Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমি গানের মানুষ গান নিয়েই থাকতে চাই-পড়শী

এ প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সাবরিনা পড়শী। এরই মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে বেশকিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। অডিওর পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানেও ব্যসৱ সময় পার করছেন। তবে পড়শী সবচেয়ে বেশি ব্যসৱ স্টেজে। দেশ-বিদেশের স্টেজ শো নিয়ে সারা বছরই চলে তার ব্যসৱতা। এদিকে এরই মধ্যে গায়িকা থেকে নায়িকা রূপেও দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন তিনি। মেন্টাল নামক সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন বিজ্ঞাপনে। অভিনয়ের পর এরই মধ্যে আরজে হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়েছে তার। নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রের পর এবার ঈদে বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে অভিনেতা আল মনসুরের সঙ্গে সহ উপস্থাপক হিসেবেও দেখা গেছে পড়শীকে। এদিকে পড়শীকে নিয়ে নতুন খবর হচ্ছে সম্প্রতি ডিজাইনার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন। এক সন্ধ্যায় আনন্দ আলোকে বলেছেন, তার বর্তমান ব্যসৱতা ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে নানা কথা। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

আনন্দ আলো: শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত রানা পাগলা দ্য ‘মেন্টাল’ ছবির মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় হাজির হলেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

পড়শী: নতুন এক পরিচয়ে দর্শক-শ্রোতার সামনে আসতে পেরে সত্যিই খুব আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি আসলে গানের মানুষ। শখের বসে ছবিতে অভিনয় করেছি। অনেকেই ছবিটি দেখে প্রশংসা করেছেন। আমিও বিষয়গুলো উপভোগ করছি। কারণ এ রকম অনুভূতি অভিজ্ঞতা এই প্রথম হয়েছে। সবার দোয়া পাচ্ছি এতে। খুবই ভালো লাগছে।

আনন্দ আলো: শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কেমন লেগেছে?

পড়শী: শাকিব খান বাংলাদেশের এক নম্বর হিরো। আমি সঙ্গীতের মানুষ হয়ে তার বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করছি, তাই আমার ভেতরে একটু ভয় কাজ করছিল। শাকিব ভাই অনেক কো-অপারেটিভ, অনেক ফ্রেন্ডলী। তার কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। অভিনয় করতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

আনন্দ আলো: ছবিতে আপনি ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শানের সঙ্গেও গান করেছেন

পড়শী: হ্যাঁ, অভিনয়ের পাশাপাশি এ জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক ডাব্বুর সুর ও সঙ্গীতে গানটি গেয়েছি। শানের সঙ্গে গান করতে পেরে সত্যি আমার ভীষণ রকম ভালো লেগেছে। যার গান অ্যালবামে শুনে টেলিভিশনে দেখে বড় হয়েছি, তার সঙ্গে গান করতে পেরে কী পরিমাণ আনন্দিত হয়েছি বোঝাতে পারব না।

আনন্দ আলো: আপনি গানের জগতের মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করে অভিনয়ে এলেন কেন?

পড়শী: অভিনয় নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আমার আগেও ছিল না, এখনো নেই। আসলে ‘মেন্টাল’ ছবিতে কাজ করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। ছবির পরিচালক রনি ভাই আমার একটা মিউজিক ভিডিও দেখেন। কাজটা তার ভালো লেগে যায়। তারপর ছবিতে অভিনয় করার প্রসৱাব দেন। ছবির কাহিনি ও চরিত্র ভালো লাগায় আমি রাজি হয়ে যাই। ছবিতে আমি পড়শী একজন কণ্ঠশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি।

আনন্দ আলো: আগামীতেও কি আপনাকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে?

