি আমার নিজের চ্যানেল মনে করি। বিশ বছর তাদের জার্নির সাথে আমিও ছিলাম। ছোট একটা স্মৃতির কথা বলি, সিদ্বেশ্বরীতে তখন চ্যানেল আইয়ের অফিস ছিল। সাথে ছোট একটা রান্না বান্নার ঘর ছিল। সেই রান্না ঘর মাঝে মধ্যে ব্যবহার হতো আমাদের ভয়েজ দেয়ার রুম হিসেবেও। আমি কিংবা অন্যরাও এখানে ভয়েজ দিতে এসে কোনো সমস্যা মনে করত না। বরং আনন্দ নিয়ে কাজ করতো। চ্যানেল আই আসলেই ছিল এবং আছে একটা পরিবারের মতো। এখান থেকে দুপুরে কেউ না খেয়ে বের হতে পারত না। তখন খাওয়াটা ছিল ফ্রি। খুবই অন্যরকম পরিবেশ ছিল। সেই আন্তরিক পরিবেশ এখনো আছে। সাগর ভাই সব সময় আমাদের শিল্প-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের গভীর ভাবে মূল্যায়ন করেন। আগেও করতেন, এখনো করেন।
আনন্দ আলো: দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি ২৭ বছর পার করে ২৮ বছরে দাঁড়িয়েছে। এতটা বছর আপনার হাত ধরে এলআরবি পাড়ি দিয়েছে সফলতার সঙ্গে। অনেক বাধা, বিপত্তি, সমস্যা তো ছিলই। কিন্তু তারপরও সব কিছুকে উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত আসার জার্নিটা কেমন ছিল?
আইয়ুব বাচ্চু: ১৯৯১ সালে আমরা যখন শুরু করেছিলাম অনেকে আমাদের পাগল বলত। কিন্তু এতটা বছর পথ পাড়ি দেয়ার পর আজ প্রশ্ন আসে, আসলে আমরা পাগলি ছিলাম, নাকি যারা আমাদের পাগল বলতেন তারা? কারণ এলআরবি সব সময় শ্রোতাদের ব্যান্ড। আজকে আমাদের এ সফলতার সমান ভাগিদার ৬ কোটি মানুষ। যাদের ভালোবাসায় আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এ সময়টাতে অনেক আনন্দ, বেদনা, হাসি, কান্না, যারা সমস্যা কিংবা সফলতার প্রহর এসেছে। আছে অনেক ত্যাগ স্বীকারের গল্প। শ্রোতাদের ভালোবাসা নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। তারাই আমাদের অক্সিজেন।
আনন্দ আলো: একটি দলকে এতটা বছর একত্রিত করে ধরে রাখার রহস্যটা কী?
আইয়ুব বাচ্চু: রহস্যটা হচ্ছে ভালোবাসা। একটি ব্যান্ডকে একত্রিত করে রাখার পেছনে ¯েœহ, মায়া মমতা, ভালোবাসা ছাড়া কিছু না। একজন পিতা তার সন্তানকে, স্ত্রীকে সংসার জীবনে যেভাবে গুছিয়ে রাখেন আমরা ব্যান্ড মিউজিককেও সে ভাবে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। ব্যান্ড মিউজিক হচ্ছে একটা পরিবার।
আনন্দ আলো: এলআরবি থেকে কোনো অ্যালবাম আসছে না কেন?
আইয়ুব বাচ্চু: গানের বাজার এখন অস্থিতিশীল তাই নতুন গান প্রকাশ করছে যা এলআরবি। এখনতো আর ফিজিক্যাল অ্যালবাম করার চল নাই।। তাই নুতনভাবে ভাবছে এলআরবি। অ্যালবাম হয়তো আর আসবে না। তবে সিঙ্গেল সিঙ্গেল করে গান প্রকাশ করা হবে।
আনন্দ আলো: আপনি অনেকের জন্য গান তৈরি করেছেন। এখন করছেন না কেন?
