Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নায়করাজের জন্মদিন ভালো আছি ভালো থেকো

আনন্দ আলো প্রতিবেদন: লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে এলেন তিনি। তাঁর জন্য একটি অনুষ্ঠানে অপেক্ষা করছেন কিছু মানুষ। তারই প্রিয়জন, স্বজন, বন্ধু… লাল গালিচায় হেঁটে হেঁটে ভেতরে অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকেই তিনি অবাক। শুধু অবাক বললে ভুল বলা হবে তিনি বিস্মিত, তিনি অভিভূত। তাঁর জন্য যারা এতক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা আরো বেশি অভিভূত। কারণ বাংলা চলচ্চিত্রের জীবনত্ম কিংবদনত্মী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে। আজ (২৩ জানুয়ারি) তাঁর ৭৫তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল টিভি চ্যানেল লাল সবুজের বাংলাদেশ চ্যানেল আই বিশেষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এটি চ্যানেল আই-এর বহুল আলোচিত একটি অনুষ্ঠান। নাম সিটিসেল তারকা কথন। নাম দেখে বোঝা যায় অনুষ্ঠানটি কেমন। হ্যাঁ, এটি তারকাদের সরাসরি সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে আসবেন তারকার তারকা। অর্থাৎ বাংলা চলচ্চিত্রের জীবনত্ম কিংবদনত্মী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। সে কারণে আয়োজনও ছিল রাজকীয় কায়দায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চলমান কারিশমাকে কাজে লাগিয়ে অনুষ্ঠানটিতে একের পর এক বিস্ময় হাজির করা হয়। চ্যানেল আই-এর আলো ঝলমল স্টুডিওতে বসে আমাদের নায়করাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত তাঁর ভক্তদের সাথে সরাসরি কথা বলেন। তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই-এর স্টুডিওতে বসেই ভাব বিনিময় করেন গুলশানের লক্ষ্মীকুঞ্জে ড্রয়িংরুমে বসে থাকা প্রিয়তমা স্ত্রী লক্ষ্মীসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে। শুধু তাই নয় তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই-এর স্টুডিওতে বসে তিনি সরাসরি এফডিসিতে কথা বলেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে। অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচিত পর্ব ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নায়করাজকে ফুলের শুভেচ্ছা পাঠানো। অনুষ্ঠান চলাকালে নায়করাজ রাজ্জাককে প্রধানমন্ত্রীর এই শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। তারকা কথন অনুষ্ঠানে নায়করাজের সাথে আলাপচারিতায় অংশ নেন চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক অভিনেতা আমজাদ হোসেন, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নায়করাজের ছোট ছেলে চিত্রনায়ক সম্রাটসহ কয়েকজন সংবাদপত্র কর্মী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন মৌসুমী বড় য়া। অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে সারাদেশে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। যেনো সবাই এক বাক্যে অভিন্ন সুর তোলেন- ভালো আছি, আলো থেকো বন্ধুরা…

লাল গালিচায় নায়করাজ

এতটা বোধকরি নায়করাজ ভাবেননি। কারণ লাল গালিচার আয়োজন এতো অনেক বড় ব্যাপার। তাই চ্যানেল আইতে তারকা কথন অনুষ্ঠানে যাবার পথে লাল গালিচার আয়োজন দেখে শুরুতেই অভিভূত হয়ে ওঠেন। তাঁর সাথে ছিলেন চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, নায়করাজের ছোট ছেলে চিত্রনায়ক সম্রাট ও সম্রাটের শিশু কন্যা আরিশা। লাল গালিচায় হেঁটে হেঁটে স্টুডিওতে ঢুকেই আরেকদফা বিস্মিত হন নায়করাজ। তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন দেশবরেণ্য চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন, চিত্রনায়িকা সুজাতা, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস। সবাই একসাথে গেয়ে ওঠেন জন্মদিনের গান- হ্যাপি বার্থ ডে টু ইয়ু… সাথে সাথে আনন্দরাজ্যে ঢুকে যায় নায়করাজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। দেশ-বিদেশ থেকে একে একে আসতে থাকে ভক্তদের ফোন। স্টুডিওতে উপস্থিত স্বজন, সহকর্মী ও সংবাদকর্মীরা নায়করাজের জন্মদিনে শুভাশীষ জানাতে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

অনুষ্ঠানটি সরাসরি চলছিলো। হঠাৎ ফুলের শুভেচ্ছা নিয়ে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। নায়করাজের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা জানিয়ে শাকিল বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার জন্মদিনে ফুলের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। আনন্দ আর আবেগে তখন নায়করাজের চোখ ছল ছল করে ওঠে। নায়করাজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন এর চেয়ে বড় আনন্দ আর হতে পারে না।

হ্যালো কেমন আছো?