পড়শী: এখন এটা বলতে পারছি না। ‘মেন্টাল’ ছবিতে আমার অভিনয় দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। যেহেতু নতুন বিষয়, তাই আমিও উপভোগ করেছি বেশ। যদি পছন্দসই চরিত্র পাই, গল্প ভালো হয়, তাহলে হয়তো সামনে অভিনয় করতেও পারি। তবে আমি যেহেতু গানের মানুষ, তাই গান নিয়েই সব সময় থাকতে চাই।

আনন্দ আলো: আপনি প্রথম কোনো টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। কেমন লেগেছে।

পড়শী: প্রথমবারের মতো টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করলাম। তাও আবার ঈদের বিটিভির ‘আনন্দ মেলা’। সঙ্গে পেয়েছি বিশিষ্ট অভিনেতা আল মনসুর স্যারকে। তার সঙ্গে উপস্থাপন করে খুবই ভালো লেগেছে। বলা যায় দুই প্রজন্মের একটি মেল বন্ধন হয়েছে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ। এছাড়া আনন্দ মেলায় একটি গানেও কণ্ঠ দিয়েছি।

আনন্দ আলো: ঈদে নতুন কোনো গান প্রকাশ করেছেন কী?

পড়শী: কোরবানি ঈদে ‘মন ভুইলা’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ করেছি। গানটির কথা ও সুর করেছেন তানজীব সারোয়ার। আর সঙ্গীতায়োজন করেছেন জুয়েল মোর্শেদ। গানটিতে আমার সঙ্গে কণ্ঠও দিয়েছেন জুয়েল ভাই। সব মিলিয়ে ভিন্ন ধর্মী একটি গান হয়েছে। আমার বিশ্বাস গানটি সবার ভালো লাগবে। আর এটি অডিও আকারে প্রকাশ হলেও পরে এর ভিডিও তৈরি করবো।

আনন্দ আলো: বর্তমানে আপনার ব্যসৱতা কি নিয়ে?

পড়শী: বর্তমানে দ্বৈত একটি অ্যালবামের কাজ করছি। অ্যালবামটিতে ৫টি গান থাকবে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সিঙ্গেলসে কণ্ঠ দিয়েছি। সেগুলো আসেৱ আসেৱ রিলিজ হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে গান করেছি। এছাড়া দেশ-বিদেশে স্টেজ শো করে যাচ্ছি নিয়মিত।

আনন্দ আলো: কেমন লাগে স্টেজ শো করতে?

পড়শী: অনেক ভালো লাগে। কারণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা যায়। শ্রোতাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। সব মিলিয়ে স্টেজ শোই হচ্ছে একজন শিল্পীর আলটিমেট জায়গা। শ্রোতারা কি ধরনের গান আমার কাছে শুনতে চাচ্ছেন। আমার গান তাদের কাছে কতটা জনপ্রিয়, কোন্‌ কোন্‌ জায়গায় আরও উন্নতি করা দরকার, সামনা সামনি না গাইলে ব্যাপারগুলো বোঝা যায় না। আমি খুবই লাকি যে স্টেজে আমি নিজের গান গেয়েই সময় পার করে দিতে পারি। অনেক সময় এমন হয় যে কোনো একটি গানের শুরুটা আমি করলাম, বাকিটা শ্রোতারা গেয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে স্টেজ শো করতে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

আনন্দ আলো: আপনার নতুন অ্যালবাম শ্রোতারা কবে নাগাদ পাবেন?

পড়শী: আসলে ইচ্ছে করেই অ্যালবাম করিনি। তাছাড়া দেশ-বিদেশে স্টেজ ব্যসৱতাও ছিল। সত্যি বলতে এখন ১০/১২টি গান নিয়ে অ্যালবাম করে লাভ নেই। সব গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায় না। তাছাড়া সব গানের ভিডিও করাও সম্ভব হয় না। এ কারণে সিদ্ধানৱ নিয়েছি এখন থেকে সিঙ্গেলস আকারেই গান প্রকাশ করবো।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গানের কী খবর?

porshiপড়শী: এরই মধ্যে অনেক ছবিতে গান গেয়েছি। সম্প্রতি ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে ‘সুলতান বিরিয়ান’ ছবিতে একসঙ্গে একটি গান গাইলাম। এ গানটির কথা সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন ইমরান নিজেই। গানটি বেশ রোমান্টিক। গানটি গাইতে অনেক ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় শ্রোতাদেরও ভালো লাগবে। এ ছাড়া গাইলাম ‘বিষাক্ত ইয়াবা’ সিনেমায় পুলক ভাইয়ের সঙ্গে ‘তুমি এলে জীবনে’ শিরোনামের গানটিতে। গানটি সুর করেছেন কামরুল খান। সামনেও নতুন কিছু প্লেব্যাকে কণ্ঠ দেয়ার কথা রয়েছে আমার।