আইয়ুব বাচ্চু: সুর করব। হয়তো এখন করছি না। কারণ আমি যাদের নিয়ে কাজ করব তারা কোথায় গান গুলো প্রকাশ করবে। কে তাদের গান প্রচার করবে। আমি রূপম, কানিজ, সূচনা, জুয়েল এরকম অনেকের কাজই করেছি। আগামীতেও করব।
আনন্দ আলো: আইয়ুব বাচ্চু সুর করলে কেউ এগিয়ে আসবে না?
আইয়ুব বাচ্চু: গান বের করে কোথায় নিয়ে যাব? এখন তো অডিও ইন্ডাস্ট্রিই নেই।
আনন্দ আলো: এখন তো আর আগের মতো ব্যান্ড দল গুলোর সূবর্ণ সময় নেই। আগের মতো গানও দিতে পারছে না। এমনটি কেন হচ্ছে?
আইয়ুব বাচ্চু: শুধু ব্যান্ডের কথা বলাটা ঠিক হবে না। এখন তো গানের পুরো ইন্ডাস্ট্রিই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গানে পাইরেসির মতো বিষাক্ত বিষয়টি ঢুকিয়ে দেয়ার কারণে নতুন কিছু সৃষ্টি কমে গেছে। সিডিতে গান শোনার আনন্দ আগের মতো নেই। তবে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আশা করি গান প্রকাশের সুন্দর একটি পরিস্থিতি আসন্ন।
আনন্দ আলো: নতুন কোন ব্যান্ড দলও তো আসছে না…
আইয়ুব বাচ্চু: এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। আমি সর্বদা তরুণদের সঙ্গে থাকি। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো ব্যান্ড দল তৈরি হচ্ছে। এটা অনেকেই দেখেও না দেখার ভান করছেন। চুপ করে আছে। ফলে তারা সামনে আসতে পারছেনা। এ ব্যর্থতা আমাদের। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ালে তারা আরও ভালো করবে।
আনন্দ আলো: এলআরবি এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। আপনার অনুপস্থিতে কি হবে?
আইয়ুব বাচ্চু: এটা নিয়ে ভাবতে চাইনি কখনো। আমি তো আমাকে দিয়েই এই সুরের সাধনা করেছি। জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত নিজেকে উজার করে দেবো। বাংলা গান নিয়ে যে লড়াই করেছি তাতে কিন্তু আমি অনেক খানি সফল। লড়াইটা শুধু এলআরবির না, অনেক গুলো লড়াই করেছি। প্রথম, বাংলা গানকে তরুণদের ভেতরে ছড়িয়ে দেওয়া। গানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সাহস দেখানো। আমি মনে করি এ গুলোই রয়ে যাবে। এখনো আমার তৈরি জুয়েলের অপরিচিত বা কম জনপ্রিয় কোনো গান কেউ গাইলে শ্রোতারা বলে দেয়, এটা আইয়ুব বাচ্চুর সুর। এই পুরোটা মিলেই কিন্তু আমার ইন্ডাস্ট্রি।
আনন্দ আলো: মিউজিশিয়ানদের অবস্থা এখন কেমন বলে মনে হয় আপনার কাছে?
আইয়ুব বাচ্চু: একটি ব্যান্ড একটি সংসারের মতো। একটি সংসারে যেমন সুখ-দুঃখ থাকে, তেমনি একটি ব্যান্ডের মধ্যেও থাকে। ব্যান্ডের মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা তা বাইরে প্রকাশ করব কেন? শীর্ষ ব্যান্ড গুলোর পাশাপাশি নতুন ব্যান্ডের প্রচার প্রসারও দরকার। সুতরাং মিডিয়াসহ সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
আনন্দ আলো: গান তো মানুষ এখন শুধু দেখে। নতুন শিল্পীরা ভিউয়ার্সের ওপর ভিত্তি করে তারকা হয়। এ বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
আইয়ুব বাচ্চু: এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমি যখন শো করি। দর্শকরা আমার গান শুনে, আমাকে দেখে আনন্দ ফ‚র্তি করে। তারাই আমার ভিউয়ার্স, আমার দর্শক, আমার শক্তি। অন্যরা কী করছে বা কী নিয়ে তারকা হচ্ছে এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।
আনন্দ আলো: অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখন কেমন মনে হচ্ছে?