নায়করাজের সংসার জীবনে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর ভূমিকা কতখানি তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। নায়করাজ নিজেও তা কৃতজ্ঞতার স্বীকার করেন সর্বক্ষণ। নায়করাজের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী। বাসত্মবেও তিনি সংসারের লক্ষ্মী। স্বামীর কর্মজীবনের সফল্য নিয়ে বিগত দিনে কত আনন্দ অনুষ্ঠানই না হয়েছে। কিন্তু তাঁকে কোন অনুষ্ঠানেই দেখা যায় না। বোধকরি এই প্রথম টেলিভিশনের কোন সরাসরি অনুষ্ঠানে হাজির হলেন তিনি। চ্যানেল আইতে তারকা কথন অনুষ্ঠানটি চলছিল। হঠাৎ উপস্থাপক মৌসুমী বড় য়া ব্যসত্ম হয়ে বললেন- আমরা এখন বিশেষ একজনের সাথে কথা বলবো… চ্যানেল আই এর পর্দায় ভেসে উঠলো গুলশানে নায়করাজের বাসা লক্ষ্মীকুঞ্জের ড্রয়িংরুম। পুত্র, কন্যা, পুত্রবধু ও কন্যার জামাই এবং নাতি-নাতীদের নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছেন লক্ষ্মী। একটু লাজুক ভঙ্গী-হ্যালো কেমন আছো? তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এই প্রথম কোন টেলিভিশনে সরাসরি স্ত্রীর কথা শুনে নায়করাজ যেনো আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। আনন্দে চোখের পানি ফেলে বললেন- ভালো আছি… খুব ভালো আছি!

এফডিসি থেকে আসতে থাকে শুভেচ্ছার বন্যা

Razzakচ্যানেল আইতে তারকা কথন অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ এফডিসি থেকে ফোন এলো পরিচালক সমিতির অফিস থেকে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান গুলজারকে দেখা গেল চ্যানেল আই এর পর্দায়। অর্থাৎ চ্যানেল আই-এর একটি টীম তখন দায়িত্ব পালন করছিলো এফডিসিতে। রাজ্জাক বসে আছেন তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই ভবনে। এফডিসি থেকে তাঁকে একের পর এক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি থেকে প্রিয় সহকর্মী পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। রাজ্জাক যেনো আরেকবার অভিভূত। এক পর্যায়ে তিনি বললেন- আমার জন্মদিনে এই যে এতো বিস্ময় জাগানো সব ঘটনার জন্ম হলো এটা চ্যানেল আই ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। জয়তু চ্যানেল আই।

কাঁদলেন নায়করাজ

এই চলচ্চিত্র অঙ্গনে আমি এসেছিলাম একেবারে খালি হাতে। অনেক ত্যাগ সংগ্রাম আর অধ্যবসায়ের পর আমি আমার ইস্পিত লক্ষে পৌঁছাতে পেরেছি। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রবীন, নবীন ও আমার সমসাময়িক পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে। আমাকে এই চলচ্চিত্র অনেক দিয়েছে, আমিও চেষ্টা করেছি সেই ঋণ শোধ করতে, জানিনা কতটুকু পেরেছি। তোমরা যারা নবীন তাদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ তোমরা চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে কাজ করবে, শ্রদ্ধা করবে, সম্মান করবে। ছোট কাজকে কখনো অবহেলা করবে না। আমাদের চলচ্চিত্র এখন দুঃসময় পার করছে। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। এই চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর দায়িত্ব তোমাদের। এই বলে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন নায়করাজ। তাঁর কান্না দেখে উপস্থিত সবাই অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।