আনন্দ আলো: এখন তো অনেকেই অ্যালবাম প্রকাশ না করে একটা বা দুইটা গান দিয়ে সিঙ্গেল প্রকাশ করছে। আপনার কী পরিকল্পনা।

পড়শী: এটা আমার কাছে নতুন বিষয় মনে হয়েছে। যে গানগুলো প্রকাশ হয়েছে, সেগুলো শ্রোতারা গ্রহণ করেছে। যে কোনো নতুন ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকতে চাই। আগামীতে হয়তো একটা বা দুইটা গানের ভিডিও নিয়ে এমন পরিকল্পনা করতে পারি। তাই বলে অ্যালবাম করব না এমন কিন্তু না। অ্যালবামও করব আবার একটা গান নিয়ে নতুন ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকব।

আনন্দ আলো: আপনি কি এখন অ্যালবামের গানের চেয়ে সিনেমার প্লেব্যাকে বেশি মনোযোগী?

পড়শী: এটা ঠিক গত কয়েক মাসে আমার গাওয়া বেশ কিছু সিনেমার গান বাজারে এসেছে। সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে। গানগুলো নিয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি শ্রোতাদের কাছ থেকে। আসলে সব ধরনের গান নিয়ে মনোযোগী। গান আমার কাছে অনেক বড় কিছু। গানকে ভালোবেসে অনেক দূরে যেতে চাই।

আনন্দ আলো: গান, অভিনয় তারপর এখন মডেলিংও করছেন। সব কিছু নিয়ে অনুভূতি?

পড়শী: আমি প্রতিটা কাজ আমি চিনৱা ভাবনা করে করি। একটার সঙ্গে আরেকটা কোনো সমস্যা হয় না। প্রতিটা কাজ ভালোবাসার সঙ্গে করি বলে ঠিকমতো করতে পারছি। এর আগে মুঠোফোনে রবির বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছিলাম। এরপর করলাম মাইওয়ান কোম্পানির একটি পণ্যের। কাজটা অনেক যত্ন নিয়ে করা হয়েছে। কাজটা বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

আনন্দ আলো: আরজে হিসেবে শ্রোতাদের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?

পড়শী: বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ অনুষ্ঠানে শ্রোতারা মুঠোফোনের মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলেন, আমার গানের ব্যাপারে শ্রোতাদের অনুভূতি সহজেই জানার সুযোগ পাচ্ছি। তাদের পছন্দ বুঝতে পারছি। সেভাবে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে পারছি।

আনন্দ আলো: সম্প্রতি ডিজাইনার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে আপনার। একটি ফ্যাশন হাউজও দিয়েছেন।

পড়শী: গত ৩১ শে আগস্ট উত্তরায় স্টাইলার্ট নামের হাউজটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। নারী-পুরুষের পোশাক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকছে এখানে। আসলে ডিজাইনিংটা আমার শখ। সেই শখটাই এবার বাসৱবে রূপ পেলো। এরই মধ্যে হাউজটি চালুর পর থেকে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনলাইনেও ক্রেতারা এখান থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন।

আনন্দ আলো: আপনার ব্যান্ড পড়শী অ্যান্ড বর্ণমালার কী খবর?

পড়শী: আগের মতোই চলছে। বর্ণমালাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে লাইভ শো করছি। এছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্টেজে পারফর্ম করছি নিয়মিত। আপাতত বর্ণমালার কোনো অ্যালবাম বের করার চিনৱা ভাবনা সেই। একটু সময় নিয়ে ব্যান্ডের অ্যালবামটা বের করতে চাই।

আনন্দ আলো: গানের ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্ট কী রকম?

পড়শী: মা ও ভাইয়া আমাকে যে সাপোর্ট করেন সেটা না হলে এ পর্যনৱ আসা অসম্ভব ছিল না। এখনও প্রতিটি বিষয়ে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা পাই। এ দিক দিয়ে আমি খুব লাকী।

আনন্দ আলো: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পড়শী: আমার মূল কাজ হলো- গান। সেটা নিয়ে আজীবন থাকতে চাই। মাঝে মধ্যে অভিনয় করতে পারি সেটা হতে হবে গান রিলেটেড।