আইয়ুব বাচ্চু: অডিও বাজার এখন মৃত প্রায়। তাই লাভ তো দুরে থাক, বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়ারও আশা করা যায় না। অডিও পাইরেসি তো আছেই, আরো যোগ হয়েছে নতুন অ্যালবাম প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে আপলোড করে দেয়ার প্রবণতা। তাহলে পয়সা খরচ করে অ্যালবাম কেনার কী দরকার। কাজেই এখন অ্যালবামের বানিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
আনন্দ আলো: এই অবস্থা থেকে উত্তরণ কী?
আইয়ুব বাচ্চু: উত্তরণ অবশ্যই সম্ভব। শুধু দরকার যার যার জায়গায় থেকে একটু সচেতন হওয়া। অডিও একটি শিল্প। আর এই শিল্পের ওপর ভিডিও করে কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। আমি মনে করি প্রথমে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে ঠিক হতে হবে। এবং শিল্পীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।
আনন্দ আলো: এ প্রজন্মের অনেক শিল্পীই তাদের আইডল হিসেবে আপনাকে অনুসরণ করেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আইয়ুব বাচ্চু: আমি আইয়ুব বাচ্চু এখনও অনুসরণ করার মতো কিছু হতে পারিনি। তবে কেউ যখন আমাকে অনুকরণ করে তখন বিষয়টি ভালোই লাগে। যারা অনুসরণ করে তারাও ভালো গায়। নিজেদের গানে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেন। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও আর্শিবাদ থাকলো।
আনন্দ আলো: চট্টগ্রামের উদীয়মান শিল্পীদের জন্য আপনি একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার কথা বলছিলেন। সেটার কি খবর?
আইয়ুব বাচ্চু: আমি চট্টগ্রামের সন্তান। তাই চট্টগ্রামের জন্য আমি কিছু করে যেতে চাই। আমি সারাজীবন গাইতে পারব না। কিন্তু আমি চাই চট্টগ্রাম থেকে আমার মতো আরো কেউ বের হোক। চট্টগ্রামের উদীয়মান শিল্পীদের জন্য আমি একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে নিয়ে যেতে চাই। চট্টগ্রামে ‘এবি লাউঞ্জ’ ব্যান্ড সঙ্গীত এবং উদীয়মান ব্যান্ড শিল্পীদের জন্য নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার।
আনন্দ আলো: গিটারের সঙ্গে আপনার ভালোবাসা দীর্ঘ দিনের। এই অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেয়েছিলেন?
আইয়ুব বাচ্চু: আমার বাবা-মা দু’জনের কেউই চাননি আমি গিটারিস্ট হই বা গান করি। আমি একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। বিশাল একটা পরিবারে বেড়ে ওঠা। আমার হাতে সব সময় একটা গিটার থাকত। অনেকটা চোরের মতো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তাম আবার চোরের মতোই করে ঘরে ঢুকতাম। মা প্রায়ই বলতেন, এগুলো করার দরকার নেই। তোমাদের প্রচুর ব্যবসা-বাণিজ্য আছে সেগুলো দেখাশুনা কর। মার কথা শুনে তখন আমার মনে হয়েছিল জীবনটা বুঝি শেষ। আমার ভেতরে একটা বাউলিপনা ছিল। সব সময় মনে করতাম আমাকে গিটার বাজাতে হবে, সুর ও কম্পোজিশন করতে হবে, মিউজিক করতে হবে। ব্যস নেমে পড়লাম গিটার বাজানো শিখতে।
আনন্দ আলো: সর্বপ্রথম আপনাকে কে গিটার কিনে দিয়েছিলেন?