২৩ জানুয়ারি নায়করাজ রাজ্জাকের ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চ্যানেল আই। নায়করাজকে দেয়া হয় লাল গালিচার সম্মান। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যনত্ম সিটিসেল তারকা কথন অনুষ্ঠানে ২ ঘন্টা ব্যাপী সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় নায়করাজের জন্মদিন উপলক্ষে। চ্যানেল আই স্টুডিও, নায়করাজের গুলশানের বাসা ও এফডিসি তিনটি জায়গা থেকে একযোগে সরাসরি টেলিকাষ্ট করা হয়। এ জন্য হয়তো পুরো সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল যেন সেদিন আনন্দ ও খুশির জোয়ারে ভাসছিল। বিশেষ করে এফডিসি প্রাঙ্গণ। চ্যানেল আই-এর পর পরই চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি তাদের কার্যালয়ে নায়করাজের জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বিশিষ্ট পরিচালক থেকে শুরু করে নবীন-প্রবীন পরিচালক। সেই অনুষ্ঠানে উপরের কথাগুলো বলছিলেন নায়করাজ।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টা। শীতের সাজের বেলায় নায়করাজ লাল একটি মাইক্রোবাস থেকে নামলেন এফডিসিতে। চলচ্চিত্রের জীবনত্ম কিংবদনিত্ম গাড়ি থেকে নামার পর পরিচালক সমিতির সদস্যরা ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা, শিল্পী কলাকুশলী ও নামকরা প্রযোজকরা। তখন সবাই বলাবলি করছিলেন অনেক দিন পর শিল্পী কলাকুশলী ও পরিচালক-প্রযোজকদের মিলন মেলা বসেছে। সাজানো গোছানো পরিচালক সমিতির অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রবেশ করে নায়করাজ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বিশিষ্ট পরিচালকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমজাদ হোসেন, সাঈদুর রহমান সাঈদ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, আজিজুর রহমান, সিবি জামান ও পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার। সব শেষে বক্তব্য রাখেন নায়করাজ। তিনি বলেন, এমন এক সময় আমার ৭৫তম জন্মদিন পালন করা হচ্ছে যখন চলচ্চিত্রে অঙ্গন দুঃসময়ের মুখোমুখি। আজ যদি চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো থাকতো, প্রতিটি সিনেমা ব্যবসা সফল হতো, তাহলে আমার আনন্দটা দ্বিগুণ হতো।

আমার আজ কথা বলতে গিয়ে শুধুই কান্না পাচ্ছে। যাদের হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসেছিলাম তাঁদের অনেকেই আজ নেই। আজ তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি নবীন-প্রবীন সকল পরিচালকদের প্রতি। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া আমি নায়করাজ হতে পারতাম না। আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে এটুকু বুঝতে পেরেছি আমি সবার হৃদয়ে আগের মতোই আছি। আমি যখন নায়ক হিসেবে দূর্দানত্ম ফর্মে তখন এদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি। ওই সময় ৭ কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। এখন ১৭ কোটি মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

যখন শুরু করেছিলাম আমরা তখন সিনেমাকে প্রতিটি পরিবারের কাছে পারিবারিক বিনোদন হিসেবে আস্থা অর্জন করাতে পেরেছিলাম। ওই সময় আমাদের মাথায় কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে তাহলো দেশ, ভাষা, সৃজনশীলতা, শিক্ষণীয় এবং সৌন্দর্য। সবার আগে দেশ, তারপর শুদ্ধ ও প্রমিত ভাষার প্রযোগ এবং প্রতিটি ছবিতে থাকত সৃজনশীলতা। সেই সঙ্গে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় বিষয়ও থাকত। আর সৌন্দর্য তো একটি সিনেমার প্রধান অনুসঙ্গ। ছবির পাত্র-পাত্রী, গান, দৃশ্যচিত্রায়ন যদি সুন্দর না হয়, তাহলে দর্শক কেন ছবি দেখবে। এখন যারা ছবি পরিচালনা করছেন, তাঁরা এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন। আরো একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাহলো, চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন এবং নির্মাণ করেন তাঁরা পেশা হিসেবে কাজ করুন। যদি পেশা হিসেবে চলচ্চিত্রকে না নেয়া যায় তাহলে এর উন্নতি কখনোই হবে না। এখানে অনেক হিরো কে দেখতে পাচ্ছি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি তোমরা আমার ছোট ভাই ও ছেলের মতো। তোমরা কখনো টাকার পেছনে ছুটবে না, তারকা খ্যাতি পাওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে থাকবে না।

