Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তানভির হাসানের স্থাপত্য জগত

এ কে এম তানভীর হাসান নিরু একজন মেধাবী স্থপতি। নিরু নামেই তিনি বন্ধু মহলে  পরিচিত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৭ সালে বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন প্রতিভাবান দু’জন স্থপতি প্যাট্টিক ডি’রোজারিও ও সেলিম আলতাফ বিপ্লবের তত্ত¡াবধানে ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি স্ত্রী স্থপতি ঈশিতার গড়া ‘এন্ড অরডেন’ নামের একটি ফার্মের সঙ্গেও জড়িত আছেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

এক ভাই দুই বোনের মধ্যে আর্কিটেক্ট এ কে এম তানভীর হাসান নিরু সবার বড়। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইলের রগুনাথপুর। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মহাখালীতে। বাবার নাম এ কে এম রেজাউল করিম। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। মা মোমেনা করিম গৃহিণী। তানভীর হাসানের ছবি আঁকাআঁকির বীজটা ছোটবেলা থেকেই রোপণ হয়েছিল। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার প্রচÐ নেশা। মূলত মায়ের কাছেই ছবি আঁকায় হাতে খড়ি তার। ভালো ছবি আঁকতেন। যেখানেই ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই তাকে দেখা যেত। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এমন কী জাতীয় পর্যায়েও পুরস্কার পেয়েছেন ছবি আঁকার জন্য। ছোটবেলা থেকেই তানভীর হাসানের ইচ্ছা ছিল আর্টিষ্ট হওয়ার। বাবা-মা চাইতেন বড় হয়ে তাদের সন্তান ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেননি বলে আফসোস নেই তানভীর হাসানের। তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। স্থপতি হওয়ার পেছনে মায়ের অদম্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা তার কাজে সাহস জুগিয়েছে সব সময়। গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছে স্থপতি দিদারুল ইসলাম দিপু, শুভ্রা, হানহান, শাহীদ, সাম্য, নাশিদ ও রাসেল। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন প্রফেয়র শাহেদা রহমান। তানভীর হাসান নিরু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৭ সালে।

Shah-Cement-Proপাস করে বের হওয়ার পর স্থপতি প্যাট্টিক ডি রোজারিও ও সেলিম আলতাফ বিপ্লবের তত্ত¡াবধানে যোগ দেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে কয়েক বছর চাকরি করর পর বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের একজন পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি স্ত্রীর গড়া ‘এন্ড অরডেন’ ফার্মেও কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে এ কে এম তানভীর হাসান দেশের নামকরা কমার্শিয়াল টাওয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়, ভ্যাকেশন হাউজ, অফিস বিল্ডিং, ফ্যাক্টরী, মসজিদসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে রূপগঞ্জের তারাবো ভ্যাকেশন হাউজ, বনানির সিঙ্গেলস ফ্যামেলি হাউজ মুনসট্রি, রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁওর ইমপেটাস সেন্টার, বসুন্ধরার ১৪ তলা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, হাতিরঝিলের এনটিভির হেড কোয়ার্টার, গুলশান-২ এর এলিট হাউজ, কাঁচপুরের ওরিয়ন ড্রীম সিটি, তেজগাঁও এর কমার্শিয়াল বিল্ডিং আরবান লফট, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কনকর্ড বারিক টাওয়ার, থার্টিটু স্টোরিড বিল্ডিং, চিটাগং এর কমার্শিয়াল বিল্ডিং ক্রিস্টাল টাওয়ার, গুলশান-২ এর নাভানা ডেভলপমেন্টের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, বাংলামোটরের নাভানা ডেভলপমেন্টের জহুরা স্কয়ার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস গ্রæপের কাজসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন তিনি। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন ‘এন্ড অরডেন’ ফার্মে হয়ে তার উল্লেখ্যযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে নরসিংদির মেহর পাড়ার জামে মসজিদ, মোনহোরদীর ভিটালাক ডেইরী এন্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং ইত্যাদি। পাশাপাশি ‘এন্ড অরডেন’ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জল সবুজের ঢাকা প্রকল্পের ডিজাইন টিমের মেম্বার হিসেবে কাজ করছে। ২০১০ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মানিফা রেহনুমা ঈশিতা। তিনিও একজন আর্কিটেক্ট। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী।

এ কে এম তানভীর হাসান নিরু বলেন, ছোটবেলায় যখন ছবি আঁকতাম তখন চিরায়ত বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত ঘন গাছের সারির উপর দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছের মতো আইকন হতে ইচ্ছা করত। জীবনের উপলক্ষে স্থাপত্যর্চ্চার সঙ্গে যখন জড়িত হলাম তখন বুঝলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য দরকার গোড়া শক্ত করা। আর্থসামাজিক যে প্রেক্ষাপটে কাজ শুরু করি, বাংলাদেশের স্থাপত্য চর্চা তখন বেশ উন্নত। অসাধারণ প্রতিভাবান দু’জন অগ্রজের অধীনে কাজ শুরু করি। এরা হলেন স্থপতি প্যাট্টিক ডি’রোজারিও এবং স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব।

Shah-Cement-Pro-1কাজের ক্ষেত্রে পরিচয় হয় সমসাময়িক আরও কিছু ডেডিকেটেড স্থাপত্য অনুরাগীদের সঙ্গে। ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারে মাস্টার্স করে আসা স্থপতি মানিফা রেহনুমা ঈশিতা আমার স্ত্রী, যার কাছ থেকে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখছি প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে। আমার অনুজ স্থপতি নাহিদ আকরাম অসাধারণ প্রতিভাবান এই তরুণ উচ্চ শিক্ষা শেষ করে বর্তমানে কর্মরত আছেন আমেরিকার বিখ্যাত একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানে। আমার অসংখ্য কাজে নাহিদের সহযোগিতা রয়েছে। আজও আমার অফিস প্রাঙ্গণে অসংখ্য প্রতিভাবান স্থপতিদের একটি দল নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি স্থাপত্য পেশাকে আরও সমুন্নত করতে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখছি। প্রাকৃতিক নিয়মেই আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতালব্ধ হচ্ছি। দিগন্তজোড়া শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত সেই ঘন গাছের সারির মতো আমরা দলগত ভাবে স্থাপত্য চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এই সিনথেসিস প্রাঙ্গণে। আমি মনে করি শুদ্ধ স্থাপত্য চর্চার পূবশর্ত নিজেকে একজন দক্ষ স্থপতি হিসেবে গড়ে তোলা। দক্ষতা বলতে আমি বুঝাতে চাই, ভালো ড্রইং, যৌক্তিক ডিজাইন সেন্স, টেকনিক্যাল নলেজ, সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণা, দলগত ভাবে কাজ করার স্পৃহা এর সবকিছুই। একান্ত চিত্তে কাজের মাধ্যমেই এগুলো আয়ত্ত করতে হবে। নিজেকে বিস্তৃত করতে হবে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায়। মানুষদের নিয়ে কাজ করি আমরা। মানুষকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। জীবনের সব চাওয়া পাওয়া গুলোর মধ্যে একটি সুস্থ ভারসাম্য রেখে বাংলাদেশের শুদ্ধ সংস্কৃতিকে বেগবান করতে চাই আমার কাজের মাধ্যমে।