আইয়ুব বাচ্চু: ১৯৭৫ সালের কথা। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। পরীক্ষার ফল খুব ভালো হওয়ায় বাবা আমার ওপর বেজায় খুশি। তিনি আমাকে একটা গিটার কিনে দিয়েছিলেন। গিটার কেনার আগে বাবা জিজ্ঞেষ করেছিলেন তুমি কি ধরনের গিটার চাও? আমি বলেছিলাম কালো গিটার চাই। কিন্তু তখন খুব কম কালো গিটার পাওয়া যেত। বাবা আমার জন্য একটা কালো গিটার কিনে আনলেন। গিটার বাজানো শিখতে শুরু করলাম। তারপর আমার এক বন্ধু নওশাদ এসে গিটারের শুরুটা দেখিয়ে দিল। কীভাবে বাজাতে হবে, কী করতে হবে। ডি পাপলোর কয়েকটি ভিডিও দেখলাম। রিচি বøাক মোরকে দেখলাম। মনে মনে কল্পনা করতে থাকলাম, ইস, যদি এদের মতো গিটারিস্ট হতে পারতাম।
আনন্দ আলো: গিটার বাজানোর শুরুটা ছিল কী ভাবে?
AB-1-(193)আইয়ুব বাচ্চু: গিটার বাজানোর প্রথম নেশাটা চাপে স্যানটানা আর রিচি ব্র্যাসকোর বাজানো দেখে। এর বাইরে আমার গিটার বাজানোর প্রেরণা গুরু আজম খানের লিড গিটারিস্ট নয়ন মুন্সীর বাজানো দেখে। প্রথমে আমি তাদের অনুকরণ করে নিজেই গিটার শেখা শুরু করি। তারপর বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে গিয়ে গিটারটা রপ্ত করি।
আনন্দ আলো: গিটার বাজিয়ে জীবনের প্রথম উপার্জনের কথা জানতে চাই।
আইয়ুব বাচ্চু: এটা সত্তরের দশকের কথা। তখন আমি ভাড়ায় গিটার বাজতে যেতাম, আমার নিজের গিটার ছিল না। তাই গিটারটাও ভাড়া করে নিয়ে যেতাম। ওই সময় ডিসকো কোম্পানির একটি গিটার আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে দিন প্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় নিয়ে শো করতাম। ভাড়া হিসেবে ৩০ টাকা দেওয়ার পর আমার কাছে আরো ৩০-৪০ টাকা রয়ে যেত। সেই টাকা দিয়ে চলতো নিজের খরচ। এ জন্যই আমি নিজেকে ভাড়া খাটা গিটার প্রেমিক বলি। এখন কিন্তু আমার নিজের ৩৯টা নামী দামী গিটার আছে। তবে সেই ভাড়া খাটা গিটারের দিন গুলোর স্মৃতি আজও জীবন্ত হয়ে আছে আমার মনে।
আনন্দ আলো: আপনার সংগ্রহে কত গুলো গিটার আছে?
আইয়ুব বাচ্চু: আমার গিটার সংগ্রহ করার শখ ছিল। কোথাও পছন্দের কোনো গিটার পেলে কিনে ফেলতাম। গিটার সংগ্রহ করতে ভালো লাগে। বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা কোম্পানির গিটারও আছে আমার সংগ্রহে। যেমনÑ আইভানেজ, জ্যাকসন, কারভিন ও মিউজিকম্যানের বিভিন্ন মডেলের গিটার। এক্সক্লুসিভ গিটারও রয়েছে কয়েকটি। জন পেটরসির প্রথম বানানো ৮০০ গিটারের মধ্যে একটি আমার কাছেও আছে। এখন বাজারে পাওয়া যায় না এমন গিটারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ জেম হেভেন সেভেন, কারভিন কাষ্টমাইজড গিটার। এ ছাড়া লেসপল ইএসপি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে আমার সংগ্রহে রয়েছে বিশ্বের নামী-দামী ৩৯টি গিটার। আমার সবচেয়ে পছন্দের দুটি গিটারের একটি হালা ফারনান্দেজ গিটার। যা হাতে তৈরি এবং অন্যটি মিউজিকম্যানের একসিস।
আনন্দ আলো: গিটার সংগ্রহ করতেন কী ভাবে?