নায়করাজ একসময় তার চলচ্চিত্র জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। তখন নায়করাজের পাশে বসে থাকা নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন, অভিনেতা হাসান ইমাম, বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক আফজাল এইচ খানসহ অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। নায়করাজ বলেন, আমার জীবনের পুরোটা সময় চলচ্চিত্রে কাটিয়েছি। কয়েকটি বছর দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। সপ্তাহের সাতদিন পরিবারকে সময় না দিয়ে শুটিং-এ ব্যসত্ম থেকেছি। আমার জন্য এক সময় এফডিসির ৩ নম্বর ফ্লোরের মেকআপ রুমের পাশে একটি রুমে থাকার জায়গা করে দেয়া হয়েছিল সেই সব কথা আজ মনে পড়ছে। আমি অনেকদিন পর এফডিসিতে এলাম। এখন এফডিসিতে আসতে মন চায় না, কান্না পায়। যে এফডিসিতে প্রতিদিন ১০/১৫টি ছবির শুটিং হতো। তারকা শিল্পী কলাকুশলীতে সরগরম থাকতো সেই এফডিসি এখন নিথর, নিষ্প্রাণ। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি আসুন সবাই মিলে চলচ্চিত্রকে আবার চাঙ্গা করে তুলি। সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করি।

আমি কিছুদিন আগে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি। আল্লাহতালার অশেষ রহমতে ও দেশের ১৭ কোটি মানুষের দোয়ায় বেঁচে আছি। এবার ৭৫-এ পা দিয়েছি। এই বয়সে আগের মতো সংগ্রাম করতে পারব না। কিন্তু ওয়াদা করছি যখনই আপনারা ডাকবেন তখনই আমি চলে আসব আপনাদের কাছে। আপনাদের পাশে থাকব যে কোনো ভালো কাজে। কথা বলতে বলতে নায়করাজের গলা ভারী হয়ে আসে। পুরো অনুষ্ঠানস্থলে তখন অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি হয়। নায়করাজের আবেগ আপ্লুত অবস্থা দেখে উপস্থিত অনেকেই তখন তাঁদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি।

01_5পরে নায়করাজ পরিচালক সমিতির উপহার দেয়া জন্মদিনের কেক কাটেন। এসময় প্রযোজক সমিতির পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান শরীফুদ্দিন খান দিপু, খোরশেদুল আলম খসরু, রানা নাসের। এরপর নায়করাজ শিল্পী সমিতির স্টাডি রুমে যান। সেখানে শিল্পীদের উপহার দেয়া কেক কাটেন নায়করাজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমিতির সভাপতি নায়ক শাকিব খান ও মহাসচিব অমিত হাসানসহ জনপ্রিয় তারকারা।

এফডিসি থেকে নায়করাজ সোজা চলে যান উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেসে। সেখানকার ব্যবসায়ী সমিতি বিশাল এক অনুষ্ঠানে নায়করাজকে সম্মাননা দেন এবং তাঁর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন।

রাতে নায়করাজের গুলশানের লক্ষ্মীকুঞ্জে আয়োজন করা হয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক শফী বিক্রমপুরী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আজাদ রহমান, নাসির উদ্দিন দিলু, বিশিষ্ট অভিনেত্রী ববিতা, চম্পা, নূতন, বিশিষ্ট অভিনেতা হাসান ইমাম, অভিনেত্রী লায়লা হাসান, প্রযোজক মজনু, আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান, চ্যানেল আই-এর পরিচালক (বিপনন) ইবনে হাসান খান, নায়ক শাকিব খান, অমিত হাসান, অভিনেতা আহসানুল হক মিনু, তুষার খান, সোহান খানসহ অনেক তারকা।