আইয়ুব বাচ্চু: গান গাইতে অনেক দেশে গিয়েছি। যেখানেই যেতাম, সেখানকার গিটার সেন্টারে সময় কাটানো ছিল আমার একমাত্র আনন্দ। গান গেয়ে যে পারিশ্রমিক পেতাম, তার একটা অংশ দিয়ে গিটার কিনতাম করতাম। এটা আমার শখ। এখন আমার সংগ্রহে অনেক গিটার। এতগুলো সংরক্ষণ করাও কঠিন। তাই তরুণদের হাতে সেগুলো তুলে দিতে চাই। তবে আমি যে গুলো দিয়ে এখন পারফর্ম করি, সে গুলো আমার কাছেই থাকছে।
আনন্দ আলো: গিটার গুলো আসলেই অনেক স্মৃতি বহন করছে। বিক্রির সিদ্ধান্তে কষ্টও নিশ্চয় হচ্ছে অনেক…
আইয়ুব বাচ্চু: সারা জীবন তো এসব গিটার আমার কাছে রেখে দিতে পারব না। বিশাল সংগ্রহ থেকে অন্তত কিছু গিটার যদি প্রতিভাবান তরুণদের কাছে দিয়ে যেতে পারি, সেটাই অনেক বেশি আনন্দের হবে।
আনন্দ আলো: তরুণ গিটার বাদকদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
আইয়ুব বাচ্চু: তরুণ গিটার বাদকদের উদ্দেশে বলব, বুক ফুলিয়ে তোমরা গিটার বাজাও। নিজের সর্বোচ্চটা ঢেলে গিটার বাজাও। গিটার তোমাকে প্রতিদান দেবে। গিটারের ছয়টা তারই তোমার কথা শুনবে।
আনন্দ আলো: আপনি তো একটি মিউজিক্যাল একাডেমি খুলতে চেয়েছিলেন, ওটার কী খবর?
আইয়ুব বাচ্চু: আসলে এ জীবনে অনেক স্বপ্নই শুকনো বালুচরের মতো শুকিয়ে গেছে। আমারও হয়তো এরকম স্বপ্ন ছিল, এখনও আছে একটা মিউজিক্যাল স্কুল কিংবা গিটার স্কুল দেয়ার, কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমানের লোকবল আর ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। আমার ইচ্ছা ছিল বাইরের কোনো একটা স্কুলের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েশন করে সুন্দর একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। একটু গুছিয়ে উঠতে পারলে হয়তো বা এটা নিয়ে আবার ভাবব। তবে আগাম কোনো প্রতিশ্রæতি দেয়া ঠিক হবে না।
আনন্দ আলো: সঙ্গীত নিয়ে এখন চাওয়া কী?
আইয়ুব বাচ্চু: আমার একটাই চাওয়া, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে সঙ্গীত শিল্পীরা যদি এক কাতারে এসে দাঁড়ান তাহলে সবার এক সঙ্গে বাঁচার একটি উপায় থাকবে হয়তো।
আনন্দ আলো: সবশেষ প্রশ্ন, আপনি জীবনটাকে কীভাবে দেখেন?
আইয়ুব বাচ্চু: চোখ মেললেই জীবন। চোখ বন্ধ করলেই জীবন নেই। জীবনের রংটাই এ রকম। আমাদের সবার ক্ষেত্রে বিষয়টি একই রকম। জীবন সে তো তার মতো করেই চলবে। আমরা কেউই জানিনা ঠিক পর মুহূর্তে কী হতে যাচ্ছে।